অনলাইন ডেস্ক
১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে তাইওয়ানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরমাণু প্রকৌশলী কর্নেল চ্যাং শিয়েন-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেন চ্যাং। তাঁর সরবরাহ করা মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাইওয়ানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তাইপের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষের অবসান ঘটে।
তাইওয়ান ১৯৬০–এর দশকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করে। মূলত চীন ১৯৬৪ সালে দেশটির প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর পর তাইওয়ান এই কর্মসূচি চালু করে। পারমাণবিক শক্তিধর চীনের হুমকি মোকাবিলায় তাইওয়ানের নেতা চিয়াং কাই-শেক এক গোপন প্রকল্প চালু করেন। যার উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা। যদিও তাইওয়ান প্রকাশ্যে দাবি করে যে, তাদের পারমাণবিক গবেষণা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে প্রকৃতপক্ষে এই কর্মসূচি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছিল।
চ্যাং ১৯৬৭ সালে তাইওয়ানের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে এই প্রকল্পে যোগ দেন। পরে উচ্চতর পরমাণু প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় তাঁকে। তিনি টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পড়াশোনা করেন এবং ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি থেকে পরমাণু প্রকৌশলে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে তাইওয়ানে ফিরে এসে তিনি ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি রিসার্চে (আইএনইআর) কাজ শুরু করেন। এখানে তাঁর মূল কাজ ছিল, কম্পিউটার কোড তৈরি করা, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের সিমুলেশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। মূলত, এটি ছিল গোপনে তাইওয়ানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তারের ঘোর বিরোধিতা করেছে সে সময়। তাইওয়ান প্রকল্প গোপন রাখার চেষ্টা করলেও, মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দেহ করছিলেন যে, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা। তবে তাঁরা নিশ্চিত প্রমাণ পাচ্ছিলেন না। আর সেটিই নিশ্চিত করেন চ্যাং শিয়েন-ই।
চ্যাং প্রথমবার সিআইএর সংস্পর্শে আসেন ১৯৬৯ বা ১৯৭০ সালে। সে সময় এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তাঁকে পরমাণু শক্তি শিল্প সম্পর্কে আলোচনার জন্য মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তাব দেন। তিনি তখন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তবে চ্যাং তখনো বুঝতে পারেননি যে, ওই ব্যক্তি সিআইএর এজেন্ট।
এরপর, চ্যাং ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সে সময়, তাঁর কাছে আবারও সিআইএ—এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এবার তিনি আলোচনায় রাজি হন। চ্যাংকে নিশ্চিত করতে হয়েছিল যে, তিনি ডবল এজেন্ট নন এবং ১৯৮৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইএর গুপ্তচর হয়ে যান। এরপর টানা চার বছর তিনি নিয়মিত তাইপের বিভিন্ন গোপন আস্তানায় সিআইএর কর্মকর্তা ‘মার্কের’ সঙ্গে দেখা করতেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলতেন, গোপন তথ্য সরবরাহ করতেন এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাকে সুনিশ্চিত তথ্য দিতেন।
১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয় ও ইসরায়েলি পারমাণবিক কর্মসূচি ফাঁস করা মর্দেকাই ভানুনুর ঘটনার পর চ্যাং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তাইওয়ানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি সিআইএর মাধ্যমে কর্মসূচিটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে সিআইএ চ্যাং ও তাঁর পরিবারকে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। তাঁর পলায়ন ও সরবরাহ করা প্রমাণের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন নিশ্চিত হয় যে, তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এরপর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসন তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লি তেং-হুইকে কর্মসূচি পরিত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
চ্যাংয়ের পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠায়। একটি প্লুটোনিয়াম নিষ্কাশন কেন্দ্র ধ্বংস করা হয় এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারের উপযোগী ভারী পানি (ডিউটেরিয়াম) ও তেজস্ক্রিয় জ্বালানি আমেরিকার তত্ত্বাবধানে অপসারণ করা হয়। ফলে কার্যত তাইওয়ানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়।
এই ঘটনার পর তাইওয়ানে চ্যাংকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঘোষণা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যা ২০০০ সালে তামাদি হয়ে যায়। তবে তিনি আর কখনো নিজ দেশে ফেরেননি, কারণ তিনি জানতেন না তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করা হবে।
চ্যাংয়ের এই কর্মকাণ্ড ঘিরে বিতর্ক আছে। কেউ কেউ মনে করেন, যদি তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করত, তাহলে তা চীনের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারত। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্রযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘটনা বিরল। কৌশলগত গবেষক আলেকজান্ডার হুয়াং মনে করেন, তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র হারিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুবিধা হারিয়েছে।
অন্যদিকে, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সু সু-ইয়ুনের মতে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত নির্ভুল নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র একই ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
এ ছাড়া, তাইওয়ান বিকল্প কৌশলগত সুবিধা তৈরি করেছে—সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। এটি একটি ‘সিলিকনের ঢাল’ তৈরি করেছে। যার ফলে, চীনের তাইওয়ানের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে এবং সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে।
পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট মনে করেন, যদি তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করত, তাহলে তা চীনের আক্রমণের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলত। পাশাপাশি, পারমাণবিক বিস্তারের বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিত।
বর্তমানে ৮০–এর কোঠায় পা রাখা চ্যাং শিয়েন-ই যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে বসবাস করছেন এবং এখনো তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি তাইওয়ানের সেরা স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেছেন এবং চীনের সঙ্গে একটি বিপজ্জনক পারমাণবিক সংঘাত এড়াতে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত এটি তাইওয়ানের জনগণের জন্য ভালো হয়েছে। অন্তত আমরা মূল ভূখণ্ডের চীনকে এমনভাবে উসকে দিইনি, যাতে তারা আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে।’
যদিও কেউ কেউ এখনো তাঁকে বিশ্বাসঘাতক মনে করেন, তবে চ্যাং আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আমি বিবেকের কাছে সাড়া দিয়েই কাজ করেছি। এখানে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নেই—অন্তত আমার নিজের কাছে তো নয়।’
আরও খবর পড়ুন:
১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে তাইওয়ানের গোপন পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ পরমাণু প্রকৌশলী কর্নেল চ্যাং শিয়েন-ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে যান। দীর্ঘদিন ধরে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গুপ্তচর হিসেবে কাজ করেন চ্যাং। তাঁর সরবরাহ করা মূল্যবান গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তাইওয়ানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচিতে হস্তক্ষেপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে তাইপের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষের অবসান ঘটে।
তাইওয়ান ১৯৬০–এর দশকে পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করে। মূলত চীন ১৯৬৪ সালে দেশটির প্রথম পারমাণবিক বোমার সফল পরীক্ষা চালানোর পর তাইওয়ান এই কর্মসূচি চালু করে। পারমাণবিক শক্তিধর চীনের হুমকি মোকাবিলায় তাইওয়ানের নেতা চিয়াং কাই-শেক এক গোপন প্রকল্প চালু করেন। যার উদ্দেশ্য ছিল দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করা। যদিও তাইওয়ান প্রকাশ্যে দাবি করে যে, তাদের পারমাণবিক গবেষণা বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত। তবে প্রকৃতপক্ষে এই কর্মসূচি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছিল।
চ্যাং ১৯৬৭ সালে তাইওয়ানের সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন হিসেবে এই প্রকল্পে যোগ দেন। পরে উচ্চতর পরমাণু প্রশিক্ষণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয় তাঁকে। তিনি টেনেসির ওক রিজ ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিতে পড়াশোনা করেন এবং ইউনিভার্সিটি অব টেনেসি থেকে পরমাণু প্রকৌশলে পিএইচডি অর্জন করেন। ১৯৭৭ সালে তাইওয়ানে ফিরে এসে তিনি ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার এনার্জি রিসার্চে (আইএনইআর) কাজ শুরু করেন। এখানে তাঁর মূল কাজ ছিল, কম্পিউটার কোড তৈরি করা, যা পারমাণবিক বিস্ফোরণের সিমুলেশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। মূলত, এটি ছিল গোপনে তাইওয়ানের পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
তাইওয়ানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্তারের ঘোর বিরোধিতা করেছে সে সময়। তাইওয়ান প্রকল্প গোপন রাখার চেষ্টা করলেও, মার্কিন কর্মকর্তারা সন্দেহ করছিলেন যে, এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করা। তবে তাঁরা নিশ্চিত প্রমাণ পাচ্ছিলেন না। আর সেটিই নিশ্চিত করেন চ্যাং শিয়েন-ই।
চ্যাং প্রথমবার সিআইএর সংস্পর্শে আসেন ১৯৬৯ বা ১৯৭০ সালে। সে সময় এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তি তাঁকে পরমাণু শক্তি শিল্প সম্পর্কে আলোচনার জন্য মধ্যাহ্নভোজের প্রস্তাব দেন। তিনি তখন এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। তবে চ্যাং তখনো বুঝতে পারেননি যে, ওই ব্যক্তি সিআইএর এজেন্ট।
এরপর, চ্যাং ১৯৮০ সালে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। সে সময়, তাঁর কাছে আবারও সিআইএ—এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। এবার তিনি আলোচনায় রাজি হন। চ্যাংকে নিশ্চিত করতে হয়েছিল যে, তিনি ডবল এজেন্ট নন এবং ১৯৮৪ সালে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে সিআইএর গুপ্তচর হয়ে যান। এরপর টানা চার বছর তিনি নিয়মিত তাইপের বিভিন্ন গোপন আস্তানায় সিআইএর কর্মকর্তা ‘মার্কের’ সঙ্গে দেখা করতেন। তিনি গুরুত্বপূর্ণ নথির ছবি তুলতেন, গোপন তথ্য সরবরাহ করতেন এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাকে সুনিশ্চিত তথ্য দিতেন।
১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক বিপর্যয় ও ইসরায়েলি পারমাণবিক কর্মসূচি ফাঁস করা মর্দেকাই ভানুনুর ঘটনার পর চ্যাং বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, তাইওয়ানের পারমাণবিক উচ্চাভিলাষ অত্যন্ত বিপজ্জনক। তিনি সিআইএর মাধ্যমে কর্মসূচিটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক, ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে সিআইএ চ্যাং ও তাঁর পরিবারকে গোপনে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যায়। তাঁর পলায়ন ও সরবরাহ করা প্রমাণের ভিত্তিতে ওয়াশিংটন নিশ্চিত হয় যে, তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে। এরপর তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান প্রশাসন তাইওয়ানের নতুন প্রেসিডেন্ট লি তেং-হুইকে কর্মসূচি পরিত্যাগের জন্য চাপ প্রয়োগ করে।
চ্যাংয়ের পালিয়ে যাওয়ার পরপরই, যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার জন্য বিশেষজ্ঞ দল পাঠায়। একটি প্লুটোনিয়াম নিষ্কাশন কেন্দ্র ধ্বংস করা হয় এবং পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহারের উপযোগী ভারী পানি (ডিউটেরিয়াম) ও তেজস্ক্রিয় জ্বালানি আমেরিকার তত্ত্বাবধানে অপসারণ করা হয়। ফলে কার্যত তাইওয়ানের পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ হয়ে যায়।
এই ঘটনার পর তাইওয়ানে চ্যাংকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ ঘোষণা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়, যা ২০০০ সালে তামাদি হয়ে যায়। তবে তিনি আর কখনো নিজ দেশে ফেরেননি, কারণ তিনি জানতেন না তাঁকে কীভাবে গ্রহণ করা হবে।
চ্যাংয়ের এই কর্মকাণ্ড ঘিরে বিতর্ক আছে। কেউ কেউ মনে করেন, যদি তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করত, তাহলে তা চীনের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারত। কারণ, পারমাণবিক অস্ত্রযুক্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রত্যক্ষ যুদ্ধের ঘটনা বিরল। কৌশলগত গবেষক আলেকজান্ডার হুয়াং মনে করেন, তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র হারিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সুবিধা হারিয়েছে।
অন্যদিকে, তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সু সু-ইয়ুনের মতে, পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োজন নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত নির্ভুল নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র একই ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
এ ছাড়া, তাইওয়ান বিকল্প কৌশলগত সুবিধা তৈরি করেছে—সেমিকন্ডাক্টর প্রযুক্তি। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি) বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। এটি একটি ‘সিলিকনের ঢাল’ তৈরি করেছে। যার ফলে, চীনের তাইওয়ানের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে এবং সম্ভাব্য সামরিক আগ্রাসন প্রতিরোধে ভূমিকা রাখছে।
পারমাণবিক অস্ত্র বিশেষজ্ঞ ডেভিড অলব্রাইট মনে করেন, যদি তাইওয়ান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করত, তাহলে তা চীনের আক্রমণের সম্ভাবনা আরও বাড়িয়ে তুলত। পাশাপাশি, পারমাণবিক বিস্তারের বিরোধী যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা কমিয়ে দিত।
বর্তমানে ৮০–এর কোঠায় পা রাখা চ্যাং শিয়েন-ই যুক্তরাষ্ট্রের আইডাহোতে বসবাস করছেন এবং এখনো তাঁর সিদ্ধান্তের প্রতি আস্থাশীল। তিনি বিশ্বাস করেন, তিনি তাইওয়ানের সেরা স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করেছেন এবং চীনের সঙ্গে একটি বিপজ্জনক পারমাণবিক সংঘাত এড়াতে সাহায্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত এটি তাইওয়ানের জনগণের জন্য ভালো হয়েছে। অন্তত আমরা মূল ভূখণ্ডের চীনকে এমনভাবে উসকে দিইনি, যাতে তারা আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে।’
যদিও কেউ কেউ এখনো তাঁকে বিশ্বাসঘাতক মনে করেন, তবে চ্যাং আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেন, ‘আমি বিবেকের কাছে সাড়া দিয়েই কাজ করেছি। এখানে কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নেই—অন্তত আমার নিজের কাছে তো নয়।’
আরও খবর পড়ুন:
ইউক্রেনকে এই সময়ের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। বাংলাদেশের সময় আজ রাত সাড়ে ৯টার দিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে এমন বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘ইউক্রেন আমাদের সময়ের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।’
৩১ মিনিট আগেক্রিপটো রিজার্ভ গঠন করবে যুক্তরাষ্ট্র—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন ঘোষণার পর ক্রিপটোকারেন্সির বাজারে বড় ধরনের উত্থান দেখা গেছে। মার্কিন ক্রিপটো রিজার্ভের প্রথম ধাপে পাঁচটি ডিজিটাল টোকেন অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেসংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে চার মাস বয়সী এক শিশুকে হত্যার অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় নারী শাহজাদি খানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। আজ সোমবার দিল্লি হাইকোর্টকে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
৪ ঘণ্টা আগেঅস্ট্রেলিয়ায় হ্যারিসন ‘সোনালি বাহুর অধিকারী মানুষ’ হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর রক্তে বিরল একটি অ্যান্টিবডি (অ্যান্টি-ডি) ছিল। এই অ্যান্টিবডি এমন ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হতো, যা গর্ভবতী মায়েদের শরীরে প্রয়োগ করা হয়। মূলত যেসব মায়ের রক্ত অনাগত শিশুর রক্তের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ তাঁদের শরীরেই এই ওষুধটি দেওয়া
৬ ঘণ্টা আগে