Ajker Patrika

ফোনে ‘হ্যালো’ বলার প্রচলন কি আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের গার্লফ্রেন্ডের নামে

ফ্যাক্টচেক  ডেস্ক
আপডেট : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৮: ০০
ফোনে ‘হ্যালো’ বলার প্রচলন কি আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের গার্লফ্রেন্ডের নামে

‘জেনে নিন, ফোনে কথা বলার সময় হ্যালো বলার ইতিহাস’ শিরোনামে ভিডিও সম্প্রতি টিকটকে আপলোড করা হয়েছে। ২৫ জানুয়ারি প্রচারিত ভিডিওটি আজ শনিবার (২৭ জানুয়ারি) বেলা ৩টা পর্যন্ত ৩২ হাজার বার দেখা হয়েছে। হ্যালো বলার ইতিহাস সম্পর্কে ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, ‘হ্যালো একটা মেয়ের নাম। পুরো নাম মার্গারেট হ্যালো (Margaret Hello)। তিনি আর কেউ নন—বিখ্যাত বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের গার্লফ্রেন্ড। গ্রাহাম বেল হলেন টেলিফোনের আবিষ্কারক। আবিষ্কারের পর তিনি প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে তাঁর গার্লফ্রেন্ডকে ফোন দেন এবং যে কথাটি বলেন, তা হলো—‘হ্যালো।’ সেই থেকে হ্যালো বলে ফোনে কথা বলার প্রচলন শুরু।’

ফোনে হ্যালো বলার প্রচলনের ইতিহাস কি আসলেই এমন? মার্গারেট হ্যালো নামে কি আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের কোনো বান্ধবী ছিলেন? 

ফোনে হ্যালো শব্দের প্রচলনের ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীন, অলাভজনক সংবাদমাধ্যম ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর ওয়েবসাইটে ২০১১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে অক্সফোর্ড ইংলিশ অভিধানের বরাতে উল্লেখ করা হয়, হ্যালো শব্দটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮২৭ সালে। কিন্তু তখন এটি সম্বোধনের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো না। টেলিফোন আবিষ্কারের আগপর্যন্ত হ্যালো দিয়ে মূলত কারও মনোযোগ আকর্ষণ অথবা বিস্ময় প্রকাশ করা হতো।

অভিধানটির বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, টমাস আলভা এডিসন হ্যালো শব্দটির সাধারণ ব্যবহারের সূচনা করেন। তিনি টেলিফোনে উত্তর দেওয়ার সময় হ্যালো ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীদের আহ্বান জানান। অপরদিকে টেলিফোনের আবিষ্কারক আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল ‘হ্যালো’র বদলে ‘আহৈ’ শব্দ পছন্দ করেন। 

এ প্রসঙ্গে ‘আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল: গিভিং ভয়েস টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইয়ের লেখক মেরি কারসন আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান আফ্রিকা চেককে বলেন, ‘আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল ‘হ্যালো’র বদলে ‘আহৈ’ শব্দটি প্রচলন করতে চেয়েছিলেন। ১৮৭৬ সালের ৭ মার্চ বেল তাঁর টেলিফোন আবিষ্কারের স্বত্ব পান। এর তিন দিন পর তিনি প্রথম সফলভাবে কল করতে পেরেছিলেন। তিনি তাঁর সহযোগী মি. ওয়াটসনকে প্রথম কল করেন।’

আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামের কোনো বান্ধবী ছিল না। ছবি: হিস্ট্রি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান স্নোপসে ২০১৪ সালের ১৪ মার্চ হ্যালো শব্দটির প্রচলনের সঙ্গে মার্গারেট হ্যালো ও আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের সম্পর্ক নিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, টেলিফোনে হ্যালো শব্দের প্রচলন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত দাবিটি ২০১০ সালের নভেম্বর থেকে ইন্টারনেটে প্রচার হয়ে আসছে। যদিও তথ্যটি সঠিক নয়। আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল ১৮৭৬ সালে টেলিফোন উদ্ভাবন করেন। উদ্ভাবনের পর তিনি প্রথম কলটি করেন তাঁর সহযোগীকে। ফোনে তাঁর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘মি. ওয়াটসন, এদিকে আসুন। আমি আপনাকে দেখতে চাই।’

প্রতিবেদনটিতে অক্সফোর্ড অভিধানের সূত্রে বলা হয়, হ্যালো (Hello) শব্দটি হালো (hallo) শব্দের বিবর্তিত রূপ, যা এসেছে হুলা (holla) বা হুলু (hollo) থেকে, চিৎকার করে কারও মনোযোগ আকর্ষণের জন্য শব্দগুলো ব্যবহার হতো। 

হ্যালো শব্দটির উৎপত্তি সম্পর্কে ইংরেজি অভিধান মেরিয়াম-ওয়েবস্টারে আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায়। অভিধানটির মতে, ইংরেজি ভাষার ১০০০ বছরের ইতিহাসে হ্যালো শব্দটির ব্যবহার মাত্র ১৫০ বছরের। মধ্যযুগ থেকে শুরু করে শেক্‌সপিয়ারের সময়েও অভিবাদন বা অভ্যর্থনা জানাতে ব্যবহৃত একটি পুরোনো শব্দ হলো হেইল (Hail)। শেক্‌সপিয়ার শব্দটিকে একই সঙ্গে অভিবাদন ও প্রশংসা অর্থে ব্যবহার করেছেন। হেইল স্বাস্থ্যবিষয়ক শব্দ হেল, হেলথ, হোল (hale, health, whole) এর সঙ্গে সম্পর্কিত।

অর্থাৎ আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কারের আগে থেকেই সম্বোধন অর্থে হ্যালো বা এই জাতীয় শব্দের প্রচলন ছিল।

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ হ্যালো সম্ভাষণের সমাধান নামে শিরোনামে প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তা থেকে জানা যায়, আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল টেলিফোন আবিষ্কার করলেও এর সম্ভাষণ হ্যালো শব্দের যাত্রা হয় টমাস আলভা এডিসনের মাধ্যমে।

মার্গারেট হ্যালো নামে কি আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের কোনো বান্ধবী ছিল? 

‘আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল: গিভিং ভয়েস টু দ্য ওয়ার্ল্ড’ বইয়ের লেখক মেরি কারসন আফ্রিকাচেক জানান, আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামে কোনো বান্ধবী ছিল না। ইতিহাসভিত্তিক ওয়েবসাইট হিস্ট্রিতে ২০০৯ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনের একটি বধির স্কুলে পড়ানোর সময় বেলের সঙ্গে ১৫ বছর বয়সী ম্যাবেল হাববার্ডের পরিচয় হয়। ১০ বছর পর ১৯৭৭ সালে তাঁরা বিয়ে করেন।

স্নোপসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, টেলিফোন আবিষ্কারের বছর অর্থাৎ ১৮৭৬ সালে বেল হাববার্ডের সঙ্গে তাঁর বাগদান হয় এবং পরের বছর তাঁরা বিয়ে করেন। ১৯২২ সালে মৃত্যুর আগপর্যন্ত আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেল ও ম্যাবেল হাববার্ড একসঙ্গে ছিলেন। 

অর্থাৎ আলেক্সান্ডার গ্রাহাম বেলের মার্গারেট হ্যালো নামে কোনো বান্ধবী ছিল না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত