Ajker Patrika

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন: ২৭০ দিন সময় বেঁধে দেওয়া নিয়ে মতভেদ

তানিম আহমেদ, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

জুলাই জাতীয় সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সংবিধান সংস্কার পরিষদ ২৭০ দিনে বাস্তবায়ন করতে না পারলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই প্রস্তাবকে বিএনপি ‘হাস্যকর’ বলেছে। অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সুপারিশের আলোকে আদেশ জারি করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে সরকারের কাছে চূড়ান্ত সুপারিশ জমা দিয়েছে। সুপারিশে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ জারির পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প প্রস্তাব দেওয়া হয়। প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গণভোটের আগে সরকার জাতীয় সনদের ভিত্তিতে একটি খসড়া বিল প্রস্তুত করবে, যা গণভোটে উপস্থাপন করা হবে। ফল ইতিবাচক হলে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা একযোগে এমপি ও সংবিধান সংস্কার পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁরা প্রথম অধিবেশন থেকে ২৭০ দিনের মধ্যে সংস্কার সম্পন্ন করবেন; নির্ধারিত সময় পার হলে বিল স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্যকর হবে।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে বিলের কথা বলা নেই। এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে গাঠনিক ক্ষমতা দেওয়া হলেও প্রথম অধিবেশন শুরুর ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদ অনুসারে সংবিধান সংস্কার শেষ করবে এবং এরপর পরিষদের কার্যক্রম শেষ হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বাকি ধারাগুলো একই আছে।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় আজকের পত্রিকাকে বলেন, কমিশন মতামত দিয়েছে, এখন কাজ সরকারের। কমিশনের যেকোনো মতামত, পরামর্শ সরকার গ্রহণ করতে পারে, বর্জন করতে পারে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে। এখন সিদ্ধান্ত সরকার কী করবে? সেটা সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে।

একাধিক আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, প্রথম প্রস্তাবটি আইনগতভাবে দুর্বল হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতাকে সামনে রেখে কমিশন সেটি দিয়েছে। কারণ, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দলগুলোর মধ্যে পরস্পরের প্রতি সন্দেহ-অবিশ্বাস আছে। অনেকে মনে করেন, বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা তৈরি করা না হলে সংস্কার পরিষদে সনদের সব প্রস্তাব বাস্তবায়ন হবে না। এ প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছে জামায়াত ও এনসিপি।

অবশ্য প্রস্তাবটির বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানে কোনো কিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে অন্তর্ভুক্ত হয় না। তাই ২৭০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সরকার না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে—এটা সঠিক নয়, এটি ভ্রান্ত ধারণা। সংবিধানে কোনো কিছু অন্তর্ভুক্ত করতে হলে অবশ্যই সংসদে পাস হতে হবে।

কয়েকজন আইন বিশেষজ্ঞ বলেন, সংবিধানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত করার প্রস্তাবটি অস্বাভাবিক। সেটা না করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন না হলে সংসদ বিলুপ্ত করার প্রস্তাব দেওয়া ভালো ছিল। এ রকম উদাহরণ তিউনিসিয়া, ভেনেজুয়েলায় হয়েছে। তাঁদের একজন বলেন, তাঁর মনে হয়, সরকার দ্বিতীয় প্রস্তাবটি গ্রহণ করবে। কারণ, প্রথমটি করতে হলে ৪৮টি প্রস্তাবের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আইন তৈরি করতে হবে, যা তৈরি করতে দুই মাস লাগতে পারে। দ্বিতীয়টির বিষয়ে সরকার চাইলে কালকেই আদেশ জারি করতে পারে।

দুটি প্রস্তাবের কারণে বিএনপির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, এতে সরকারের আলোচনা করার পথ তৈরি হয়েছে। সেদিক থেকে দুটি প্রস্তাবের উপযোগিতা আছে। দ্বিতীয় প্রস্তাব মানলে বিএনপিরও লাভ হবে। তাঁদের মতে, সংস্কার পরিষদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে পাস না করলে তো বাস্তবায়ন হবে না। সে ক্ষেত্রে বিএনপির আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) প্রয়োগ করা যাবে।

২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার পরিষদকে বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতার প্রস্তাবের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে সংস্কার প্রস্তাবগুলো গৃহীত না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে সংযুক্ত হবে—এটি একটি হাস্যকর ব্যাপার। অটোপাসের মতো কোনো বিষয় সংবিধানে থাকতে পারে না। এগুলো কীভাবে সুপারিশে এল আমি জানি না।’

এদিকে ঐকমত্য কমিশনের প্রথম প্রস্তাবকে সামনে রেখে জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ জারি করতে সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছে জামায়াত ও এনসিপি। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘আমরা কমিশনের সুপারিশ করা প্রথম প্রস্তাব অনুযায়ী আগামী নভেম্বরে গণভোট করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সরোয়ার তুষার বলেন, সনদ বাস্তবায়নে কমিশনের সুপারিশ করা প্রথম প্রস্তাবে ভাষাগত অস্পষ্টতা আছে, সেটার আরও উন্নতি করা সম্ভব। তবে সেখানে বাস্তবায়ন পদ্ধতির বিষয়ে স্পষ্ট করা আছে। তাই তাঁরা এটির পক্ষে। দ্বিতীয় প্রস্তাব অনুযায়ী সংস্কারপ্রক্রিয়া অনিশ্চিত হয়ে যাবে। কারণ, সেখানে বাস্তবায়ন পদ্ধতি উল্লেখ নেই।

১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর হলেও সেদিন স্বাক্ষর করেনি এনসিপি। তখন দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না পেলে তারা স্বাক্ষর করবে না। কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পরও স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি দলটি।

সরোয়ার তুষার বলেন, ‘সরকার যদি বিকল্প-১ প্রস্তাব অনুযায়ী আদেশ জারির সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে আমরা স্বাক্ষর করব।’

একাধিক সূত্র জানায়, আদেশ জারির বিষয়ে সরকার গতকাল পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আজ বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এটি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এরপর সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৫ আগস্টে আমরা পুলিশ মেরে ঝুলিয়ে রেখেছি—সিগন্যাল দেওয়ায় ট্রাফিক সার্জেন্টকে হুমকি

১২৮ জুলাই যোদ্ধার গেজেট বাতিল

ছুটিতে গেলেন সেই বিচারক

জাতীয়করণের দাবিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশত মাদ্রাসাশিক্ষক আহত

নির্বাচন বানচালের জন্য দেশের ভেতরে–বাইরে অনেক শক্তি কাজ করবে, প্রধান উপদেষ্টার সতর্কতা

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ