Ajker Patrika

ইলিশ ধরতে প্রস্তুত জেলে

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ১০: ০৭
Thumbnail image

আজ (২৫ অক্টোবর) রাত ১২টা থেকে উঠে যাচ্ছে ইলিশ শিকারের ওপর টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা। দীর্ঘ বিরতির পর জাল, নৌকা মেরামত শেষে নদীতে নামার অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন শরীয়তপুরের জেলেরা। দীর্ঘ সময় সুনসান নীরবতা শেষে আবার সরব হতে শুরু করেছে শরীয়তপুরে পদ্মা, মেঘনা পাড়ের জেলে পল্লি ও মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রগুলো। প্রজনন মৌসুমে স্বাচ্ছন্দ্যে ইলিশের ডিম ছাড়ার সুযোগ করে দিতে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, ইলিশের প্রজনন মৌসুম হওয়ায় ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। ইলিশ আহরণে নিষেধাজ্ঞার নির্ধারিত সময় ২৫ অক্টোবর রাত ১২টা পর্যন্ত। দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটিয়ে আবার ব্যস্ততা বারতে শুরু করেছে জেলে পল্লিতে। মধ্য রাতেই শরীয়তপুরের জেলেরা জাল আর নৌকা নিয়ে ছুটবেন পদ্মা, মেঘনায়। পরিবার আর পরিজনের সঙ্গে অবসর সময় কাটিয়ে জেলে আর মাঝি মাল্লারা ফিরে এসেছেন আড়তদার আর মহাজনদের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে। জাল, নৌকার জ্বালানি তেল, বরফ আর নিজেদের প্রয়োজনীয় রসদ নিয়ে পদ্মা-মেঘনায় নৌকা ভাসানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন জেলেরা।

জেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রজনন মৌসুমে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবা থেকে গোসাইরহাটের নলমুড়ি পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার পদ্মা-মেঘনায় মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এই ২২ দিন জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, নৌপুলিশ, র‍্যাব ও কোস্টগার্ডের সহায়তায় নদীতে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে মৎস্য বিভাগ। এ সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ শিকারের অপরাধে ৫৫৩ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ ছাড়া আটক জেলে, ক্রেতা ও বিক্রেতাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৪০০ টাকা। নিষেধাজ্ঞার সময়ে ৪৪ লাখ ৩২ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ২ হাজার ২৩ কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়। শরীয়তপুরে মোট ৩০ হাজার ১২ জন জেলে রয়েছে। যার মধ্যে নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২৫ হাজার ৫৮ জন। এর মধ্যে ১৯ হাজার জেলেকে ২০ কেজি করে মোট ৩৮০ টন খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

গোসাইরহাট উপজেলার ঠান্ডারবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার সুরুজ ফকির বলেন, ‘নদী পাড়ের সকল আড়ত বন্ধ থাকায় দীর্ঘ ২২ দিন বেচাকেনা বন্ধ ছিল। ক্রেতা-বিক্রেতাদের আনাগোনা ছিল না। আজ (সোমবার) রাতে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে। সব আড়ত ধুয়ে-মুছে প্রস্তুত করা হয়েছে। জেলেরাও আড়তে ফিরে এসেছেন। কাল (মঙ্গলবার) সকাল থেকে আবার ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে আমাদের ব্যবস্থা ফিরে আসবে।’

নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্ব এলাকার জেলে জয়নাল ঘরামী বলেন, ‘২২ দিন মাটি কাটা শ্রমিকের কাজ করে কোনো রকমের সংসার চালিয়েছি। সরকারের পক্ষ থেকে ২০ কেজি চাল দেওয়া হয়েছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় কিছুই না। জাল আর নৌকা মেরামত করতে গিয়ে অনেক টাকা ঋণী হয়েছি। আগামীকাল থেকে নদীতে আশানুরূপ মাছ পাওয়া গেলে হয়তো ঋণের ধকল কাটিয়ে উঠতে পারব।’

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা প্রণব কুমার কর্মকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই জেলেদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ১৯ হাজার জেলেকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেরা নদীতে যাওয়া থেকে বিরত থাকায় ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে অধিকাংশ মা ইলিশ। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে জেলায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত