Ajker Patrika

দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন /মিয়ানমারের ডিজিটাল স্ক্যাম সাম্রাজ্যের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ৩১ মে ২০২৫, ১৫: ২২
মিয়ানমারের একটি স্ক্যাম সেন্টারে আটকের পাহারা দিচ্ছে স্থানীয় একটি মিলিশিয়া গ্রুপের এক সদস্য। ছবি: এএফপি
মিয়ানমারের একটি স্ক্যাম সেন্টারে আটকের পাহারা দিচ্ছে স্থানীয় একটি মিলিশিয়া গ্রুপের এক সদস্য। ছবি: এএফপি

সিয়েরা লিওনের ক্রীড়া শিক্ষক স্যামুয়েল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পান। চাকরির স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল থাইল্যান্ডের নাম। তিনি নিজ দেশে যে পরিমাণ বেতন পান তার দশগুণ বেশি বেতনের একই ধরনের চাকরির অফার তাঁর কাছে লোভনীয় মনে হয়েছিল।

কিন্তু ব্যাংককে নামতেই তাঁর স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। সীমান্ত পেরিয়ে তাঁকে যাওয়া হয় মিয়ানমারে। সেখানে তাঁকে নির্যাতন করা হয় এবং অনলাইন প্রতারণা শিল্পে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। কাঁটাতারের বেড়া, উঁচু দেয়াল এবং সশস্ত্র প্রহরী দ্বারা সুরক্ষিত এক বিশাল কম্পাউন্ডে তাঁকে দশ মাস আটকে রাখা হয়েছিল। তার কাজ ছিল সিঙ্গাপুরের এক ধনী মহিলা সেজে অনলাইন বিক্রয় প্ল্যাটফর্ম ই-বেতে ‘শিকারদের’ প্রতারিত করা।

অবশেষে, প্রায় দুই মাস পর এক প্রকারের মুক্তি আসে তাঁর গত ফেব্রুয়ারিতে। মায়াওয়াদিতে প্রায় ৭ হাজার লোককে স্ক্যাম কম্পাউন্ড থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। মিয়ানমারের এই শহরটি থাইল্যান্ড সীমান্তের খুব কাছে অবস্থিত এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন-প্রতারণা কেন্দ্রগুলোর একটি।

বিভিন্ন অনুমান বলছে, এই প্রতারণা শিল্পের মূল্য বিশ্বজুড়ে অবৈধ মাদক ব্যবসার মূল্যের চেয়েও বেশি। এই অভিযান ছিল নিছকই একটি ছোট আঘাত। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, মিয়ানমারে এই ধরনের কম্পাউন্ডগুলোতে অন্তত ১ লাখ ২০ হাজার মানুষ এখনো বন্দী আছে। ওয়াশিংটন ভিত্তিক থিংক-ট্যাংক ইউনাইটেড স্টেটস ইনস্টিটিউট অব পিসের মতে, বিশ্বব্যাপী এই অবৈধ ব্যবসায় প্রায় ১৫ লাখ মানুষ বাধ্যতামূলকভাবে এবং স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিযুক্ত।

মিয়ানমারে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে দুঃসহ এক ক্যাম্পে বন্দী থাকার পর গত ৮ই মে স্যামুয়েল সিয়েরা লিওনের রাজধানী ফ্রিটাউনে যেতে সক্ষম হন। মায়াওয়াদিতে প্রায় ৪০০ জন মানুষ এখনো আটকে আছেন, যাদের অধিকাংশই ইথিওপিয়ার। এমন ঘটনার ক্ষেত্রে স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের বিষয়টি থাইল্যান্ড বা মিয়ানমারে অবস্থিত সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসগুলোর আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রায়ই আটকে যায়। আবার অনেক আফ্রিকান দেশে কোনো কূটনৈতিক মিশন নেই এই দুই দেশে। ফলে তাদের প্রায়ই বেইজিং বা টোকিওর শরণাপন্ন হতে হয়, যেখানে দেশগুলোর মিশন আছে।

অনেক আফ্রিকান সরকারই আটকে পড়াদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে ফ্লাইটের খরচ দিতে অক্ষম বা অনিচ্ছুক। যারা এখনো আটকে আছেন তাদের বিভিন্ন সামরিক ক্যাম্পে বা শিবিরে রাখা হয়েছে। আবার এসব সামরিক ক্যাম্প বা আশ্রয় শিবিরের বেশির ভাগই শক্তিশালী মিলিশিয়া কায়িন বর্ডার গার্ড ফোর্সের পরিচালনায়। এসব ক্যাম্পে খাদ্য ও পানির সরবরাহ সীমিত। ফেব্রুয়ারি থেকে বেশ কয়েকজন চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এত কিছুর পরও স্ক্যাম কার্যক্রম বেড়েই চলেছে। থাইল্যান্ড-মিয়ানমার সীমান্তে কাজ করা এনজিও গ্লোবাল অ্যাডভান্স প্রজেক্টসের জুডাহ টানা বলেন, ভারত ও ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখন প্রতারণা কম্পাউন্ডে ‘ভিড়’ করছে। অনেকে এখন স্বেচ্ছায় আসে, তারা জানে যে তাদের কাজ অন্যদের অনলাইনে ঠকানো। তিনি বলেন, আগে বেশির ভাগ স্ক্যামারদের মিয়ানমারে নেওয়ার আগে ব্যাংকক বিমানবন্দরে আনা হতো। তারপর, তাদের নেওয়া হতো মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী থাই শহর মে সোতে। এরপর ৭ ঘণ্টার দীর্ঘ গাড়ি যাত্রার মাধ্যমে তাদের মিয়ানমারে পাঠানো হতো। থাইল্যান্ড এই যাত্রা কঠিন করে তুলেছে। টানা বলেন, মানুষকে ব্যাংকক থেকে মে সোতে একটি ঘুরপথে নিয়ে যেতে হয় এখন। এই পথে দশবারের মতো গাড়ি বদল করতে হয়।

টানা আরও বলেন, সীমান্তে এখন কম চীনা নাগরিক দেখা যাচ্ছে। এটি সম্ভবত আশ্চর্যজনক নয়। কারণ, ফেব্রুয়ারিতে স্ক্যাম কম্পাউন্ড থেকে স্যামুয়েল এবং অন্যদের মুক্তির পেছনে চীনা সরকারই ছিল। জানুয়ারিতে চীনা অভিনেতা ওয়াং জিংকে মিয়ানমারের একটি স্ক্যাম কম্পাউন্ডে পাচার করার ঘটনা চীনে ক্ষোভের জন্ম দেয়। এই ঘটনার পর চীন সরকারকে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতে চাপ দেয়।

এই চাপ মিয়ানমারের স্থানীয় মিলিশিয়াদের ওপরও প্রয়োগ করা হয়েছিল। এর ফলে এই গোষ্ঠীগুলো তাদের ‘কম কর্মক্ষম ৫-১০% কর্মীকে’ বাদ দিতে বাধ্য হয় বলে ট্রান্সন্যাশনাল অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষজ্ঞ জ্যাকব সিমস জানান। তাঁর মতে, এই বিশাল অপরাধমূলক উদ্যোগকে ভেঙে দিতে আরও বিস্তৃত ও টেকসই প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মবের নামে নাশকতার সুযোগ নেই এখন, সারজিসকে বললেন সেনা কর্মকর্তা

আজহারুলের আপিলে তাজুলের প্রসিকিউশন টিম, স্বার্থের সংঘাত দেখছেন ডেভিড বার্গম্যানও

ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় শুধু একটি দল—প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের যে ব্যাখ্যা দিল প্রেস উইং

কক্সবাজারে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন’ নিয়ে নর্থইস্ট নিউজের সংবাদের প্রতিবাদ জানাল সেনাবাহিনী

মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে লড়েছিলেন বলেই কি জামিন পেলেন না অধ্যাপক আনোয়ারা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত