Ajker Patrika

দুই বান্ধবীর দেশ ছাড়ার মিশন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
দুই বান্ধবীর দেশ ছাড়ার মিশন

মাত্র দুই সপ্তাহ আগেই কাবুলের একটি পার্টিতে বান্ধবী সারাকে নিয়ে উচ্ছল আনন্দে মেতেছিলেন জাহরা। তালেবান তখন আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর দখল নিতে শুরু করেছিল মাত্র। রাজধানী কাবুল তখনো বহু দূর। কিন্তু ৮–৯ দিনের মধ্যেই তালেবানরা কাবুলে পৌঁছে গেলে সারা ও জাহরার মতো অসংখ্য আফগান নারী সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না তারা বাড়িতেই থাকবেন, নাকি পালাবেন।

১৯৯০–এর দশকে তালেবানরা যখন প্রথমবারের মতো আফগানিস্তান শাসন করেছিল, জাহরা আর সারা তখন অনেক ছোট। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনী প্রবেশ করার পর দুজনেই পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে যান। পড়াশোনা শেষ করে স্বদেশ গড়ার স্বপ্ন নিয়ে ফেরেন।

গত ১৫ আগস্ট তালেবানরা কাবুল দখল করে নেওয়ার পর শহরের বেশ কয়েকটি এটিএম বুথে টাকা তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন জাহরা। তার আগেই অন্যরা সব টাকা তুলে বুথগুলো খালি করে রেখেছিল। টাকা তুলতে ব্যর্থ হয়ে বাড়িতেই গা ঢাকা দিয়ে থাকেন।

এদিকে দুই দিন পর ১৭ আগস্ট সারা ও তাঁর স্বামী মিলে ব্যাগ গোছাতে শুরু করেন। আসলে দুটি কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে যা ঢোকানো সম্ভব তা–ই নিয়েছিলেন। বাকি সহায়–সম্পদ আত্মীয়দের দিয়ে দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তারা। বাড়ি থেকে বের হয়েই তাদের প্রাথমিক গন্তব্য ছিল কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দর।

সিএনএনকে সারা জানান, সেদিন বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশের কোনো উপায়ই ছিল না। বিমানবন্দরের গেটের কাছেই ছিল অসংখ্য মানুষের হুড়োহুড়ি। কমার্শিয়াল ফ্লাইটগুলো আগের দিনই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক ফ্লাইটগুলো চালু ছিল। এসব ফ্লাইটের কোনো একটিতে উঠে পড়ার ধান্দা ছিল সারা আর তাঁর স্বামীর। কিন্তু সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকেও একসঙ্গে অন্তত ৩ হাজার মানুষ বিমানবন্দরের গেটের সামনে ঠেলাঠেলি করছিল। তার পরও তাঁরা ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন। এমন সময় তালেবানরা ফাঁকা গুলি চালাতে শুরু করল। প্রায় ১১ ঘণ্টার ব্যর্থ চেষ্টা শেষে বাড়ি ফিরতে হয় তাঁদের।

একই রাতে জাহরা অবশ্য নিজের ফ্ল্যাটেই অবস্থান করছিলেন। ভাবছিলেন, বান্ধবী সারা হয়তো তাঁকে মেসেজ পাঠিয়ে জানাবেন যে তাঁরা একটি বিমান ধরতে পেরেছেন। কিন্তু রাত ৪টা পর্যন্ত সজাগ থেকেও কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তালেবানরা কাবুল দখলের পর থেকে বাড়ির ভেতরেই লুকিয়ে আছেন জাহরা। সেখান থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রাখছিলেন। এভাবেই তিনি জানতে পারেন, তালেবানরা এখন বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে। সরকারি  চাকরিজীবী, অধিকারকর্মী, সাংবাদিক কিংবা বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এমন লোকদের খুঁজে বেড়াচ্ছে তারা। তবে তখন পর্যন্ত জাহরার দরজায় কেউ টোকা দেয়নি। জাহরা বলেন, ‘তালেবানরা চায় দেশ চলবে ইসলামিক আইনে। আমিও মুসলিম, কিন্তু আধুনিক।’

গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দুই বান্ধবীর সম্পর্কে খবরটি ছিল—তত দিনে পোল্যান্ডে পৌঁছে গেছেন সারা। তিনি আর তাঁর স্বামী একদল পোলিশ সাংবাদিকের সঙ্গে মিশে যেতে পেরেছিলেন। তালেবানের সঙ্গে কথাবার্তা বলে ওই সাংবাদিকেরাই তাঁদের দুজনকে বিমানবন্দরের ভেতরে নিয়ে গিয়েছিলেন। সারার কাছে মার্কিন পাসপোর্ট ছিল। তবে তাঁরা শেষ পর্যন্ত একটি পোলিশ মিলিটারি বিমানে চড়ে আফগানিস্তান ছাড়েন। পোল্যান্ডের ওয়ারশতে তাঁরা এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন।

বান্ধবীর দেশত্যাগের দুই দিন পর জাহরার মনে হয়, এবার তারও দেশ ছাড়ার সময় হয়েছে। মা–ও তাঁকে তাড়া দিচ্ছিলেন। কিন্তু বিমানবন্দরের গেটে গিয়ে ঠেলাঠেলি করতে না পেরে প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে তাঁকেও বাড়ি ফিরতে হয়েছে। পরদিন শুক্রবারও তিনি চেষ্টা করেছিলেন। সর্বশেষ খবরটি হলো, শনিবার রাতে তিনি বিমানবন্দরের ভেতরে প্রবেশ করতে পেরেছিলেন। একটি বিমানে তাঁরও জায়গা হবে এমন আশা নিয়ে বসে ছিলেন। এরপর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চকরিয়া থানার ওসিকে প্রত্যাহারের নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার

হোয়াইট হাউসে মধ্যাহ্নভোজের আগেই বের হয়ে যেতে বলা হয় জেলেনস্কিকে

‘আমাদের অনুমতি ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে থানা ঘেরাও করব’, সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য ভাইরাল

সৈয়দ জামিলের অভিযোগের জবাবে যা লিখলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা

বগুড়ায় ঘরে ঢুকে মা-মেয়েকে কুপিয়ে হত্যা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত