Ajker Patrika

আক্রান্ত ও সেবাদানকারীর যত্ন নিন

ডা. নাশিদ ইসলাম 
আক্রান্ত ও সেবাদানকারীর যত্ন নিন

বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে ডিমেনশিয়া। সারা বিশ্বে বর্তমানে ৫ কোটি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত। ২০৫০ সালের মধ্যে এ সংখ্যা ১৫ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। ২০২০ সালের ল্যানসেট কমিশন ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ, হস্তক্ষেপ ও যত্ন নিয়ে লেখা রিপোর্টে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি হিসেবে ৯টি কারণ উল্লেখ করেছে।

৯টি কারণ
উচ্চ রক্তচাপ, শ্রবণ প্রতিবন্ধকতা, ধূমপান, স্থূলতা, বিষণ্নতা, শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা, ডায়াবেটিস, অল্প শিক্ষা ও কম সামাজিক যোগাযোগ।

এই ৯টি মূল কারণের সঙ্গে আরও যোগ রয়েছে মদ্যপান, আঘাতমূলক মস্তিষ্কের ক্ষত এবং বায়ুদূষণ। এ কারণগুলোই ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়ার জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত। এগুলো প্রতিরোধ করতে পারলে ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।

গবেষণায় আরও বলা হচ্ছে, ডিমেনশিয়া প্রতিরোধের কোনো সুনির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। প্রারম্ভিক জীবনে বা ৪৫ বছরের কম বয়সের ঝুঁকি, যেমন কম শিক্ষা, জ্ঞান ও চেতনাকে প্রভাবিত করছে; মধ্য জীবন বা ৪৫ থেকে ৬৫ বছর এবং পরবর্তী জীবন বা ৬৫ বছরের বেশি বয়সের ঝুঁকির কারণগুলো মস্তিষ্কের চেতনায় প্রভাব বিস্তার করছে। উন্নয়ন, সংস্কৃতি, দারিদ্র্য এবং বৈষম্যও এ রোগের জন্য কিছুটা দায়ী।

প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • ৪০ এবং তার বেশি বয়সী মানুষের জন্য রক্তচাপের ঊর্ধ্ব মান ১৩০ মিমি পারদ বা তার নিচে থাকতে হবে। জেনে রাখা ভালো, রক্তচাপ কমানোর ওষুধকেই এখন পর্যন্ত ডিমেনশিয়া প্রতিরোধক একমাত্র ওষুধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
  • যাঁরা কানে কম শোনেন, তাঁরা শ্রবণযন্ত্রের ব্যবহার নিশ্চিত করুন এবং অত্যধিক শব্দদূষণ প্রতিরোধ করুন।
  • দূষিত বায়ু, বিশেষ করে নিষ্ক্রিয় ধূমপান থেকে নিজেকে রক্ষা করুন।
  • মাথায় আঘাত পাওয়াকে প্রতিরোধ করুন।
  • মদ্যপান সীমিত করুন। সপ্তাহে ২১ ইউনিটের বেশি মদ্যপান করলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন এবং অন্যকে ধূমপান বন্ধে সহায়তা করুন।
  • সব শিশুর প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করুন।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধের নিয়মাবলি মেনে চলুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম এবং সক্রিয় জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হোন।
  • পরিমাণমতো ঘুম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও সুষম খাদ্য খাওয়া নিশ্চিত করুন।

উচ্চ আয়ের দেশগুলোর তুলনায় নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ডিমেনশিয়ার হার বাড়ছে। কারণ, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বার্ধক্য এবং সম্ভাব্য পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকিগুলো বাড়ছে।

আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য 

আক্রান্ত ব্যক্তির যত্ন নিশ্চিত করা
ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের যত্নের জন্য শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সামাজিক যত্নের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আক্রান্ত বেশির ভাগ লোকই আরও অন্যান্য অসুখে ভুগে থাকেন এবং নিজেদের যত্ন নেওয়া তাঁদের জন্য কঠিন হয়ে যায়। ফলে বারবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, যা প্রতিরোধযোগ্য।

নিউরোসাইকিয়াট্রিক লক্ষণ নিয়ন্ত্রণ করা
নির্দিষ্ট বহুমুখী সেবার মাধ্যমে ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিউরোসাইকিয়াট্রিক লক্ষণের হার কমানো যেতে পারে। কারণ, সাইকোট্রপিক ওষুধ এ রোগে প্রায়ই অকার্যকর এবং এর থেকে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে।

পরিবারের সেবাদানকারীদের যত্ন
কিছু নির্দিষ্ট কাজ ও কাউন্সেলিং পারিবারিক পরিচর্যাকারীদের বিষণ্নতা এবং উদ্বেগজনিত উপসর্গের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি এবং অর্থ সাশ্রয় করতে পারে।

ডা. নাশিদ ইসলাম, প্যালিয়েটিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

তথ্যসূত্র: ল্যানসেট কমিশন, রিপোর্ট ২০২০

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত