Ajker Patrika

সমলিঙ্গ বিয়ে নিষিদ্ধ করা অসাংবিধানিক নয়: জাপানের আদালত

আপডেট : ২০ জুন ২০২২, ২০: ২৮
সমলিঙ্গ বিয়ে নিষিদ্ধ করা অসাংবিধানিক নয়: জাপানের আদালত

জাপানে সমলিঙ্গের মানুষের মধ্যকার বিয়ে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি অসাংবিধানিক নয় বলে এক আদেশে জানিয়েছেন জাপানের একটি আদালত। এই রায় জাপানের লেসবিয়ান, গে, বাইসেক্সুয়াল এবং ট্রান্সজেন্ডার–এলজিবিটিকিউ অধিকারকর্মীদের জন্য বড় একটি ধাক্কা। সোমবার জাপানের ওসাকার আদালত এই রায় দিয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

এর আগে, ২০২১ সালে জাপানের সাপ্পোরো শহরের আদালতে দায়ের করা একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হয়েছিল—সমলিঙ্গের মানুষদের বিয়ে করতে না দেওয়ার বিষয়টি অসাংবিধানিক। পরে, চারজন পুরুষ ও দুজন নারী ওসাকার একটি জেলা আদালতে এই বিষয়ে মামলা করেন।

জাপানের সংবিধান অনুসারে বিয়ের সংজ্ঞা হলো—‘উভয় লিঙ্গের মানুষের পারস্পরিক সম্মতি’। কিন্তু সমলিঙ্গের বিয়ের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোনো বিষয় থাকে না অর্থাৎ এখানে উভয় লিঙ্গ নয় বরং একই লিঙ্গ থাকে দুজনের। আর এরই ভিত্তিতে আদালত ওই রায় দেয়। অবশ্য, এলজিবিটিকিউ অধিকার নিয়ে আন্দোলনকারীদের আশা ছিল, হয়তো আদালত তাঁদের সপক্ষে রায় দেবেন।

আদালত তাঁর রায়ে জানিয়েছেন—জাপানের সমাজে বিয়েকে সংজ্ঞায়িত করা হয় বিপরীত লিঙ্গের সম্মতির ভিত্তিতে এবং এখানে সমলিঙ্গের বিয়ের বিষয়ে বিতর্কের কোনো সুযোগ নেই।

এই আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন জানিয়ে মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী আকিওশি মিওয়া বলেছেন, ‘এই মামলার মাধ্যমে আমরা অন্যান্য স্বাভাবিক যুগলের মতো সমলিঙ্গের মানুষদের বিয়ের অধিকার আদায়ের বিষয়ে জোর দিতে চেয়েছি।’

আধুনিক বিশ্বে জাপান অনেক ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে উদার বলে বিবেচনা করা হয়। তবে, সমলিঙ্গের বিয়ের ক্ষেত্রে জাপান ব্যতিক্রম। জাপান এই বিষয়টির স্বীকৃতি না দিলেও তাইওয়ান এরই মধ্যে সমলিঙ্গ বিয়েকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। জাপানের বর্তমান আইন অনুসারে দেশটিতে কোনো সমলিঙ্গ যুগল বিয়ে করতে পারেন না। তাঁরা একে অপরের সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে পারেন না।

এই বিষয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা বলেছেন, এই বিষয়টি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে। তবে তাঁর দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এরই মধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, বিষয়টি নিয়ে কোনো ধরনের আইনি বিবেচনার সম্ভাবনা নেই। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রতি ৪ জন ভারতীয় শিক্ষার্থীর ৩ জনেরই ভিসা আবেদন বাতিল করছে কানাডা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ওপর কানাডার কড়াকড়ির কারণে ভারতের আবেদনকারীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন বলে জানা গেছে। সরকারি তথ্য বলছে, একসময় পছন্দের গন্তব্য হলেও কানাডা এখন ভারতীয় শিক্ষার্থীদের কাছে সেই আকর্ষণ হারাচ্ছে। ২০২৫ সালের শুরুতে কানাডা পরপর দ্বিতীয় বছরের মতো আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী পারমিট বা ভিসার সংখ্যা কমিয়েছে, যা মূলত সাময়িক অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও স্টুডেন্ট ভিসা জালিয়াতি ঠেকানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া কানাডার অভিবাসন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের আগস্টে ভারতীয় আবেদনকারীদের প্রায় ৭৫ শতাংশের স্টুডেন্ট ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে (প্রতি ৪ জন আবেদনকারীর ৩ জনেরই বাতিল)। ২০২৩ সালের আগস্টে এই হার ছিল মাত্র ৩২ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে একই সময়ে সামগ্রিকভাবে গড়ে ৪০ শতাংশ এবং চীনা শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।

সরকারি তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের আগস্টে যেখানে ২০ হাজার ৯০০ ভারতীয় শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন, ২০২৫ সালের আগস্টে সে সংখ্যা নেমে এসেছে মাত্র ৪ হাজার ৫১৫ জনে।

গত এক দশক ধরে কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রধান উৎস ছিল ভারত। অথচ এখন ভারতীয় শিক্ষার্থীরাই হয়েছেন সবচেয়ে বেশি ভিসা প্রত্যাখ্যানের শিকার।

এই প্রত্যাখ্যানের ঢেউ এসেছে এমন সময়, যখন গত এক বছরের বেশি সময় ধরে কানাডা ও ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। ২০২৩ সালে কানাডার সাবেক প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো অভিযোগ করেছিলেন, ভারতের সরকার ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারে শহরে এক কানাডিয়ান নাগরিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত। তবে ভারত বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২০২৩ সালে কানাডার অভিবাসন বিভাগ প্রায় ১ হাজার ৫৫০টি জাল আবেদনপত্র শনাক্ত করে, যার বেশির ভাগই এসেছিল ভারত থেকে। এরপর ২০২৪ সালে স্টুডেন্ট ভিসা যাচাইয়ে আরও শক্তিশালী ব্যবস্থা চালু করে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। ওই বছর প্রায় ১৪ হাজারের বেশি জাল আবেদনপত্র শনাক্ত করা হয়—যা সব দেশের আবেদনকারীদের মধ্যে পাওয়া গিয়েছিল। এ কারণে কানাডা এখন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত যাচাইব্যবস্থা চালু করেছে এবং অর্থনৈতিক যোগ্যতার মানদণ্ডও বাড়িয়েছে।

এদিকে অটোয়ায় ভারতীয় দূতাবাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের আবেদন প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। স্টুডেন্ট ভিসা প্রদান সম্পূর্ণরূপে কানাডার নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে দূতাবাস বলেছে, বিশ্বের মানসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের অন্যতম উৎস ভারত। কানাডার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো অতীতে এই প্রতিভা ও একাডেমিক উৎকর্ষতা থেকে ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে।

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনিতা আনন্দ গত অক্টোবরে ভারত সফরের সময় রয়টার্সকে বলেন, তাঁর সরকার অভিবাসনব্যবস্থার স্বচ্ছতা নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও কানাডা চায় ভারতীয় শিক্ষার্থীরা যেন দেশটিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেন।

শিক্ষা–ভিসা সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান বর্ডার পাসের কর্মকর্তা মাইকেল পিয়েত্রোকার্লো বলেন, এখন আবেদনকারীদের ওপর আগের চেয়ে অনেক বেশি যাচাই-বাছাই চলছে। শুধু ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখানো এখন যথেষ্ট নয়, আবেদনকারীদের প্রমাণ করতে হচ্ছে টাকার উৎস কী।

কানাডার ওয়াটারলু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত তিন থেকে চার বছরে ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই-তৃতীয়াংশ কমে গেছে। এ ছাড়া রেজিনা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাসকাচেওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়েও ভারতীয় শিক্ষার্থী ভর্তির সংখ্যা কমেছে বলে জানা গেছে।

আন্তর্জাতিক শিখ ছাত্র সমিতির প্রতিষ্ঠাতা জসপ্রীত সিংহ যান্ত্রিক প্রকৌশলে পড়তে ২০১৫ সালে ভারত থেকে কানাডায় আসেন। তিনি বলেন, একসময় সরকার নতুনদের উদ্দেশে প্রচারণা চালাত—Study, Work, Stay (পড়ো, কাজ করো, থাকো)। কিন্তু এখন সেই মনোভাব একেবারে বদলে গেছে।

জসপ্রীত সিংহ আরও বলেন, ‘আমি জানি, প্রতারণা এখন বড় সমস্যা। তাই ভিসা প্রত্যাখ্যানের খবর শুনে অবাক হইনি। তবে কানাডায় স্থায়ীভাবে থাকা বা কাজ পাওয়া এখন এত কঠিন হয়ে গেছে যে, এটা ভেবেই এখন অনেকে খুশি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ নিয়ে পাকিস্তান সরকারকে আদালতে তুললেন ২৫ বছরের এক নারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মাহনুর ওমর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
মাহনুর ওমর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

মাত্র ২৫ বছর বয়সে নিজের নাম লাহোর হাইকোর্টের নথিতে দেখে খানিকটা শঙ্কিত হয়েছিলেন মাহনুর ওমর। কিন্তু ‘মাহনুর ওমর বনাম পাকিস্তান ফেডারেশন’ মামলার প্রথম শুনানি হওয়ার পর থেকেই রাওয়ালপিন্ডির এই তরুণ আইনজীবী আলোচনায় উঠে এসেছেন। তিনি পাকিস্তানের তথাকথিত ‘পিরিয়ড ট্যাক্স’ এর বিরুদ্ধে লড়ছেন, যা নারীদের জন্য অত্যন্ত অন্যায্য এক ব্যবস্থা হিসেবে সমালোচিত।

সোমবার (৩ নভেম্বর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, পাকিস্তানে স্যানিটারি প্যাডের ওপর আরোপিত উচ্চ কর ও শুল্কের কারণে এসব পণ্য অনেক নারীর নাগালের বাইরে। ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, এসব কর পণ্যের খুচরা দামে প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘটায়। এক জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণ নারীদের মাত্র ১৬.২ শতাংশ নিয়মিত প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। অথচ দেশটির সরকার ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য’ হিসেবে গবাদিপশুর বীর্য, দুধ ও চিজের মতো জিনিসকে করমুক্ত করেছে। আর নারীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্যরক্ষার পণ্যগুলোকে বিলাসদ্রব্য হিসেবে করের আওতায় রেখেছে।

ওমর প্রশ্ন তুলেছেন, ‘যখন দেশে নারী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও জন প্রতিনিধিরা রয়েছেন, তখন কীভাবে এমন লিঙ্গ-অন্ধ নীতি প্রশ্নহীনভাবে পাস হয়? এটা যদি ভুলেও হয়ে থাকে, তবুও সংশোধন জরুরি।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ও ইউনিসেফ বলছে, মাসিক স্বাস্থ্য একটি মানবাধিকারের অংশ। কিন্তু পাকিস্তানে গরিব নারী ও স্কুলছাত্রীদের জন্য এটি এখনো কষ্টকর বাস্তবতা।

ওমরের মামলায় সহায়তা দিচ্ছে ‘মাহওয়ারি জাস্টিস’ নামে একটি তরুণ নেতৃত্বাধীন সংগঠন যা ঋতুচক্রকালীন স্বাস্থ্য শিক্ষা দেয় ও দরিদ্র নারীদের মধ্যে স্যানিটারি পণ্য বিতরণ করে। ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর সংগঠনটি গড়ে ওঠে। কারণ সে সময় হাজারো নারী নিরাপদ বিকল্পের অভাবে নোংরা কাপড় ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছিলেন।

আইনজীবী আহসান জেহাঙ্গির খানের মতে, ‘নারীদের একটি জৈবিক প্রক্রিয়ার জন্য কর আরোপ করা মানে তাদের মর্যাদা হরণ করা।’ গবেষণায় দেখা গেছে, পাকিস্তানে প্রতি পাঁচজন মেয়ের একজন মাসিকের সময় স্কুল মিস করে। এ ছাড়া, অপরিচ্ছন্ন কাপড় ব্যবহারে সংক্রমণ ও প্রজনন সমস্যার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়।

সরকার এখনো মামলাটির জবাব দেয়নি। তবে মাহনুর ওমরের আশা—রায় যদি অনুকূলে আসে, তাহলে শুধু প্যাডের দামই কমবে না, বরং পাকিস্তানি সমাজে নারীদের ঋতুচক্র নিয়ে ট্যাবু ও নীরবতার সংস্কৃতিও ভাঙবে। তিনি বলেন, ‘সমস্যা মাসিক নয়, বরং সমাজের সেই নীরবতা, যা এটিকে অদৃশ্য করে রেখেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্বামী হত্যার দায়ে বালিকাবধূর মৃত্যুদণ্ড, রেহাই পেতে দিতে হবে কোটি টাকা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ইরান বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। ছবি: এএফপি
ইরান বর্তমানে বিশ্বে সর্বাধিক নারী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকারী দেশ। ছবি: এএফপি

ইরানে স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এক বালিকাবধূর প্রাণ বাঁচাতে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ১০০ কোটি তুমান (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা) জোগাড় করতে হবে। নইলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে ২৫ বছর বয়সী গোলি কোহকান নামের এই নারী সাত বছর ধরে উত্তর ইরানের গোরগান কেন্দ্রীয় কারাগারে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায়। ২০১৮ সালের মে মাসে ১৮ বছর বয়সে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি। পরে আদালত তাঁকে ‘কিসাস’ (প্রতিশোধমূলক শাস্তি) আইনে মৃত্যুদণ্ড দেন।

গোলি কোহকান ইরানের অবহেলিত জাতিগোষ্ঠী বেলুচ সম্প্রদায়ের সদস্য। দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ এই সম্প্রদায়ের। গোলি পরিচয়হীন একজন নারী। মাত্র ১২ বছর বয়সে নিজের চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। এরপর ১৩ বছর বয়সে তিনি গর্ভবতী হন এবং এক ছেলের জন্ম দেন।

২০১৮ সালের মে মাসে ঘটনার দিন গোলি দেখতে পান, তাঁর স্বামী পাঁচ বছরের ছেলেকে মারধর করছেন। তখন তিনি চাচাতো ভাইকে ফোন করে সাহায্য চান। তাঁর চাচাতো ভাই এসে পৌঁছালে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। হাতাহাতির একপর্যায়ে গোলির স্বামী নিহত হন। পরে গোলি নিজেই অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

স্থানীয় পুলিশ এসে আইনজীবী ছাড়াই গোলিকে জোর করে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করে। নিরক্ষর গোলি জেরার চাপে জবানবন্দিতে সই করে হত্যার দায় স্বীকার করেন, যা পরে তাঁর মৃত্যুদণ্ডের ভিত্তি হয়।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, গোলির মামলা ইরানে নারীদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের প্রতীক। দেশটিতে বাল্যবিবাহ বৈধ ও পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে আইনি সুরক্ষা নেই বললেই চলে।

নরওয়েভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ইরান হিউম্যান রাইটসের (আইএইচআর) পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম বলেন, গোলি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর একজন দরিদ্র নারী। সমাজের সবচেয়ে দুর্বল অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন তিনি। তাঁর শাস্তি ইরানি কর্তৃপক্ষের ভয় সৃষ্টির হাতিয়ার ও বৈষম্যমূলক আইনের বাস্তব উদাহরণ।

আইএইচআর জানিয়েছে, গোলি দীর্ঘ সময় ধরে তাঁর স্বামী কর্তৃক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। একবার স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে তিনি বাবার বাড়িতে ফিরে যান। তখন তাঁর বাবা বলেন, ‘আমি মেয়েকে সাদা পোশাকে (বিয়ের সময়) বিদায় দিয়েছি, এখন সে শুধু কাফনের কাপড়েই ফিরতে পারবে।’

ইরানি আইনে হত্যা মামলায় ভুক্তভোগীর পরিবার চাইলে ‘দিয়াহ’ বা রক্তঋণ নিয়ে আসামিকে ক্ষমা করতে পারে। জানা গেছে, কারাগার কর্তৃপক্ষ গোলির স্বামীর পরিবারকে রাজি করিয়েছে। এখন গোলি যদি ১০০ কোটি তুমান পরিশোধ করেন এবং গোরগান শহর ছেড়ে চলে যান, তবে তাঁর সাজা মওকুফ হবে।

তবে শর্ত অনুযায়ী, মুক্তি পেলেও গোলি তাঁর ১১ বছর বয়সী ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারবেন না। ছেলেটিকে বর্তমানে তাঁর দাদা-দাদির কাছে রাখা হয়েছে।

ইরানে নারীর অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন ব্রামশের (Bramsh) সদস্য জিবা বাক্তিয়ারি বলেন, গোলি কোহকানের ঘটনা নতুন নয়। বেলুচ নারীদের পাশাপাশি ইরানের অধিকাংশ নারীই এমন নির্যাতনের শিকার। তাঁদের কথা কেউ জানে না, কেউ শোনে না। দারিদ্র্যের কারণে পরিবারগুলো মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয়। তারপরই তাদের জীবনে নেমে আসে এমন নির্যাতন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রিপ্টো ব্যবসায়ী ঝাওকে ক্ষমা করেও ট্রাম্প বললেন, ‘আমি চিনি না, উনি কে’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ২০: ৪৩
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চ্যাংপেং ঝাও। ছবি: সংগৃহীত
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চ্যাংপেং ঝাও। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি জানেন না কে চ্যাংপেং ঝাও। অথচ গত মাসেই তিনি এই ক্রিপ্টোকারেন্সি বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ীকে ক্ষমা করেছিলেন। রোববার (২ নভেম্বর) সম্প্রচারিত সিবিএস নিউজের ‘৬০ মিনিটস’ অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পকে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি ওই মন্তব্য করেন।

এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, চ্যাংপেং ঝাও ২০২৩ সালে অর্থপাচারে সহযোগিতা করার অভিযোগে দোষ স্বীকার করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে তিনি চার মাস কারাভোগও করেন এবং নিজ প্রতিষ্ঠিত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ ‘বাইন্যান্স’ এর প্রধান নির্বাহী পদ থেকেও সরে দাঁড়ান।

সাম্প্রতিক সময়ে ঝাওয়ের কোম্পানিগুলো ট্রাম্প–সংশ্লিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন ডিজিটাল মুদ্রা প্রকল্পে কাজ করছে। এর মধ্যে ডোমিনারি হোল্ডিংস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের বোর্ড অব অ্যাডভাইজার্সে ট্রাম্পের দুই ছেলে রয়েছেন, যা ট্রাম্প টাওয়ারেই অবস্থিত।

সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক নোরা ও’ডনেল জানতে চান—সরকার যখন ঝাওয়ের কর্মকাণ্ডকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ক্ষতিকর বলেছে, তখন কেন ট্রাম্প তাঁকে ক্ষমা করলেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি জানিই না উনি কে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে কখনো দেখা করেছি বলে মনে পড়ে না। কেউ আমাকে বলেছিল, তিনি বাইডেন প্রশাসনের উইচ হান্টের শিকার।’

সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিপ্টোকারেন্সি শিল্পে নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন। তাঁর মতে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এই খাতে নেতৃত্ব না দেয়, তবে চীনসহ প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলো এগিয়ে যাবে।

এদিকে ট্রাম্পের ক্ষমার মাধ্যমে ঝাওয়ের ওপর আর্থিক ব্যবসা পরিচালনায় থাকা নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও, বাইন্যান্সে তাঁর ভূমিকা কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট জানান, ক্রিপটোকারেন্সির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অংশ হিসেবে ঝাওয়ের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল বাইডেন প্রশাসন। তিনি বলেন, ‘এটি ছিল বাড়াবাড়ি রকমের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা। প্রেসিডেন্ট (ট্রাম্প) এটি সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগের মাধ্যমে সংশোধন করেছেন।’

উল্লেখ্য, বাইন্যান্স বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবহৃত ক্রিপটো এক্সচেঞ্জ। ট্রাম্প প্রশাসন অতীতেও ক্রিপটো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত করেছে। এর মধ্যে বিটমেক্স প্রতিষ্ঠাতারা সহ ‘সিল্ক রোড’-এর প্রতিষ্ঠাতা রস উলব্রিক্টও তাঁর ক্ষমা পেয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত