Ajker Patrika

ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
আপডেট : ০৬ মে ২০২২, ১৪: ২৫
ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় শ্রমিককে গলা কেটে হত্যা

ঈদ উৎসবের মাঝেও থেমে নেই হানাহানি-খুনোখুনি। ঈদের ছুটির মধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় পূর্বশত্রুতা এবং তাৎক্ষণিক বিরোধের জের ধরে একাধিক সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত চারজনের।

এর মধ্যে নেত্রকোনায় ধান কাটতে রাজি না হওয়ায় খাইরুল ইসলাম (২৯) নামে এক শ্রমিকের গলা কেটে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সকালে মদন উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নে মাখনা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত খাইরুল মাখনা গ্রামের প্রয়াত আব্দুল খালেকের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, স্থানীয় একটি মসজিদে প্রায় ১৮ বছর ধরে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন খাইরুল। বৈশাখী মৌসুমে দিনমজুর হিসেবে ধান কাটার কাজও করেন তিনি। গত বুধবার রাতে খাইরুলকে একটি জমির ধান কাটতে বলেন মাখনা গ্রামের দুলাল ও হক মিয়া। কিন্তু ওই জমি নিয়ে একই গ্রামের এলাই মিয়ার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে দুলাল ও হকের। বিরোধপূর্ণ ওই জমির ধান কাটতে রাজি হননি খাইরুল। এ নিয়ে দুলাল ও হকের লোকেরা তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গতকাল সকালে স্থানীয় হাওরে অন্য একটি জমিতে ধান কাটতে যান খাইরুল। সেখানে গিয়ে তাঁকে আবারও বিরোধপূর্ণ জমির ধান কাটতে চাপ দেওয়া হয়। এ নিয়ে হক মিয়ার লোকজনের সঙ্গে তর্ক হয় খাইরুলের। একপর্যায়ে খাইরুলের হাতের কাস্তে নিয়েই তাঁর গলা কেটে দেন হক মিয়ার লোকজন। স্থানীয়রা দ্রুত উদ্ধার করে খাইরুলকে মদন হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে মদন থানার ওসি মুহাম্মদ ফেরদৌস আলম জানান, এখনো এ ঘটনায় মামলা হয়নি। পরিবারের লোকজন অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। খাইরুলের লাশ ময়নাদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

এদিকে ঈদের দিন বিকেলে দুই বান্ধবীকে নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়েছিলেন সৌরভ ওরফে রনি (২০)। কিন্তু ঘুরতে বেরিয়ে আর ঘরে ফেরার সুযোগ হয়নি তাঁর। পূর্বশত্রুতার জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজন প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করেছে তাঁকে। গত মঙ্গলবার বিকেলে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার শায়েস্তা ইউনিয়নের পূর্ব বান্দাইল এলাকায় ঘটেছে এ ঘটনা।

নিহত রনি উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের ওয়াইজনগর গ্রামের নবাব আলীর ছেলে। এ ঘটনায় গত বুধবার রাতে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেছেন নবাব আলী। এরই মধ্যে ইয়ামিন ও আলিফ নামের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহতের স্বজন ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদের দিন বিকেলে দুই বান্ধবীকে নিয়ে ঘুরতে বের হন রনি। বান্দাইল এলাকায় পৌঁছানোর পর সাত-আটজনের একটি দল রনির মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই রামদা, চাপাতিসহ ধারালো অস্ত্র দিয়ে তারা রনিকে কোপাতে থাকে। জীবন বাঁচাতে সেখান থেকে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন রনি। পাশের একটি বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তাঁর। ওই বাড়িতে ঢুকেই তাঁকে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে হামলাকারীরা। সেখান থেকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রনির মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় করা মামলার আসামিরা হলেন শাহরাইল মুন্সিপাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মো. শান্ত, আয়ুব আলীর ছেলে মানিক, নুরু মিয়ার ছেলে রবিন, হাবুর ছেলে মোহাম, চানু মিয়ার ছেলে শামীম, কামালের ছেলে সুজন, চন্দননগর গ্রামের জান্নানের ছেলে ইয়ামিন ও শায়েস্তা গ্রামের কাওছারের ছেলে আলিফ।

স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, সিঙ্গাইরের মানিকনগর ও শাহরাইল গ্রামের তরুণ ও কিশোরদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল। এর জের ধরেই রনিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

সিঙ্গাইর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্লা বলেন, এজাহারভুক্ত দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

পূর্ববিরোধের জের ধরে কুমিল্লায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে শুভ (২০) নামে আরেক তরুণ নিহত হয়েছেন। তিনি আদর্শ সদর উপজেলার আড়াইওরা গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঈদের দ্বিতীয় দিন গত বুধবার সন্ধ্যায় গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ পালপাড়া ব্রিজ এলাকায় ঘুরতে যান শুভ। সন্ধার পরপর কয়েকজন তরুণ তাঁর ওপর হামলা চালায়। এ সময় শুভর বুক ও পেটে ছুরিকাঘাত করা হয়। উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি সহিদুর রহমান জানান, ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে।

এদিকে গত গতকাল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের ইছাপুরা ইউনিয়নের লালবাড়ি এলাকায় অটোরিকশার ভাড়া নিয়ে বিবাদের জেরে মারামারিতে আলী হোসেন (৫২) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। পেশায় কৃষক আলী উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়নের তেলিপাড় এলাকার প্রয়াত আব্দুল জব্বারের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, গতকাল ইছাপুরা চৌরাস্তা থেকে অটোরিকশায় করে লালবাড়ি সেতু এলাকায় যান আলী হোসেন। চালক বেশি ভাড়া চাইলে আলী হোসেন দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে তর্কের একপর্যায়ে চালকের সঙ্গে তাঁর হাতাহাতি হয়। পরে চালকের পরিচিত একজন সেখানে আসেন। এরপর দুজন মিলে আলী হোসেনকে মারধর করে। এ সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জসিম উদ্দিন বলেন, হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা যান। তাঁর বুকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সিরাজদিখান থানার ওসি এ কে এম মিজানুল হক বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সিগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো এ ঘটনায় কেউ মামলা করেনি। অভিযুক্তদের আটকের চেষ্টা চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত