Ajker Patrika

অনুমোদনহীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আরেক নবজাতকের মৃত্যু

পাটগ্রাম (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ জুন ২০২২, ১৭: ২৩
Thumbnail image

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসাসেবার অভাবে আরেক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। অনুমোদনহীন এ সেবাকেন্দ্রটি সিভিল সার্জন বন্ধের নির্দেশ দেওয়ার তিন দিন পর এ মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

জানা গেছে, গত রোববার পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের আজিজপুর এলাকার মিলন হোসেনের স্ত্রী রিংকী আক্তারের প্রসব বেদনা শুরু হলে স্থানীয়ভাবে চেষ্টার পর সোমবার পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চিকিৎসকের পরামর্শের জন্য নেওয়া হয়। সেখানকার চিকিৎসক জরুরিভাবে অস্ত্রোপচারের কথা বলেন। রিংকীর স্বজনেরা অস্ত্রোপচার করতে সম্মত হন। মঙ্গলবার সেখানে তাঁকে অস্ত্রোপচার করা হয়। এতে মেয়েসন্তানের জন্ম দেন রিংকী আক্তার। জন্মের পর থেকে নবজাতকটিকে অক্সিজেন দিয়ে রাখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বুধবার দুপুরের দিকে নবজাতকটির অবস্থার অবনতি বুঝতে পেরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে বলেন। ১০ মিনিটের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নবজাতকটির আধা ঘণ্টা আগে মৃত্যু হয়েছে।’

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন ছিল না। তিন দিন আগে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়। যেহেতু এটা ঘটেছে, এ জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দিয়ে সিলগালা করে দেওয়ার জন্য বলেছি।’

রিংকী আক্তারের বাবা গোলজার হোসেন বলেন, ‘গর্ভবতী মেয়েটির পরিস্থিতি বোঝার জন্য আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে ও পরামর্শ নিতে স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসি। তারা (হসপিটাল কর্তৃপক্ষ) আল্ট্রাসনোগ্রাম করে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেয়। ২০ হাজার টাকা দেওয়ার শর্তে অস্ত্রোপচার করা হয়। আমি বাড়ি যাই টাকা সংগ্রহ করতে। দুপুরে নাকি শিশুটি অসুস্থ হয়, তাদের লোকজনসহ উপজেলার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে জানা যায় শিশুটি আগেই মারা গেছে। আমরা গরিব মানুষ কী করি ভেবে পাচ্ছি না।’

রিংকী আক্তারের স্বামী মিলন হোসেন বলেন, ‘আমি জানি না, তাঁরা কী ধরনের চিকিৎসা দিল যে আমার সন্তানটি মারা গেল।’

পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘বাচ্চার কোনো সমস্যা ছিল না। জীবন-মৃত্যুর বিষয়টা আলাদা। অস্ত্রোপচার বা এখানকার কোনো সমস্যার কারণে মরেছে তা তো না। তাঁদের বলা হয়েছিল আপনাদের বাচ্চার সমস্যা। অনেক কাজই তো করা হচ্ছে, সমস্যা তো হয়নি।’

পাটগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হাসপাতালের কার্যক্রম চালাতে পারবে না, এটা সিভিল সার্জন বলেছেন, আমি আগেই বলেছি। ওই হাসপাতালের মালিকপক্ষকে ডেকে সব কার্যক্রম সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। যদি সদুত্তর না থাকে, বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।’

এদিকে গত ১৪ এপ্রিল পাটগ্রাম স্কয়ার হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাটগ্রাম পৌরসভার রেলস্টেশন পাড়া এলাকার সোহাগ হোসেনের স্ত্রী শারমিন আক্তারের অস্ত্রোপচার করা হয়। ওই দিন রাত ১২টার পর নবজাতক ছেলেটির অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাতেই রংপুরে নিতে বলে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রংপুরে নেওয়ার পথে নবজাতকের মৃত্যু হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত