Ajker Patrika

সংকটে ভাড়ার উড়োজাহাজই ভরসা বিমান বাংলাদেশের

  • ভাড়ার দুটি বোয়িং ডিসেম্বরে ফিরে গেলে বহরে উড়োজাহাজ থাকবে ১৯টি।
  • ফ্লাইট ঠিক রাখতে চারটি বড় উড়োজাহাজ ভাড়া করতে দরপত্র আহ্বান।
  • গত বছর দুটির জন্য চার দফায় দরপত্র আহ্বান করেও সাড়া পায়নি বিমান।
  • নতুন কিনতে দুই কোম্পানির প্রস্তাব যাচাই চলছে, পাওয়া যাবে ২০৩২ সালে।
মনজুরুল ইসলাম, ঢাকা
সংকটে ভাড়ার উড়োজাহাজই ভরসা বিমান বাংলাদেশের

উড়োজাহাজ সংকটে ইতিমধ্যে একটি রুট বন্ধ করে দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এর ওপর লিজে (ভাড়ায়) আনা দুটি বোয়িং আগামী ডিসেম্বরে ফেরত যাচ্ছে। ফলে বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত না হলে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটির বর্তমান স্বাভাবিক ফ্লাইট পরিচালনা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। নতুন উড়োজাহাজ কেনার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হওয়ায় সংকট কাটাতে বিমানকে ভাড়ায় উড়োজাহাজ আনার ওপর ভরসা করতে হচ্ছে।

বিমান বাংলাদেশ সূত্র বলেছে, সংকট এড়াতে বড় আকারের (৩২০-এর বেশি আসনের) চারটি উড়োজাহাজ লিজে আনতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে দুটি বোয়িং লিজ নিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চার দফা দরপত্র আহ্বান করেও সাড়া পায়নি বিমান। এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লিজ নিতে বিমানের দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতার কারণে এবারও তেমন আশঙ্কা রয়েছে।

বিমান বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সংস্থাটির বহরে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে চারটি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর, চারটি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার, দুটি ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার, ছয়টি বোয়িং ৭৩৭ ও পাঁচটি ড্যাশ ৮-৪০০ উড়োজাহাজ। এগুলো দিয়ে বিমান ২৩টি আন্তর্জাতিক ও সাতটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। ভাড়ার মেয়াদ শেষে বহরের দুটি বোয়িং ডিসেম্বরে ফেরত যাচ্ছে। এ দুটি ফেরত গেলে বহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা হবে ১৯টি। এ সময়ের মধ্যে বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত না হলে ফ্লাইট পরিচালনায় জটিলতার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি। তাই চারটি বড় আকারের উড়োজাহাজ ভাড়ায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিমান।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, যাত্রীর চাহিদা বাড়ছে, ফলে বহর ছোট হয়ে গেলে ফ্লাইট পরিচালনায় সমস্যা হবে। তাই ঘাটতি সামাল দিতে অন্তত কিছু উড়োজাহাজ লিজে আনার চেষ্টা চলছে।

বিমান সূত্র জানায়, চারটি উড়োজাহাজ লিজ নিতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে ওয়েট লিজে। মূলত সামনের হজ মৌসুমের চাপ সামাল দিতে এ দুটি উড়োজাহাজ আগামী বছরের ১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ভাড়া নিতে চায় বিমান।

প্রসঙ্গত, ওয়েট লিজের চুক্তিতে একটি এয়ারলাইনস (ইজারা দেওয়া) অন্য এয়ারলাইনসকে (ইজারা গ্রহীতা) উড়োজাহাজ, তার সম্পূর্ণ ক্রু, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিমা সরবরাহ করে। এই ব্যবস্থা সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ব্যবহারের জন্য করা হয়।

সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরে বহর সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে বিমান বাংলাদেশ। নতুন উড়োজাহাজ কিনতে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফ্রান্সের এয়ারবাস ও যুক্তরাষ্ট্রের বোয়িং কোম্পানির প্রস্তাব যাচাই-বাছাই চলছে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁর ঢাকা সফরকালে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল এয়ারবাস। প্রতিটির দাম ধরা হয়েছিল প্রায় ১৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সেই চুক্তি স্থগিত হয়। পরে বোয়িংও নতুন প্রস্তাব পাঠায়। গত জুলাইয়ে বোয়িংয়ের কাছ থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার কথা জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোসরা ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, নতুন উড়োজাহাজ কেনার লক্ষ্যে এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই চলছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্রুত চুক্তি হলেও তাদের কেউই ২০৩২ সালের আগে উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে না। সে হিসেবে বহরে নতুন উড়োজাহাজ যুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া শেষ হতে লাগবে প্রায় সাত বছর। এর আগেই পবিত্র হজসহ ব্যস্ত মৌসুমে যাত্রী পরিবহনে ঘাটতি দেখা দেবে। তাই আপাতত চারটি উড়োজাহাজ লিজে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আন্তর্জাতিক দরপত্রও আহ্বান করা হয়েছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী এক দশকে দেশের আকাশপথে যাত্রীসংখ্যা দ্বিগুণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বর্তমানে বছরে গড়ে প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ যাত্রী যাতায়াত করেন। ২০৩৫ সালের মধ্যে এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখে। কিন্তু এই সম্ভাবনার বিপরীতে উড়োজাহাজ সংকটে পড়েছে বিমান। স্বল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা-টরন্টো, ঢাকা-নারিতা ও ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট চালুর পর থেকে সংকটের শুরু।

জানা গেছে, গত হজ মৌসুমে পরিস্থিতি জটিল হলে জরুরি ভিত্তিতে দুটি বোয়িং ৭৩৭-৮ উড়োজাহাজ ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করে বিমান। সিদ্ধান্ত ছিল, ছয় বছরের জন্য ভাড়া নেওয়া হবে। এর একটি গত ১ ফেব্রুয়ারি এবং অন্যটি ১ এপ্রিলের মধ্যে বহরে যুক্ত করার কথা ছিল। তবে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে চার দফায় দরপত্র দিলেও কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে চাহিদা অনুযায়ী সাড়া পায়নি বিমান। ফলে গত হজ মৌসুমে বিদ্যমান উড়োজাহাজ দিয়েই ফ্লাইট পরিচালনা করতে হয়েছে। এতে নারিতা রুট বন্ধসহ বেশ কিছু রুটের ফ্লাইট কমাতে হয়। এদিকে লোকসানে থাকা ঢাকা-নারিতা রুট উড়োজাহাজ সংকটে গত ১ জুলাই বন্ধ করে দেয় বিমান।

এদিকে চাহিদা অনুযায়ী চারটি উড়োজাহাজ ভাড়া পেলে নতুন আন্তর্জাতিক রুট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষের। বিমান সূত্র জানায়, মালদ্বীপের মালে, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার সিডনি রুটে ফ্লাইট চালুর বিষয়ে বাজার যাচাই-বাছাই চলছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য কাজী ওয়াহিদুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, উড়োজাহাজ লিজ নিতে বিমান কর্তৃপক্ষ যে প্রক্রিয়ায় দরপত্র আহ্বান করে, তাতে কখনই সফল হবে না। কারণ, বিমানের প্রক্রিয়াটি দীর্ঘ, সিদ্ধান্ত নিতে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। কোনো এয়ারলাইনসই তার উড়োজাহাজ বিমানের জন্য একদিনও বসিয়ে রাখবে না। এ কারণে গত বছরও দফায় দফায় দরপত্র দিয়েও উড়োজাহাজ লিজ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। এবারও সে পথেই হাঁটছে বিমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ