Ajker Patrika

রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিতে আক্ষেপ ঘুচে নগরজুড়ে ভোগান্তি

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ৫৩
রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিতে আক্ষেপ ঘুচে নগরজুড়ে ভোগান্তি

টানা ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরীর বেশির ভাগ রাস্তাঘাট। অনেক বাসা-বাড়ির নিচতলায় পানি উঠেছে। নর্দমা আর নালার পানিতে একাকার এখানকার মানুষের ঘরবাড়ি। তবে দ্রুত পানিনিষ্কাশনের চেষ্টা করছে খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি)।

আবহাওয়া অফিস বলছে, আক্ষেপ ঘুচে গত ৫ বছরের মধ্যে খুলনায় রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে বৃষ্টির পানিতে অনেক রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রে যেতে বেগ পেতে হয়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের।

খুলনা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা আমিরুল আজাদ জানান, লঘুচাপের কারণে গত রোববার থেকে হালকা মাঝারি বৃষ্টি শুরু হয়। মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয় ভারী বর্ষণ। বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৫৭ মিলিমিটার।

এর মধ্যে বুধবার দিবাগত রাত ১টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৩০ মিলিমিটার। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১৪৬ মিলিমিটার, যা গত ৫ বছরের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টির রেকর্ড। এর আগে ২০১৭ সালে একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টি হয়েছিল ২৭১ মিলিমিটার।

এদিকে ভারী বর্ষণে খুলনা মহানগরীর মিস্ত্রিপাড়া, করিমনগর, দোলখোলা, রয়েল মোড়, সাতরাস্তা মোড়, শিববাড়ি মোড়, পিটিআই মোড়, রূপসা, শেখ পাড়া, বয়রা, বাগমারা, টুটপাড়া, বয়রা, ছোট বয়রা, হাফিজনগর, বাগমারা, পূর্ব বানিয়াখামার, পশ্চিম বানিয়াখামার, ময়লাপোতা, ইকবাল নগর, খালিশপুরসহ মহানগরীর অধিকাংশ নিম্নাঞ্চল নিমজ্জিত হয়েছে। সব রাস্তায়ই পানি। পানি ঢুকেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও। ফজর নামাজের সময় অধিকাংশ মুসল্লি রাস্তায় পানির কারণে মসজিদে যেতে পারেননি।

নগরবাসীর অভিযোগ নগরীর ড্রেন-রাস্তা-কালভার্ট নির্মাণে ধীর গতির কারণে স্বাভাবিকভাবে পানিপ্রবাহ হচ্ছে না আর এ কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর নগরীর অধিকাংশ খল দখল করে ভরাট করায় নগরীর পানি অপসারণ হচ্ছে না।

এ বিষয়ে খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার জানান, ৪ বছর ধরে নগরীতে উন্নয়নকাজ হচ্ছে। ধীরগতিতে উন্নয়ন হওয়ায় বেশির ভাগ ড্রেন-কালভার্ট বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ভূমিদস্যুরা দখল করেছে নগরীসহ আশপাশের ২৬টি খাল। যে কারণে পানিনিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়ায় এই জলাবদ্ধতা। খুলনা সিটি করপোরেশনের সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ার মো. আব্দুল আজিজ বলেন, বৃষ্টির পানিতে খুলনার বেশির ভাগ রাস্তা নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানিনিষ্কাশনের সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। যেসব ড্রেনের মুখ বন্ধ রয়েছে তা পরিষ্কার করা হচ্ছে, যাতে পানি দ্রুত সরে যায়।

পরীক্ষার্থীদের ভোগান্তি: গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় নগরীর করোনেশন বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ার পিটিআই মোড় ও হাজী মহসীন রোডে দেখা যায় পানি। সেই পানি উপেক্ষা করেই শিক্ষার্থীরা ছোটে পরীক্ষা কেন্দ্রে।

কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা নগরীর শিপইয়ার্ড এলাকার রুবেল বলেন, ‘তার বোন সাদিয়া শিপইয়ার্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে অথচ এ এলাকার রাস্তার অবস্থা নাজুক। সকাল থেকে যাতায়াতের জন্য রিকশা বা ইজিবাইক পাওয়া যাচ্ছিল না। তারপর অনেক কষ্টে একটা ইজিবাইক পেলেও ভাড়া নিয়েছে অতিরিক্ত। রাস্তার যে অবস্থা আমার বোন টেনশনে ছিল সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা দিতে আসতে পারবে কি না? আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে পৌঁছে ছিল হলে।

পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, তার পুত্র সাদনান মডেল স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। সোনাডাঙ্গা থেকে তাকেও অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে রিকশায় আসতে হয়েছে। তারপর রাস্তায় পানিতে রিকশার চাকা তলিয়ে যায়। যা-ই হোক, বৃষ্টির ভেতর আল্লাহর রহমতে তারা পৌঁছেছেন কেন্দ্রে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত