Ajker Patrika

ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ জেনে চিকিৎসা করান

দেবলীনা ভৌমিক
ডেঙ্গু জ্বর: লক্ষণ জেনে চিকিৎসা করান

ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত একটি রোগ। দিন দিন বাড়ছে এতে আক্রান্তের সংখ্যা। তুলনামূলকভাবে ঢাকায় এর প্রকোপ বেশি হলেও দেশের অন্যান্য জায়গায়ও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে।

ডেঙ্গু জ্বরের কারণ
প্রধানত প্রাক্‌-গ্রীষ্ম ও বর্ষার সময় এই রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। ১৯৬০ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বৃদ্ধির কারণ হিসেবে নির্বিচারে নগরায়ণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা বলা হয়। এখন থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়ে গেছে। এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণের সাধারণত ৪ থেকে ৭ দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ দেখা দেয়।

সম্প্রতি কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশারের গবেষণায় দেখা গেছে, এডিস মশার চরিত্রে বেশ বদল এসেছে। এই মশা রাতের বেলা, বিশেষ করে ভোরের দিকেও কামড়ায় এবং ময়লা এমনকি নোনাপানিতেও ডিম পাড়ে।

ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসা
বেশির ভাগ রোগী কোনো স্থায়ী সমস্যা ছাড়াই ডেঙ্গু জ্বর থেকে ভালো হয়। এতে মৃত্যুর হার চিকিৎসা ছাড়া ১ থেকে ৫ শতাংশ এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসায় ১ শতাংশের কম। তবে রোগের চরম পর্যায়ে মৃত্যুহার ২৬ শতাংশ। ডেঙ্গু ভাইরাসের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট  চিকিৎসা এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। যেহেতু বর্তমানে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি, তাই জ্বর হলে সময় নষ্ট না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ডেঙ্গু ভাইরাস টেস্ট করান। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে স্বল্প খরচে এই টেস্ট করানোর ব্যবস্থা আছে। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে চিকিৎসা নিতে হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

ডেঙ্গু জ্বরের রোগীদের চিকিৎসার জন্য এ, বি ও সি এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়। ‘এ’ ক্যাটাগরির রোগীরা স্বাভাবিক থাকে। অধিকাংশ ডেঙ্গু রোগী ‘এ’ ক্যাটাগরির। তাদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়িতে বিশ্রাম নেওয়াই যথেষ্ট। 

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ

  • উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বর। তাপমাত্রা ১০২ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  • তীব্র মাথাব্যথা।
  • চোখের পেছনে ব্যথার অনুভূতি।
  • মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
  • বমির ভাব।
  • মাথা ঘোরা।
  • গ্রন্থি ফুলে যাওয়া।
  • ত্বকের বিভিন্ন স্থানে ফুসকুড়ি ওঠা।

সাধারণত ২ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত এই উপসর্গগুলো স্থায়ী হতে পারে। এই পর্যায়ের রোগীরা মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খেতে পারে এবং তাদের ক্ষেত্রে প্রতি ৬ ঘণ্টায় কমপক্ষে একবার প্রস্রাব হওয়া স্বাভাবিক বলে ধরে নিতে হবে। দ্বিতীয়বার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পায়। 

ডেঙ্গু জ্বরে তাপমাত্রা হতে পারে ১০২ থেকে ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বাড়িতে কী করবেন

  • পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে।
  • প্রচুর তরলজাতীয় খাবার খেতে হবে। ঘন ঘন ডাবের পানি, লেবুর শরবত, ফলের রস এবং খাওয়ার স্যালাইন খেতে হবে।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রোটিনজাতীয় খাবার বেশি করে খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে। স্বাভাবিক ওজনের প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৮টি প্যারাসিটামল খেতে পারবেন। কিন্তু কোনো ব্যক্তির যদি লিভার, হার্ট ও কিডনি-সংক্রান্ত জটিলতা থাকে, তাহলে প্যারাসিটামল সেবনের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • রোগীকে মশারির ভেতর থাকতে হবে।
  • ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে অ্যাসপিরিন, ক্লোরোফেনাক, আইবুপ্রোফেন-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যাবে না।

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ‘বি’ ক্যাটাগরির রোগীদের ক্ষেত্রে কিছু বিপজ্জনক লক্ষণ দেখা দিতে পারে। সে রকম যেকোনো একটি লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। নইলে রোগীর ডেঙ্গু শক সিনড্রোম হওয়ার আশঙ্কা বেশি হবে।

বিপজ্জনক লক্ষণ

  • প্রচণ্ড পেটব্যথা।
  • ক্রমাগত বমি হওয়া।
  • মাড়ি বা নাক দিয়ে রক্তপাত হওয়া।
  • প্রস্রাব ও মলের সঙ্গে রক্তপাত হওয়া।
  • নারীদের ক্ষেত্রে মাসিকের সময় স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি রক্ত যাওয়া।
  • ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ হওয়া।
  • ক্লান্তিবোধ করা।
  • রোগীর বিরক্তি ও অস্থিরতা প্রকাশ করা।
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  • হাত-পা ফ্যাকাশে ও ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।

বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, এক বছরের কম বয়সী শিশু এবং অন্তঃসত্ত্বা নারীরা যেকোনো সময় ‘বি’ ক্যাটাগরির রোগী হয়ে যেতে পারেন কোনো লক্ষণ না থাকলেও। এ ছাড়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, রক্ত-সম্পর্কিত রোগ, কিডনি বা লিভারের সমস্যা যাঁদের আছে, সেই সব ডেঙ্গু রোগীকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা করাতে হবে।

‘সি’ ক্যাটাগরির রোগীর অবস্থা সবচেয়ে খারাপ হয়ে থাকে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, যেমন লিভার, কিডনি, মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগীর শ্বাসকষ্ট হতে পারে। সে জন্য ‘বি’ ও ‘সি’ ক্যাটাগরির রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।

প্রতিরোধ

  • মূলত এডিস মশার কামড় এড়িয়ে চলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই মশার আবাসস্থল ধ্বংস করে এর বংশবিস্তার প্রতিরোধ করতে হবে।
  • ব্যবহৃত পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম ধ্বংসে পাত্রটি ব্লিচিং পাউডার দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
  • কোনো কিছুতে পানি জমতে দেওয়া যাবে না।
  • শরীরের বেশির ভাগ অংশ ঢেকে রাখে এমন পোশাক পরতে হবে।
  • রাতে শোয়ার সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে। 

এই সময়ে উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। অবহেলায় এই রোগ মারাত্মক হতে পারে। 

দেবলীনা ভৌমিক, সহকারী অধ্যাপক (মাইক্রোবায়োলজি) জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর), ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে সংক্রমণ গত মাসের রেকর্ড ছাড়াল, এক দিনে মৃত্যু আরও ৪

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২২: ৩১
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে এক দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। কিছুদিন ধরেই কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া কয়েকজন করে মারা যাচ্ছে মশাবাহিত এ রোগে। চলতি বছর এ পর্যন্ত মশাবাহিত রোগটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬৩ জনে।

ডেঙ্গুবিষয়ক হালনাগাদ তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন পুরুষ এবং একজন নারী। মৃত ব্যক্তিরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও বরগুনার ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তির হারও ঊর্ধ্বমুখী। গত এক দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১৪৩ জন রোগী। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৫ হাজার ৪৪০ জনে।

এ বছরের শুরু থেকে সর্বোচ্চ সংক্রমণ ঘটেছিল সেপ্টেম্বর মাসে, ১৫ হাজার ৮৬৬ জনের। চলতি অক্টোবরের সপ্তাহখানেক বাকি থাকতেই সংক্রমণের সংখ্যা তা ছাড়িয়ে গেছে। অক্টোবর মাসেই সবচেয়ে বেশি ১৮ হাজার ৯৮ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৫ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন ভর্তি রোগীদের মধ্যে ৩১৯ জনই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায়। এ ছাড়া ঢাকা বিভাগে ২৮১, ময়মনসিংহে ৫৬, চট্টগ্রামে ১২১, খুলনায় ৬৫, রাজশাহীতে ৫৬, রংপুরে ৫০, বরিশালে ১৮৬ এবং সিলেটে ৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২ হাজার ৭৩৩ জন রোগী চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ৯৩০, আর রাজধানীর বাইরে ১ হাজার ৮০৩ জন ভর্তি রয়েছে।

দেশে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। সে বছর মারা যায় ১ হাজার ৭০৫ জন রোগী। এ ছাড়া ২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১১,২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২,২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯,২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

ডা. পূজা সাহা
দাঁতের যত্নে অবহেলায় হতে পারে বিপদ

দাঁতের সমস্যা এখন আর শুধু বয়স্কদের নয়, সব বয়সে দেখা দেয়। অনেকে মনে করেন, বয়স বাড়লে দাঁত দুর্বল হয়। আসলে তা নয়। তবে দাঁতের সমস্যায় বেশির ভাগ কারণই প্রতিরোধযোগ্য। নিয়মিত যত্ন নিলে আর সঠিক অভ্যাসেই দাঁত সুস্থ রাখা সম্ভব।

দাঁতে ব্যথা হলে আগে কারণ জানা

দাঁতে ব্যথা মানেই শুধু ক্যাভিটি নয়। দাঁতের গোড়ায় পাথর জমে যাওয়া, স্নায়ুতে প্রদাহ, মাড়ির সংক্রমণ কিংবা দাঁতের ক্ষয়—এসব কারণেও ব্যথা হতে পারে। তাই দাতে ব্যথা হলে প্রথমে কারণটা জানা জরুরি। অস্থায়ী স্বস্তির জন্য দিনে কয়েকবার কুসুম গরম পানিতে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করা যেতে পারে। দাঁতের সেনসিটিভিটি কমানোর টুথপেস্টও কিছুটা সহায়ক। তবে দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য অবশ্যই দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

দাঁতের যত্ন মানেই সার্বিক সুস্থতা

দাঁতের যত্ন শুধু সুন্দর হাসির জন্য নয়, শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের অংশও। দাঁতের ক্ষয় বা সংক্রমণ অবহেলা করলে তা মাড়ি, হাড় এমনকি হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে। সঠিক যত্নে এই সমস্যা অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়।

টক খাবারে দাঁতের ক্ষয়

অতিরিক্ত টক বা অ্যাসিডযুক্ত খাবার দাঁতের এনামেল দুর্বল করে দেয়। ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, লেবু, টমেটো বা টক স্যুপ নিয়মিত খেলে দাঁতের বাইরের স্তর ক্ষয় হয়ে যেতে পারে। এতে দাঁত সংবেদনশীল হয়ে পড়ে, ব্যথা বা ঝাঁজালো অনুভূতি দেখা দেয়। যাদের পারিবারিকভাবে দাঁত দুর্বল, তাদের ঝুঁকি আরও বেশি। দাঁতের ক্ষয় পুরোপুরি বন্ধ না হলেও চিকিৎসার মাধ্যমে তা মেরামত করা অনেকটা সম্ভব। ক্ষয়ের পরিমাণ অনুযায়ী ফিলিং বা অন্যান্য চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। এই অবস্থায় টক খাবার খাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। আর দাঁত ব্রাশ করার আগে অন্তত ৩০ মিনিট বিরতি দিন। অ্যাসিডজাতীয় খাবার খাওয়ার পরপরই দাঁত ব্রাশ করলে এনামেল আরও নরম হয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ায়।

স্কেলিং নিয়ে ভুল ধারণা

অনেকের ধারণা, দাঁতের স্কেলিং করালে দাঁত নরম বা আলগা হয়ে যায়। বাস্তবে এ তথ্য ভুল। স্কেলিংয়ের সময় দাঁতের পাথর বা ক্যালকুলাস সরানো হয়। স্কেলিংয়ের পর কিছু সময়ের জন্য দাঁত আলগা মনে হতে পারে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মাড়ি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। দাঁতে দাগ বা পাথর দেখা দিলে স্কেলিং করানো উচিত। তবে দাঁত সাদা করতে চাইলে আলাদা ব্লিচিং বা হোয়াইটেনিং চিকিৎসা লাগে।

দাঁত আঁকাবাঁকা হলে করণীয়

শিশুদের ক্ষেত্রে দুধদাঁত সময়ের আগে কিংবা পরে পড়লে স্থায়ী দাঁত সোজাভাবে ওঠে না। ফলে দাঁত আঁকাবাঁকা হয়ে যায়। এতে শুধু চেহারার সৌন্দর্য নয়, উচ্চারণেও প্রভাব পড়তে পারে। এ সমস্যা থাকলে দাঁতের চিকিৎসকের পরামর্শে অর্থোডন্টিক চিকিৎসা (ব্রেস অথবা অ্যালাইনার) নেওয়া যায়। তবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিশুর বয়স, দাঁতের অবস্থা এবং মুখের গঠন বিবেচনা করা জরুরি।

কিছু সাধারণ পরামর্শ

  • দিনে অন্তত দুবার নরম ব্রাশ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করুন।
  • প্রতি তিন মাসে একবার টুথব্রাশ পরিবর্তন করুন।
  • আঁশযুক্ত ও ক্যালসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার বেশি খান।
  • চিনি বা টক খাবার খাওয়ার পর মুখ ধুয়ে ফেলুন।
  • বছরে অন্তত একবার দাঁতের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে দাঁত পরীক্ষা করান।
  • দাঁতের ব্যথা, ক্ষয় অথবা সেনসিটিভিটি দেখা দিলে তা অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিন। কারণ, দাঁত হারানো মানে শুধু সৌন্দর্য নয়, আত্মবিশ্বাসও হারিয়ে ফেলা। নিয়মিত যত্ন নিলে দাঁত থাকবে মজবুত, আর হাসিও হয়ে উঠবে উজ্জ্বল।

লেখক: ডেন্টাল সার্জন, সিকদার ডেন্টাল কেয়ার, মিরপুর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

স্পন্ডিলাইটিস: মেরুদণ্ডের নীরব ব্যথা

ডা. মো. নূর আলম
স্পন্ডিলাইটিস: মেরুদণ্ডের নীরব ব্যথা

স্পন্ডিলাইটিস হলো মেরুদণ্ডের বাত অথবা আর্থ্রাইটিস। এতে কশেরুকা (মেরুদণ্ড গঠন করে এমন হাড়) ও মেরুদণ্ড ও শ্রোণি চক্রের মাঝের সন্ধিতে প্রদাহ দেখা দেয়। ফলে মেরুদণ্ডের চারপাশের রগ, লিগামেন্ট বা সন্ধি বন্ধনীতে ব্যথা শুরু হয়।

কশেরুকা কী

মানবদেহের মেরুদণ্ড অনেক কশেরুকা দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কশেরুকা অস্থি ও তরুণাস্থির সমন্বয়ে তৈরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বয়স কিংবা ক্ষয়ের কারণে কশেরুকার মধ্যবর্তী ডিস্ক তার স্থিতিস্থাপকতা হারায়, শুকিয়ে যায় এবং ফেটে যেতে পারে। এতে দুই কশেরুকা একে অপরের সঙ্গে ঘষা খায় এবং হাড়ে ধারালো দানা তৈরি হয়, যা এক্স-রেতে দেখা যায়। এ দানাগুলো স্নায়ুতে চাপ দিলে হাত বা পায়ে তীব্র ব্যথা ও অসাড়তা দেখা দিতে পারে।

ডিস্ক যখন তার জায়গা থেকে সরে যায়, সেটাকে বলে ‘স্লিপড ডিস্ক’। সাধারণত দুর্ঘটনা, পড়ে যাওয়া কিংবা ঘাড়ে আঘাতের কারণে এটি হয়। ডিস্কের স্থিতিস্থাপকতা কমে গেলে মেরুদণ্ডের নড়াচড়া কঠিন হয়ে পড়ে।

কেন বাড়ছে এই রোগ

আগের তুলনায় এখন স্পন্ডিলাইটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তিন গুণ বেড়েছে; বিশেষ করে যাঁরা দীর্ঘ সময় কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন; যেমন আইটি কিংবা বিপিও খাতের কর্মীরা—তাঁদের মধ্যে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। এখন প্রতি ১০ জনের মধ্যে প্রায় ৭ জন কোনো না কোনোভাবে ঘাড়, পিঠ বা কোমরের ব্যথায় ভুগছেন।

স্পন্ডিলাইটিসের প্রধান ধরন

সার্ভাইক্যাল স্পন্ডিলাইটিস: ঘাড়ের অংশে এই ব্যথা শুরু হয় এবং ধীরে ধীরে কাঁধ, কলারবোন ও ঘাড়সংলগ্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ঘাড় ঘোরাতে কষ্ট হয়, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মাথাব্যথা বা মাথা ঘোরা হতে পারে।

লাম্বার স্পন্ডিলাইটিস: এতে কোমরের নিচের অংশে ব্যথা হয়, যা পিঠ ও পায়ের দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

অ্যানকিলোজিং স্পন্ডিলাইটিস: এটি একধরনের প্রদাহজনিত আর্থ্রাইটিস, যা মেরুদণ্ড এবং শ্রোণির সঙ্গে যুক্ত হয়ে স্যাক্রোইলিয়াক জয়েন্টকে প্রভাবিত করে। এতে নিতম্ব, কোমর এবং পিঠে ক্রমাগত

ব্যথা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো একত্রে মিশে যেতে পারে, যাকে বলে ‘Bamboo Spine’। এতে রোগী ধীরে ধীরে চলাচলের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন।

সাধারণ লক্ষণ

  • ঘাড় ও কাঁধে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া।
  • স্নায়ুর চাপে ব্লাডার কিংবা বাওয়েলের নিয়ন্ত্রণ হারানো।
  • আঙুল অবশ হয়ে যাওয়া অথবা ঝিনঝিন ভাব।
  • কোমর থেকে পা পর্যন্ত দুর্বলতা ও শক্ত ভাব।
  • বুকে ব্যথা ও মাংসপেশির সমস্যা।
  • ঘাড় থেকে পিঠের ওপরের অংশ পর্যন্ত টান ধরা ব্যথা।

সম্ভাব্য কারণ

  • ক্যালসিয়াম ও ভিটামিনের ঘাটতি।
  • ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো।
  • বয়সজনিত হাড়ের দুর্বলতা।
  • নিয়মিত শরীরচর্চার অভাব।
  • দীর্ঘ সময় বসে কাজ করা অথবা অলস জীবনযাপন।
  • অপর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার।

পরামর্শ

যদি ঘাড়, পিঠ অথবা কোমরে দীর্ঘদিন ব্যথা থাকে, আঙুল অবশ হয় বা চলাফেরায় অসুবিধা দেখা দেয়, তাহলে দেরি না করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। সময়মতো চিকিৎসা নিলে স্পন্ডিলাইটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়।

লেখক: জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট, আলোক হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-৬

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে করণীয়

ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম 
পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে করণীয়

পিরিয়ডের সময় কী পরিমাণ রক্তপাত হলে তাকে অতিরিক্ত ধরা হবে, তার নির্দিষ্ট সংজ্ঞা হয়তো অনেকের জানা নেই। এমন সমস্যা এক দিনে তৈরি হয় না। আপনার শরীরের ভেতরকার কোনো সমস্যাই এর জন্য দায়ী। তাই এমন সমস্যায় অবশ্যই ডাক্তার দেখানোর কথা ভাবতে হবে।

কখন বলবেন বেশি রক্ত যাচ্ছে

পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হলে তাকে বলা হয় ম্যানোরেজিয়া। এর সাধারণ লক্ষণগুলো হলো

সাত দিনের বেশি সময় ধরে রক্তপাত হলে, সংখ্যায় বেশি প্যাড ব্যবহারের প্রয়োজন হলে এবং ব্লিডিংয়ের সঙ্গে চাকা চাকা রক্তপাত হলে।

কেন বেশি ব্লিডিং হতে পারে

  • হরমোনাল ইমব্যালেন্স, হাইপোথাইরয়েডিজম বা হাইপারথাইরয়েডিজম থাকলে
  • পলিসিস্টিক ওভারেন্সি থাকলে। এর কারণে অনেক সময় বেশি দিন ধরে রক্তপাত হয় অথবা অনিয়মিত পিরিয়ড হয়ে থাকে।
  • জরায়ুতে টিউমার বা পলিপ থাকলে।
  • অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা স্ট্রেস হলে।
  • হঠাৎ ওজন কমে গেলে কিংবা বেড়ে গেলে।

করণীয়

হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। অতিরিক্ত মাসিকের রক্তপাতের ক্ষেত্রে, রক্তপ্রবাহ এবং পেটের খিঁচুনি আপনার স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধা সৃষ্টি করে। যদি অতিরিক্ত মাসিকের রক্তপাতের কারণে পিরিয়ডকে ভয় পান, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। এর অনেক চিকিৎসা রয়েছে, যা সাহায্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর দরকার হয়। যেমন হরমোনের সমস্যা আছে কি না বা প্লিসটিক ওভারেসি সিনড্রোম আছে কি না অথবা থাইরো হরমোনের সমস্যা আছে কি না। আলট্রাসনো করেও অনেক সময় দেখা হয়, জরায়ুতে কোনো টিউমার আছে কি না। ওষুধ দেওয়ার ক্ষেত্রে, যাদের হরমনাল ইমব্যালেন্স থাকে, তাদের ক্ষেত্রে হরমোন ব্যালেন্স করার জন্য প্রজেস্টেরন-জাতীয় হরমোন দিয়ে থাকি। আবার থাইরো হরমোনের তারতম্য থাকলে থাইরো হরমোনের রিপ্লেসমেন্ট বা যে কারণে হচ্ছে, সেটার ওষুধ দিয়ে থাকি। টিউমার থাকলে অনেক সময় অপারেশনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে এই অপারেশন সব সময় যে দরকার হয় এমন নয়; বা অতিরিক্ত ব্লিডিং হলেই যে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হবে, তা কিন্তু নয়।

লেখক: হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ, ডা. সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মসজিদে আমির হামজাকে রাজনৈতিক আলোচনা করতে নিষেধ করায় লাঞ্ছিত বিএনপি নেতা

বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু, মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ

মেট্রোরেলের বিয়ারিং প্যাড পড়ে নিহত কালাম ভাইয়ের সংসারও সামলাতেন, পরিবারে হাহাকার

বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ট্রেন থেকে আগ্নেয়াস্ত্রভর্তি ট্রলি ব্যাগ উদ্ধার

ঘুষ হিসেবে পাকা কলা নেওয়ার কথা স্বীকার, দুদকের গণশুনানিতে তাৎক্ষণিক বদলির আদেশ

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত