Ajker Patrika

আপনি স্নায়বিক ক্লান্তিতে ভুগছেন না তো

অধ্যাপক ডা. সান‌জিদা শাহ‌রিয়া
ছবি: আজকের পত্রিকা
ছবি: আজকের পত্রিকা

আধুনিক জীবনযাত্রায় কাজের ব্যস্ততা, মানসিক চাপ ইত্যাদি কারণে স্নায়বিক ক্লান্তি বা নিউরোনাল ফ্যাটিগ একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থা শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, স্নায়বিক অবস্থা এখন বৈশ্বিকভাবে অসুস্থতা ও অক্ষমতার প্রধান কারণ। এর মধ্যে স্নায়বিক ক্লান্তিও অন্তর্ভুক্ত।

বিষয়টি কী

স্নায়বিক ক্লান্তি হলো মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ বা নিউরন দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত সক্রিয় থাকার ফলে সৃষ্ট একধরনের শারীরিক-মানসিক অবসাদ। এর ফলে নিউরনগুলো সঠিকভাবে সংকেত পাঠাতে সক্ষম নয়। ফলে ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব ও দৈনন্দিন কাজে অনীহা দেখা দেয়। এই ধারণা নিউরোসায়েন্স গবেষণায় নব্বইয়ের দশকে প্রবর্তিত হয়।

কারণ

» মানসিক চাপ

» অপর্যাপ্ত ঘুম

» ভিটামিন বি১২ ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব

» ডিজিটাল ওভারলোড

» ডায়াবেটিস, থাইরয়েড বা লং কোভিডের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগের প্রাদুর্ভাব

এক সমীক্ষা অনুযায়ী, ঢাকার ৩০ শতাংশ অফিসকর্মী এই সমস্যায় ভুগছেন। বৈশ্বিকভাবে ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মানুষ নিউরোলজিক্যাল অবস্থায় ভুগছে, তাদের মধ্যে স্নায়বিক ক্লান্তিও উল্লেখযোগ্য।

স্নায়বিক ক্লান্তির সরাসরি তথ্য পাওয়া না গেলেও নিউরোলজিক্যাল তথ্যের দিক থেকে নাইজেরিয়া, কঙ্গোর মতো কেন্দ্রীয় ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলো; বাংলাদেশ ও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়া এবং লাতিন আমেরিকার কিছু দেশ এ রোগের প্রাদুর্ভাব সীমায় অগ্রগণ্য।

ডিজিটাল যুগের প্রভাব

ডিজিটাল মাল্টিটাস্কিং এবং স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ২০ মিনিটে একবার স্ক্রিন থেকে বিরতি নেওয়া মস্তিষ্কের ক্লান্তি কমায়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ২০২৪ সালের গবেষণা অনুসারে, ব্রেন রট বা মস্তিষ্কের অবসাদ শব্দটি ডিজিটাল ওভারলোডের কারণে সৃষ্ট মানসিক কুয়াশাকে বোঝায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বক্তব্য

ক্রনিক ফ্যাটিগ সিনড্রোমকে (সিএফএস) স্নায়ুতন্ত্রের রোগ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (আইসিডি-২, কোড: ৮ই৪৯)। লং কোভিডের ক্ষেত্রেও স্নায়বিক ক্লান্তিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যেখানে ৬ শতাংশ কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তি দীর্ঘমেয়াদি ক্লান্তি অনুভব করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিউরোলজিক্যাল স্বাস্থ্য বৈশ্বিক অগ্রাধিকারের বিষয় হওয়া উচিত।

লক্ষণ

» মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি হ্রাস

» মাথাব্যথা, মাংসপেশিতে দুর্বলতা

» ঘন ঘন মেজাজ পরিবর্তন

» অনিদ্রা বা অতিনিদ্রা

» শক্তির অভাব অনুভব করা

চিকিৎসা ও প্রতিরোধ

জীবনযাত্রার পরিবর্তন: নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম ও ব্যায়াম।

ডিজিটাল ডিটক্স: ২০-২০-২০ নিয়ম মেনে স্ক্রিন টাইম কমান।

পুষ্টিকর খাবার: ম্যাগনেসিয়াম-সমৃদ্ধ শাকসবজি এবং ওমেগা-৩ যুক্ত মাছ।

মাইন্ডফুলনেস: মেডিটেশন ও যোগব্যায়ামের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ।

চিকিৎসকের পরামর্শ: কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি বা প্রয়োজন হলে ওষুধ।

স্নায়বিক ক্লান্তি কোনো লজ্জার বিষয় নয়। ডিজিটাল যুগে এই সমস্যা মোকাবিলায় সচেতনতা, জীবনযাত্রার সমন্বয় এবং চিকিৎসার সমন্বয় প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য নীতিতে স্নায়ুতন্ত্রের যত্নকে অগ্রাধিকার দেওয়া এখন সময়ের দাবি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত