Ajker Patrika

রয়টার্সের প্রতিবেদন /তীক্ষ্ণ নজরে ভারত-পাকিস্তান ‘ডগ ফাইট’ দেখছে বিশ্বের বড় সামরিক শক্তিগুলো

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ মে ২০২৫, ১৭: ৫৩
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

দক্ষিণ এশিয়ার চির বৈরী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান সম্প্রতি সামরিক সংঘাতে জড়িয়েছে। এই সংঘাতে উভয় দেশই যুদ্ধবিমানের ব্যাপক ব্যবহার করেছে। চীনা প্রযুক্তিতে তৈরি পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ও ফরাসি রাফাল জেট নিয়ে ভারতের লড়াই বেশ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করবে অন্য দেশগুলো। ভবিষ্যতের সংঘাতে সামরিক সুবিধা পেতে এ থেকে শিক্ষা নেবে পরাশক্তিসহ অন্য দেশগুলোর সেনাবাহিনী।

গত বুধবার চীনা প্রযুক্তির একটি পাকিস্তানি যুদ্ধবিমান অন্তত দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে। দুই মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে এমনটাই জানিয়েছেন। বেইজিংয়ের উন্নত যুদ্ধবিমানের জন্য এটি এক বড় মাইলফলক হতে পারে।

দুই দেশের এই ডগ ফাইট বা আকাশপথের লড়াই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সামরিক বাহিনীগুলোর জন্য এক বিরল সুযোগ। তারা এখান থেকে সক্রিয় যুদ্ধে পাইলট, যুদ্ধবিমান এবং এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা অধ্যয়ন করতে পারবে। এই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তারা নিজেদের বিমানবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করতে পারবে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উন্নত অস্ত্রের বাস্তব ব্যবহার বিশ্বজুড়ে বিশ্লেষণ করা হবে। এর মধ্যে শুরুর দিকেই থাকবে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রও। তাইওয়ান বা বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে সম্ভাব্য সংঘাতের জন্য তারা উভয়ই প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এক মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে রয়টার্সকে বলেছেন, পাকিস্তানের চীনা প্রযুক্তির জে-১০ বিমান ব্যবহার করে ভারতীয় যুদ্ধবিমানের বিরুদ্ধে এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের বিষয়ে তাদের যথেষ্ট বিশ্বাস রয়েছে।

সোশ্যাল মিডিয়ার পোস্টগুলোতে পাকিস্তানের ব্যবহার করা চীনা পিএল-১৫ এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র এবং ভারতের ব্যবহার করা ইউরোপীয় এমবিডিএ গ্রুপের তৈরি মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মেটিওর একটি রাডার-নির্দেশিত ক্ষেপণাস্ত্র। তবে এসব অস্ত্র আসলেই ব্যবহার করা হয়েছিল কি না, তার কোনো সরকারি নিশ্চিতকরণ নেই।

ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের সামরিক মহাকাশ বিভাগের সিনিয়র ফেলো ডগলাস ব্যারি বলেছেন, চীন, যুক্তরাষ্ট্র এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের আকাশপথের যুদ্ধ বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে গভীর আগ্রহী হবেন। তাঁরা কৌশল, পদ্ধতি, ব্যবহৃত সরঞ্জাম এবং কোনটি কার্যকর ছিল বা কোনটি হয়নি, তার যতটা সম্ভব সঠিক তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন।

ব্যারি বলেন, ‘যদি সত্যিই এটি (মেটিওর) বহন করা হয়ে থাকে, তবে আপনারা সম্ভবত পশ্চিমের সবচেয়ে সক্ষম অস্ত্রের বিরুদ্ধে চীনের সবচেয়ে সক্ষম অস্ত্রকে দেখছেন। আমরা এটা জানি না।’ তিনি বলেন, ফরাসি ও মার্কিনরা ভারত থেকেও একই ধরনের তথ্য পাওয়ার আশা করবেন। একজন প্রতিরক্ষা শিল্প নির্বাহী বলেছেন, ‘পিএল-১৫ একটি বড় সমস্যা। এটি এমন কিছু, যার দিকে মার্কিন সামরিক বাহিনী অনেক মনোযোগ দেয়।’

রাফাল নির্মাতা দাসো (ইংরেজি ড্যাসল্ট) অ্যাভিয়েশন মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এমবিডিএ কনসোর্টিয়ামের সঙ্গেও ফরাসি সরকারি ছুটির কারণে তাৎক্ষণিকভাবে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা যায়নি। পশ্চিমা বিশ্লেষক ও শিল্প সূত্রগুলো বলেছে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিবরণ এখনো অস্পষ্ট রয়ে গেছে। এর মধ্যে মেটিওর বহন করা হয়েছিল কি না এবং পাইলটরা কী ধরনের ও কতটা প্রশিক্ষণ পেয়েছিলেন, তা-ও অন্তর্ভুক্ত। বিশ্লেষকেরা বলেছেন, অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোও প্রযুক্তিগত কার্যকারিতা এবং অপারেশনাল কারণগুলোকে আলাদাভাবে দেখতে আগ্রহী হবে।

ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ এবং ক্যাপিটাল আলফা পার্টনার্সের ম্যানেজিং পার্টনার বায়রন ক্যালান বলেছেন, ‘কোনটি কাজ করে এবং কোনটি করে না, তার নিরীক্ষা অবশ্যই হবে। তবে আমার মনে হয়, এর ওপর যুদ্ধের ধোঁয়াশার একটি প্রভাব রয়েছে।’ তিনি বলেন, মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলো ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের পণ্যগুলো কীভাবে কাজ করছে, সে সম্পর্কে নিয়মিত প্রতিক্রিয়া পাচ্ছে।

বায়রন ক্যালান বলেন, তাই আমি নিশ্চিতভাবে আশা করি, ভারতের ইউরোপীয় সরবরাহকারীদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটবে। পাকিস্তান ও চীন সম্ভবত একই প্রতিক্রিয়া ভাগাভাগি করে নিচ্ছে। যদি পিএল-১৫ প্রত্যাশার চেয়ে ভালোভাবে কাজ করে, তবে চীনারা তা শুনতে আগ্রহী হবে।

মেটিওর ব্যবহারকারী একটি পশ্চিমা দেশের প্রতিরক্ষাশিল্পের একটি সূত্র বলেছে, অনলাইনে দেখা একটি সিকারের ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এটি এমন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের অংশ, যা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছিল। পাকিস্তান কি চীনের বিমানবাহিনী পিএলএএএফ-এর কাছ থেকে পিএল-১৫-এর ঘরোয়া সংস্করণ পেয়েছে, নাকি ২০২১ সালে প্রকাশ্যে আনা কম-পাল্লার রপ্তানি সংস্করণ, তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী খবর রয়েছে।

ব্যারি এই পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, পাকিস্তানের কাছে সম্ভবত রপ্তানি সংস্করণটিই রয়েছে। একটি পশ্চিমা শিল্প সূত্র রকেটচালিত পিএল-১৫ মেটিওর—এর এর চেয়ে বেশি পাল্লার দাবি উড়িয়ে দিয়েছে। তবে স্বীকার করেছে যে এর সক্ষমতা ‘যা ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি হতে পারে’।

মেটিওর ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি। শিল্প সূত্রটি বলেছে, ‘এই মুহূর্তে কোনো কিছু বিচার করা সম্ভব নয়। আমরা খুব অল্পই জানি।’ পিএল-১৫ এর পাল্লা এবং কার্যকারিতা বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। এর উত্থানকে এমন একটি লক্ষণ হিসেবে দেখা হয়, চীন সোভিয়েত-যুগের প্রযুক্তিনির্ভরতা থেকে অনেক দূরে চলে গেছে।

যুক্তরাষ্ট্র লকহিড মার্টিনের মাধ্যমে এআইএম-২৬০ জয়েন্ট অ্যাডভান্সড ট্যাকটিক্যাল মিসাইল তৈরি করছে। এটি আংশিকভাবে পিএল-১৫ এবং এর ভিজ্যুয়াল রেঞ্জের বাইরের পারফরম্যান্সের প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হচ্ছে। এটি চীনের দিকে পশ্চিমা অগ্রাধিকারের একটি বৃহত্তর পুনর্বিন্যাসের অংশ।

ইউরোপীয় দেশগুলো মেটিওর-এর মধ্যকালীন আপগ্রেডের কথা ভাবছে। বিশেষজ্ঞ প্রকাশনা জেনেস বলেছে, এতে প্রপালশন (ধাক্কা) এবং গাইডেন্স (নির্দেশনা) অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, অগ্রগতি ধীর। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্চ মাসে বোয়িংকে মার্কিন বিমানবাহিনীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান তৈরির চুক্তি দিয়েছিলেন। এতে সম্ভবত স্টেলথ প্রযুক্তি, উন্নত সেন্সর এবং অত্যাধুনিক ইঞ্জিন অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

আদালতে শিনজো আবের পরিবারের কাছে ক্ষমা চাইলেন হত্যায় অভিযুক্ত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শিনজো আবে হত্যায় অভিযুক্ত ইয়ামাগামি। ছবি: সংগৃহীত
শিনজো আবে হত্যায় অভিযুক্ত ইয়ামাগামি। ছবি: সংগৃহীত

২০২২ সালের জুলাইয়ে নির্বাচনী প্রচারণার সময় জাপানের নারা শহরে স্থানীয়ভাবে তৈরি বন্দুক দিয়ে গুলি করে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবেকে হত্যা করেন ৪৫ বছর বয়সী ইয়ামাগামি। কঠোর অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ এবং অত্যন্ত কম অপরাধ প্রবণতার দেশ জাপানে এই হত্যাকাণ্ড বিশ্বজুড়ে আলোড়ন তোলে।

শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, নারা জেলা আদালতে ১৪ তম শুনানিতে হাজির হয়ে আবে পরিবারের প্রতি গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন ইয়ামাগামি। আদালতে তিনি বলেন, ‘আমি আবে পরিবারের ভোগান্তির জন্য অনুতপ্ত। তিন বছর ছয় মাস ধরে তারা যে কষ্টে আছে, তা আমি চাইনি, কিন্তু তা হয়েছে—এ জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।’

তিনি জানান, নিজের পরিবারেও একজনকে হারানোর অভিজ্ঞতা থাকায় এই কষ্টের মূল্য তিনি বোঝেন।

ইয়ামাগামি স্বীকার করেছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবেই ওই হামলা চালিয়েছিলেন। এর আগে আদালতে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমিই হত্যা করেছি। এতে কোনো সন্দেহ নেই।’

হত্যাকাণ্ডের পেছনে ইয়ামাগামির উদ্দেশ্য ছিল ‘ইউনিফিকেশন চার্চ’ নিয়ে ক্ষোভ। তিনি দাবি করেন, এই ধর্মীয় সংগঠনে তাঁর মা বিপুল অর্থ দান করায় তাঁদের পরিবার দেউলিয়া হয়ে পড়ে। ইয়ামাগামির ভাষায়, আবে ছিলেন এই চার্চের অন্যতম প্রভাবশালী সমর্থক, তাই তিনি তাঁকে লক্ষ্য বানান।

ইয়ামাগামির আইনজীবী আদালতকে জানান, ব্যবহৃত অস্ত্রটি হাতে তৈরি হওয়ায় জাপানের ‘ফায়ারআর্মস অ্যান্ড সোয়ার্ডস কন্ট্রোল অ্যাক্ট’-এর অধীনে সাধারণ আগ্নেয়াস্ত্র হিসেবে গণ্য করা উচিত নয়। তাই শাস্তি কমানোর অনুরোধ জানানো হয়।

ইউনিফিকেশন চার্চের বিরুদ্ধে জাপানে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক প্রভাব, অর্থ সংগ্রহ এবং সদস্য নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। আবে হত্যার পর সংগঠনটির কার্যক্রম তদন্তের আওতায় আসে। চলতি বছরের মার্চে আদালত চার্চ বিলুপ্তির আদেশ দেয়, যদিও সংগঠনটি এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

আদালতের শুনানিতে শিনজো আবের স্ত্রী আকিয়ে আবেও উপস্থিত থাকেন। তবে ক্ষমা প্রার্থনার দিন তিনি আদালতে ছিলেন না। আগের দিন তিনি হত্যাকারীর মুখোমুখি হন এবং নীরবে শুনানি পর্যবেক্ষণ করেন।

মামলার রায় এখনো ঘোষণা হয়নি। তবে জাপানে এটি সাম্প্রতিক সময়ের সবচেয়ে আলোচিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

দিল্লি সফর: ১০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য চান পুতিন

  • ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে
  • কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সহযোগিতার বিস্তারিত আলোচনা করেন পুতিন
  • রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভারতকে রুশ অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
রাশিয়ার প্রসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এএফপি
রাশিয়ার প্রসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এএফপি

ভারতের সঙ্গে ১০ হাজার কোটি ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ লক্ষ্যের কথা জানান তিনি। ভারতে দুই দিনের সফরে এসে গতকাল শুক্রবার মোদির সঙ্গে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও অস্ত্র চুক্তির বিষয়ে আলোচনা করেন পুতিন।

মোদির সঙ্গে হওয়া বৈঠকে ‘গঠনমূলক ও বন্ধুত্বসুলভ’ বলে প্রশংসা করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট। ২০২৪ সালে প্রায় ৬ হাজার ৪০০ কোটি ডলার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হওয়ার কথা উল্লেখ করে পুতিন বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ১০ হাজার কোটি ডলারের বাণিজ্যের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ভারতে গতকাল রাশিয়ার টিভি চ্যানেল আরটিকে এ বিষয়ে নিশ্চিত করেছেন পুতিন। এ সময় বৈশ্বিক ইস্যুতে ভারত ও রাশিয়া—দুই দেশের সামঞ্জস্যতার কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। এ ছাড়া জ্বালানি খাত, বিশেষ করে কুদানকুলাম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সহযোগিতার বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি। ভারতীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাশিয়ার কালুগা অঞ্চলে একটি নতুন ওষুধ কারখানা স্থাপনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট।

দুই দিনের সফরে পুতিনকে বিমানবন্দরে আলিঙ্গন করে উষ্ণ অভ্যর্থনা জান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর পরই পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি রাশিয়া থেকে জ্বালানি কিনতে পারে, তবে ভারত কেন তা পারবে না।

রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে অবতরণের কয়েক ঘণ্টা পর পুতিন ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডেতে এ মন্তব্য মন্তব্য করেন। এই সফরের সময় উভয় দেশ পারস্পরিক বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং লেনদেনের ক্ষেত্রে পণ্যের বৈচিত্র্য বাড়ানোর চেষ্টা করবে।

ইউক্রেনে মস্কোর আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে রাশিয়াকে এড়িয়ে চলতে চাপ দিচ্ছে, ঠিক তখন চার বছরে পুতিনের এই প্রথম ভারত সফরের লক্ষ্য হলো রাশিয়ার তেল, ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ও যুদ্ধবিমানের বিক্রি বাড়ানো এবং জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের বাইরেও ব্যবসায়িক সম্পর্ক প্রসারিত করা।

নয়াদিল্লি ও মস্কোর মধ্যে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় থেকে দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে এবং বহু দশক ধরে রাশিয়া ভারতের প্রধান অস্ত্র সরবরাহের উৎস। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মস্কো ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও ভারত সমুদ্রপথে আসা রাশিয়ার তেলের শীর্ষ ক্রেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন যখন বলছে, ভারতের সস্তায় রুশ তেল কেনা মস্কোর ইউক্রেন যুদ্ধে অর্থায়নে সাহায্য করছে, তখন ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাস্তিমূলক শুল্ক এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা কঠোর হওয়ার ফলে এই মাসে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হতে চলেছে।

পুতিন ইন্ডিয়া টুডেকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র নিজেই এখনো তার নিজস্ব পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য আমাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি কেনে। সেটিও তো জ্বালানি।’

ভারত বলেছে, ট্রাম্পের শুল্ক অন্যায্য ও অযৌক্তিক এবং মস্কোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বাণিজ্যের দিকে ইঙ্গিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে শুরু করে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম পর্যন্ত কোটি কোটি ডলারের রাশিয়ান জ্বালানি ও পণ্য আমদানি অব্যাহত রেখেছে।

পশ্চিমাদের চাপের কারণে ভারতীয় তেলের ক্রয় কমেছে কি না, জানতে চাইলে পুতিন বলেন, ‘এই বছরের প্রথম ৯ মাসে সামগ্রিক বাণিজ্যের পরিমাণে কিছুটা হ্রাস দেখা গেছে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এটা কেবল একটি সামান্য সমন্বয়। সামগ্রিকভাবে, আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় আগের মতোই আছে।’ তিনি আরও বলেন, রাশিয়ার তেলের বাণিজ্য ভারতে মসৃণভাবে চলছে।

ভারত ও রাশিয়ার ট্রাম্প এবং তাঁর শুল্কের সঙ্গে কীভাবে মোকাবিলা করা উচিত—জানতে চাইলে পুতিন বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন কিছু উপদেষ্টা আছেন, যাঁরা বিশ্বাস করেন, এ ধরনের শুল্কনীতি বাস্তবায়ন চূড়ান্তভাবে মার্কিন অর্থনীতির জন্য উপকারী। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, শেষ পর্যন্ত বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সব নিয়ম লঙ্ঘন সংশোধন করা হবে।’

এর কয়েক ঘণ্টা আগে নরেন্দ্র মোদি দিল্লিতে বিমানবন্দরে পুতিনকে স্বাগত জানান। বিমানবন্দরের রানওয়েতে লাল গালিচার ওপর তাঁরা একে অপরকে আলিঙ্গন করেন এবং প্রধানমন্ত্রী মোদি আয়োজিত একটি ব্যক্তিগত নৈশভোজের জন্য একই গাড়িতে তাঁরা চলে যান।

পুতিনের এই সফরে রাশিয়ার ঊর্ধ্বতন মন্ত্রী এবং একটি বড় রাশিয়ান ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল নয়াদিল্লিতে উপস্থিত ছিল। গতকাল দুই নেতা শীর্ষ বৈঠক করেন, যেখানে একাধিক চুক্তি ঘোষণা করার কথা রয়েছে।

পুতিন ভারতকে আরও রুশ অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দেবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও নয়াদিল্লিকে ওয়াশিংটনের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে। মস্কো ভারতে আরও এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এসইউ-৫৭ স্টেল্থ যুদ্ধবিমান বিক্রি করার আশা করছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের অবসানের জন্য চাপ দিতে গতকালের বৈঠকের মাত্র কয়েক দিন আগে পুতিন মস্কোয় মার্কিন এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন। সেই বৈঠকের পর উভয় পক্ষই অগ্রগতির প্রশংসা করে, যদিও কোনো যুগান্তকারী সমাধান হয়নি। গত বৃহস্পতিবার মার্কিন কর্মকর্তারা ইউক্রেনের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন। ভারত যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়ার নিন্দা করা থেকে বিরত থেকেছে এবং আলাপ-আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে শান্তির আহ্বান জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

বিমানে শালীন পোশাকের পরামর্শ মার্কিন মন্ত্রীর—প্রতিবাদে ‘অশালীন’ যাত্রীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে বিমানবন্দরে যাত্রীদের পোশাক নিয়ে নতুন বিতর্ক দেখা দিয়েছে। মার্কিন পরিবহনমন্ত্রী শন ডাফি সম্প্রতি যাত্রীদের ‘সম্মানজনক ও ভালো’ পোশাক পরার পরামর্শ দেওয়ায় অনেকেই তা মেনে নেওয়ার বদলে প্রতিবাদ হিসেবে বিমানবন্দরে পায়জামা পরে হাজির হচ্ছেন।

শুক্রবার যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন গত নভেম্বর থেকে ‘দ্য গোল্ডেন এজ অব ট্রাভেল স্টার্টস উইথ ইউ’ শিরোনামে একটি প্রচারণা শুরু করেছে। এই প্রচারণার লক্ষ্য বিমান ভ্রমণে শালীনতা, সৌজন্য এবং শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। এক সংবাদ সম্মেলনে ডাফি বলেন, ‘জিনস আর পরিষ্কার শার্টই যথেষ্ট। কিন্তু আমরা যেন অন্তত স্লিপার আর পায়জামা পরে বিমানবন্দরে না আসি।’ তাঁর দাবি—ভালো পোশাক মানুষকে আচরণেও আরও ভদ্র করে।

তবে ডাফির এই বক্তব্য অনেকের কাছে সীমা অতিক্রম বলে মনে হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশেষ করে টিকটক ও এক্সে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। ডেমোক্রেটিক অ্যাকটিভিস্ট জনি পালমাদেসা পায়জামা পরে এক ভিডিওতে বলেন, ‘এই প্রশাসনের অগ্রাধিকার একেবারেই সঠিক নয়।’ তিনি মত দেন, ট্রাম্প এবং ডাফির উচিত বিমান ভাড়া ও ভ্রমণ ব্যয় কমানো, যাতে মানুষ চাইলেই সুন্দর পোশাক কিনতে পারে।

আরেকজন টিকটকার পায়জামা পরে বিমানবন্দরে যাওয়ার ভিডিও পোস্ট করে লিখেছেন, ‘যেহেতু নিষেধ করা হয়েছে, এখন অবশ্যই পায়জামা পরেই যাব!’

বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বাড়তে থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের পরিবহন দপ্তর এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি।

এদিকে, নতুন এই প্রচারণার পক্ষে বিভাগটি ২০১৯ সালের পর যাত্রী অসদাচরণ বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেছে। তাদের দাবি—গত চার বছরে যাত্রীদের প্রায় ১৪ হাজার বিশৃঙ্খল আচরণের ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছে, যা আগের তুলনায় ৪০০ শতাংশ বেশি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মার্কিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যোগ হতে পারে ৩০টির বেশি দেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) প্রধান ক্রিস্টি নোয়েম। এএফপি
মার্কিন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) প্রধান ক্রিস্টি নোয়েম। এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র তার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত দেশের সংখ্যা আরও বাড়াতে যাচ্ছে। নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে বর্তমান তালিকায় নতুন আরও কিছু দেশ যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (ডিএইচএস) প্রধান ক্রিস্টি নোয়েম। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) ফক্স নিউজের ‘দ্য ইনগ্রাহাম অ্যাঙ্গেল’–এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বিষয়টি তুলে ধরেন।

সাক্ষাৎকারে নোয়েমকে প্রশ্ন করা হয়, ট্রাম্প প্রশাসন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা দেশের সংখ্যা ৩২-এ উন্নীত করতে যাচ্ছে কিনা। জবাবে তিনি সুনির্দিষ্ট সংখ্যা না জানালেও বলেন, ‘সংখ্যা ৩০-এর বেশি হবে এবং প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন দেশ নিয়ে বিবেচনা চালিয়ে যাচ্ছেন।’

চলতি বছরের জুনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেন এবং আরও ৭টি দেশের ওপর ভ্রমণ সীমাবদ্ধতা আরোপ করেন। বিদেশি সন্ত্রাসী ও নিরাপত্তা ঝুঁকি ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি করে প্রশাসন। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু অভিবাসনের জন্য আবেদনকারীদের নয়, পর্যটক, ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

ক্রিস্টি নোয়েম জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার পাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের সরকারের স্থিতিশীলতা ও পরিচয় যাচাই ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যদি কোনো দেশের স্থিতিশীল সরকার না থাকে এবং তারা তাদের নাগরিকদের পরিচয় নিশ্চিত করতে না পারে, তাহলে কেন আমরা সেই দেশের মানুষকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেব?’

ইতিপূর্বে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প প্রশাসন আরও ৩৬টি দেশের নাগরিকদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বিবেচনা করছে।

গত সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে দুই ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা নীতি আরও কঠোর হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়। ঘটনাটির সঙ্গে অভিযুক্ত আফগান নাগরিক ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রবেশ করেছিলেন, যা নিয়ে প্রশাসনের মধ্যে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে।

এদিকে অভিবাসন অধিকার সংগঠন ও আইনপ্রণেতারা এই সিদ্ধান্তকে কঠোর ও বৈষম্যমূলক বলে সমালোচনা করছেন। তাঁদের অভিযোগ, এই নীতি অভিবাসন প্রক্রিয়াকে অকারণে স্থবির করছে এবং এমনকি কিছু ক্ষেত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের অনুষ্ঠানও বাতিল করা হচ্ছে।

অভিবাসন বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের এই নতুন পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রে আগ্রহী অনেক আবেদনকারীর ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত