Ajker Patrika

পরিবহন ধর্মঘটে গচ্চা জাহাজে ও বন্দরে

আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৪৩
পরিবহন ধর্মঘটে গচ্চা জাহাজে ও বন্দরে

তিন দিন পর গতকাল রোববার বিকেল থেকে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের জাহাজ, ইয়ার্ড এবং বেসরকারি ডিপোতে (আইসিডি) আটকা পড়েছে অন্তত ৬০ হাজার কনটেইনার। কনটেইনারের এই জট ছাড়াতে লেগে যাবে আরও ৩-৪ দিন। ফলে এ সপ্তাহ জুড়ে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরির আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। তবে এ ক্ষতি হবে দীর্ঘ মেয়াদে।

চট্টগ্রাম বন্দরের হিসাব, আমদানি পণ্য নিয়ে আসা ১১টি কনটেইনার জাহাজ গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেটিতে নোঙর করা ছিল। আর বহির্নোঙরে ছিল ৭টি। আজ আরও ৪টি বহির্নোঙরে পৌঁছানোর কথা। নিয়ম অনুযায়ী বন্দরে ঢোকার ৭২ ঘণ্টা বা ৩ দিনের মধ্যে একটি জাহাজ রপ্তানি পণ্যের কন্টেইনার নিয়ে জেটি ছেড়ে যাওয়ার কথা। এ মধ্যে ৯টি জাহাজের অবস্থান সময় ৭২ ঘণ্টা পার হয়েছে। আকস্মিক পরিবহন ধর্মঘটের কারণে এই সব জাহাজে করে রপ্তানির জন্য প্রস্তুত রাখা কন্টেইনার ভর্তি পণ্য জেটিতে পৌঁছাতে পারেনি। তাই জাহাজগুলোর এখন নির্ধারিত সময়ের ২-৩ দিন বেশি অবস্থান করতে হচ্ছে। এতে প্রতি জাহাজের ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে দিনে ২০-২২ লাখ টাকা। ব্যবসায়ীরা সচরাচর পণ্যের আমদানি খরচের সঙ্গে এই বাড়তি ব্যয় যুক্ত করেন, যা পণ্যের ক্রেতার ওপর চাপানো হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম পরিচালক সাহেদ সরোয়ার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী আমাদের জাহাজ এএস সিপিলিয়া ১৩৩৫ কনটেইনার নিয়ে গতকাল বন্দর ত্যাগের কথা। কিন্তু ৯২০ কনটেইনার নিয়ে আমরা বসে আছি জেটিতে। এখন প্রয়োজনীয় সব কনটেইনার তুলে সোমবারও যেতে পারি কিনা সন্দেহ। আর সেটা না হলে দুই দিনে অন্তত ৫০ হাজার মার্কিন ডলার বেশি ভাড়া দিতে হবে মালিককে। একই সময়ে বন্দরে আসা এবং যাত্রা করার কথা ছিল কন্টেইনার জাহাজ এমভি লটসির। এক হাজার ৪০০ কন্টেইনার তোলার কথা থাকলেও গত শনিবার পর্যন্ত নয় শ তুলে আটকা পড়ে জেটিতে। এ প্রসঙ্গে জাহাজটির স্থানীয় এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ শাহেদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রোববার রাতের মধ্যে টেনেটুনে তিন শ কন্টেইনার তুলতে পারলে সোমবার আমাদের জাহাজ চলে যাবে। তা সত্ত্বেও জাহাজটির জন্য বাড়তি একদিনের ভাড়া এবং চার দিনের পোর্ট চার্জ গুনতে হবে ৫০ হাজার ডলারের মতো।’

বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতকাল পর্যন্ত দেশের ১৭টি ডিপোতে প্রায় ২০ হাজার একক রপ্তানি কন্টেইনার আটকা পড়েছে। এর বাইরে চট্টগ্রাম বন্দর জেটিতে জমেছে ৩৮ হাজার ৭৩৩ কনটেইনার। একই সঙ্গে জেটি ও বহির্নোঙরে জাহাজগুলোতে আরও ২০ হাজার একক কন্টেইনার আটকা পড়ে। রপ্তানি পণ্য ঠিকমতো জাহাজে তুলতে (শিপমেন্ট) না পারার কারণে বিদেশি ক্রেতা হারানোর শঙ্কা ব্যবসায়ীদের। একইভাবে আমদানি করা কাঁচামাল কিংবা যন্ত্রপাতি সময়মতো খালাস না হওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কথা বলছেন উদ্যোক্তারা।

এ প্রসঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই-এর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবুর মতে, পণ্যের চালান সময়মতো পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় ক্রেতারা কাজের আদেশ প্রত্যাহার করে নিতে পারেন। এতে দেশের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। তিনি বলেন, করোনাকালে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার জন্য যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তা দীর্ঘ মেয়াদে বাধাগ্রস্ত হলো। এর চরম খেসারত দিতে হবে।

আর তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সহসভাপতি এবং ক্ল্যাসিক ফ্যাশন কনসেপ্টের ব্যবস্থাপনা পরচালক (এমডি) শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, তিন দিনের টানা পরিবহন ধর্মঘটে পোশাক খাতেই শুধু আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৩৬ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত