Ajker Patrika

বাংলাদেশে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করার ঘোষণা—ড. ইউনূসের নামে ফেসবুকে গুজব

ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২৪, ২২: ০৮
Thumbnail image

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে গত সপ্তাহের সোমবার পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেশ ত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা। এরপর ৬ আগস্ট (মঙ্গলবার) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এমন পরিস্থিতিতে ৮ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) শপথ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সেই সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পান নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

এর আগে ৭ আগস্ট (বুধবার) রাষ্ট্রপতির সঙ্গে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তিন বাহিনী প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠকের পর ড. ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। আন্দোলন চলাকালে দেশি–বিদেশি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ পরিণতি নিয়ে সাক্ষাৎকার দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

এমন পরিপ্রেক্ষিতে ফেসবুকে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের একটি বক্তব্য ছড়িয়ে পড়েছে। দাবি করা হচ্ছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে বলেছেন, ‘ক্রিকেট বাংলাদেশের তরুণদের মূল্যবান সময় নষ্ট ও মানসিক ভারসাম্য রক্ষায় বাধা, এই জন্য আমি খুব দ্রুত আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেটকে এ দেশ থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করব।’

ফেসবুকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথিত মন্তব্যটি নিয়ে নেটিজেনদের বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করতে দেখা গেছে। কথিত বক্তব্যটি দিয়ে তৈরি একটি ফটোকার্ড ‘সাতক্ষীরা ট্রুথফুল মিডিয়া’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দিয়ে লিখেছে, ‘খুব ভালো লাগল, যুবকেরা বাজে সময়টা কাজে লাগাবে।’ 

গতকাল শুক্রবার (৯ আগস্ট) করা পোস্টটিতে আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত এক হাজারের বেশি রিঅ্যাকশন পড়েছে। শেয়ার হয়েছে দেড় শতাধিক বার। 

আবার ‘বিজেপি ফর গোবরডাঙা’ নামে ভারত থেকে পরিচালিত একটি পেজ থেকে ফটোকার্ডটি পোস্ট করে লিখেছে, ‘স্বাধীনতা।’ সঙ্গে চারটি অট্টহাসির ইমোজি জুড়ে দেওয়া হয়েছে। 

প্রসঙ্গত, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পতনকে বাংলাদেশের আপামর জনতা ‘স্বাধীনতা’ হিসেবে উল্লেখ করে উদ্‌যাপন করছেন। 

‘সোশ্যাল নলেজ সেন্টার’ নামের আরেকটি ভারতীয় পেজ থেকে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হতে চলেছে ক্রিকেট, ভাবছি এবার বাংলাদেশের তামাম ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা কী করবে।’ 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. ইউনূসের বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দাবিতে পোস্ট। ছবি: ফেসবুক
এসব পোস্টের কোনোটিতেই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথিত মন্তব্যটির কোনো সূত্র উল্লেখ করা হয়নি। প্রাসঙ্গিক কি–ওয়ার্ড অনুসন্ধানেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া পর বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে এমন কোনো বক্তব্য দিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া যায়নি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। আজকের পত্রিকায় তাঁর একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। ওই সাক্ষাৎকার থেকেও বাংলাদেশ থেকে ক্রিকেট নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পরিকল্পনা নিয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

বরং সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন নিয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূস স্যার আমাদের নেতৃত্বে আছেন, যিনি নিজেও ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি কদিন আগে অলিম্পিকের সঙ্গেও সম্পৃক্ত ছিলেন।’ 

তাঁর সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে আশাব্যঞ্জক বক্তব্য পাওয়া যায়। আগামী অক্টোবরে বাংলাদেশে নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের কথা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আশা করি নারী টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আমাদের দেশেই ঠিকঠাক আয়োজন করতে পারব। এটা আয়োজনে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’ 

অর্থাৎ, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও ক্রিকেটকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথিত মন্তব্যটি ভিত্তিহীন।

আরও পড়ুন:

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা [email protected]
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত