Ajker Patrika

কাটুক আদুরে সময়

অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহ্‌রিয়া
কাটুক আদুরে সময়

সাগরের নীল জলরাশির দিকে তাকিয়ে হাতে হাত রেখে অযথাই দাঁড়িয়ে থাকা মিনিটের পর মিনিট কিংবা ঝুম বৃষ্টিতে জানালার কাচ ধুয়ে দেওয়া বৃষ্টির ছাটের সামনে এক মগ কফি বা গরম চা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা। তাও সময়ের কথা চিন্তা না করে। অথবা ছুটির দিনে বাসায় হইচই করে স্বাদ বিবেচনা না করে এক গাদা রান্নার চেষ্টা করা সবাই মিলে। ভাবছেন এগুলো আবার কী? এই বিপুল ব্যস্ততার যুগে এগুলো করার টাইম আছে নাকি?
জেনে রাখুন, এগুলো হলো সেই মুহূর্ত, যাকে আমরা কোয়ালিটি টাইম বলে জানি। প্রিয়জনের সঙ্গে, নিজের সঙ্গে কিংবা পরিবারের সবার সঙ্গে এ সময় কাটানো যায়, কাটাতে হয়। তাতে সম্পর্কগুলো তাজা থাকে অথবা নিজেকে ফিরে পাওয়া যায়।
 
শিশুদের সঙ্গে
শিশুদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম মানে প্রচুর কথা বলা, খেলা। কিন্তু সেটা এমন কথা হবে, যেখানে সে তার মতামত জানাতে পারবে। আলোচনায় অংশ নিতে পারবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে অধিকার পাবে।

শিশুদের কথা বলতে দিন মনোযোগী শ্রোতা হয়ে।

যখন কথা শুনবেন, তখন মাঝে মাঝে আগের শব্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রাসঙ্গিক ছোট ছোট প্রশ্ন করুন, যাতে শিশুটি বোঝে যে আপনি খেয়াল করছেন।
এমন প্রশ্ন করুন, যেটা এক বাক্যে অথবা হ্যাঁ বা না-বাচক শব্দে মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে। অর্থাৎ তাকে মন খুলে অনুভূতিগুলো বলার সুযোগ দিন।
শিশুরা যে রকম মাঝে মাঝে হাততালি দিয়ে ওঠে, শব্দ করে হেসে ওঠে বা বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করে, আপনিও সেটা অনুকরণ করুন।
রাতে ঘুমানোর সময় সব ডিভাইস দূরে সরিয়ে রেখে শিশুটিকে হয় গল্পের বই পড়ে শোনান, না হলে সারা দিন কী হলো তা দুজন দুজনের সঙ্গে শেয়ার করুন।

শিশুকে বুঝতে দিন যে তার প্রতিটি কথা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, দৈনিক ২৪ ঘণ্টা সময় দিলেও অনেক সময় শিশুরা নিজেদের পরিত্যক্ত মনে করে। তার থেকে আধা ঘণ্টার কোয়ালিটি টাইম অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ শিশুর জন্য। প্রতিদিনের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। সময়টিতে আপনারা হয় ফোনে অথবা সামনাসামনি কোয়ালিটি টাইম কাটান।
 
প্রিয় মানুষের সঙ্গে
আমরা সব থেকে কম কোয়ালিটি টাইম দিই জীবনসঙ্গীকে। কারণ বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই ধরে নিই, বিয়ে তো হয়েই গেছে আর যাবে কোথায়। ফলে বিয়ের আগে প্রথম দেখা করতে যাওয়ার, সুন্দর করে নিজেকে উপস্থাপন করার জায়গাটা থেকে নারী-পুরুষ উভয়েই বিয়ের পর অনেক দূরে সরে আসি। আবার ঘন ঘন দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলি, আহা ও কেন বদলাব? আমি নিজেও যে বদলে গেছি, সেই আয়নাটা নিজের চোখের সামনে আদতে আমরা ধরি না। একটু খেয়াল করে দেখুন, কোথায় কোথায় বদলেছেন প্রেমের দিনগুলো থেকে বর্তমান বিবাহিত দিনগুলোতে?

যা করবেন

  • চোখে চোখ রেখে কথা বলুন।
  • কথা শুরু হলে হাতের ফোন, টিভির রিমোট সব নামিয়ে রাখুন।
  • কী বলছে, সেটা মনোযোগ দিয়ে শুনুন।
  • কথা বলার জন্য কথা বলবেন না। আপনার পাশের মানুষটি কী বলতে চাচ্ছে সেটা বুঝুন, সেটাকে নিয়ে দ্বিতীয়বার নিজের মনেই চিন্তা করুন। আপনার সঙ্গে তেমনটা হলে আপনার নিজের কী মনে হতো, সেটা ভাবুন। আপনার ভালোবাসার মানুষটির সব অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তারপরে মুখ খুলুন। কিছু একটা বলতে হবে বলেই কথা বলবেন না। সেটা একদম গ্রহণযোগ্য নয়।
  • একসঙ্গে দুজনেই পছন্দ করেন এমন কিছু কাজ সাপ্তাহিক তালিকায় রাখুন। যেমন হাঁটতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, বই পড়া ইত্যাদি।
  • পাশের মানুষটি যখন আপনাকে কিছু বোঝাচ্ছেন, তখন তার প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করুন।
  • নিজস্ব মতামতের অংশীদারত্বে রুটিন ঠিক করুন।
  • কোনো প্রসঙ্গে আপনার সঙ্গে আপনার জীবনসঙ্গী বা ভালোবাসার মানুষটি আলোচনা করতে চাইলে এড়িয়ে যাবেন না। এড়িয়ে যাওয়া জিনিসটি সবাই বোঝে। সেটা সম্পর্কের জন্য প্রচণ্ড ক্ষতিকারক।
  • উপদেশ দেওয়া থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
  • আপনি যদি কোনো বিষয়ে মনে করেন যে আপনি তাঁকে সাহায্য করতে সক্ষম, সেটা জানান।

বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে কোয়ালিটি টাইম

  • বয়স্কদের জীবনের ঝুলি পরিপূর্ণ। তাঁদের প্রচুর কথা বলতে দেওয়াটা আসল জিনিস।
  • মনোযোগী শ্রোতার মতো তাঁদের প্রচুর বলতে দিন।
  • পুরোনো দিনের গল্প শুনতে চান।
  • তাঁর কিসের সমস্যা হচ্ছে, সেটা স্পষ্ট করে জিজ্ঞেস করুন।
  • এমন কিছু বলবেন না, যেটা তাঁর আত্মসম্মানে লাগে।
  • যেকোনো প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা তাঁর হাতের কাছে রাখুন।
  • তিনি কোথাও ঘুরতে যাবেন কি না, জিজ্ঞেস করুন।

লেখক: চিকিৎসক ও সাইকোথেরাপি প্র‍্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

১০০ বছর পর জানা গেল, ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রত্যঙ্গটি নারীর প্রজননের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

‘এই টাকা দিয়ে কী হয়, আমি এত চাপ নিচ্ছি, লাখ পাঁচেক দিতে বলো’, ওসির অডিও ফাঁস

কিশোরগঞ্জে আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল, যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস মোয়াজ্জেমকে অব্যাহতি

ঘন ঘন নাক খুঁটিয়ে স্মৃতিভ্রংশ ডেকে আনছেন না তো!

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত