Ajker Patrika

‘যুদ্ধ শুরুর আগে কেউ কি আমাদের জিজ্ঞাসা করেছে’

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ২০: ২৬
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে ছুটছে, নয়তো মাটির নিচে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ছবি: পিটিআই
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে ছুটছে, নয়তো মাটির নিচে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ছবি: পিটিআই

ভারত-পাকিস্তানের উত্তেজনা এখন চরমে। অনেকে বলছেন, যুদ্ধ লেগে গেছে। তবে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি হামলা চললেও এখনো পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ হয়ে ওঠেনি। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বড় বিপদে আছে দুই দেশের সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা।

আজ শুক্রবার বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, উভয় দেশের সীমান্তে সাধারণ মানুষের হতাহতের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। তাঁদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক।

জম্মু ও কাশ্মীরের পুঞ্চের বাসিন্দা মাদারসার চৌধুরী (২৯), তিনি এক দিন আগের হামলার সময় তাঁর বোনের অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন এএফপির কাছে। মাদারসার জানান, তাঁর বোন আতঙ্কে কথা বলতে পারছে না। তিনি বলেন, ‘প্রথম দিন হামলার সময় প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে দুই শিশু দৌড়ে বেরিয়ে আসছিল। আমার বোন চিৎকার করে তাদের বাড়ির ভেতরে যেতে বলে। কিন্তু হঠাৎ ছুটে আসা একটা গোলার স্প্লিন্টারের টুকরা শিশুদের আঘাত করে এবং তারা সেখানেই মারা যায়। এরপর থেকে সে আর কোনো কথা বলতে পারছে না।’

ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত বুধবার পুঞ্চে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ভারী সীমান্তে গোলাবর্ষণে শিশুসহ অন্তত ১৫ বেসামরিক নিহত এবং ৪৩ জন আহত হয়েছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী এলাকা মুজাফফরাবাদ ছিল ভারতীয় হামলার অন্যতম লক্ষ্যবস্তু। ভারতের দাবি, সেখানে পেহেলগামের হামলায় অংশ নেওয়া সন্ত্রাসীদের আস্তানা ছিল। এই অঞ্চল ভারতের হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

মুজাফফরাবাদের বাসিন্দা মোহাম্মদ রিয়াজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, এই হামলায় তাঁর পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই। আত্মীয়দের বাড়িতেও জায়গা নেই। আমি পরিবার নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’

মুজাফফরাবাদের আরেক বাসিন্দা সফির আহমদ আওয়ানের ১৫ বছরের মেয়ে আহত হয়েছে। তিনি মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে বলেন, ৬ ও ৭ মে রাতের মধ্যে তাঁদের বাড়ি থেকে কয়েক মিটার দূরে একটি মসজিদ লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। সেই গোলার স্প্লিন্টারের টুকরা তাঁর মেয়েকে আঘাত করে। আওয়ান বলেন, ‘প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানার সঙ্গে সঙ্গে আমি বাইরে দৌড়ে গিয়েছিলাম। আমার মেয়ে আমার পেছন পেছন এসেছিল। তখনই দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে এবং গোলার স্প্লিন্টারের টুকরা তার বুকে ঢুকে যায়। তাকে দুদিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে।’

সামরিক উত্তেজনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তবর্তী এলাকার বেসামরিক মানুষজন নিরাপদ স্থানে ছুটছে, নয়তো মাটির নিচে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণরেখার প্রায় ১০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত উরির বাসিন্দা নাদিম আকবর সিএনএনকে বলেন, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নতুন করে গোলাবর্ষণ শুরু হওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি পরিবারের কয়েক সদস্যকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার পরিবারের অন্য সদস্যরা যারা পেছনে ছিল, তারা গ্রামের একটি মাটির নিচের আশ্রয়কেন্দ্রে রাত কাটিয়েছে। সেই আশ্রয়কেন্দ্রে মোট ৪০ জন ছিল। সারা রাত ধরে গোলাবর্ষণ চলায় তাদের খুব কঠিন সময় গেছে।’

পেহেলগাম হামলার জেরে গত বুধবার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে অভিযান শুরু করে ভারত। তাদের দাবি, এই অভিযানে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর নয়টি ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি’ ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের লক্ষ্যবস্তু ছিল শুধু সন্ত্রাসীদের আস্তানা। কোনো বেসামরিক স্থাপনায় হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে ভারত।

এদিকে এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর ভারী কামান, ড্রোন হামলা ও অবিরাম গুলিবর্ষণ করে উত্তেজনা আরও বাড়িয়েছে। এর ফলে কাশ্মীরের সীমান্তবর্তী জনবসতির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী, বুধবার থেকে চলা দুই দেশের সহিংসতায় শিশুসহ অন্তত ৪৬ জনের প্রাণহানি হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, ইসলামাবাদের দাবি, ভারতীয় হামলায় ৩১ বেসামরিক নিহত হয়েছে। এদিকে দিল্লি বলছে, পাকিস্তানি হামলায় ১৪ বেসামরিক ও একজন সৈনিক নিহত হয়েছে।

দীপিকা পুষ্কর নাথ নামের জম্মুর একজন আইনজীবী গতকাল রাতে তাঁর বাগান থেকে সরাসরি গোলাগুলি প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি সিএনএনকে বলেন, ‘আমরা ভীত। যুদ্ধ শুরু করার আগে কি কেউ আমাদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়? মনে হচ্ছে, আমাদের শেষ সময় এসে গেছে। সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে।’

ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবেশী দুই পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়বে। এই পরিস্থিতিতে সীমান্তে ক্রসফায়ারের মুখোমুখি পড়েছে কাশ্মীরের বেসামরিক মানুষ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত