Ajker Patrika

হিমোফিলিয়া: রক্ত জমাট বাঁধা জনিত রোগ

ডা. গুলজার হোসেন
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২১, ২৩: ৫৯
হিমোফিলিয়া: রক্ত জমাট বাঁধা জনিত রোগ

 সারা পৃথিবীতে প্রতি ১০ হাজার জনে একজন হিমোফিলিয়াসহ অন্যান্য রক্তক্ষরণজনিত রোগে ভুগছে। শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি এমন রোগীর সংখ্যা আরও বেশি। ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব হিমোফিলিয়ার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি লাখে ২০ জন মানুষ হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত।

হিমোফিলিয়া কী
হিমোফিলিয়া একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। মানবদেহে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য কিছু বিশেষ ব্যবস্থা আছে। রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় কাজ করে রক্তের অণুচক্রিকা এবং আরও কয়েকটি বিষয়। এগুলোর মধ্যে বিশেষ দুটি ফ্যাক্টর কম মাত্রায় উৎপাদিত হলে রক্তের জমাট বাঁধায় সমস্যা দেখা দেয়। এ রকম পরিস্থিতিতে শরীরের ভেতরে নিজে নিজেই রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে। একেই বলে হিমোফিলিয়া।

হিমোফিলিয়া দুই ধরনের—একটি হিমোফিলিয়া এ, অন্যটি হিমোফিলিয়া বি। ৮৫ শতাংশ হিমোফিলিয়া রোগী হিমোফিলিয়া এ-তে আক্রান্ত। হিমোফিলিয়া বি-এর আরেক নাম ক্রিসমাস ডিজিজ।

লক্ষণ
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণই হলো হিমোফিলিয়ার প্রধান লক্ষণ। শিশুদের খতনা করার পর অনেক সময় দেখা যায় রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না। দাঁত পড়ার সময় প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অনেকের দেখা যায় হামাগুড়ি দেওয়ার কারণে হাঁটু ফুলে যায় অথবা সামান্য আঘাতে গিরা ফুলে যায়। অস্ত্রোপচারের পর বা দুর্ঘটনাজনিত আঘাতের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ হয় না।

রোগের মাত্রা ও রোগের মেয়াদ অনুযায়ী প্রকাশ পেতে পারে আরও কিছু লক্ষণ। দীর্ঘদিন ধরে অস্থিসন্ধিতে রক্তক্ষরণের কারণে অস্থিসন্ধির কর্মক্ষমতা নষ্ট হতে পারে। এ ছাড়া শরীরের অন্যান্য অংশেও রক্তক্ষরণ হতে পারে। এমনকি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে, যেটা খুবই মারাত্মক। এতে সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই সময় থাকতেই রোগটি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারলে এবং সে অনুযায়ী সতর্ক থাকলে মৃত্যুর ঝুঁকি কমানো যায়। রক্তক্ষরণের মাত্রা নির্ভর করে রক্ত জমাট বাঁধার উপাদান (ফ্যাক্টর ৮ ও ৯) কত পরিমাণে উপস্থিত আছে তার ওপর।

পরীক্ষা

  • রক্তের ফ্যাক্টর দুটির পরীক্ষা।
  • রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা পরীক্ষা।

চিকিৎসা
হিমোফিলিয়ার স্থায়ী কোনো চিকিৎসা নেই। শিরাপথে ইনজেকশনের মাধ্যমে সেই ফ্যাক্টর শরীরে প্রবেশ করানোই মূল চিকিৎসা। রক্তক্ষরণের কারণে অস্থিসন্ধিতে সমস্যা দেখা দিলে ফিজিওথেরাপি নিতে হয়। নিয়মিত চিকিৎসা নিলে এবং সাবধানতার সঙ্গে জীবনযাপন করলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব। হিমোফিলিয়া রোগীদের বিশেষ কিছু সাবধানতা মেনে চলতে হয়। যেমন—

  • শরীরে আঘাত লাগতে পারে এ রকম কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কাজে  অংশ না নেওয়া
  • মাংসে ইনজেকশন না নেওয়া
  • যেকোনো ধরনের অস্ত্রোপচারের পর রক্তরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া
  • ব্যথানাশক ওষুধ বা রক্ত তরল করে এ রকম ওষুধ (যেমন অ্যাসপিরিন) না খাওয়া ইত্যাদি।

হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা ও ওষুধ বাংলাদেশে খুব একটা সুলভ নয়। সচেতন হলে এই রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকখানি কমে যায়। তাই হিমোফিলিয়া সম্পর্কে সবার সচেতন থাকা একান্ত জরুরি।

লেখক: রক্তরোগ ও রক্ত ক্যানসার বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত