Ajker Patrika

পরমাণু শক্তিধর হতে চেয়েছিল তাইওয়ান, সিআইএ এজেন্টের বিশ্বাসঘাতকতায় স্বপ্নভঙ্গ

আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৫, ০৮: ৫৩
প্রকৌশলী কর্নেল চ্যাং শিয়েন-ই। ছবি: সংগৃহীত
প্রকৌশলী কর্নেল চ্যাং শিয়েন-ই। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে তাইওয়ানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরমাণু প্রকৌশলী কর্নেল চ্যাং শিয়েন-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেন চ্যাং। তাঁর সরবরাহ করা মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাইওয়ানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তাইপের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষের অবসান ঘটে।

তাইওয়ান ১৯৬০–এর দশকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করে। মূলত চীন ১৯৬৪ সালে দেশটির প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর পর তাইওয়ান এই কর্মসূচি চালু করে। পারমাণবিক শক্তিধর চীনের হুমকি মোকাবিলায় তাইওয়ানের নেতা চিয়াং কাই-শেক এক গোপন প্রকল্প চালু করেন। যার উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা। যদিও তাইওয়ান প্রকাশ্যে দাবি করে যে, তাদের পারমাণবিক গবেষণা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে প্রকৃতপক্ষে এই কর্মসূচি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছিল।

চ্যাং ১৯৬৭ সালে তাইওয়ানের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে এই প্রকল্পে যোগ দেন। পরে উচ্চতর পরমাণু প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় তাঁকে। তিনি টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পড়াশোনা করেন এবং ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি থেকে পরমাণু প্রকৌশলে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে তাইওয়ানে ফিরে এসে তিনি ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি রিসার্চে (আইএনইআর) কাজ শুরু করেন। এখানে তাঁর মূল কাজ ছিল, কম্পিউটার কোড তৈরি করা, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের সিমুলেশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। মূলত, এটি ছিল গোপনে তাইওয়ানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তারের ঘোর বিরোধিতা করেছে সে সময়। তাইওয়ান প্রকল্প গোপন রাখার চেষ্টা করলেও, মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দেহ করছিলেন যে, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা। তবে তাঁরা নিশ্চিত প্রমাণ পাচ্ছিলেন না। আর সেটিই নিশ্চিত করেন চ্যাং শিয়েন-ই।

চ্যাং প্রথমবার সিআইএর সংস্পর্শে আসেন ১৯৬৯ বা ১৯৭০ সালে। সে সময় এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তাঁকে পরমাণু শক্তি শিল্প সম্পর্কে আলোচনার জন্য মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তাব দেন। তিনি তখন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তবে চ্যাং তখনো বুঝতে পারেননি যে, ওই ব্যক্তি সিআইএর এজেন্ট।

এরপর, চ্যাং ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সে সময়, তাঁর কাছে আবারও সিআইএ—এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এবার তিনি আলোচনায় রাজি হন। চ্যাংকে নিশ্চিত করতে হয়েছিল যে, তিনি ডবল এজেন্ট নন এবং ১৯৮৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইএর গুপ্তচর হয়ে যান। এরপর টানা চার বছর তিনি নিয়মিত তাইপের বিভিন্ন গোপন আস্তানায় সিআইএর কর্মকর্তা ‘মার্কের’ সঙ্গে দেখা করতেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলতেন, গোপন তথ্য সরবরাহ করতেন এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাকে সুনিশ্চিত তথ্য দিতেন।

১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয় ও ইসরায়েলি পারমাণবিক কর্মসূচি ফাঁস করা মর্দেকাই ভানুনুর ঘটনার পর চ্যাং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তাইওয়ানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি সিআইএর মাধ্যমে কর্মসূচিটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।

সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে সিআইএ চ্যাং ও তাঁর পরিবারকে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। তাঁর পলায়ন ও সরবরাহ করা প্রমাণের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন নিশ্চিত হয় যে, তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এরপর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসন তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লি তেং-হুইকে কর্মসূচি পরিত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।

চ্যাংয়ের পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠায়। একটি প্লুটোনিয়াম নিষ্কাশন কেন্দ্র ধ্বংস করা হয় এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারের উপযোগী ভারী পানি (ডিউটেরিয়াম) ও তেজস্ক্রিয় জ্বালানি আমেরিকার তত্ত্বাবধানে অপসারণ করা হয়। ফলে কার্যত তাইওয়ানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়।

এই ঘটনার পর তাইওয়ানে চ্যাংকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঘোষণা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যা ২০০০ সালে তামাদি হয়ে যায়। তবে তিনি আর কখনো নিজ দেশে ফেরেননি, কারণ তিনি জানতেন না তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করা হবে।

চ্যাংয়ের এই কর্মকাণ্ড ঘিরে বিতর্ক আছে। কেউ কেউ মনে করেন, যদি তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করত, তাহলে তা চীনের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারত। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্রযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘটনা বিরল। কৌশলগত গবেষক আলেকজান্ডার হুয়াং মনে করেন, তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র হারিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুবিধা হারিয়েছে।

অন্যদিকে, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সু সু-ইয়ুনের মতে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত নির্ভুল নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র একই ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

এ ছাড়া, তাইওয়ান বিকল্প কৌশলগত সুবিধা তৈরি করেছে—সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। এটি একটি ‘সিলিকনের ঢাল’ তৈরি করেছে। যার ফলে, চীনের তাইওয়ানের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে এবং সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে।

পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট মনে করেন, যদি তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করত, তাহলে তা চীনের আক্রমণের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলত। পাশাপাশি, পারমাণবিক বিস্তারের বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিত।

বর্তমানে ৮০–এর কোঠায় পা রাখা চ্যাং শিয়েন-ই যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে বসবাস করছেন এবং এখনো তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি তাইওয়ানের সেরা স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেছেন এবং চীনের সঙ্গে একটি বিপজ্জনক পারমাণবিক সংঘাত এড়াতে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত এটি তাইওয়ানের জনগণের জন্য ভালো হয়েছে। অন্তত আমরা মূল ভূখণ্ডের চীনকে এমনভাবে উসকে দিইনি, যাতে তারা আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে।’

যদিও কেউ কেউ এখনো তাঁকে বিশ্বাসঘাতক মনে করেন, তবে চ্যাং আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আমি বিবেকের কাছে সাড়া দিয়েই কাজ করেছি। এখানে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নেই—অন্তত আমার নিজের কাছে তো নয়।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘরে অশান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চীনা নারীদের ‘এআই প্র্যাঙ্ক’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

চীনের নারীরা তাঁদের পুরুষ সঙ্গীদের ভালোবাসা পরীক্ষা করতে এক নতুন ট্রেন্ড ‘এআই গৃহহীন ব্যক্তি প্র্যাঙ্ক’ ব্যবহার করছেন বলে জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।

সম্প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোতে এই প্র্যাঙ্ক ভাইরাল হওয়ার পর তা উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। এই ট্রেন্ডে অংশ নিতে ব্যবহারকারীরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) দিয়ে ছবি বা ভিডিও তৈরি করেন। এসব ছবি বা ভিডিওতে অপরিচ্ছন্ন বেশভূষার এক গৃহহীন ব্যক্তিকে ব্যবহারকারীর বাড়ি বা কর্মস্থলে অবস্থান করতে দেখা যায়।

এরপর সেই ছবি বা ভিডিও ওই নারীরা তাঁদের স্বামী বা প্রেমিককে পাঠান। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সঙ্গীদের অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা পরখ করে দেখেন।

এ ধরনের ছবি তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে গুগলের জেমিনি বা মাইএডিটের ‘এআই রিপ্লেস’-এর মতো টুল।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, এক আইনজীবীর পরিবার এমন এক ভাইরাল প্র্যাঙ্কের ঘটনায় পুলিশ ডাকার মতো পরিস্থিতিতে পড়েছিল।

আরেক ঘটনায় চীনের পূর্বাঞ্চলীয় আনহুই প্রদেশে এক নারী তাঁর স্বামীকে ঘরে একজন ‘গৃহহীন ব্যক্তি ঢুকে পড়েছে’—এমন এআই দিয়ে বানানো ছবি পাঠান। সে সময় তাঁর স্বামী বন্ধুদের সঙ্গে রেস্তোরাঁয় খাচ্ছিলেন।

ছবি দেখে তিনি সেটিকে সত্যি ভেবে পুলিশে ফোন দেন। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে তারা বুঝতে পারে, ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি।

পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাটিকে ‘জনসাধারণের সম্পদের অপচয়’ বলে মন্তব্য করেন এবং ওই নারীকে ‘ভয় ছড়ানোর অপরাধে’ অভিযুক্ত করেন।

চীনের জননিরাপত্তা প্রশাসন শাস্তি আইন অনুযায়ী, এমন কাজের জন্য সর্বোচ্চ ১০ দিনের আটকাদেশ এবং প্রায় ৭০ ডলার জরিমানার বিধান আছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক চীনা পুরুষ এ ধরনের প্র্যাঙ্ক বা দুষ্টুমির তীব্র সমালোচনা করেছেন।

একজন লিখেছেন, ‘আপনারা কি সেই রাখাল ছেলের গল্প শোনেননি, যে নেকড়ে এসেছে বলে মিথ্যা চিৎকার দিত? যদি আপনারা বারবার মিথ্যা সতর্কতা দেন, তাহলে সত্যি সত্যি বিপদ হলেও কেউ আপনাদের বিশ্বাস করবে না।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরেকজন লিখেছেন, ‘এআই আমাদের জীবনে সুবিধা এনেছে, কিন্তু একই সঙ্গে এটি আস্থার সংকটও তৈরি করেছে। প্ল্যাটফর্মের উচিত, এআই কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেওয়া।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সর্বোচ্চ গতির ট্রেনের পরীক্ষা চালাচ্ছে চীন, ঘণ্টায় পাড়ি দিতে সক্ষম ৪৫০ কিমি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া
চীন বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগতির ট্রেনের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে। ছবি: সিনহুয়া

বিশ্বের দ্রুততম উচ্চগতির ট্রেন সিআর-৪৫০ এর প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক পরিচালনা শুরু করেছে চীন। বেইজিংয়ের রিং রেলওয়েতে এখনো এই ট্রেনটির পরীক্ষামূলক পরিচালনা চলছে। ট্রেনটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৪৫০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম। তবে ট্রেনের বাণিজ্যিক চলাচলের সময় এর সর্বোচ্চ গতি নির্ধারিত হবে প্রতি ঘণ্টায় ৪০০ কিলোমিটার।

চীনা সংবাদ সংস্থা সিনহুয়ার খবরে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর বেইজিংয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ট্রেনটিকে ট্র্যাকে নামানো হয়। এটি বর্তমানে চীনের সর্বোচ্চ গতির চলমান সিআর–৪০০ ফুজিং ট্রেনের তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত। ফুজিং ট্রেনগুলো প্রতি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩৫০ কিলোমিটার গতিতে চলে।

china-2
china-2

ট্রেনটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিআরআরসি করপোরেশন লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং ফেং জানিয়েছেন, সিআর–৪৫০ উচ্চগতির ট্রেন প্রযুক্তিতে এক বিশাল অগ্রগতি এনেছে। তত্ত্ব, প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, মানদণ্ড ও পরিচালন ব্যবস্থাপনা—সব ক্ষেত্রেই নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে এই ট্রেন।

৪০০ কিলোমিটার গতির নজিরবিহীন গতি অর্জনের জন্য প্রকৌশলীরা ট্রেনটির ট্র্যাকশন পাওয়ার (ট্রেনে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা), ডাইনামিক পারফরম্যান্স বা গতিশীল অবস্থায় ট্রেনটিতে যাবতীয় পরিবর্তন পরিমাপ এবং প্যান্টোগ্রাফ সিস্টেম বা বৈদ্যুতিক লাইন থেকে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে একটি ট্রেনে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় তা উন্নত করেছেন।

ওয়াংয়ের ভাষায়, ট্রেনটিতে ব্যবহৃত হয়েছে ওয়াটার-কুলড পারমানেন্ট ম্যাগনেট ট্র্যাকশন সিস্টেম, নতুন প্রজন্মের উচ্চ-স্থিতিশীলতা বগি এবং একাধিক উদ্ভাবনী সিস্টেম। যার ফলে দীর্ঘ সময় উচ্চ গতিতে চলাচলেও এটি স্থিতিশীল থাকে। তিনি জানিয়েছেন, নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও সিআর–৪৫০ এক ধাপ এগিয়ে। এতে রয়েছে মাল্টিলেয়ার ইমারজেন্সি ব্রেক নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি এবং ৪ হাজারেরও বেশি অনবোর্ড মনিটরিং সেন্সর, যা চলমান অবস্থায় ট্রেনের গিয়ার, পুরো ট্রেন, হাই–ভোল্টেজ প্যান্টোগ্রাফ, ট্রেন নিয়ন্ত্রণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা—সবকিছুই তাৎক্ষণিকভাবে পর্যবেক্ষণ করে। এ ছাড়া, ওভার-দ্য-হরাইজন শনাক্তকরণ ব্যবস্থাও যুক্ত হয়েছে এতে। এই ব্যবস্থা ট্রেনের সামনে ট্র্যাকের জরুরি পরিস্থিতি আগেভাগে শনাক্ত করতে সাহায্য করে।

china-3
china-3

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রেও এসেছে বিপ্লব। বগির ‘স্ট্রিমলাইনড কাওলিং’ ধাঁচের নকশা বাতাসের ঘর্ষণ ও প্রতিরোধ কমিয়েছে, আর নতুন হালকা উপকরণ ও প্রযুক্তি ট্রেনের মোট ওজন ১০ শতাংশ কমিয়েছে এবং চলাচলের ক্ষেত্রে ট্র্যাকের সঙ্গে চাকার এবং সামগ্রিক ঘর্ষণ প্রতিরোধ ২২ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়েছে।

ট্রেনের শব্দ নিয়ন্ত্রণেও এসেছে অগ্রগতি। সাতটি নতুন প্রযুক্তি—যেমন সাউন্ড-অ্যাবসর্বিং উপকরণ ও উন্নত অ্যারোডাইনামিক নকশা ট্রেনের অভ্যন্তরীণ শব্দ ২ ডেসিবল কমিয়েছে। ফলে যাত্রীরা পাচ্ছেন আরও নিঃশব্দ ও আরামদায়ক ভ্রমণ অভিজ্ঞতা।

তা ছাড়া, সিআর–৪৫০ এ যুক্ত হয়েছে একাধিক বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ফিচার, যা ট্রেনের পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, চালকের সঙ্গে যোগাযোগ, নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ এবং যাত্রীসেবা—সব দিক থেকেই একে আগের সব মডেলের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে বলে জানান ওয়াং।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ভারতের সর্ববৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের এক ইউনিট পরীক্ষামূলকভাবে চালু, সক্ষমতা কত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৫: ১০
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত
সুবিনসিরি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সুবনসিরির আটটি ইউনিটের মধ্যে একটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই প্রকল্পটির পূর্ণাঙ্গ উদ্বোধন হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভারতের জাতীয় জলবিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ন্যাশনাল হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন লিমিটেড (এনএইচপিসি)।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনএইচপিসি লিমিটেডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন—অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম সীমান্তে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ২৫০ মেগাওয়াট ইউনিটের ‘ওয়েট কমিশনিং’ গত শুক্রবার শুরু হয়েছে। সংস্থাটির এক মুখপাত্র দ্য হিন্দুকে বলেছেন, ‘ওয়েট কমিশনিং মূলত টারবাইনের বিভিন্ন প্রযুক্তিগত বিষয় পরীক্ষা করার একটি প্রক্রিয়া, এ প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় না। পানির প্রবাহের ভিত্তি করে এই পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া চার থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত চলতে পারে।’

২ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পে রয়েছে আটটি ইউনিট, প্রতিটির ক্ষমতা ২৫০ মেগাওয়াট।

মুখপাত্র জানান, এই আটটির মধ্যে চারটি ইউনিট পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত। পরবর্তী ধাপে অন্তত দুটি ইউনিট সমন্বয় করা হবে, যাতে প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করা যায়।

অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের সীমানার গেরুকামুখে অবস্থিত সুবনসিরি লোয়ার প্রকল্পটির নির্মাণকাজ ২০০৫ সালের জানুয়ারিতে উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সালে আসামে বাঁধবিরোধী আন্দোলন ও ভাটিতে পরিবেশগত ক্ষতির আশঙ্কায় প্রকল্পের কাজ স্থগিত করা হয়।

এরপর, ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে পুনরায় কাজ শুরু হয়। সেই সময় এনএইচপিসি প্রকল্পটিতে বাড়তি নিরাপত্তা ও ক্ষতিপূরণমূলক পরিবেশ–সংরক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করে। এনএইচপিসি চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ভূপেন্দর গুপ্তা পরীক্ষামূলক এই কাজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই অর্জন এনএইচপিসির প্রকৌশল দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এটি কেবল একটি প্রকল্প–মাইলফলক নয়, বরং ভারতের পরিবেশবান্ধব ও স্বনির্ভর জ্বালানি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রযাত্রার প্রতীক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শাশুড়িকে রাখতে আপত্তি স্ত্রীর, যুবকের আত্মহত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শাশুড়ির দায়িত্ব নিতে আপত্তি জানিয়েছেন স্ত্রী। এ কারণে এক যুবক আবাসিক ভবনের ১৫ তলা থেকে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতের বৃহত্তর ফরিদাবাদে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

িহত ব্যক্তির নাম যোগেশ কুমার। মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রের বাসিন্দা। গুরুগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে রেডিওথেরাপিস্ট হিসাবে কাজ করতেন। ৯ বছর আগে নেহা রাওয়াত নামে এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় বছরের একটি সন্তান রয়েছে এ দম্পতির।

যোগেশের স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁর চাচা প্রকাশ সিং। তিনি বলেন, যোগেশকে তাঁর স্ত্রী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন হয়রানি করছিলেন। তারা চাইতেন না যোগেশের মা তাদের সঙ্গে থাকুক।

প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন, যোগেশ ও নেহা আগে নয়ডাতে থাকতেন। নেহা সেখানে চাকরি করতেন। স্বামী-স্ত্রী দুজনেই কর্মরত থাকায় সন্তানের ঠিকমতো যত্ন নেওয়া সম্ভব হচ্ছিল না বলে যোগেশ তাঁর মাকে নিজের কাছে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। নেহা এতে রাজি হননি।

ছয় মাস আগে যোগেশ সন্তানকে নিয়ে ফরিদাবাদের সেক্টর ৮৭-এর পার্ল সোসাইটিতে চলে আসেন। নেহা নয়ডাতে থেকে যান। এ সময় যোগেশ সন্তানের দেখভাল করতে তাঁর মাকে নিয়ে আসেন।

যোগেশের চাচা অভিযোগে আরও বলেন, এক মাস আগে ওই বাসায় এসে যোগেশের সঙ্গে থাকতে শুরু করেন নেহা। সে সময় যোগেশের মায়ের সেখানে থাকা নিয়ে আপত্তি তোলেন তিনি।

পরে নেহার দুই ভাই আশীষ রাওয়াত ও অমিত রাওয়াত এসে যোগেশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এসব নিয়ে যোগেশ মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন বলে তাঁর চাচা প্রকাশ সিং অভিযোগে বলেন।

চাচার অভিযোগ অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার যোগেশ নেহাকে নিয়ে গোয়ালিয়রে যান। ফেরার পথে নেহাকে নয়ডায় নামিয়ে দিয়ে একাই পার্ল সোসাইটির ফ্ল্যাটে ফিরে আসেন। পরদিন শুক্রবার রাতে পার্ল সোসাইটির ১৫ তলা থেকে লাফ দেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর।

এ ঘটনায় ভুপানি থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে যোগেশের স্ত্রী নেহা রাওয়াত, তাঁর বাবা-মা বীর সিং রাওয়াত ও শান্তি রাওয়াত এবং দুই ভাই আশীষ ও অমিত রাওয়াতের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

ভুপানি থানার এসএইচও ইন্সপেক্টর সংগ্রাম দাহিয়া বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য তল্লাশি অভিযান চালাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত