Ajker Patrika

আফগানিস্তানে তালেবানের নেতৃত্বে যারা

আপডেট : ১৫ আগস্ট ২০২১, ২১: ৫৯
আফগানিস্তানে তালেবানের নেতৃত্বে যারা

২০০১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই পশ্চিমা সমর্থিত আফগান সরকারের বিরুদ্ধে কাবুল দখলের লড়াই করে যাচ্ছে তালেবান। তারা মূলত তথাকথিত ‘মুজাহিদীন’ যোদ্ধাদেরই সংগঠনে অঙ্গীভূত করেছে। এরাই যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ১৯৮০–এর দশকে সোভিয়েত বাহিনীকে হটিয়ে দিয়েছিল।

মূলত ১৯৯৪ সালে গৃহযুদ্ধের সময় তালেবান (মাদ্রাসার শিক্ষক–শিক্ষার্থী) একটি সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৯৬ সালের মধ্যে দেশের অধিকাংশ অংশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ফেলে তারা। এরপরই তারা আফগানিস্তানে কঠোর ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করে। বিরোধী এবং পশ্চিমা দেশগুলো তালেবানের শরিয়া সংস্করণটিকে বরাবর নৃশংসতা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু দমনের হাতিয়ার হিসেবে বর্ণনা করে এসেছে।

বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরু হওয়ার পর থেকে তালেবান আবারও সামরিকভাবে আফগানিস্তানে শক্তিশালী গোষ্ঠী হিসেবে আবির্ভূত হয়। অধিকাংশ প্রাদেশিক রাজধানী দখলের পর এখন রাজধানী কাবুল অবরুদ্ধ করে রেখেছে তারা। এরই মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের আলোচনাও শুরু হয়ে গেছে। তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কাবুল দখলে তারা কোনো প্রকার বলপ্রয়োগ করবে না। আশরাফ গনি সরকার শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তাব গ্রহণ করে এরই মধ্যে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে।

তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা এবং মূল নেতা ছিলেন মোল্লা মোহাম্মদ ওমর। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ হামলার পর মার্কিন অভিযানে তালেবান উৎখাত হলে আত্মগোপনে যান ওমর। ওমরের অবস্থান এতোটাই গোপন ছিল যে মৃত্যুর দুই বছর পর ২০১৩ সালে তাঁর ছেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বর্তমানে তালেবানের গুরুত্বপূর্ণ নেতা যারা:

হায়বাতুল্লাহ আখুনজাদা
‘মুমিনদের নেতা’ বলা তাঁকে।  ইসলামি শরিয়া বিষয়ে পণ্ডিত এই ব্যক্তি তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা। তিনি দলের রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামরিক বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেন। আখুনজাদার বর্তমান বয়স প্রায় ৬০ বছর বলে জানা যায়।

২০১৬ সালে আফগানিস্তান–পাকিস্তান সীমান্তের কাছে মার্কিন ড্রোন হামলায় আখতার মনসুর নিহত হওয়ার পর আখুনজাদা তালেবানের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।

২০১৬ সালে মে মাসে হঠাৎ করে উধাও হয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ বছর আখুনজাদা দক্ষিণ–পশ্চিম পাকিস্তানের কুচলাক শহরের একটি মসজিদে শিক্ষকতা ও ধর্ম প্রচারে ব্রত ছিলেন। তাঁর সহযোগী এবং ছাত্ররা রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ধারণা করা হয়, তাঁর বর্তমান বয়স ৬০ বছর। তবে তাঁর অবস্থান সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না।

মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব
তালেবানের প্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে ইয়াকুব। তিনি সংগঠনের সামরিক অভিযানগুলো তদারকি করেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাতে জানা যায়, তিনি আফগানিস্তানেই অবস্থান করছেন। উত্তরাধিকার নিয়ে সংগঠনের মধ্যে টানাপোড়েনের সময় তাঁকে প্রধান নেতা বানানোর প্রস্তাব উঠেছিল।

কিন্তু ২০১৬ সালে তিনি আখুনজাদাকেই নেতা হিসেবে মনোনীত করেন। কারণ তিনি মনে করেছিলেন, তাঁর নিজের যুদ্ধক্ষেত্রের অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। তাছাড়া বয়সও খুব কম। মনসুরের উত্তরসূরী নির্বাচনের বৈঠকে উপস্থিত একজন তালেবান কমান্ডার এমনটিই জানিয়েছেন। 

ধারণা করা হয়, ইয়াকুবের বয়স এখন ত্রিশের কোঠায়।

সিরাজউদ্দিন হাক্কানি
বিশিষ্ট মুজাহিদিন কমান্ডার জালালউদ্দিন হাক্কানির ছেলে সিরাজউদ্দিন, তিনি হাক্কানি নেটওয়ার্কের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এটি মোটামুটি সংগঠিত একটি গোষ্ঠী। এরা পাকিস্তান–আফগানিস্তান সীমান্তে তালেবানের আর্থিক ও সামরিক সম্পদের তদারকি করে।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, হাক্কানিরাই আফগানিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলার প্রচলন করে। আফগানিস্তানে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের হামলার জন্য তারা দায়ী। এর মধ্যে কাবুলের একটি গুরুত্বপূর্ণ হোটেলে হামলা, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইকে হত্যা চেষ্টা এবং ভারতীয় দূতাবাসে আত্মঘাতী হামলা অন্যতম।

হাক্কানির বয়স ৪০ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে বলে ধারণা করা হয়। তবে তাঁর অবস্থান অজানা।

মোল্লা আব্দুল গনি বেরাদরমোল্লা আব্দুল গনি বেরাদর
তালেবানের অন্যতম সহ–প্রতিষ্ঠাতা, আব্দুল গনি এখন তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান। কাতারের রাজধানী দোহায় শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়া দলে ছিলেন। একটি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে আফগানিস্তানে যুদ্ধবিরতি এবং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথ সুগম করার এই প্রচেষ্টায় সম্মুখসারীর নেতা তিনি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে প্রক্রিয়াটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনে ব্যর্থ হয়। এরপরই মূলত তালেবান আফগানিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিতে শুরু করে।

মোল্লা ওমরের সবচেয়ে বিশ্বস্ত কমান্ডারদের একজন আব্দুল গনি। ২০১০ সালে দক্ষিণ পাকিস্তানের করাচি শহরে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়েন তিনি। ২০১৮ সালে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়।

শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাইশের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে পর্যন্ত তালেবান সরকারের একজন উপমন্ত্রী ছিলেন স্টানিকজাই। প্রায় এক দশক ধরে দোহায় বসবাস করছেন। ২০১৫ সালে সেখানে তালেবানের রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হন। স্টানিকজাই আফগান সরকারের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং বেশ কয়েকটি দেশে কূটনৈতিক সফরে তালেবানের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

আব্দুল হাকিম হাক্কানি
তিনি তালেবানের শান্তি আলোচক দলের প্রধান। তালেবানের সাবেক ছায়া প্রধান বিচারপতি। এই পদটি অত্যন্ত প্রভাবশালী ধর্মীয় পণ্ডিতদের নিয়ে গঠিত কাউন্সিলের প্রধান। বর্তমান নেতা আখুনজাদার অত্যন্ত বিশ্বস্ত ব্যক্তি তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত