Ajker Patrika

ঢাবির ২ শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২১, ১১: ১৪
ঢাবির ২ শিক্ষার্থীকে রাতভর মারধর

‘হল থেকে বের না হলে তোদেরকে মেরে ট্যাংকে ফালাই রাখমু’–ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের দুই শিক্ষার্থীকে এভাবেই হুমকি দেন সেই হলেরই দুজন ছাত্রনেতা। হুমকি দেওয়ার আগে রোববার রাত পৌনে ৩টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত মারধর করা হয় বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

অভিযোগকারী আরিফুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান এবং থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর অভিযুক্ত সিফাত উল্লাহ সিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ এবং ও মাহমুদুর রহমান অর্পণ আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংলিশ ফর স্পিকার্স অব আদার ল্যাঙ্গুয়েজেস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র।

জানা যায়, অভিযুক্ত দুজনই ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের কর্মী। ক্যাম্পাসে হল ছাত্রলীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ইমরান সাগরের অনুসারী। এর আগে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই তাঁরা এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে সাময়িক বহিষ্কারও হয়েছিলেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আরিফুলের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে ছাত্রলীগের প্রোগ্রাম এবং গেস্ট রুমে তিনি অনিয়মিত ছিলেন। এসবের জন্য অভিযুক্তরা তাঁদের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

ঘটনার সময় ছাত্রলীগের ওই দুই কর্মীর সঙ্গে তাঁদের আরও চার বন্ধু উপস্থিত ছিলেন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, রোববার রাতে রুমে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে সিফাত উল্লাহ এবং মাহমুদ অর্পণ তাঁদের রুমে আসেন। তাঁদের ঘুম থেকে তুলে ৩৫১ নম্বর রুমে ডেকে নিয়ে যান। ‘বেয়াদবি করেছ’ বলে প্রথমে বকাঝকা করা হয়। একপর্যায়ে সিফাত এবং মাহমুদ উত্তেজিত হয়ে রড, স্টাম্প নিয়ে তেড়ে আসেন। পরে তাঁরা রড স্টাম্প ফেলে তাঁদের কিল-ঘুষি মারতে থাকেন।

আরিফুল ইসলাম বলেন, তাঁর অ্যাজমা আছে। কিল-ঘুষির কারণে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। ইনহেলার নিতে হবে জানালে তাঁকে আরও মারতে থাকেন তাঁরা। এরপর অসুস্থ হয়ে রুমেই শুয়ে পড়েন। ভোর ৪টার সময় তাঁদের রুম থেকে বের করে দেওয়া হয়। যাওয়ার সময় দুপুর ১২টার মধ্যে হল থেকে বের না হলে হত্যা করে পানির ট্যাংকের পেছনে ফেলে দেওয়া হবে বলে হুমকিও দেওয়া হয়।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, তাঁদের মারধর করতে ছাত্রলীগের এই উপ-দপ্তর সম্পাদক ইমরান সাগর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

দুই শিক্ষার্থীকে মারধরের ব্যাপারে জানতে চাইলে ইমরান সাগর বলেন, ‘তারা তো আমার ছোট ভাই। বিষয়টি আমি মীমাংসা করে দেব। আমি জানতাম তারা রাতে বসবে কিন্তু এতে কোনো ধরনের মারধরের ঘটনা ঘটবে তা আমি জানতাম না।’

অভিযুক্ত সিফাত উল্লাহ সিফাত বলেন, সামনে হল সম্মেলন হবে, আমি ভালো অবস্থানে আছি। তাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অন্য অভিযুক্ত মাহমুদ অর্পণ অবশ্য এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত হয়েছি এবং সার্বিক খোঁজখবর নেওয়ার জন্য হল প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি। হল প্রশাসনের মাধ্যমে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রনেতাদের এভাবে প্রভাব খাটানো নিয়ে এর আগে অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হলে আবরার নামের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করেন কয়েক ছাত্রলীগ নেতা। ২০০২ সালে বুয়েটে ছাত্রদলের দুই পক্ষের গোলাগুলির মধ্যে পড়ে নিহত হন বুয়েটের শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি।

এ ঘটনার পর সনির বাবা হাবিবুর রহমান ভুঁইয়া শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাসের এক তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে শুরু করে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নানা ঘটনায় ১৫৯ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন কয়েক হাজার। লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত