Ajker Patrika

খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তবে খুবই ধীর গতিতে: ডা. জাহিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তবে খুবই ধীর গতিতে: ডা. জাহিদ

রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) রাখা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে। সেখানে চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তাঁর চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে ভর্তির পর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি হলেও তা খুব ধীর গতিতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এ অবস্থায় চিকিৎসকেরা খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত বলে জানান তিনি।

আজ সোমবার এ বিষয়ে জাহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের উন্নতি হচ্ছে, তবে তা হচ্ছে খুবই ধীর গতিতে। সে জন্য চিকিৎসকেরা চিন্তিত। আর সে কারণে দেশি-বিদেশি চিকিৎসকদের নিয়ে অনলাইনে বৈঠক করে তাঁর স্বাস্থ্যের পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

গত শনিবার দুপুরের পর খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হয়। মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী ওই দিন রাতে তাঁকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকেই সিসিইউতে রেখে তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

খালেদা জিয়াকে দেখতে আজ হাসপাতালে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। হাসপাতালে কিছু সময় অবস্থান করে চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে চলে আসেন তাঁরা।

চিকিৎসার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করে সরকার তিলে তিলে খালেদা জিয়াকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘সরকার তাঁর (খালেদা জিয়া) মৃত্যুর অপেক্ষায় আছে। যেদিন তাঁর মৃত্যু হবে, সেদিন আর কোথাও না হলেও গণভবনে মিষ্টি বিতরণ করা হবে।’

সন্ত্রাসী হামলায় আহত নাটোর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান শাহীনকে দেখতে আজ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে যান গয়েশ্বর। পরে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া আর্থরাইটিস, হৃদ্রোগ, ফুসফুস, লিভার, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত বছরের ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তখন পাঁচ মাসের বেশি সময় চিকিৎসা শেষে গত ১১ জানুয়ারি তাঁর গুলশানের বাসায় ফেরেন বিএনপির চেয়ারপারসন। উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে তাঁর পরিবার থেকে সরকারের কাছে আবেদন করা হলেও অনুমতি পাওয়া যায়নি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত বিএনপির চেয়ারপারসনের রক্তনালিতে অস্ত্রোপচার করা হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সাজা ২০২০ সালের ২৫ মার্চ সরকার নির্বাহী আদেশে স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিয়েছিল। তখন থেকে ছয় মাস পরপর তাঁর সাজা স্থগিত করে মুক্তির মেয়াদ বাড়াচ্ছে সরকার।

এদিকে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা ‘সংকটাপন্ন’ দাবি করে গভীর উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সুচিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশ পাঠানোর জন্য সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে পার্টির চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি ও মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভুইয়া এই আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে এক দিনে ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৬২

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বাড়ছে মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাড়ছে মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে ১ হাজার ১৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

আজ রোববার (২ নভেম্বর) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ১ হাজার ১৬২ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকা মহানগরের হাসপাতালগুলোতে ৪৩৬, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৭৬, বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৬৩, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১০৮, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১৫৪, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮৭, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৯৮, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩২ ও সিলেট বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) আটজন ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ২৮৩ জন মারা গেছে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭১ হাজার ৬৭৫ জন।

২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া পাঁচজনের মধ্যে ১৩ বছরের এক কিশোর আছে। সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। অন্যদের বয়স যথাক্রমে ৫২, ৪২, ২৮ ও ৫০। তাঁদের মধ্যে দুজন নারী আর দুজন পুরুষ রয়েছেন। এই পাঁচজনের মধ্যে ডিএনসিসিতে একজন, ডিএসসিসিতে তিনজন ও রাজশাহীর হাসপাতালে আরও একজন চিকিৎসাধীন ছিলেন।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৯৫১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৪১০ জন রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিবিসির প্রতিবেদন /ওজন কমানোর ভাইরাল ওষুধে প্রলুব্ধ রুশ তরুণ–তরুণীরা, বাড়ছে বিপদ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২২ বছরের তরুণী মারিয়ার মতো আরও অনেক রুশ তরুণীই ছিপছিপে হওয়ার লোভে মলিকিউলের মতো ওষুধের ফাঁদে পড়েছিলেন। ছবি: বিবিসি
২২ বছরের তরুণী মারিয়ার মতো আরও অনেক রুশ তরুণীই ছিপছিপে হওয়ার লোভে মলিকিউলের মতো ওষুধের ফাঁদে পড়েছিলেন। ছবি: বিবিসি

রাশিয়ায় টিকটকে চলতি বছরের শুরুতে ভাইরাল হয় এক ধরনের ওজন কমানোর ওষুধ। ‘মলিকিউল’ নামে একটি পিল। তরুণদের ফিডে ভেসে উঠতে থাকে নানা ক্যাপশন—‘মলিকিউল খাও, খাবার ভুলে যাও, ওজন কমাও’, কিংবা ‘বড়সড় পোশাক পরে ক্লাসের পেছনের বেঞ্চে বসতে চাও?’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা যায়, ফ্রিজ ভর্তি নীল বাক্স। বাক্সের গায়ে ঝলমলে হোলোগ্রাম, তাতে লেখা ‘মলিকিউল প্লাস।’ বিভিন্ন অনলাইন স্টোরে অর্ডারের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কিশোর-কিশোরীরা নিজেদের ‘ওজন কমানোর যাত্রা’ শেয়ার করছে সামাজিক মাধ্যমে।

কিন্তু এর পেছনে আছে ভয়ানক এক ফাঁদ। ২২ বছর বয়সী মারিয়া অনলাইনের এক জনপ্রিয় দোকান থেকে এই পিল কিনেছিলেন। দিনে দুইটা করে খেতেন। দুই সপ্তাহের মধ্যে তার মুখ শুকিয়ে যায়, খাবারের প্রতি সম্পূর্ণ অনীহা তৈরি হয়। তিনি বলেন, ‘খাওয়ার তো ইচ্ছে হতোই না, পান করতেও চাইতাম না। ভেতরে-ভেতরে অস্থির লাগত, ঠোঁট কামড়াতাম, গাল চিবাতাম।’

এরপর মারিয়া প্রবল উদ্বেগে ভুগতে থাকেন। তাঁর মনে নেতিবাচক চিন্তা ভর করে। তিনি বলেন, ‘এই পিলগুলো আমার মানসিক অবস্থার ওপর ভয়ানক প্রভাব ফেলেছিল।’ সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসকারী মারিয়া জানান, এমন ভয়াবহ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না।

অনলাইন শপগুলোতে এক চাকচমকপূর্ণ ‘মলিকিউল’ বিক্রি করা হচ্ছে চোখের সামনেই। ছবি: টিকটক
অনলাইন শপগুলোতে এক চাকচমকপূর্ণ ‘মলিকিউল’ বিক্রি করা হচ্ছে চোখের সামনেই। ছবি: টিকটক

অন্য টিকটক ব্যবহারকারীরাও জানান, পিল খাওয়ার পর তাদের চোখের মণি বড় হয়ে যায়, হাত কাঁপে, ঘুম আসে না। কমপক্ষে তিনজন স্কুলশিক্ষার্থীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। এপ্রিলে সাইবেরিয়ার চিতা শহরের এক স্কুলছাত্রীকে ‘মলিকিউল’-এর অতিরিক্ত সেবনের পর হাসপাতালে নেওয়া হয়। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সে দ্রুত ওজন কমিয়ে গ্রীষ্মের আগে ছিপছিপে হতে চেয়েছিল।

আরেক স্কুলছাত্রীর মা জানান, তাঁর মেয়েকে আইসিইউতে নিতে হয়েছিল, কারণ সে একসঙ্গে অনেকগুলো পিল খেয়েছিল। মে মাসে সেন্ট পিটার্সবার্গের ১৩ বছর বয়সী এক ছেলেকে হাসপাতালে নিতে হয়, কারণ সে হ্যালুসিনেশন ও আতঙ্কে ভুগছিল। স্কুলে ওজন নিয়ে উপহাস করার হতো তাকে। এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সে এক বন্ধুর মাধ্যমে এই পিল কিনেছিল।

মলিকিউল পিলের মোড়কে সাধারণত লেখা থাকে ‘প্রাকৃতিক উপাদান’, যেমন—ড্যান্ডেলিয়ন রুট ও মৌরি বীজের নির্যাস দিয়ে তৈরি। কিন্তু এ বছরের শুরুতে রুশ দৈনিক ইজভেস্তিয়ার সাংবাদিকেরা অনলাইনে কেনা পিল পরীক্ষার জন্য জমা দেন। তাতে পাওয়া যায় ‘সিবিউট্রামিন’ নামের একটি পদার্থ।

এই সিবিউট্রামিন প্রথমে ১৯৮০-এর দশকে অবসাদনাশক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, পরে ক্ষুধা দমনকারী হিসেবে প্রচলিত হয়। কিন্তু গবেষণায় দেখা যায়, এটি হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, অথচ ওজন কমায় সামান্যই। ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এটি নিষিদ্ধ করা হয়। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীনসহ অনেক দেশেই এখন অবৈধ।

মলিকিউল ওষুধটি ‘প্রাকৃতিক উপাদানে’ তৈরি বলা হলেও তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান আছে। ছবি: সংগৃহীত
মলিকিউল ওষুধটি ‘প্রাকৃতিক উপাদানে’ তৈরি বলা হলেও তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিভিন্ন উপাদান আছে। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ায় এটি এখনো ওজন কমানোর ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয়, তবে কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য এবং চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশনে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া সিবিউট্রামিন কেনাবেচা অপরাধ। কিন্তু তাতে এই ড্রাগের বিক্রি খুব একটা থামছে না। ব্যক্তিগত বিক্রেতা ও ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে এটি বিক্রি করছে—অনেক সময় বৈধ ওষুধের চেয়েও বেশি মাত্রায় এবং কোনো প্রেসক্রিপশন ছাড়াই।

এই অবৈধ পিলের দাম প্রায় ৮ থেকে ৯ ডলার, যা ২০ দিনের জন্য যথেষ্ট। অথচ রাশিয়ার বাজারে পরিচিত ওজন কমানোর ইনজেকশন যেমন ‘Ozempic’-এর দাম প্রতি মাসে ৪০ থেকে ১৬০ পাউন্ড (৫০ থেকে ২১০ ডলার)। সেন্ট পিটার্সবার্গের অন্তঃস্রাববিশেষজ্ঞ জেনিয়া সোলোভিয়েভা বলেন, ‘নিজে নিজে এই ওষুধ খাওয়া ভয়ানক বিপজ্জনক’, কারণ এসব তথাকথিত ‘ডায়েটারি সাপ্লিমেন্ট’-এ কত পরিমাণ সক্রিয় উপাদান আছে তা কেউ জানে না।

‘মলিকিউল’ বিক্রির দায়ে রাশিয়ায় নিয়মিত লোকজনকে কারাদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার অবৈধ বিক্রি বন্ধে হিমশিম খাচ্ছে। এপ্রিলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত সেফ ইন্টারনেট লিগ বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানায়। এরপর কয়েকটি বড় অনলাইন মার্কেটপ্লেস মলিকিউল তাদের কার্ট থেকে সরিয়ে দেয়। কিন্তু অচিরেই এটি ফিরে আসে নতুন নামে—‘অ্যাটম।’ প্যাকেজিং প্রায় হুবহু আগের মতো।

সম্প্রতি রাশিয়ায় একটি আইন পাস হয়েছে, যাতে আদালতের আদেশ ছাড়াই ‘অবৈধ ফুড সাপ্লিমেন্ট বা খাদ্য পরিপূরক বিক্রি করা ওয়েবসাইট’ বন্ধ করা যায়। কিন্তু বিক্রেতারা এখন এসব পণ্যকে ‘স্পোর্টস নিউট্রিশন’ হিসেবে দেখিয়ে বিক্রি করছে।

টিকটকে এখনো এমন বিক্রেতা, যারা ‘মলিকিউল’ বিক্রি করছে। তবে নাম ভিন্ন—কখনো তা ‘মিউসলি’, ‘বিস্কুট’ বা ‘লাইটবাল্ব।’ কিছু বিক্রেতা তো আবার গোপনীয়তার ধারই ধারছেন না। কয়েক সপ্তাহ আগে বিবিসি এক জনপ্রিয় রুশ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ‘মলিকিউল’-এর তালিকা খুঁজে পায়। জানতে চাইলে সংস্থাটি জানায়, তারা দ্রুত সিবিউট্রামিনযুক্ত সব পণ্য সরিয়ে ফেলেছে। তবে তারা স্বীকার করেছে, যেসব তালিকায় স্পষ্টভাবে ‘সিবিউট্রামিন’ লেখা নেই, সেগুলো শনাক্ত করা কঠিন।

যদি কেউ কোনোভাবে ‘মলিকিউল’ কিনতে সক্ষম হয়, তবুও বোঝা মুশকিল আসলে কী পাওয়া যাচ্ছে—আর এই পিল কোথায় তৈরি হচ্ছে, তা-ও অনিশ্চিত। বিবিসি কিছু বিক্রেতার কাছে এমন সনদপত্র পেয়েছে, যাতে লেখা আছে চীনের গুয়াংজু ও হেনান প্রদেশের কারখানায় উৎপাদিত। আবার কেউ কেউ দাবি করে, পণ্যটি জার্মানি থেকে আনা।

কিছু প্যাকেটে লেখা থাকে, এটি জার্মানির রেমাগেন শহরে তৈরি। কিন্তু বিবিসি খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, ওই ঠিকানায় এমন কোনো কোম্পানি নেই। আর কাজাখস্তানের কয়েকজন বিক্রেতা যারা রাশিয়ায় ‘মলিকিউল’ পাঠায়, তারা বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা পণ্যটি বন্ধুদের কাছ থেকে বা রাজধানী আস্তানার কিছু গুদাম থেকে সংগ্রহ করে থাকে, কিন্তু মূল সরবরাহকারীর নাম জানে না।

এদিকে, অনলাইনে ইটিং ডিসঅর্ডার বা খাওয়ার ব্যাধি সংক্রান্ত অনেক কমিউনিটি এখন ‘মলিকিউল’ নামের ওষুধটি প্রচারের জায়গা হয়ে উঠেছে। ব্যবহারকারীরা হ্যাশট্যাগ আর নানা গোপন শব্দ ব্যবহার করে প্ল্যাটফর্মগুলোর নজরদারি এড়িয়ে যাচ্ছে। সোলোভিয়েভা বলেন, যেসব তরুণ-তরুণী আগে থেকেই ইটিং ডিসঅর্ডারে ভুগছে, তাদের জন্য মলিকিউল অত্যন্ত ক্ষতিকর। যারা পুনরায় অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে, তাদের হাতে সহজলভ্য এই ক্ষুধা দমনকারী ওষুধ ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনতে পারে।

মারিয়া এখন মলিকিউলের মতো ওজন কমানোর ওষুধের বিপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। ছবি: টিকটক
মারিয়া এখন মলিকিউলের মতো ওজন কমানোর ওষুধের বিপক্ষে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করছেন। ছবি: টিকটক

রুশ সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার আন্না এনিনা নিজেও অতীতে অননুমোদিত ওজন কমানোর ওষুধ ব্যবহার করেছেন। তবে তিনি প্রকাশ্যে তাঁর অনুসারীদের সতর্ক করে বলেন, ‘আমি নিজে ইটিং ডিসঅর্ডারে ভুগেছি…এর পরিণতি ভয়াবহ হবে। তোমরা এর জন্য দশগুণ অনুতপ্ত হবে।’

মারিয়া সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গেছেন। অতিরিক্ত মলিকিউল খাওয়ার পর তিনি মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়। এখন তিনি বিভিন্ন ওজন কমানোর ফোরামে তরুণী ও মেয়েদের এই বড়ি না খেতে পরামর্শ দেন। এমনকি এক কিশোরীর বাবা-মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরও সতর্ক করেছেন।

তবু মলিকিউল অনলাইনে এখনো জনপ্রিয়। আর মারিয়ার টিকটক ফিডে যখনই নতুন কোনো ভিডিও ভেসে ওঠে, তখন সেটি তাঁকে মনে করিয়ে দেয়—সেই পিলগুলোর কথা, যেগুলো তাঁকে অসুস্থ করে দিয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

ফিচার ডেস্ক
সকালে নাশতা না খাওয়ার পাঁচ ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি

সময়স্বল্পতার কারণে অনেকে সকালের নাশতা খাওয়া বাদ দিয়ে দেন। সকালে ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাওয়া, নির্দিষ্ট সময়ে অফিস কিংবা স্কুল-কলেজে পৌঁছানোর তাড়া ইত্যাদি কারণে নাশতা আর খাওয়া হয়ে ওঠে না। ক্ষুধা না থাকা, ব্যস্ত সময়সূচি কিংবা ওজন কমানোর কথা ভেবেও অনেক সময় সকালে নাশতা খাওয়া থেকে বিরত থাকেন অনেকে। কিন্তু যে কারণেই হোক না কেন, এর ফলে পুষ্টির ঘাটতি, পেটের আলসার এবং বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

পুষ্টিবিদ ইতি খন্দকার পরামর্শ দিয়েছেন, ‘নাশতা অবশ্যই সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে। নাশতায় ওটস, ডিম ও সবজি দিয়ে খিচুড়ি করে খেতে পারেন কিংবা লাল আটার মাঝারি আকারের দুটি রুটি, এক বাটি কম মসলাযুক্ত সেদ্ধ সবজি এবং একটি ডিম রাখতে পারেন। ১০-১৫ মিনিট পর পুদিনাপাতা, লেবুর রস ও টক দই মেশানো এক বাটি খোসাসহ শসার সালাদ খাবেন।

নাশতা না করার স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো

ক্লান্তি: সকালে খাওয়া নাশতা মস্তিষ্ক এবং শরীরের সঠিক ক্রিয়াকলাপের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও শক্তি সরবরাহ করে। তাই নাশতা বাদ দিলে বিপাকপ্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। ফলে ক্লান্তি, অমনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

স্থূলতা: অনেকের ধারণা, সকালে নাশতা না খাওয়া ওজন কমাতে সাহায্য করে। অথচ তা একেবারেই সঠিক নয়। নাশতা বাদ দিলে প্রায়ই ক্ষুধা বেড়ে যায়। ফলে দুপুর বা রাতে বেশি খাওয়া হয়। এ ছাড়া নাশতা না করার কারণে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণের জন্য অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ করা হতে পারে। তবে বিষয়টি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হয়তো ওজনও বাড়বে। ইতি খন্দকার পরামর্শ দেন, ট্রান্সফ্যাট, ফার্স্ট ফুড, কোল্ড ড্রিংকস, চিনি, মিষ্টিজাতীয় খাবার ইত্যাদি খাওয়া বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি দৈনিক পরিমাণমতো পানি পান করতে হবে।

দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি: সকালে খাওয়া নাশতা বিপাকপ্রক্রিয়া শুরু করতে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। তবে এটি বাদ দিলে অস্থায়ীভাবে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়, যা ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের জন্য শরীর হরমোন মুক্ত করতে প্ররোচিত করে। রক্তে শর্করার মাত্রার এই ওঠানামা ইনসুলিন প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, যা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রধান ঝুঁকির কারণ। এ ছাড়া সকালের নাশতা বাদ দেওয়া, না খেয়ে থাকার সময়কাল দীর্ঘায়িত করে। এতে প্রদাহ সৃষ্টিকারী উপাদান সাইটোকাইনস অতিরিক্ত নিঃসরণ হতে পারে। ফলে দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়ে।

পাকস্থলী ও ডিওডেনাল আলসার:

খাবার বাদ দেওয়া হলে পাকস্থলী অ্যাসিড তৈরি করার কাজ চালিয়ে যায়। কিন্তু তা প্রশমিত করার জন্য কোনো খাদ্য থাকে না। এতে পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। ফলে দীর্ঘ মেয়াদে পাকস্থলী এবং ডিওডেনাল আলসার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সকালের নাশতা বাদ দেওয়া ইসোফেগাস (খাদ্যনালি), পাকস্থলী, কোলন, যকৃৎ, পিত্তনালিসহ গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধির সঙ্গেও যুক্ত।

পিত্তথলিতে পাথর: খাবার খাওয়ার ফলে পিত্তথলি হজমের জন্য অন্ত্রে পিত্ত নিঃসরণ করে। দীর্ঘ সময়ের জন্য খাবার বাদ দিলে পিত্তথলির নিয়মিত সংকোচন বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে পিত্ত জমাট বাঁধে। আর এই জমাট বাঁধার কারণে কোলেস্টেরল ও পিত্ত লবণ স্ফটিকের আকার ধারণ করে, যা পিত্তথলিতে পাথর তৈরি করে। এ ছাড়া খাবার বাদ দেওয়ায় কারণে অন্ত্রের কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এবং মলের মাধ্যমে অতিরিক্ত কোলেস্টেরল অপসারণকে ধীর করে দেয়। এ ছাড়া পিত্তথলিতে পাথর গঠনের ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি অবদান রাখে।

সকালবেলার নাশতায় অবশ্যই চার ধরনের খাবারের উপস্থিতি থাকা জরুরি। এগুলো হলো, প্রোটিনের মধ্যে ডিম, দুধ, চর্বিহীন মাংস ও শিম। জটিল কার্বোহাইড্রেটের মধ্যে ওটস, লাল চাল, বাকহুইট, লাল আটার রুটি, মিষ্টিআলু এবং ভুট্টা। স্বাস্থ্যকর চর্বির মধ্যে বাদাম, অ্যাভোকাডো ও জলপাই তেল এবং ফল ও সবজি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন: জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কাহিল ৫ অ্যান্টিবায়োটিক

  • যেকোনো ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ৯৫ শতাংশের বেশি।
  • জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
  • তৃতীয় প্রজন্ম বা তারও উচ্চ স্তরের ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ।
  • সরকারি পর্যায়ে মনোযোগ কম বলে অভিযোগ।
মুহাম্মাদ শফিউল্লাহ, ঢাকা
আপডেট : ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৮: ৫৫
ছবি: এএফপি
ছবি: এএফপি

অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে রোগজীবাণুর প্রতিরোধক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। বাংলাদেশে এর হার অনেক বেশি। দেশে বহুল ব্যবহৃত অন্তত পাঁচটি অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে জীবাণুরা উচ্চমাত্রার প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। কোনো কোনো ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের মাত্রা ৯৫ শতাংশের বেশি বলে সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এর অর্থ হচ্ছে, বিভিন্ন সংক্রমণের চিকিৎসায় বর্তমানে প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর কার্যকারিতা অনেকাংশে কমে গেছে। ওষুধের বিরুদ্ধে জীবাণুর এই প্রতিরোধী হয়ে ওঠাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি বলে উল্লেখ করে আসছেন জনস্বাস্থ্যবিদেরা।

গত মাসে ডব্লিউএইচও ‘গ্লোবাল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সার্ভেইলেন্স রিপোর্ট ২০২৫’-এ বলেছে, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ (এএমআর) জীবন রক্ষাকারী চিকিৎসার কার্যকারিতা কমিয়ে দিচ্ছে। এতে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য গুরুতর হুমকির মুখে পড়ছে। এই প্রতিবেদনে ১০৪টি দেশ থেকে প্রাপ্ত ২ কোটি ৩০ লাখের বেশি ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আটটি সাধারণ ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি অ্যান্টিবায়োটিকের প্রতিরোধ গড়ে তোলার তথ্য তুলে ধরা হয়। এই ৮ জীবাণু হচ্ছে অ্যাসিনেটোব্যাক্টার, ই-কোলাই, ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়া, নেইসেরিয়া গনোরিয়া, নন-টাইফয়েড সালমোনেলা, শিগেলা, স্ট্যাফিলোকক্কাস অরিয়াস এবং স্ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনিয়ি।

কোনো অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাসের মতো জীবাণু এবং ফাঙ্গাস ও অন্যান্য পরজীবীকে দমনে ব্যর্থ হলে তাকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) বলে। এমন হলে জীবাণুঘটিত সংক্রমণগুলোর চিকিৎসা কঠিন হয়ে যায়। এতে নিরাময়যোগ্য সাধারণ সংক্রমণও জটিল এবং রোগ দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে।

বাংলাদেশে ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে ওঠা অ্যান্টিবায়োটিকের মধ্যে আধুনিক তৃতীয় প্রজন্মের বা তারও উচ্চ স্তরের ওষুধ রয়েছে। এখানে বহুল ব্যবহৃত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধের হার ৭৯ থেকে ৯৭ শতাংশ। ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে এএমআর সংকট গুরুতর আকার নিচ্ছে। অ্যাসিনেটোব্যাক্টার নামের গ্রাম-নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়াটি একে মোকাবিলায় ব্যবহৃত ইমেপেনেম নামের শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে ৯৭ শতাংশ প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। ওই ব্যাকটেরিয়া রক্তে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

রক্ত সংক্রমণ সৃষ্টিকারী ই-কোলাই জীবাণু তৃতীয় প্রজন্মের সেফোটাক্সিম অ্যান্টিবায়োটিকের ক্ষেত্রে প্রায় ৮০ শতাংশ প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। তৃতীয় প্রজন্মের ওষুধ সেফালোস্পোরিনসের বিরুদ্ধে একই ব্যাকটেরিয়ার প্রতিরোধের হার ৮৮ শতাংশের বেশি। ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়ি ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে সৃষ্ট রক্ত সংক্রমণে ব্যবহৃত তৃতীয় প্রজন্মের অ্যান্টিবায়োটিক সেফোটাক্সিমের বিরুদ্ধে ৮৭ শতাংশ এবং ইমেপেনেমের বিরুদ্ধে ৫১ শতাংশ প্রতিরোধ দেখা গেছে। শিগেলা ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হলে পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণ হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ওষুধ ইদানীং তেমন কার্যকর হচ্ছে না। প্রতিরোধের হার ৮৯ শতাংশ। ই-কোলাইয়ের কারণে মূত্রনালির সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত তৃতীয় প্রজন্মের ওষুধ সেফোটাক্সিমে প্রতিরোধের হার ৬৫ শতাংশ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মক্ষেত্রের বিবেচনায় বাংলাদেশ এবং এর প্রতিবেশীরা ১১টি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশের মধ্যে পড়ে। এ দেশগুলোর মধ্যে অন্তত পাঁচটি জীবাণুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। সব রোগ সৃষ্টিকারী অণুজীব (প্যাথোজেন) একাধিক ওষুধে নিয়ন্ত্রণযোগ্য হলেও পাঁচটি ওষুধের প্রতিরোধের হার ৭৯ থেকে ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছেছে। অন্যান্য জীবাণুর ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান ওষুধ প্রতিরোধের দিক থেকে দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম স্থানের মধ্যে। তিনটি জীবাণু ৫১ থেকে ৬৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রতিরোধী হয়ে উঠেছে। এর চেয়ে কিছু কম হারের প্রতিরোধী জীবাণুও রয়েছে কয়েকটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে জীবাণুর প্রতিরোধের হার ৫০ শতাংশ বা তার বেশি হলে তা উচ্চ প্রতিরোধ, ২০-৫০ শতাংশ হলে মধ্যম প্রতিরোধ, আর ২০ শতাংশের কম হলে নিম্ন প্রতিরোধ হিসেবে গণ্য হয়। উচ্চ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ব্যর্থতার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং রোগীকে বিকল্প বা তৃতীয় সারির ওষুধ ব্যবহারের প্রয়োজন হতে পারে।

অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ কার্যকারিতা হারালে গুরুতর অসুস্থতা, অক্ষমতা এবং মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে। এতে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকিও বাড়ে। বিষয়টি জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআরবি) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (ভাইরোলজি) অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন হাবিব অবশ্য ডব্লিউএইচওর প্রতিবেদনে দেখানো হারকে ‘স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি’ আখ্যা দিয়েছেন। এর ব্যাখ্যা দিয়ে আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে ডব্লিউএইচও যে নমুনাগুলো সংগ্রহ করেছে, সেগুলো মূলত বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে নেওয়া হয়েছে। সেখানে সাধারণত এএমআর তুলনামূলকভাবে বেশি।’

‘অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স সার্ভিলেন্স বাংলাদেশ ২০২৪’ প্রতিবেদনের প্রধান সম্পাদক ডা. জাকির হোসেন হাবিব আরও বলেন, ‘যেসব দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভালো, সেখানে এএমআর কম। আর জীবাণুর বর্তমান রেজিস্ট্যান্স এক দিনে তৈরি হয়নি। সারা বিশ্বে এএমআর বিষয়ে কাজ পর্যাপ্ত নয়।’

নিয়ন্ত্রণে না আনলে বিপদ

১০ বছর ধরে এএমআর পর্যবেক্ষণ শুরু করে ডব্লিউএইচও। সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ১৬টি প্যাথোজেনের তথ্য অন্তর্ভুক্ত। এসব জীবাণু চার ধরনের সংক্রমণ ঘটায়—রক্ত, পরিপাকতন্ত্র, মূত্রনালি এবং ইউরোজেনিটাল সংক্রমণ। ডব্লিউএইচও বলছে, অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে না পারলে এটি জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর গুরুতর প্রভাব ফেলবে।

রোগতত্ত্ববিদ ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এএমআর এর উচ্চ হারের কারণে গুরুতর রোগ, দীর্ঘায়িত হাসপাতাল ভর্তি, চিকিৎসা ব্যর্থতা, শল্যচিকিৎসার ঝুঁকি ও মৃত্যুহার বাড়তে পারে। এর ফলে চিকিৎসার ব্যয় বাড়ে, স্বাস্থ্যসেবায় চাপ তৈরি হয় এবং উৎপাদনশীলতা কমে যায়। এ পরিস্থিতির মূল কারণ অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ও অপব্যবহার, রোগীদের চিকিৎসা অসম্পূর্ণ রাখা, পোলট্রি, গবাদিপশু পালন ও মাছ চাষে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং হাসপাতালে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা।

এই গুরুতর সমস্যা মোকাবিলায় বিশেষজ্ঞরা ‘ওয়ান হেলথ অ্যাপ্রোচ’ (একক স্বাস্থ্য পদ্ধতি) অনুসরণসহ বিভিন্ন জরুরি পদক্ষেপের পরামর্শ দিচ্ছেন। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শুধু ডাক্তার নির্ধারিত মাত্রা ও সময় অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিক্রি বন্ধ, প্রাণী ও কৃষিতে অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ, হাসপাতাল ও জনবসতিতে পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সক্ষমতা উন্নয়ন এবং নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ও টিকা উদ্ভাবনে মনোযোগ দেওয়া।

জনস্বাস্থ্যবিদের হুঁশিয়ারি

এএমআর সমস্যার বিষয়ে সরকারি পর্যায়ে মনোযোগ কম বলে মন্তব্য করেছেন পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট (ইলেক্ট) অধ্যাপক ডা. আবু জামিল ফয়সাল। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘চিকিৎসকেরা বিপদটি জানার পরও এসব অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছেন, রোগীরাও ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কিনছেন। এটা ওষুধ উৎপাদনকারীদের বাণিজ্যিক স্বার্থের বিষয়ে পরিণত হয়েছে। মানুষের দেহে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকের একটি বড় অংশ মলমূত্রের মাধ্যমে অপরিবর্তিত অবস্থায় পরিবেশে ফিরে যায়। এটি প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান থাকা জীবাণুর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ছড়িয়ে দেয়।’

জনস্বাস্থ্যবিদ ডা. আবু জামিল ফয়সাল আরও বলেন, ‘এএমআরের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এককভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। এখানে মানুষ, পরিবেশ ও প্রকৃতি—সবকিছুর সমন্বয় জরুরি। চিকিৎসকসমাজসহ সবক্ষেত্রে জনসচেতনতা ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। কৃষি, মাছ ও খাদ্যে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার রোধ করতে হবে।’

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশও (আইসিডিডিআরবি) গত সেপ্টেম্বরে এক গবেষণায় জানিয়েছে, দেশে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ব্যাপক। জনবসতি ও হাসপাতাল—উভয় ক্ষেত্রে এরকম প্রতিরোধের নমুনা দেখা গেছে। জনগোষ্ঠীর ৭৮ শতাংশ এবং হাসপাতালের ৮২ শতাংশে সেফালোস্পোরিন প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া ধরা পড়েছে।

‘সরকার মনোযোগী আছে’

এএমআর নিয়ে কার্যক্রম আরও বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘এএমআরের বিষয়ে আরও সতর্কতা এবং মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের ভয়াবহতা অস্বীকার করা যায় না। এ বিষয়ে সরকারের কোনো মনোযোগ নেই, এমনটি সঠিক নয়।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত