Ajker Patrika

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে, বিবিসির অনুসন্ধান

আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩: ৪৯
মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার প্রমাণ মিলেছে, বিবিসির অনুসন্ধান

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী চলতি বছরের জুলাইয়ে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ধারাবাহিক গণহত্যা চালিয়েছে। মধ্য মিয়ানমারের সাগাইং জেলার বিরোধীদের শক্ত ঘাঁটি—কানি টাউনশিপে চারটি পৃথক ঘটনায় অন্তত ৪০ জনকে হত্যা করা হয়েছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী এবং এ ঘটনায় বেঁচে ফেরাদের বরাত দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে কারো কারো বয়স ১৭ বছরের কম। তাঁরা প্রথমে এলাকাবাসীকে জড়ো করে পুরুষদের আলাদা করে হত্যাকাণ্ড চালায়। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ এবং ছবিতে দেখা যায়, নিহতদের বেশিরভাগকে হত্যার আগে নির্যাতন করা হয়েছে; হত্যার পরে অগভীর কবরে সমাহিত করা হয়েছে। 

গত ফেব্রুয়ারিতে এক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয় অং সান সুচি সরকার। সামরিক বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় এ গণহত্যা চালানো হয়। 

বিবিসি ১১ জন প্রত্যক্ষদর্শীর সঙ্গে কথা বলে, তাঁদের মোবাইল ফোনের ফুটেজ এবং মানবাধিকার বিষয়ক এনজিওর ছবি বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন করেছে। নাম গোপন রাখার শর্তে প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে ইয়িন গ্রামে। যেখানে কমপক্ষে ১৪ জন পুরুষকে দড়ি দিয়ে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হয় এবং মরদেহ জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয়। 

ভাই, ভাগনে ও শ্যালক নিহত হয়েছেন এমন একজন বলেন, 'দাঁড়িয়ে এসব দেখতে পারছিলাম না। তাই আমরা মাথা নিচু করে কাঁদছিলাম। আমরা তাঁদের হত্যা না করার জন্য অনুরোধ করেছি। তাঁরা পাত্তা দেয়নি। এ সময় উপস্থিত থাকা এক নারীকে সেনাসদস্যরা জিজ্ঞেস করেছিলেন, এর মধ্যে কি আপনার স্বামী আছে? তবে আপনারা শেষকৃত্য করুন।' 

নির্যাতন করতে করতে হত্যার বর্ণনা প্রত্যক্ষদর্শীদেরহত্যাকাণ্ড থেকে পালাতে সক্ষম একজন বলেন, হত্যার আগে সেনাবাহিনী পুরুষদের ওপর ভয়ঙ্কর নির্যাতন চালায়। তাঁদের বেঁধে রাখা হয়েছিল, পাথর ও রাইফেলের বাট দিয়ে মারধর করা হয়েছে। অনেকের ওপর দিনব্যাপী নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সৈন্যদের মধ্যে বেশিরভাগের বয়স ১৭ থেকে ১৮ বছর হলেও বৃদ্ধও ছিল। একজন নারী সেনাসদস্যের উপস্থিতির কথাও তিনি উল্লেখ করেন। 

জুলাইয়ের শেষের দিকে জি বিন ডুইন গ্রামে একটি গণকবরে ১২টি বিকৃত মরদেহ পাওয়া যায় বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এদের মধ্যে একটি ছোট দেহও ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি শিশুর দেহ। 

পাশের একটি বরই গাছের সঙ্গে আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির মরদেহ পাওয়া গেছে। ফুটেজ ও মরদেহ পর্যালোচনা তাঁর শরীরে নির্যাতনের স্পষ্ট লক্ষণ পেয়েছে বিবিসি। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়, সামরিক বাহিনী গ্রামে প্রবেশ করলে তাঁর ছেলে, নাতি-নাতনি পালিয়ে যায়। তবে বয়স্ক হওয়ায় তাঁকে কিছু বলা হবে না ভেবে তিনি বাড়িতেই থেকে যান। 

এলাকার বেসামরিক মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো কর্তৃক সামরিক বাহিনীর ওপর আক্রমণের বিপরীতে সম্মিলিত শাস্তি হিসেবে এ হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে নিহতদের পরিবার জোর দিয়ে বলছে, তাঁরা সামরিক বাহিনীর ওপর হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল না। ইয়িন গ্রামের গণহত্যায় ভাই হারানো এক নারী বলেন, তিনি সৈন্যদের কাছে অনুরোধ করেছিলেন হত্যা না করার জন্য। তাও ভাইকে বাঁচাতে পারেননি। তাঁর অনুরোধের বিপরীতে একজন সৈনিক জবাব দিয়েছিলেন, 'কিছু বলবেন না। আমরা ক্লান্ত। আমরা তোমাকে মেরে ফেলব।' 

ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের পর থেকে বিদেশী সাংবাদিকদের মিয়ানমার নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়। বেশিরভাগ বেসরকারি গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে সরেজমিন প্রতিবেদন করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

প্রতিবেদনে উঠে আসা অভিযোগ প্রসঙ্গে মিয়ানমারের তথ্য উপমন্ত্রী এবং সামরিক মুখপাত্র জেনারেল জাও মিন তুনকে প্রশ্ন করে বিবিসি। তিনি সেনাবাহিনীর গণহত্যার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেন, 'এটা ঘটতে পারে। যখন তাঁরা আমাদের সঙ্গে শত্রুতা করে, তখন আমাদের আত্মরক্ষা করার অধিকার আছে।'

প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ বর্তমানে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তদন্ত করছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জানা গেল ১৩ বছর আগে সিরিয়ায় নিখোঁজ সাংবাদিক অস্টিনের ভাগ্যে কী ঘটেছিল

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ০৭
ছবি: সিএনএন
ছবি: সিএনএন

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের উপকণ্ঠে মাউন্ট কাসিউনের পাথুরে ঢালে লুকিয়ে আছে এক রহস্যময় সামরিক অঞ্চল। গত মাসে (সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের তদন্ত সংস্থা এফবিআই-এর নেতৃত্বে একটি দল সেখানে পৌঁছেছিল মার্কিন সাংবাদিক অস্টিন টাইসের সন্ধানে। ২০১২ সালে সিরিয়ায় নিখোঁজ হয়ে বিশ্বজুড়ে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন অস্টিন। ১৩ বছর পরও তাঁর পরিবার আশায় আছে—তিনি হয়তো এখনো বেঁচে আছেন।

তবে এবার প্রথমবারের মতো সিরিয়ার সাবেক এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মুখ থেকে শোনা গেল নির্মম সত্যটি—অস্টিন নিশ্চিতভাবেই মারা গেছেন।

সোমবার (২৮ অক্টোবর) সিএনএন জানিয়েছে, এই স্বীকারোক্তি এসেছে বাসাম আল-হাসান নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে, যিনি সিরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা এবং ভয়ংকর ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্সেস’ (এনডিএফ) মিলিশিয়া সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা। আল-হাসানই ছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি ২০১২ সালের আগস্টে অস্টিন টাইসকে আটক করার পর তাঁর দেখাশোনা করতেন।

আসাদ সরকারের পতনের পর সত্য উদ্‌ঘাটন

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে আসাদ সরকারের পতনের পর সিরিয়ার বিভিন্ন প্রাক্তন কর্মকর্তা একে একে আত্মপ্রকাশ করতে থাকেন। তাঁদের মধ্যেই ছিলেন আল-হাসান। তিনি ইরান থেকে পালিয়ে লেবাননের বৈরুতে এসে আশ্রয় নেন। পরে এফবিআই তদন্তকারীরা সেখানেই হাজির হন এবং তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

এরপর গত মাসে (সেপ্টেম্বর) বৈরুতে আল-হাসানের ফ্ল্যাটে পৌঁছে যায় সিএনএন-এর একটি দলও। গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিওতে দেখা যায়, আল-হাসান বলছেন, ‘অস্টিন অবশ্যই মৃত। আমি নিজেই আসাদের আদেশে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করিয়েছিলাম।’

তিনি দাবি করেন, ২০১৩ সালে স্বয়ং বাশার আল-আসাদই তাঁকে নির্দেশ দেন অস্টিনকে হত্যা করতে। তবে তিনি নাকি আপত্তি জানিয়েছিলেন, কিন্তু আসাদ ছিলেন অনড়।

অবিশ্বাস ও সন্দেহ

সিএনএনকে আল-হাসান যে তথ্য দিয়েছেন সেগুলো পরে আরও যাচাই করা হয়েছে এবং এফবিআইয়ের পলিগ্রাফ টেস্টে তিনি ব্যর্থ হন। অর্থাৎ তাঁর কথার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। তবু তাঁর এই বক্তব্যই এখন পর্যন্ত অস্টিন টাইসের মৃত্যুর সবচেয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত।

অনেকে মনে করেন, সত্যটি এখনো জটিল এক জালের ভেতরে লুকিয়ে আছে—যেমনভাবে আসাদের শাসন দীর্ঘ এক দশক ধরে নিজের জনগণকে হত্যা ও নিখোঁজ করেছে।

অস্টিনের খোঁজে সিএনএন অন্তত সাতটি দেশে গিয়ে সিরিয়ার সাবেক কিছু কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এঁদের মধ্যে আছেন প্রত্যক্ষদর্শী ও তদন্তকারীও। তাঁরা জানিয়েছেন, অস্টিনের দেহাবশেষ এখনো পাওয়া না গেলেও ২০১৩ সালের দিকেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছিল।

বাসাম আল-হাসান, যার কাছে বন্দী ছিলেন অস্টিন। ছবি: সিএনএন
বাসাম আল-হাসান, যার কাছে বন্দী ছিলেন অস্টিন। ছবি: সিএনএন

কে ছিলেন অস্টিন টাইস

অস্টিন টাইস ছিলেন মার্কিন মেরিন বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক। ২০১২ সালে তিনি সিরিয়ায় যান গৃহযুদ্ধের সত্যতা তুলে ধরতে। তিনি দামেস্কের উপকণ্ঠ দারায়া থেকে তাঁর শেষ প্রতিবেদন পাঠান। এরপরই তাঁর সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

সেই সময় দারায়ায় প্রবল যুদ্ধ চলছিল। বিদ্রোহীদের সঙ্গে থেকে তিনি আসাদ সরকারের দমননীতি তুলে ধরছিলেন। ওয়াশিংটন পোস্টসহ একাধিক পত্রিকায় তাঁর প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

নাটকীয় বন্দিত্ব ও ভিডিও

সিরিয়ার গোয়েন্দা কর্মকর্তা সাফওয়ান বাহলুল জানিয়েছেন, তিনিই অস্টিনকে তিনবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন। সাফওয়ান বলেন, ‘অস্টিন শান্ত ছিলেন, সাহসী ছিলেন। কখনো কখনে আমরা সংগীত নিয়েও কথা বলেছি।’

পরবর্তীতে আল-হাসানের নির্দেশে অস্টিনকে ‘তাহৌনে’ নামের এক সামরিক ক্যাম্পে বন্দী রাখা হয়। এখানেই ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে তাঁর চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি ভিডিও ধারণ করা হয়। সেই ভিডিওতে অস্টিনকে দেখা যায় আরব পোশাক পরা লোকদের মাঝে, যারা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে চিৎকার করছে। ভিডিওটি ইচ্ছাকৃতভাবে তৈরি করা হয় যেন মনে হয়, তাঁকে ইসলামপন্থীরা অপহরণ করেছে—আসাদ বাহিনী নয়। তবে মার্কিন বিশ্লেষকেরা দ্রুতই বুঝে ফেলেছিলেন, এটি আসলে সিরীয় সরকারেরই সাজানো নাটক।

অস্টিনকে বিদ্রোহী ইসলামপন্থীরা বন্দী করেছে প্রমাণ করতে তাঁর চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি ভিডিও তৈরি করেছিল আসাদের বাহিনী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া
অস্টিনকে বিদ্রোহী ইসলামপন্থীরা বন্দী করেছে প্রমাণ করতে তাঁর চোখ বাঁধা অবস্থায় একটি ভিডিও তৈরি করেছিল আসাদের বাহিনী। ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

পালানোর চেষ্টাও করেছিলেন অস্টিন

তদন্তে জানা যায়, একসময় অস্টিন সাবান ও তোয়ালে ব্যবহার করে জানালা দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন। তিনি কিছু দূর পালাতেও সক্ষম হন, কিন্তু পরের দিন দামেস্কের মাজ্জে এলাকায় আবার ধরা পড়ে যান। এরপর তাঁকে আবারও আল-হাসানের অফিসে নেওয়া হয় এবং সেখানেই চিরদিনের জন্য তাঁর সব খোঁজ মিলিয়ে যায়।

পরিবারের অটল বিশ্বাস

সিরীয় কর্মকর্তাদের অনেকেই অস্টিনের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করলেও তাঁর মা ডেবরা টাইস এখনো বিশ্বাস করেন ছেলে বেঁচে আছেন। তিনি বলেন, ‘অস্টিন টাইস জীবিত। আমরা তাঁর মুক্তির অপেক্ষায় আছি।’

আসাদের পতনের পর ডেবরা টাইস নিজেই দামেস্কে গিয়ে নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে দেখা করেছেন। ডেবরা বহু বছর ধরে মার্কিন সরকারকে ছেলের খোঁজে তৎপর থাকার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

আল-হাসান—এক অন্ধকার চরিত্র

আল-হাসান আসাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। তিনি ২০১১ সালেই যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েন এবং ২০১৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রও তাঁকে নিষিদ্ধ করে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহারে জড়িত ছিলেন এবং সরকারবিরোধীদের ওপর হত্যাযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন।

২০২৩ সালে ফ্রান্স তাঁর ও আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।

শেষ কথায় অনুতাপ

বৈরুতে সিএনএনের দল চলে আসার আগে দরজার কাছে এসে আল-হাসান থেমে যান। চোখ লালচে হয়ে ওঠে তাঁর। তিনি বলেন, ‘এটা মনে পড়লেই কষ্ট হয়। এমনটা ঘটুক, চাইনি আমি। অস্টিনের মায়ের কাছে আমি ক্ষমা চাই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে হত্যায় অভিযুক্তের স্বীকারোক্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২২ সালে পশ্চিম জাপানের নারা শহরে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ছবি: বিবিসি
২০২২ সালে পশ্চিম জাপানের নারা শহরে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ছবি: বিবিসি

জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তেতসুয়া ইয়ামাগামি আদালতে দোষ স্বীকার করেছেন। টোকিওতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিচার শুরুর প্রথম দিনেই আদালতকে তিনি বলেন, ‘সবকিছু সত্যি।’

২০২২ সালে পশ্চিম জাপানের নারা শহরে একটি নির্বাচনী প্রচারসভায় ঘরে তৈরি বন্দুক দিয়ে শিনজো আবেকে গুলি করেন ৪৫ বছর বয়সী ইয়ামাগামি। গুলিবিদ্ধ হয়ে ওই দিনই হাসপাতালে মারা যান জাপানের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। তাঁর মৃত্যুতে বিশ্বজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল।

‘আবেনোমিকস’ নামে পরিচিত অর্থনৈতিক নীতির প্রণেতা এবং কট্টর পররাষ্ট্রনীতির জন্য খ্যাত শিনজো আবেকে হত্যার পর রাজনৈতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ঘটনাটির পর প্রকাশ্যে আসে শাসক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও ইউনিফিকেশন চার্চের (যা ‘মুনিজ’ নামেও পরিচিত) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

ইয়ামাগামি তদন্তকারীদের জানান, তিনি আবেকে গুলি করেছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন, আবে ওই ধর্মীয় গোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছেন, যার কারণে তাঁর মা ও পরিবার আর্থিকভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। ইয়ামাগামির অভিযোগ, ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রমাণ হিসেবে তাঁর মা ওই চার্চে প্রায় ১০ কোটি ইয়েন (প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার) দান করেছিলেন।

এই অভিযোগের পর চার্চের কর্মকাণ্ড নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতিষ্ঠিত এবং গণবিবাহের জন্য পরিচিত এই সংগঠনটির বিরুদ্ধে তদন্তের একপর্যায়ে জাপানের চার মন্ত্রী পদত্যাগ করেন। পরবর্তীতে চলতি বছরের মার্চে টোকিও আদালত ইউনিফিকেশন চার্চকে বিলুপ্তির আদেশ দেন, তাদের করমুক্তির সুবিধা বাতিল করেন এবং সম্পত্তি বিক্রির নির্দেশ দেন।

জাপান টাইমসের বরাতে সোমবার (২৮ অক্টোবর) বিবিসি জানিয়েছে, এত কিছুর পরও ইয়ামাগামির মা তাঁর বিশ্বাস থেকে সরে আসেননি। তিনি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড আমার বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করেছে।’

ইয়ামাগামির বিচার আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে তিনি অস্ত্র আইন ভঙ্গের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর আইনজীবীর দাবি, অভিযুক্তের তৈরি বন্দুকটি জাপানের প্রচলিত অস্ত্র সংজ্ঞার আওতায় পড়ে না।

জাপানে অস্ত্র সহিংসতার ঘটনা খুবই কম। শিনজো আবে হত্যার পর থেকে দেশটিতে ঘরে তৈরি বন্দুকের ওপর আরও কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পারমাণবিক শক্তি থেকে ক্যানসার চিকিৎসা—দুটি সুপার কম্পিউটার বানাবে যুক্তরাষ্ট্র, প্রযুক্তি সহায়তায় এএমডি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক শক্তি, ক্যানসার চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। ছবি: সংগৃহীত
সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক শক্তি, ক্যানসার চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাডভান্সড মাইক্রো ডিভাইসেসের (এএমডি) সঙ্গে এক বিলিয়ন ডলারের অংশীদারত্বে দুটি সুপার কম্পিউটার নির্মাণ করছে দেশটির জ্বালানি মন্ত্রণালয়। এই সুপার কম্পিউটারগুলো ব্যবহৃত হবে পারমাণবিক শক্তি, ক্যানসার চিকিৎসা ও জাতীয় নিরাপত্তাসহ জটিল বৈজ্ঞানিক গবেষণায়।

এই নতুন অংশীদারত্বের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানিমন্ত্রী ক্রিস রাইট ও এএমডির প্রধান নির্বাহী লিসা সু নিশ্চিত করেছেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।

রাইট জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য হলো এমন পর্যাপ্ত সুপার কম্পিউটার তৈরি করা, যা ক্রমবর্ধমান জটিল বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পরিচালনায় সক্ষম হবে। এসব মেশিন বিপুল পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করে নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের গতি বহু গুণে বাড়িয়ে তুলবে।

তাঁর ভাষ্য, এই সিস্টেমগুলো পারমাণবিক শক্তি ও ফিউশন এনার্জি, প্রতিরক্ষা প্রযুক্তি এবং নতুন ওষুধ উদ্ভাবনে ‘অভূতপূর্ব গতি’ আনবে।

বিজ্ঞানীরা এখন সূর্যের জ্বালানি উৎপাদন প্রক্রিয়া অর্থাৎ ফিউশন বিক্রিয়া পৃথিবীতে পুনরুৎপাদনের চেষ্টা করছেন। এর জন্য তাঁরা তীব্র তাপ ও চাপে হালকা পরমাণুগুলোকে একত্র করে বিপুল শক্তি উৎপাদনের চেষ্টা করছেন।

রাইট বলেন, ‘আমরা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছি, কিন্তু প্লাজমা অত্যন্ত অস্থিতিশীল। আমাদের সূর্যের কেন্দ্রের মতো পরিবেশ পৃথিবীতে তৈরি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এই এআই-চালিত সুপার কম্পিউটারগুলোর মাধ্যমে আমাদের অগ্রগতি অনেক দ্রুত হবে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ফিউশন শক্তি ব্যবহারযোগ্য করে তোলার বাস্তব পথ আমরা খুঁজে পাব।’

রাইট জানান, সুপার কম্পিউটারগুলো যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করবে এবং ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন ওষুধ উদ্ভাবনের গতি বাড়াবে; অণুস্তরে রোগ নিরাময়ের সম্ভাব্য উপায়গুলো সিমুলেশন করে।

তাঁর আশা, ‘আগামী পাঁচ থেকে আট বছরের মধ্যে আমরা এমন একপর্যায়ে পৌঁছাব, যেখানে আজ যেসব ক্যানসার মৃত্যুদণ্ডের সমান মনে করা হয়, সেগুলোর অনেকগুলোই নিয়ন্ত্রণযোগ্য দীর্ঘস্থায়ী রোগে পরিণত হবে।’

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হ্যারিকেন মেলিসা: বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ের প্রভাব উপকূলে, জ্যামাইকায় প্রাণহানি ৩

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ধেয়ে আসছে হ্যারিকেন মেলিসা। ছবি: সংগৃহীত
ক্যারিবীয় অঞ্চলে ধেয়ে আসছে হ্যারিকেন মেলিসা। ছবি: সংগৃহীত

ক্যারিবীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে চলা শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের বিধ্বংসী প্রভাব ইতিমধ্যেই জ্যামাইকায় অনুভূত হতে শুরু করেছে। দেশটির স্বাস্থ্য ও জনকল্যাণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সময় সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রস্তুতির সময়ই তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এটিকে চলতি বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় বলা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক পোস্টে জনগণকে চরম সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বিশেষভাবে অনুরোধ করেছে যে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় ছাদের ওপর ওঠা, বালুর বস্তা জড়ো করা বা গাছ কাটার মতো কাজগুলো আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও, সামান্য ভুলও মারাত্মক আঘাত বা মৃত্যুর কারণ হতে পারে।

মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, জলমগ্ন রাস্তা বা আবর্জনাপূর্ণ এলাকায় গাড়ি চালানো অত্যন্ত বিপজ্জনক। যদিও বর্তমানে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো বন্ধ রয়েছে, তবে হাসপাতালগুলো খোলা আছে এবং ঘূর্ণিঝড়-সম্পর্কিত আঘাতের চিকিৎসা দিচ্ছে।

জ্যামাইকার পানি, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ম্যাথিউ সামুদা বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের ‘নিউজডে’ অনুষ্ঠানে দেশের পরিস্থিতিকে ‘ভীতিকর’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, জ্যামাইকার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ শতাংশ সমুদ্র থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে বসবাস করে। এই ঘূর্ণিঝড় রাজধানী কিংস্টন, ওল্ড হারবার বে, রকি পয়েন্ট এবং সেন্ট এলিজাবেথের মতো বেশ কয়েকটি নিচু উপকূলীয় অঞ্চলে সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সামুদা জানান, কর্তৃপক্ষ এক সপ্তাহ ধরে দ্বীপের বিভিন্ন স্থানে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করেছে এবং বন্যার হাত থেকে নিজেদের ঘরবাড়ি বাঁচাতে বালুর বস্তা ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে।

তবে, তিনি স্বীকার করেছেন যে জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে উৎসাহিত করা কঠিন হয়ে পড়ছে। বহু মানুষ তাদের ‘জীবন রক্ষার চেয়ে সম্পত্তি রক্ষা করাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন’, এটি কর্তৃপক্ষের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ।

মন্ত্রী সামুদা এই পরিস্থিতিতে বিদেশে বসবাসরত জ্যামাইকান প্রবাসীদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানিয়েছেন: ‘সময় শেষ হয়ে যাওয়ার আগেই’ যেন তাঁরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের ফোনকল করে খোঁজ নেন এবং তাঁদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে উৎসাহিত করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত