Ajker Patrika

গোঁসাইজির আশ্রমে নবান্ন

ইমাম হাসান মুক্তি, লালপুর (নাটোর)
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১১: ০২
গোঁসাইজির আশ্রমে নবান্ন

মানুষের ভাবদর্শন সত্যিই কত স্নিগ্ধ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর ঈশ্বর-ভাবনা, সব এখানে মিলেমিশে একাকার। বৃক্ষরাজিতে আশ্রয় নিয়েছে পাখিকুল। সদর দরজায় পেখম মেলে রেখেছে ময়ূর। একটু এগোলে সারি সারি সুপারিগাছ। নাটোরের শ্রীশ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইয়ের সৎসঙ্গ সেবাশ্রমের সবকিছুই যেন বুঁদ হয়ে আছে পরম প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায়। তিন শতাধিক বছরের পুরোনো নির্জন এ স্থান প্রায়ই ভক্তদের পদচারণে মুখর হয়ে ওঠে। নবান্ন উৎসব হলে তো কথাই নেই।

নাটোর শহর থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার দূরে লালপুর উপজেলার দক্ষিণ-পশ্চিমে ৮ নম্বর দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রাম। এখানেই ৩২ বিঘা জমির ওপর নির্মিত ফকির চাঁদ বৈষ্ণবের মন্দির ও সমাধি। গ্রামবাসীদের কেউ বলেন সাধুর আশ্রম, আবার কেউ বলেন গোঁসাইবাড়ি। প্রতিবছরের মতো এবারও দুই দিনব্যাপী ৩২৪তম নবান্ন উৎসবের আয়োজন করা হয় এই স্থানটিতে। উৎসবের শেষ দিন ছিল গতকাল সোমবার। নারী-পুরুষনির্বিশেষে ভক্তরা আশ্রমে পৌঁছেই শ্রীশ্রী ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাই ও তাঁর শিষ্য সাধুদের সমাধিতে ভক্তি-শ্রদ্ধা জানান। একই সময়ে আশ্রম প্রাঙ্গণে চলে মেলা।

উৎসবের প্রথম দিন গত রোববার দুপুরে আশ্রম প্রাঙ্গণে সারিবদ্ধভাবে বসে গোঁসাইয়ের ভক্তরা কলার পাতায় খিচুড়ি, পাঁচ তরকারি ও পায়েস খান। সেবা লাভের আশায় নানা পদ্ধতিতে করেন মানত। প্রিয় এই জায়গার উন্নয়নে সাধ্যমতো দানও করেন তাঁরা।

গাইবান্ধার দুলালী গ্রামের ভক্ত প্রাণবন্ধু বর্মণ (৮১) বলেন, ‘বংশপরম্পরায় ছোট থেকেই আমি এখানে আসছি। টানা ৯ বছর ধরে গোঁসাই ভক্ত কমিটির সভাপতি হিসেবে সেবা দিচ্ছি। এখানে এলেই আমি অজানা এক মায়ায় হারিয়ে যাই, যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।’

আশ্রমের প্রধান সেবাইত শ্রী পরমানন্দ সাধু জানান, বাংলা ১২১৭ সালে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের এই গহিন অরণ্যে একটি বটগাছের নিচে আস্তানা স্থাপন করেন ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। এখানেই সাধু ধ্যান-তপস্যা ও বৈষ্ণবধর্ম প্রচার শুরু করেন। প্রতিবছর দোলপূর্ণিমা, গঙ্গাস্নান ও নবান্ন উৎসব উপলক্ষে দেশ-বিদেশের হাজার হাজার ভক্ত সাধক সমবেত হন এখানে।

আশ্রমটি ঘুরে দেখা যায়, ভক্তদের সুবিধার্থে এখানে শানবাঁধানো বিশাল দুটি পুকুর রয়েছে। আশ্রমের প্রবেশপথে রয়েছে ময়ূর, বাঘ ও বিভিন্ন প্রাণীর মূর্তি এবং লতাপাতার কারুকার্য খচিত সুবিশাল ফটক। ফটক পার হয়েই ডানে রয়েছে ভক্ত, সাধু ও মাতাদের আবাসন আর বাম দিকে রয়েছে সাধুদের সমাধিস্তম্ভ। মাঝখানে শ্রী ফকির চাঁদের সমাধি। আশ্রম চত্বরে রয়েছে ১৪০ জনের বেশি ভক্ত ও সাধুর সমাধি।

স্থানীয় সাধুরা জানান, ১২৭৪ খ্রিষ্টাব্দে এখানে ভক্তসঙ্গ করতে করতে অদৃশ্য হয়ে যান ফকির চাঁদ বৈষ্ণব। মন্দিরে প্রবেশ করে ঐশ্বরিকভাবে স্বর্গ লাভ করেন তিনি। এই সাধুর পরিধেয় খড়ম ও বস্ত্র সংরক্ষণ করে সমাধিস্তম্ভ নির্মিত হয়েছিল। ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাই একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তবন থানার রাধাকান্তপুর (মতান্তরে গুড়ইল) গ্রামে ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

নবান্ন উৎসব কমিটির সভাপতি শ্রী সঞ্জয় কুমার কর্মকার বলেন, ‘ভক্তদের দানের টাকাতেই এখানে উৎসব হয়। আমরা চাই, এটি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধিভুক্ত হোক।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত