Ajker Patrika

হাতবদলে দাম বাড়ে চার গুণ

সাইফুল ইসলাম, চরফ্যাশন (ভোলা)
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১১: ১৯
হাতবদলে দাম বাড়ে চার গুণ

চাষি থেকে হাতবদল হয়ে ভোক্তাপর্যায়ে চার গুণ দামে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের জন্য সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত দামে তরমুজ বিক্রি করছেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষক ও ক্রেতা।

বর্তমানে ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় খুচরা বাজারে তরমুজ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে প্রতিটি ২৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। অথচ খেত থেকে ওই একই তরমুজ চাষিরা ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। একই সঙ্গে পিস হিসেবে তরমুজ কিনে বিক্রি হচ্ছে কেজিদরে।

ক্রেতারা বলছেন, কৃষকের খেতের চেয়ে বাজারে কয়েক গুণ বেশি তরমুজের দাম। ফলে দাম বেশি হওয়ায় তরমুজ কিনতে অনীহা সাধারণ ক্রেতাদের।

চাষিরা বলছেন, বাজারে চাহিদার সুযোগ নিয়ে সিন্ডিকেট করে ইচ্ছেমতো দামে তরমুজ বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষক, অন্যদিকে চড়া দামে তরমুজ কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

রোববার চরফ্যাশন উপজেলার পাইকারি বাজারে ৪ থেকে ৬ কেজি ওজনের তরমুজ ১০০ পিস বিক্রি হচ্ছে ১৪ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকায়। সেই হিসেবে প্রতিটি তরমুজের দাম পড়ে ১৪০ থেকে ২৫০ টাকা। অথচ খুচরা পর্যায়ে সেই তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা থেকে ৪৮০ টাকার বেশি দামে।

বাজারে তরমুজ কিনতে আসা মিজানুর রহমান বলেন, ‘এ বছর সন্তানদের এখনো তরমুজ খাওয়াতে পারিনি। রমজান উপলক্ষে তরমুজের দাম বেশি। বাড়তি দামে তরমুজ কেনার সামর্থ্য নেই।’

চরফ্যাশন উপজেলার নজরুলনগর এলাকার তরমুজচাষি আবুল কালাম জানান, তাঁরা খেত থেকে পিস হিসেবে আড়তদার ও পাইকারদের কাছে তরমুজ বিক্রি করেন। বর্তমানে মাঝারি থেকে বড় আকারের ১০০টি তরমুজ ১৩ থেকে ২২ হাজার টাকা পর্যন্ত পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পিসপ্রতি তরমুজ বিক্রি করলেও খুচরা বাজারে কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে তরমুজ। এটা উচিত না, এতে মানুষকে ঠকানো হচ্ছে। আর বাজার ঠিক রাখতে মাঠপর্যায়ে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো উচিত।’

মুজিবনগর ইউনিয়নের শামিম পাটওয়ারী বলেন, ‘আমরা খেত থেকে যে তরমুজ ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন বাজারে সেই তরমুজের দাম ২৫০ থেকে ৪৮০ টাকা। যদিও আমাদের লোকসান হয়নি। আমাদের কাছ থেকে পাইকারি ক্রেতারা ছোট-বড় সাইজ দেখে দাম ঠিক করেন। এত দামে যেহেতু বিক্রি করি নাই, তাই ক্রেতার ওপর চাপ পড়ুক তা চাই না।’

তরমুজের পাইকারি বিক্রেতা আলী হোসেন বলেন, ‘কৃষকের খেত থেকে কিছুটা কম দামে তরমুজ কিনলেও পরিবহন ভাড়াতে অনেক খরচ পড়ে যায়। তা ছাড়া শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। সব খরচসহ প্রতি পিস তরমুজের দাম পড়েছে ৩৩০ টাকা। এ জন্য আকার ভেদে তরমুজ বিক্রি করতে হয়।’

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, ‘চরফ্যাশন উপজেলায় গ্লোরি, জাম্বু ও বাংলালিংক জাতের তরমুজ চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রতি হেক্টর জমিতে ৫০ থেকে ৫০০ মেট্রিক টন ফলন হতে পারে। তরমুজ চাষে কৃষকদের হেক্টরপ্রতি খরচ হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা।’

চরফ্যাশন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু হাসনাইন বলেন, ‘উপজেলায় চলতি মৌসুমে ১২ হাজার ৫৬০ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। উপজেলার নজরুলনগর, নুরাবাদ ও মুজিবনগর ইউনিয়নে তরমুজ চাষ বেশি হয়। গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর তরমুজের আবাদের সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনও বেশি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ভোক্তাপর্যায়ে তরমুজের দাম তিন-চার গুণ হওয়া অযৌক্তিক।’

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবু আবদুল্লাহ বলেন, ‘৬ এপ্রিল চরফ্যাশন বাজারের বিভিন্ন দোকানে রমজান উপলক্ষে নিত্যপণ্যের বাজার মূল্য তদারকিসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য তালিকা না থাকা, জিনিসপত্রের মূল্য বেশি রাখা ইত্যাদি অপরাধে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় ব্যবসায়ীদের সচেতন করার জন্য। জনস্বার্থে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তবে ব্যবসায়ীদের বলব, তরমুজের দাম বাড়িয়ে ক্রেতাদের ঠকাবেন না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত