ডা. মুনতাসীর মারুফ
আত্মহত্যার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আপনি ও আপনার কোনো বন্ধু বা নিকটজনের আত্মহনন রোধ করতে পারেন, হয়ে উঠতে পারেন মর্মান্তিক পরিণতি ঠেকিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ। এ জন্য দরকার সচেতনতা, কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
বেশ কিছুদিন ধরে আত্মহত্যার কথা চিন্তা করছেন, ধীরে ধীরে পরিকল্পনা করছেন এমন ব্যক্তিরা সাধারণত প্রকাশ্যে বা ইঙ্গিতে কোনো না কোনোভাবে অন্তর্গত ইচ্ছার কথা বলেন মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু কারও না কারও কাছে। কারও কারও ধারণা, যিনি আত্মহত্যার কথা মুখে বলেন, তিনি আদতে তা করেন না। ধারণাটি ভুল। গবেষণায় উল্টোটাই প্রমাণিত। সে কারণে, কেউ যদি আত্মহত্যার কথা বলেন, তবে তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এড়িয়ে যাওয়া নয়, সহমর্মিতা আর সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে তাঁর পাশে থাকতে হবে। তাঁর সমস্যার জায়গাটা চিহ্নিত করে তাঁকে সেভাবে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিতে হবে। হয়তো সমস্যার ঠিক ঠিক সমাধান আপনি করতে পারবেন না, হয়তো সেই সমস্যা সমাধানের সঠিক পথটিও বলে দিতে পারবেন না–সে বিষয়ে নিজের অজ্ঞতার কারণে।
সব সময় যে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে কী করতে হবে তা বলে দিতে হবে, এমনটি নয়। তবে সমস্যায় থাকা ব্যক্তির মনের জমানো কষ্টের কথা, না বলতে পারা যন্ত্রণার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে তো পারবেন, তাঁর পাশে থাকার জন্য কিছুটা সময় তো বের করতে পারবেন, আপনার বন্ধুর বা স্বজনের একাকিত্বের বোধটা তো কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রে এতটুকু এগিয়ে আসাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। কেউ পাশে আছেন, এমন কাউকে মনের কথাগুলো অকপটে বলা যাচ্ছে, যে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করবে না। মনোযন্ত্রণার প্রকাশে তির্যক, আরও কষ্টদায়ী মন্তব্য, হাসি-ঠাট্টা করবে না–এটুকু অনুভূতিও স্বেচ্ছামৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে অনেককে।
অনেকেই মনে করেন, যাঁরা একবার আত্মহত্যা করে ব্যর্থ হন, তাঁরা আর ও পথে এগোন না। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে আসায় জীবনের প্রতি তাঁদের মায়া বেড়ে যায়। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন ঠিক এর উল্টোটা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা অতীতে আত্মহননের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পুনরায় চেষ্টা করা বা আত্মহত্যার হার, যাঁরা কখনোই আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালাননি, তাঁদের চেয়ে বেশি।
আত্মহত্যার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আগে আত্মহত্যাচেষ্টার ইতিহাস। আত্মহত্যাচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের করুণার চোখে না দেখে, তিরস্কার না করে, খোঁচা দিয়ে কথা না বলে তাঁর প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মনে হলে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। যাঁদের মানসিক চাপে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম, তাঁদের যথোপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
আরও পড়ুন:
আত্মহত্যার অধিকাংশই প্রতিরোধযোগ্য। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আপনি ও আপনার কোনো বন্ধু বা নিকটজনের আত্মহনন রোধ করতে পারেন, হয়ে উঠতে পারেন মর্মান্তিক পরিণতি ঠেকিয়ে দেওয়ার উপলক্ষ। এ জন্য দরকার সচেতনতা, কুসংস্কার কাটিয়ে ওঠা এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন।
বেশ কিছুদিন ধরে আত্মহত্যার কথা চিন্তা করছেন, ধীরে ধীরে পরিকল্পনা করছেন এমন ব্যক্তিরা সাধারণত প্রকাশ্যে বা ইঙ্গিতে কোনো না কোনোভাবে অন্তর্গত ইচ্ছার কথা বলেন মা-বাবা, ভাই-বোন, বন্ধু কারও না কারও কাছে। কারও কারও ধারণা, যিনি আত্মহত্যার কথা মুখে বলেন, তিনি আদতে তা করেন না। ধারণাটি ভুল। গবেষণায় উল্টোটাই প্রমাণিত। সে কারণে, কেউ যদি আত্মহত্যার কথা বলেন, তবে তা গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। এড়িয়ে যাওয়া নয়, সহমর্মিতা আর সহানুভূতির মনোভাব নিয়ে তাঁর পাশে থাকতে হবে। তাঁর সমস্যার জায়গাটা চিহ্নিত করে তাঁকে সেভাবে সহযোগিতা করার উদ্যোগ নিতে হবে। হয়তো সমস্যার ঠিক ঠিক সমাধান আপনি করতে পারবেন না, হয়তো সেই সমস্যা সমাধানের সঠিক পথটিও বলে দিতে পারবেন না–সে বিষয়ে নিজের অজ্ঞতার কারণে।
সব সময় যে আত্মহত্যাপ্রবণ ব্যক্তিকে কী করতে হবে তা বলে দিতে হবে, এমনটি নয়। তবে সমস্যায় থাকা ব্যক্তির মনের জমানো কষ্টের কথা, না বলতে পারা যন্ত্রণার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে তো পারবেন, তাঁর পাশে থাকার জন্য কিছুটা সময় তো বের করতে পারবেন, আপনার বন্ধুর বা স্বজনের একাকিত্বের বোধটা তো কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রে এতটুকু এগিয়ে আসাই আত্মহত্যা প্রতিরোধে বিরাট ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে। কেউ পাশে আছেন, এমন কাউকে মনের কথাগুলো অকপটে বলা যাচ্ছে, যে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করবে না। মনোযন্ত্রণার প্রকাশে তির্যক, আরও কষ্টদায়ী মন্তব্য, হাসি-ঠাট্টা করবে না–এটুকু অনুভূতিও স্বেচ্ছামৃত্যুর মুখ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারে অনেককে।
অনেকেই মনে করেন, যাঁরা একবার আত্মহত্যা করে ব্যর্থ হন, তাঁরা আর ও পথে এগোন না। মৃত্যুর খুব কাছ থেকে ঘুরে আসায় জীবনের প্রতি তাঁদের মায়া বেড়ে যায়। কিন্তু গবেষকেরা বলছেন ঠিক এর উল্টোটা। গবেষণায় দেখা গেছে, যাঁরা অতীতে আত্মহননের প্রচেষ্টা চালিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে পুনরায় চেষ্টা করা বা আত্মহত্যার হার, যাঁরা কখনোই আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালাননি, তাঁদের চেয়ে বেশি।
আত্মহত্যার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে আগে আত্মহত্যাচেষ্টার ইতিহাস। আত্মহত্যাচেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের করুণার চোখে না দেখে, তিরস্কার না করে, খোঁচা দিয়ে কথা না বলে তাঁর প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত মনে হলে যথাযথ চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শমতো চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হবে। যাঁদের মানসিক চাপে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা কম, তাঁদের যথোপযুক্ত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা
আরও পড়ুন:
মহামারির শুরুর কয়েক বছরে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছে, আর বিলিয়ন মানুষ শোক, একাকিত্ব, হতাশা, দুশ্চিন্তা, আর্থিক টানাপোড়েন ও ঘুমের সমস্যায় ভুগেছে। এর আগে আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-পরবর্তী সময়ে কিশোর-কিশোরীদের মস্তিষ্ক দ্রুত পরিণত (mature) হয়ে ওঠে, এমনকি তাদের মস্তিষ্কে এমন পরিবর্তন দেখা গেছে...
৭ ঘণ্টা আগেডেঙ্গুতে সর্বশেষ মারা যাওয়া শিশু (১) কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। বাকি দুজনের মধ্যে তরুণী (১৮) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অপর ব্যক্তি (৩০) রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। চলতি বছর জানুয়ারি থেকে এ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ৭৬।
১ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে গাঁজা সেবনের প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে টিনএজারদের মধ্যে টিএইচসি, সিবিডি এবং সিনথেটিক ক্যানাবিনয়েড ভ্যাপিংয়ের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, অনেক কিশোর-কিশোরীই জানে না তারা
১ দিন আগেগত চার দশকের বেশি সময় ধরে কোটি মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে এইচআইভি। এবার হাতে এসেছে এক কার্যকর হাতিয়ার। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) বিশ্বের প্রথম এইচআইভি প্রতিরোধী ওষুধ ‘ইয়েজটুগো’ বা ‘লেনাক্যাপাভির’ অনুমোদন দিয়েছে, যা বছরে মাত্র দুবার ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রায় শতভাগ
১ দিন আগে