Ajker Patrika

নকল দাঁতের দিন শেষ

মইনুল হাসান, ফ্রান্স
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮: ১০
Thumbnail image

‘দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম’ না বুঝলেও তেমন ক্ষতির কারণ হবে না। এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন জাপানের ওসাকার কিতানো হাসপাতালের একদল গবেষক-বিজ্ঞানী। তাঁরা অবশেষে আমাদের সুখবর দিতে যাচ্ছেন, সময়ের আগে দন্তক্ষয় বা দুর্ঘটনার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক কারও দাঁত হারালে আবারও নতুন করে দাঁত গজাবে। যেমনটি ঘটে অ্যালিগেটর, মাছ বা সরীসৃপের ক্ষেত্রে। এসব প্রাণীর বহুবার দাঁত গজায়। মানুষের দাঁত দুবার গজায়, তার বেশি নয়।

জাপানের ওসাকায় অবস্থিত কিতানো হাসপাতালের কাতসু তাকাহাশির নেতৃত্বে একদল গবেষক গত ২০ বছরের চেষ্টায় অবশেষে এর কারণ খুঁজে বের করতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁরা লক্ষ করেন যে দাঁত গজাতে একটি জিন বাধা দেয়। ফলে দাঁত হারালে, স্বাভাবিকভাবে নতুন করে দাঁত গজাতে পারে না। জিনটি শনাক্ত করার পর এ নিয়ে তাঁরা ২০২১ সালের ১ জুলাই ‘নেচার’ পত্রিকায় একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ প্রকাশ করেন।

গবেষক দলটি ইঁদুর ও বেজিজাতীয় প্রাণীর ওপর দাঁত গজাতে বাধা দেওয়া জিন নিষ্ক্রিয় করতে একধরনের প্রোটিন ব্যবহার করে আশাপ্রদ ফল পেয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষের ওপর পরীক্ষা অর্থাৎ প্রথম ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমতি লাভ করেছে তারা। এ জন্য ৩০ থেকে ৬৪ বছর বয়সের ৩০ জন স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ব্যক্তি পরীক্ষায় রাজি হয়েছেন। তাঁদের প্রত্যেকেরই একটি মাড়ির দাঁত নেই। মানুষের ক্ষেত্রে পরীক্ষা সফল হলে দাঁত গজানোর বিস্ময়কর দাওয়াই আগামী ২০৩০ সালে বাজারজাত করবেন বলে আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন বিজ্ঞানীরা। দাঁত গজাতে বাধা দেওয়া জিন নিষ্ক্রিয়কারী প্রোটিন উদ্ভাবনে জাপানি গবেষকেরা টোরেজেম বায়োফার্মা স্টার্ট-আপের সঙ্গে কাজ করছেন।

গবেষক-বিজ্ঞানীরা এ কাজ করতে গিয়ে ভীষণ জটিলতা এবং বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। বংশগত কারণে মানুষের প্রায় ৯০০ রোগ দাঁত ও মুখের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে একটি দাঁত কম গজায় পৃথিবীর ১ শতাংশ মানুষের। অনেকেরই আবার পাঁচটি ছয়টি দাঁতের ঘাটতি থাকায় তাঁদের সারা জীবনই অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়।

ব্যতিক্রম ছাড়া, মানবশিশু জন্ম নেয় দন্তবিহীন। বছর তিনেকের মাথায় এক এক করে মোট ফকফকে ২০টি দুধদাঁত বা প্রাইমারি টুথ ওপর-নিচের দুই পাটিতে শোভা পায়। এরপর সাধারণত ৬ থেকে ১৩ বছরের মধ্যে সব দাঁত পড়ে গিয়ে আবার প্রায় সব দাঁত গজায়।

একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের সাধারণত ৩২টি দাঁত থাকে। চর্ব্য অর্থাৎ চিবিয়ে খেতে হয় এমন শক্ত খাবার খেতে এবং স্বাচ্ছন্দ্য উচ্চারণে কথা বলতে দাঁত না থাকলেই নয়। তা ছাড়া সুন্দর একপাটি দাঁতের মিষ্টি হাসি ঝলমলে ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলে। তবে নানান কারণে দাঁত হারাতে হয় বহু মানুষের। অচিরেই সে দুঃখ দূর হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। নকল বা কৃত্রিম দাঁত নয়, এবার আসল দাঁত মুখে ফোটাবে উচ্ছল, উজ্জ্বল এবং অকৃত্রিম হাসি। নকল দাঁতের দিন শেষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত