Ajker Patrika

চাঁদের অচিনপাশে পানি খুঁজতে উড়ন্ত রোবট পাঠাবে চীন

ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

চাঁদের দূরবর্তী দক্ষিণ মেরুতে একটি উড়ন্ত রোবট পাঠানোর পরিকল্পনা করেছে চীন। এই রোবট সেখানে বরফ হয়ে জমে থাকা কোনো পানি আছে কিনা খুঁজে দেখবে।

আগামী বছর চীনের চ্যাঙ্গি-৭ মিশনের অংশ হিসেবে এই রোবট পাঠানো হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে চাঁদে নভোচারী পাঠানোর যে পরিকল্পনা করেছে তার আরও কাছাকাছি পৌঁছে যাবে।

মঙ্গলবার সিএনএন জানিয়েছে, চীন মহাকাশে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করতে বড় পরিসরে কাজ করছে। বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ মহাকাশ গবেষণাকে বৈজ্ঞানিক গবেষণা, সম্পদ অনুসন্ধান ও জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত অংশ হিসেবে বিবেচনা করছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নাসা সহ ভারত এবং চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলো চাঁদের বিভিন্ন স্থানে পানির অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিল। তবে বিজ্ঞানীদের ধারণা, চাঁদের গভীর গহ্বরে সংরক্ষিত বরফই ভবিষ্যতের মহাকাশ অভিযানে পানির প্রধান উৎস হতে পারে।

চীনা বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই গবেষণা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গবেষণা কেন্দ্র গড়ার প্রস্তুতির অংশ। চীনের চন্দ্র গবেষণা প্রকল্পের প্রধান ডিজাইনার উ ওয়েইরেন বলেন, ‘চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে কিছু গভীর গুহা রয়েছে, যেখানে আমরা পানির অস্তিত্বের সম্ভাবনা দেখছি। আমরা আশা করি, এই উড়ন্ত ডিটেক্টর সেখানে সরাসরি অনুসন্ধান চালাবে।’

চীনের জাতীয় মহাকাশ প্রশাসন সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাঁদে একের পর এক জটিল রোবটিক মিশন পরিচালনা করছে। ২০২৬ সালে তাদের চ্যাঙ্গি-৭ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিত জরিপ চালানো হবে। এই মিশনে থাকবে একটি কক্ষপথে ঘোরার যান, একটি অবতরণযান, একটি রোভার এবং একটি উড়ন্ত রোবট।

চীনা বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এই উড়ন্ত রোবট পা ভাঁজ করে অবতরণ করতে পারবে। অনেকটা মানুষের লাফিয়ে নিচে নামার মতো। যদিও রোবটটির কয়টি পা থাকবে তা প্রকাশ করা হয়নি।

রোবটটি কমপক্ষে তিনবার লাফিয়ে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে যাবে, যাতে এটি সূর্যালোকিত স্থান থেকে ছায়াচ্ছন্ন গভীর গহ্বরে গিয়ে বরফের সুনির্দিষ্ট অবস্থান, পরিমাণ ও বণ্টন বিশ্লেষণ করতে পারে।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে যেখানে বরফ থাকতে পারে, সেগুলো অতি অন্ধকার ও শীতল এলাকা। কারণ চাঁদের কক্ষপথের কারণে কিছু গহ্বরের তলদেশে কখনোই সূর্যালোক পৌঁছায় না। এসব অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মাইনাস ২৫০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের নিচে থাকে। এই চরম আবহাওয়ায় উড়ন্ত রোবটকে দীর্ঘ সময় সচল রাখতে হবে।

চ্যাঙ্গি-৭ মিশনের সহকারী ডিজাইনার তাং ইউহুয়া বলেন, ‘এই চরম পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময় কাজ করা আমাদের রোবটের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’

চাঁদে পানির সন্ধান পাওয়া গেলে ভবিষ্যতে চাঁদে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা কেন্দ্র গড়ে তোলা সম্ভব। নভোচারীদের জন্য জীবনধারণের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও পাওয়া যাবে। মহাকাশ অভিযানের ব্যয় অনেক কমে আসবে।

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করেছেন যে, পানি পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে এটিকে ব্যবহারযোগ্য হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না। পানির ব্যবহারযোগ্যতা নির্ভর করবে এর পরিমাণ, রাসায়নিক গঠন, কীভাবে তা নিষ্কাশন করা যাবে—এসব বিষয়ের ওপর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত