Ajker Patrika

দেশের সংকটে হাসি ফোটাবে কারা, বাবর নাকি শানাকারা

বোরহান জাবেদ, ঢাকা
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ২২
দেশের সংকটে হাসি ফোটাবে কারা, বাবর নাকি শানাকারা

এবারের এশিয়া কাপ শ্রীলঙ্কা-পাকিস্তান দুই দলকে দাঁড় করিয়েছে এক মেরুতে। শ্রীলঙ্কায় চলছে রাজনৈতিক সংকট। আর পাকিস্তানে মানবিক সংকট। রাজনৈতিক সংকটে নিজেদের দেশে এশিয়া কাপ আয়োজনই করতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। এই মুহূর্তে সেই আক্ষেপটা থাকার কথা নয় শ্রীলঙ্কানদের। ৮ বছর পর এশিয়া কাপের শিরোপা থেকে এক সিঁড়ির দূরত্ব থাকা দ্বীপরাষ্ট্রটির ভক্ত-সমর্থকদের এখন দারুণ একটা ক্ষণের অপেক্ষা।

শিরোপা যদি নাও জিততে পারে, সংযুক্ত আরব আমিরাতে হওয়া এশিয়া কাপ থেকে শ্রীলঙ্কার প্রাপ্তির খাতা থাকছে যথেষ্ট পূর্ণ। আবারও লঙ্কানরা খেলতে পেরেছে নিজেদের ব্র্যান্ডের ক্রিকেট। এখন শুধু তুলির শেষ আঁচড় দেওয়ার অপেক্ষা। কাজটা অবশ্য সহজ নয়। প্রতিপক্ষ পাকিস্তানও বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনীর ভাবনায় প্রস্তুত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে।

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, সেটা আরও অনুপ্রাণিত করছে বাবর আজমের দলকে। সশরীরে থাকতে না পারলেও মানবিক বিপর্যয়ে মরুর দেশ থেকেই শামিল হচ্ছেন পাকিস্তান খেলোয়াড়েরা। যেমন—নাসিম শাহ। সুপার ফোরে শেষ ওভারে দুই ছক্কায় যে ব্যাট দিয়ে আফগানিস্তানের থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, সেই ব্যাট বন্যার্তদের সাহায্যার্থে নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন।

গ্রুপ পর্ব-সুপার ফোরের সিঁড়ি বেয়ে ফাইনাল। পথটা খুব একটা মসৃণ ছিল না পাকিস্তানের। প্রথম ম্যাচেই ভারতের কাছে হার। পরে হংকংকে হারিয়ে সুপার ফোর নিশ্চিত করা। এরপর ভারতের বিপক্ষে ধারাবাহিকতার অপূর্ব প্রদর্শনী আর আফগানদের বিপক্ষে লো স্কোরিং ম্যাচে সেই অননুমেয় পাকিস্তানের দেখা মেলা। ফাইনালের আগে পোশাকি মহড়ায় আবার খেই হারানো।

হারার চেয়ে পাকিস্তানের চিন্তা বেশি বাবরকে নিয়ে। এশিয়া কাপে নিজের সেরা ছন্দে নেই পাকিস্তানি অধিনায়ক। সাধারণত শান্ত চরিত্রের বাবর মাঠে মেজাজও হারাচ্ছেন। পাকিস্তান ব্যাটিংয়ের সুর সাধারণত বেঁধে দেয় বাবর-রিজওয়ান ওপেনিং জুটি। একপাশে রিজওয়ান পারলেও এই টুর্নামেন্টে বাবর ছন্দে না থাকায় সেটা হচ্ছে না। এমন সময় মিডলঅর্ডার হতে পারত ভরসার জায়গা। খুশদিল শাহ ইফতেখারও আস্থার প্রতিদান দিতে পারছেন না।

শ্রীলঙ্কা দলের ছবিটা পুরো বিপরীত। টপ অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার, যখন যার দরকার হচ্ছে, দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। বোলিংয়েও বেগ পেতে দিচ্ছেন না শিহান মাদুশঙ্কা-মহেশ থিকসানারা। অথচ গত দুই বছরে এই দলটাই ভুগেছে। চিত্র পাল্টেছে ধীরে ধীরে। খেলোয়াড়দের ওপর ভরসা রেখে গেছেন নির্বাচকেরা। সেটির ফলই বোধ হয় পাচ্ছেন তাঁরা। পরিস্থিতি যেমনই হোক, ভেঙে না পড়াই এই শ্রীলঙ্কা দলের বড় শক্তি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিধ্বস্ত হয়ে টুর্নামেন্ট শুরু শ্রীলঙ্কার। এরপর দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের উদাহরণ হয়ে তাদের টানা চার জয়। সুপার ফোরে ভারতের বিপক্ষে রুদ্ধশ্বাস জয়ের পর ভানুকা রাজাপক্ষে নিজেদের সোনালি অতীতের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘আমাদের ক্রিকেটের একটা ব্র্যান্ড ছিল। আমরা সেই ব্র্যান্ড আবার ফিরিয়ে আনতে চাই।’

ভাগ্য নাকি সাহসীদের সঙ্গে থাকে। এই এশিয়া কাপে সেই সাহসী দল শ্রীলঙ্কা। শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকাও একজন সাহসী ফিনিশার। টস ভাগ্যও তাঁর পক্ষে। আজ ফাইনালে আরেকবার টসে জিতলে শিরোপা দেশে নেওয়ার কাজ অর্ধেক সেরে ফেলতে পারেন শানাকা!

অবশ্য প্রতিপক্ষ যখন পাকিস্তান, খেলা আবার দুবাইয়ে, গ্যালারি থেকে পাওয়া বিপুল সমর্থন নিয়ে বাবররা এক দশক পর শিরোপাটা হাতে তুলতে উন্মুখ। ৮ বছর পর এশিয়া কাপের ফাইনালে দেখা হচ্ছে দুই দলের। যে দলই জিতুক, একটি দেশের সমর্থকদের মুখে অন্তত হাসি ফুটবে নিজেদের গভীর সংকটে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত