Ajker Patrika

সামিনা এখন অনুপ্রেরণা

ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, ডোমার
আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১০: ০৫
Thumbnail image

মাত্র ১৪ বছর বয়সে বিয়ে হয় নীলফামারীর ডোমারের সামিনা আক্তারের। সে সময় তিনি একটি মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। কিছুদিন না যেতেই সংসারজীবনে শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। কিন্তু সারা দিন সংসারের ঘানি টেনেও স্বামীর মন জয় করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে একপর্যায়ে দুই ছেলেকে নিয়ে আলাদা থাকতে শুরু করেন সামিনা। প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করেন সেলাইয়ের কাজ। সেই সামিনা এখন সফল উদ্যোক্তা। অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছেন সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের। শুধু তা-ই নয়, অদম্য সামিনা আবার লেখাপড়া শুরু করেছেন। এবার তিনি স্নাতক (পাস কোর্স) চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। তাঁর বড় ছেলেও এবার স্নাতক (সম্মান) চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেবেন। আর ছোট ছেলে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী।

সামিনা ডোমার উপজেলার সবুজপাড়া গ্রামের সামছুল হকের মেয়ে। একই এলাকায় তাঁর বিয়ে হয়েছিল। সামিনা জানান, বিয়ের পর থেকেই অভাব আর লাঞ্ছনা তাঁর সঙ্গী হয়েছিল। এই বিভীষিকা থেকে রক্ষা পেতে একপর্যায়ে স্বাবলম্বী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। শুরু করেন লেখাপড়া। এক বান্ধবীর অনুপ্রেরণায় উন্মুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ২০১৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ২০১৭ সালে দেবীগঞ্জ কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসএস (পাস) কোর্সে ভর্তি হন।

সংসার ও লেখাপড়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নারী উন্নয়নের বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নিতে থাকেন বলে জানান সামিনা। এভাবেই একসময় বদলাতে থাকে তাঁর জীবনের গল্প। যুব উন্নয়ন কর্মসূচি থেকে সেলাই মেশিনের প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। এখন তিনি কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষক। সফল উদ্যোক্তা হিসেবে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ জয়িতা পুরস্কারও পেয়েছেন সামিনা। বর্তমানে ডোমার উপজেলা পরিষদ মার্কেটে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে সেখানে সেলাইয়ের কাজ, প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ ও থান কাপড় বিক্রি করেন সামিনা।

সামিনা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘স্বামীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আলাদা থাকি। আমার স্বামী ৭ বছর আগে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। নিজের পায়ে দাঁড়াতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। এখন আমার নিজের বাড়ি আছে। দুই ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি, নিজেও করছি। আমার প্রতিষ্ঠানে এ পর্যন্ত ৩০০ জন প্রশিক্ষণ নিয়ে সেলাইয়ের কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।’

স্থানীয় নারীনেত্রী ও সহকারী অধ্যাপক ডেইজি নাজনীন বলেন, প্রতিকূল পরিবেশেও সফল নারী উদ্যোক্তা হওয়া সম্ভব, সামিনা সেটা প্রমাণ করেছেন। সামিনার মতো উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণ দিয়ে তাঁদের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করার সুযোগ দেওয়া উচিত।

ডোমারের পৌর মেয়র মনসুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামিনা একজন আত্মবিশ্বাসী ও সফল নারী উদ্যোক্তা। স্বাবলম্বী হওয়ার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। এখন উপজেলার নারীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করছেন। ডোমার পৌরসভা সামিনার মতো নারী উদ্যোক্তাদের পাশে আছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত