অনলাইন ডেস্ক
একটা সময় ছিল, যখন ভুঁড়ি ছিল আভিজাত্য ও প্রতিপত্তির প্রতীক। বোঝাত, মানুষটি ভালো খান, সুখে আছেন। বয়স্কদের কাছে তো বটেই, সমাজে ভুঁড়িওয়ালাদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। সাহিত্যে, সিনেমায় ভুঁড়িকে প্রায়ই আলস্যের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। পেট মোটা মানেই যেন আরামপ্রিয়, কর্মবিমুখ কেউ। কার্টুনে রাজনীতিবিদদের ব্যঙ্গ করতে ভুঁড়িকে বড় করে দেখানো হতো। গ্রামেগঞ্জে ভুঁড়ি ছিল যেন একটা ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’—‘লোকটা তো বেশ খায়!’
কিন্তু সময় বদলেছে। একসময়কার আভিজাত্যের প্রতীক সেই ভুঁড়িই এখন চিন্তার কারণ। ভারতে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা। আর আপাতত নিরীহ সেই ভুঁড়িই হয়তো সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনছে। ২০২১ সালে ভারতে ১৮ কোটি মানুষ ছিলেন স্থূল বা অতিরিক্ত ওজনের। বিশ্বে স্থূল মানুষের সংখ্যার দিক থেকে ভারতের অবস্থা ছিল দ্বিতীয়। বিজ্ঞানী জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে,২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৫ কোটিতে। তখন দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই সমস্যায় ভুগবে।
বিশ্বজুড়েও একই চিত্র। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক এবং এক-তৃতীয়াংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী স্থূলতার শিকার হবে। এই সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে সেই পরিচিত ভুঁড়ি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পেটের মেদ।’
পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া শুধু দেখতে খারাপ নয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এর চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর এটি। নব্বইয়ের দশকেই গবেষণা জানিয়েছিল, পেটের মেদের সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের সরাসরি যোগ আছে। স্থূলতা শুধু পেটেই হয় না। শরীরের বিভিন্ন অংশে মেদ জমা হওয়ার ধরনে এর ভিন্নতা দেখা যায়। তবে পেটের মেদ সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ।
ভারতের স্বাস্থ্য সমীক্ষা বলছে, দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ নারী ও ১২ শতাংশ পুরুষের পেটে অতিরিক্ত মেদ রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের প্রায় প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। শহরে এর প্রভাব গ্রামে চেয়ে বেশি। এর একটি বড় কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এর ফলে, শরীর ইনসুলিনের প্রতি আর আগের মতো সাড়া দেয় না। পেটের মেদ শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
দেখা গেছে, দক্ষিণ এশীয়দের শরীরের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) শ্বেতাঙ্গদের সমান হলেও তাদের শরীরে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি চর্বি থাকে। তবে শরীরে কেবল কতটা চর্বি আছে সেটাই আসল কথা নয়, সেটা কোথায় জমা হচ্ছে সেটাও জরুরি। ভারতীয়দের চর্বি সাধারণত পেটের আশপাশে এবং ত্বকের নিচে জমা হয়। তবে সব সময় ভেতরের অঙ্গের আশপাশে ক্ষতিকর ভিসেরাল ফ্যাট হিসেবে নয়।
গবেষণা বলছে, ভারতীয়দের ‘ফ্যাট সেলগুলো’ বা চর্বি কোষগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই চামড়ার নিচে চর্বি জমাতে তাদের সমস্যা হয়। ফলে অতিরিক্ত চর্বি লিভার ও অগ্ন্যাশয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে যায়। আর এতেই বাড়ে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি।
বিজ্ঞানীরা এখনো এর সঠিক কারণ জানেন না। তবে মনে করা হয়, এর মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস। একসময় ভারতে দুর্ভিক্ষ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সেই সময় শরীর অল্প খাবারেই বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে শিখেছিল। পেট ছিল সেই শক্তি জমা করার প্রধান জায়গা। খাবার সহজলভ্য হওয়ার পরও সেই প্রবণতা রয়ে গেছে। আর সেটাই এখন ডেকে আনছে বিপদ।
এই বিষয়ে দিল্লির ফরটিস-সি-ডক সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর ডায়াবেটিস, মেটাবলিক ডিজিজ অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজির প্রধান অনূপ মিশ্র বলেন, ‘ভারতের বহু প্রজন্ম দুর্ভিক্ষ আর খাদ্যাভাবের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছে। এই অবস্থায় শরীর নিজেকে টিকিয়ে রাখতে শিখে যায়—যতটা সম্ভব শক্তি জমাতে হবে বলে সে মনে করে। আর সেই শক্তি জমার জায়গা পেট। এই প্রবণতাই ভবিষ্যতে গিয়ে হয়ে ওঠে ভুঁড়ির কারণ।’ তিনি বলেন, ‘এটা অনুমানভিত্তিক হলেও যুক্তিসংগত এক বিবর্তন তত্ত্ব—যা প্রমাণ করা কঠিন, কিন্তু ভাবনাটা বাস্তবসম্মত।’
গত বছর ভারতীয় স্থূলতা কমিশনের এক গবেষণায় দক্ষিণ এশীয়দের জন্য স্থূলতার নতুন সংজ্ঞা প্রস্তাব করা হয়। এখানে শুধু বিএমআই নয়, শরীরে চর্বির অবস্থান, শারীরিক সক্ষমতা ও সংশ্লিষ্ট রোগগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে স্থূলতাকে দুই ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে শরীরের ওজন অনুযায়ী বিএমআই বেশি থাকে, কিন্তু পেটে চর্বি জমে না, কোনো বিপাকীয় রোগও থাকে না এবং দেহের কার্যকারিতাও স্বাভাবিক থাকে। এই ধাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে হালকা ওষুধেই ভালো ফল মেলে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে পেটে জমে যায় ভিসেরাল ফ্যাট, যেটি শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। সাথে দেখা দেয় ডায়াবেটিস, হাঁটুর ব্যথা বা হৃদকম্পনের মতো উপসর্গ। এই ধাপে ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই চিকিৎসাও হয় তুলনামূলকভাবে জটিল এবং নিয়মিত নজরদারির আওতায় রাখতে হয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এই শ্রেণিবিন্যাস চিকিৎসার ধরন নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুঁড়ি দেখা দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ এই পেটের চর্বি যত নিরীহ মনে হয়, আসলে ততটা নয়। ড. অনূপ মিশ্র বলেন, ‘অনেক সময় এমনও দেখা যায়—ওজন স্বাভাবিক, কিন্তু পেটের ভেতরে জমে থাকা চর্বি বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে।’
ভারতের চিকিৎসকেরা মনে করছেন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনই এই বিপদের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, বাহারি বাইরের খাবার, রেডিমেড প্যাকেটজাত খাবার আর বাসার চড়া তেলে রান্না—সব মিলেই পেটের চর্বি বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্রুত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ক্যামেরুন, ভারত ও ভিয়েতনামে মাথাপিছু ‘আলট্রা প্রসেসড ফুড’ ও পানীয়র বিক্রি সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে। ফলে ভুঁড়ির আশঙ্কাও বাড়ছে হু হু করে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, পেটের মেদ একবার দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ওজন কমানোর কিছু নতুন ওষুধ এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, অনেক স্বাভাবিক ওজনের মানুষের শরীরেও বিপজ্জনক মাত্রার পেটের মেদ থাকতে পারে। ভারতীয় চিকিৎসকদের মতে, জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এর প্রধান কারণ। ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, আর অতিরিক্ত তেল-মসলার খাবার এখন আমাদের রোজকার সঙ্গী।
তাহলে উপায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভারতীয়দের জীবনযাত্রায় আরও বেশি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কারণ আমাদের শরীর অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণের জন্য ততটা তৈরি নয়। তাই, ভুঁড়ি শুধু হাসির বিষয় নয়। এটা একটা বিপদ সংকেত। ভারত যেন এক স্বাস্থ্য বোমার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
একটা সময় ছিল, যখন ভুঁড়ি ছিল আভিজাত্য ও প্রতিপত্তির প্রতীক। বোঝাত, মানুষটি ভালো খান, সুখে আছেন। বয়স্কদের কাছে তো বটেই, সমাজে ভুঁড়িওয়ালাদের একটা আলাদা সম্মান ছিল। সাহিত্যে, সিনেমায় ভুঁড়িকে প্রায়ই আলস্যের প্রতীক হিসেবে উপস্থাপন করা হতো। পেট মোটা মানেই যেন আরামপ্রিয়, কর্মবিমুখ কেউ। কার্টুনে রাজনীতিবিদদের ব্যঙ্গ করতে ভুঁড়িকে বড় করে দেখানো হতো। গ্রামেগঞ্জে ভুঁড়ি ছিল যেন একটা ‘স্ট্যাটাস সিম্বল’—‘লোকটা তো বেশ খায়!’
কিন্তু সময় বদলেছে। একসময়কার আভিজাত্যের প্রতীক সেই ভুঁড়িই এখন চিন্তার কারণ। ভারতে বাড়ছে স্থূলতার সমস্যা। আর আপাতত নিরীহ সেই ভুঁড়িই হয়তো সবচেয়ে বড় বিপদ ডেকে আনছে। ২০২১ সালে ভারতে ১৮ কোটি মানুষ ছিলেন স্থূল বা অতিরিক্ত ওজনের। বিশ্বে স্থূল মানুষের সংখ্যার দিক থেকে ভারতের অবস্থা ছিল দ্বিতীয়। বিজ্ঞানী জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণায় আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে যে,২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ৪৫ কোটিতে। তখন দেশের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ এই সমস্যায় ভুগবে।
বিশ্বজুড়েও একই চিত্র। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বের অর্ধেকের বেশি প্রাপ্তবয়স্ক এবং এক-তৃতীয়াংশ শিশু ও কিশোর-কিশোরী স্থূলতার শিকার হবে। এই সমস্যার কেন্দ্রে রয়েছে সেই পরিচিত ভুঁড়ি। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পেটের মেদ।’
পেটের চারপাশে অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়া শুধু দেখতে খারাপ নয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, এর চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকর এটি। নব্বইয়ের দশকেই গবেষণা জানিয়েছিল, পেটের মেদের সঙ্গে টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের সরাসরি যোগ আছে। স্থূলতা শুধু পেটেই হয় না। শরীরের বিভিন্ন অংশে মেদ জমা হওয়ার ধরনে এর ভিন্নতা দেখা যায়। তবে পেটের মেদ সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ।
ভারতের স্বাস্থ্য সমীক্ষা বলছে, দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ নারী ও ১২ শতাংশ পুরুষের পেটে অতিরিক্ত মেদ রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে ৩০ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের প্রায় প্রতি দুজনের মধ্যে একজনের এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে। শহরে এর প্রভাব গ্রামে চেয়ে বেশি। এর একটি বড় কারণ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স। এর ফলে, শরীর ইনসুলিনের প্রতি আর আগের মতো সাড়া দেয় না। পেটের মেদ শরীরে ইনসুলিনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
দেখা গেছে, দক্ষিণ এশীয়দের শরীরের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) শ্বেতাঙ্গদের সমান হলেও তাদের শরীরে শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি চর্বি থাকে। তবে শরীরে কেবল কতটা চর্বি আছে সেটাই আসল কথা নয়, সেটা কোথায় জমা হচ্ছে সেটাও জরুরি। ভারতীয়দের চর্বি সাধারণত পেটের আশপাশে এবং ত্বকের নিচে জমা হয়। তবে সব সময় ভেতরের অঙ্গের আশপাশে ক্ষতিকর ভিসেরাল ফ্যাট হিসেবে নয়।
গবেষণা বলছে, ভারতীয়দের ‘ফ্যাট সেলগুলো’ বা চর্বি কোষগুলো ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। তাই চামড়ার নিচে চর্বি জমাতে তাদের সমস্যা হয়। ফলে অতিরিক্ত চর্বি লিভার ও অগ্ন্যাশয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে ছড়িয়ে যায়। আর এতেই বাড়ে ডায়াবেটিস ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি।
বিজ্ঞানীরা এখনো এর সঠিক কারণ জানেন না। তবে মনে করা হয়, এর মূলে রয়েছে দীর্ঘদিনের খাদ্যাভ্যাসের ইতিহাস। একসময় ভারতে দুর্ভিক্ষ ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সেই সময় শরীর অল্প খাবারেই বেশি শক্তি সঞ্চয় করতে শিখেছিল। পেট ছিল সেই শক্তি জমা করার প্রধান জায়গা। খাবার সহজলভ্য হওয়ার পরও সেই প্রবণতা রয়ে গেছে। আর সেটাই এখন ডেকে আনছে বিপদ।
এই বিষয়ে দিল্লির ফরটিস-সি-ডক সেন্টার অব এক্সেলেন্স ফর ডায়াবেটিস, মেটাবলিক ডিজিজ অ্যান্ড এন্ডোক্রাইনোলজির প্রধান অনূপ মিশ্র বলেন, ‘ভারতের বহু প্রজন্ম দুর্ভিক্ষ আর খাদ্যাভাবের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছে। এই অবস্থায় শরীর নিজেকে টিকিয়ে রাখতে শিখে যায়—যতটা সম্ভব শক্তি জমাতে হবে বলে সে মনে করে। আর সেই শক্তি জমার জায়গা পেট। এই প্রবণতাই ভবিষ্যতে গিয়ে হয়ে ওঠে ভুঁড়ির কারণ।’ তিনি বলেন, ‘এটা অনুমানভিত্তিক হলেও যুক্তিসংগত এক বিবর্তন তত্ত্ব—যা প্রমাণ করা কঠিন, কিন্তু ভাবনাটা বাস্তবসম্মত।’
গত বছর ভারতীয় স্থূলতা কমিশনের এক গবেষণায় দক্ষিণ এশীয়দের জন্য স্থূলতার নতুন সংজ্ঞা প্রস্তাব করা হয়। এখানে শুধু বিএমআই নয়, শরীরে চর্বির অবস্থান, শারীরিক সক্ষমতা ও সংশ্লিষ্ট রোগগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই প্রস্তাবে স্থূলতাকে দুই ধাপে ভাগ করা হয়েছে।
প্রথম ধাপে শরীরের ওজন অনুযায়ী বিএমআই বেশি থাকে, কিন্তু পেটে চর্বি জমে না, কোনো বিপাকীয় রোগও থাকে না এবং দেহের কার্যকারিতাও স্বাভাবিক থাকে। এই ধাপের রোগীদের ক্ষেত্রে সাধারণত স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং প্রয়োজনে হালকা ওষুধেই ভালো ফল মেলে। কিন্তু দ্বিতীয় ধাপে পেটে জমে যায় ভিসেরাল ফ্যাট, যেটি শরীরের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর। সাথে দেখা দেয় ডায়াবেটিস, হাঁটুর ব্যথা বা হৃদকম্পনের মতো উপসর্গ। এই ধাপে ঝুঁকি অনেক বেশি, তাই চিকিৎসাও হয় তুলনামূলকভাবে জটিল এবং নিয়মিত নজরদারির আওতায় রাখতে হয়।
চিকিৎসকেরা বলছেন, এই শ্রেণিবিন্যাস চিকিৎসার ধরন নির্ধারণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভুঁড়ি দেখা দিলেই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ এই পেটের চর্বি যত নিরীহ মনে হয়, আসলে ততটা নয়। ড. অনূপ মিশ্র বলেন, ‘অনেক সময় এমনও দেখা যায়—ওজন স্বাভাবিক, কিন্তু পেটের ভেতরে জমে থাকা চর্বি বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছে গেছে।’
ভারতের চিকিৎসকেরা মনে করছেন, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনই এই বিপদের অন্যতম কারণ। অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড, বাহারি বাইরের খাবার, রেডিমেড প্যাকেটজাত খাবার আর বাসার চড়া তেলে রান্না—সব মিলেই পেটের চর্বি বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্রুত। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৯ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে ক্যামেরুন, ভারত ও ভিয়েতনামে মাথাপিছু ‘আলট্রা প্রসেসড ফুড’ ও পানীয়র বিক্রি সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে। ফলে ভুঁড়ির আশঙ্কাও বাড়ছে হু হু করে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, পেটের মেদ একবার দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। ওজন কমানোর কিছু নতুন ওষুধ এ ক্ষেত্রে বেশ কার্যকর। আশ্চর্য লাগলেও সত্যি, অনেক স্বাভাবিক ওজনের মানুষের শরীরেও বিপজ্জনক মাত্রার পেটের মেদ থাকতে পারে। ভারতীয় চিকিৎসকদের মতে, জীবনযাত্রার পরিবর্তনই এর প্রধান কারণ। ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, আর অতিরিক্ত তেল-মসলার খাবার এখন আমাদের রোজকার সঙ্গী।
তাহলে উপায়? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পশ্চিমা দেশগুলোর চেয়ে ভারতীয়দের জীবনযাত্রায় আরও বেশি পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। কারণ আমাদের শরীর অতিরিক্ত চর্বি গ্রহণের জন্য ততটা তৈরি নয়। তাই, ভুঁড়ি শুধু হাসির বিষয় নয়। এটা একটা বিপদ সংকেত। ভারত যেন এক স্বাস্থ্য বোমার ওপর দাঁড়িয়ে আছে।
তথ্যসূত্র: বিবিসি
পেস্তাবাদাম। পুরো পৃথিবীতে এই বাদাম বেশ জনপ্রিয়। দুবাইয়ে পেস্তাবাদামের চকলেট বারও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মিষ্টান্ন, আইসক্রিম, বিশেষ ডিশ সাজাতে পেস্তাবাদামের ব্যবহার বেড়েছে। খাবারের সৌন্দর্য আর পুষ্টি—দুটিরই পাওয়ারহাউস এই বাদাম। অল্প খেলেই পাওয়া যায় অনেক পুষ্টি।
২ দিন আগেপুরুষদের জন্য নতুন এক জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এটিতে কোনো হরমোন নেই। আরও সহজ করে বললে, এই ওষুধ খাওয়ার পর পুরুষের হরমোনে সেই অর্থে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এর নাম ওয়াইসিটি-৫২৯। ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স অ্যালার্টের প্রতিবেদন থেকে এ...
২ দিন আগেবিশ্বজুড়ে প্রাপ্তবয়স্কদের মৃত্যুর বড় কারণ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক। তবে সম্প্রতি ব্রিটিশ একদল গবেষক এমন এক ধরনের রক্ত পরীক্ষার পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন, যাতে আগেভাগেই জানা যাবে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ হৃৎপিণ্ডসংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি। আর এতে খরচ পড়বে মাত্র ৫ পাউন্ড স্টারলিং বা বাংলাদেশি মুদ্রায় প
৩ দিন আগেএকটু খেয়াল করলেই দেখবেন, ইদানীং আশপাশের অনেকে হাঁচি-কাশিতে আক্রান্ত হচ্ছে। কেউ কেউ এটাকে সিজনাল অ্যালার্জি হিসেবে ধরে নিচ্ছেন। আবার অনেকের ধারণা, বয়সের কারণে হয়তো এসব লেগে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই সাধারণ উপসর্গগুলো দেখা দিলে তাৎক্ষণিক আরাম পেতে কী করা জরুরি, তা কি আমরা জানি? আবার কখন চিকিৎসা...
৩ দিন আগে