Ajker Patrika

ওজন কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

আলমগীর আলম
ওজন কমানোর প্রাকৃতিক উপায়

ওজন নিয়ে আমাদের কৌতূহল কম নয়। একটু মোটা নাদুসনুদুস হলে আমরা বলি, ‘ভালো স্বাস্থ্য।’ আর পাতলা গড়নের হলে বলি, ‘রোগা।’ এমন মানসিকতার কারণেই কিন্তু আমাদের শুরুতেই গন্ডগোল হয়ে যায়।পাতলা মানুষের চেয়ে মোটা মানুষের স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

সচেতনতা বাড়ছে বলে পৃথিবীময় ওজন কমানোর জন্য ডায়েট, উপবাস, রোজা বা ফাস্টিং, সাপ্লিমেন্ট, হারবালসহ বিভিন্ন উপায় খুঁজছে মানুষ। সে জন্য ওজনকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাপ্লিমেন্টের ব্যবসা তালিকার দুই নম্বরে অবস্থান করছে। শুনে আশ্চর্য লাগতে পারে, পৃথিবীতে ওজন কমানোর ব্যবসাটি ২৮০ বিলিয়ন ডলারের! ২০৩২ সালে এটি ৫৩২ বিলিয়নে দাঁড়াবে বলেও শোনা যাচ্ছে।

শারীরিক ওজনের একটি ইনডেক্স আছে, যা থেকে আপনি আপনার শরীরের খবর জানতে পারবেন; বিশেষ করে মানুষ বেশি ওজনের কারণে যেসব সমস্যায় আক্রান্ত হয়, সেই সব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আগে ওজন কমানো ছাড়া কোনো উপায় নেই। তাই ওজন কমানোর অনেক পদ্ধতির মধ্যে সহজ পদ্ধতির হদিস জানতে হবে। ওজন কমানোর প্রাকৃতিক সহজ উপায় হচ্ছে উপবাস, রোজা বা ফাস্টিং এবং তরল খাবার খাওয়া।

ফাস্টিং কীভাবে করবেন
সপ্তাহের একটি দিন বেছে নিতে হবে, যে দিনটিতে কাজকর্ম কম থাকে বা বাইরে কম যেতে হয়। সেই দিনটি শুধু লেবুর রস, মধু ও পানি পান করে কাটিয়ে দিতে হবে। যেমন এক গ্লাস পানিতে ১ চামচ লেবুর রস ও ১ চামচ মধু মিশিয়ে সারা দিনে ২ ঘণ্টা পর পর পান করতে হবে। সকাল ৬টা থেকে শুরু হবে লেবু, মধু ও পানি খাওয়া। শেষ হবে রাত ৮টায়। এই সময় অন্য কিছু খাওয়া যাবে না। সকাল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে দুবার ১ চামচ মরিঙ্গা বা শজনে পাতা, হলুদ ও গোলমরিচের মিশ্রণ খেতে পারলে ভালো।

এই ফাস্টিং করার সময় মাথা ধরা, ঝিমঝিম করা, প্রচুর ক্ষুধা লাগা, জ্বর জ্বর ভাব, দুর্বলতা ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। এ জন্য আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। মনোযোগসহ ফাস্টিং চালিয়ে যেতে হবে, তাতে শক্তি দ্বিগুণ হয়ে ফিরে আসবে। প্রতি সপ্তাহে এক দিন করে ১২ সপ্তাহ করতে পারলে ভালো। এতে চমৎকারভাবে শরীরের পুরো টক্সিন বের হয়ে যাবে। যাঁরা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তাঁরা মধু বর্জন করতে পারেন। এই ফাস্টিং করার সময় ওষুধ খাওয়াও বন্ধ রাখা যেতে পারে।

পরের দিন 
সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করে দিন শুরু করতে হবে। এ জন্য ১ টেবিল চামচ মেথি এক গ্লাস পানিতে রাতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সেই পানি সকালে পান করতে হবে। ইচ্ছা করলে মেথিও চিবিয়ে খাওয়া যেতে পারে। মেথি ভেজানো পানি ওজন কমানো ছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ভালো পথ্য। তাই এই দুটি রোগের জন্য প্রতিদিন মেথির পানি সেবন করা যেতে পারে। এক ঘণ্টা পর নাশতা খাবেন অর্ধেক ফল (মৌসুমি ফল উত্তম) ও সকালের নাশতায় যে পরিমাণ শর্করা খান এর অর্ধেক। ডিম সেদ্ধ খাওয়া যাবে।

দুপুরে স্বাভাবিকভাবে যে খাবার খান, সেই পরিমাণ খাবারের অর্ধেক সবজি সালাদ আর বাকি অর্ধেক ভাত-সবজি খেতে হবে। মাছ ও মাংস ৪০ গ্রাম খাওয়া যাবে। তবে মাছ খেলে মাংস খাওয়া যাবে না। রাতে রুটি বা ভাতের পরিবর্তে সবজি স্যুপ, সবজি সেদ্ধ 
খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই রাত ৮টার মধ্যে খাবার শেষ করতে হবে।

এই নিয়ম তিন মাস মেনে চললে ধীরে ধীরে ওজন কমবে। ওজনের সঙ্গে যে উপসর্গ থাকে, সেগুলোও কমবে। এই সহজ প্রাকৃতিক নিয়ম মানা কঠিন হবে না আশা করি।

চর্বি দিয়েও ওজন কমানো যায়। কিন্তু তার কিছু বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ ছাড়া যাঁদের লো প্রেশার আছে, তাঁরা এই নিয়ম পালন করতে পারবেন না। তালিকা থেকে কিছু খাবার বাদ দেওয়া উচিত। এর মধ্যে আছে দুধ, চিনি ও গমের তৈরি সব খাবার।

আলমগীর আলম, খাদ্য পথ্য ও আকুপ্রেশার বিশেষজ্ঞ, প্রধান নির্বাহী, প্রাকৃতিক নিরাময় কেন্দ্র

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত