Ajker Patrika

কয়রায় ঢালের মাটি কেটে বাঁধ মেরামত!

কামাল হোসেন, কয়রা (খুলনা)
কয়রায় ঢালের মাটি কেটে বাঁধ মেরামত!

খুলনার কয়রায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বাঁধ মেরামতের কাজ চলছে। এক্সকাভেটর দিয়ে মূল বাঁধের ঢালের মাটি কেটে বাঁধ উঁচু করার চেষ্টা করছেন ঠিকাদার। এতে বাঁধের ওই স্থান আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। খরচ বাঁচিয়ে বেশি লাভের আশায় ঠিকাদার এমনটি করছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কারের জন্য পাউবোর দুটি পোল্ডারের ৯টি স্থানে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কাটার কাজ চলছে। এর চালকেরা বাঁধের দুই পাশের ঢালের মাটি কেটে ওপরে তুলছেন। সেই মাটি আবার কোদাল দিয়ে সরিয়ে বাঁধ উঁচু ও প্রশস্ত করার চেষ্টা করছেন শ্রমিকেরা। সেখানে পাউবোর কোনো দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে দেখা যায়নি। টেন্ডার (দরপত্র) ছাড়াই এ মেরামতের কাজ চালানোর অভিযোগ রয়েছে।

এক্সকাভেটর চালকেরা জানান, ঠিকাদারের লোকজনের কথামতো তাঁরা এভাবে মাটি কাটছেন। নিয়ম অনুযায়ী মূল বাঁধের ৩০ মিটার দূর থেকে শ্রমিক দিয়ে মাটি আনার কথা। কিন্তু ঠিকাদার খরচ ও সময় বাঁচাতে এক্সকাভেটর ব্যবহার করেছেন। এতে বাঁধের দুই পাশে বড় গর্তের সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

মঠবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘ঠিকাদার বাঁধের একেবারে পাশ থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে সংস্কারকাজ করেছেন। কিছু স্থানে মূল রাস্তা কোদাল দিয়ে ছেঁটে ভরাট করেছেন। কিছু স্থানে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি তুলে ছোট গর্ত ভরাট করে দিয়েছেন। এতে কাজের মান ভালো না হওয়ায় আমরা গ্রামের লোকজন কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। পরবর্তী সময়ে তাঁরা সেখানে একইভাবে কাজ করেছেন।’

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, ডাইরেক্ট প্রকিউরমেন্ট মেথড (ডিপিএম) পদ্ধতির মাধ্যমে কয়রা উপজেলার গোবরা এলাকার দুই স্থানে ১ হাজার ৮০০ মিটার, হরিণখোলা এলাকায় ১৩০ মিটার, সুতির অফিস এলাকার দুই স্থানে ৩৬৫ মিটার, হরিহরপুর এলাকার দুই স্থানে ৪২০ মিটার, গাতিরঘেরিতে ২৮০ মিটার, পদ্মপুকুরে ১৮০ মিটার, চোরামুখা এলাকার চার স্থানে ১ হাজার ২০ মিটার, পাতাখালি এলাকার ২৭০ মিটার, শাকবাড়িয়া এলাকার দুই স্থানে ৩০০ মিটার, মেদেরচর এলাকায় দুই স্থানে ৪০০ মিটার, ঘোপের খাল এলাকার ৪০০ মিটার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার করা হচ্ছে। প্রাক্কলন অনুযায়ী ওই কাজে বরাদ্দ ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় দরপত্র ছাড়া ওইসব কাজের দায়িত্ব পেয়েছেন স্থানীয় ও বহিরাগত কয়েক ব্যক্তি।

গোবরা এলাকায় ৯০০ মিটার বাঁধ মেরামতের দায়িত্বে রয়েছেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ। তিনি দুটি এক্সকাভেটর দিয়ে বাঁধের পাশ থেকে মাটি কেটে তুলছেন।

এ অবস্থায় কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গতকাল সরেজমিন গিয়ে ওই কাজ বন্ধ করে দেন। জানতে চাইলে আবুল কালাম শেখ বলেন, ‘পাউবো কর্মকর্তাদের নির্দেশে আমি এ কাজটি দেখাশোনা করছি। যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে বাঁধের কোনো ক্ষতি হবে বলে মনে করি না।’ গোবরা গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করেন, পরিকল্পিতভাবে বাঁধ মেরামত না হওয়ায় প্রতিবছর ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে। সেই সঙ্গে অপচয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।

পাউবোর সেকশন কর্মকর্তা (এসও) মো. লিয়াকত আলী বলেন, বাঁধের ঢাল থেকে যাতে মাটি না কাটে সে জন্য ঠিকাদারের লোকজনকে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বাঁধ মেরামতকাজ যাতে ভালো হয় সে জন্য সার্বক্ষণিক তদারকি করা হচ্ছে। কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, বাঁধের পাশ থেকে মাটি কাটা হলে সেখানে ঝুঁকি আরও বাড়বে। বর্ষা মৌসুমে এসব স্থানে মাটি সরে গিয়ে মূল বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে ঠিকাদারের লোকজনকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত