Ajker Patrika

রঙের উৎসব ‘ফাগুয়া’

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ মার্চ ২০২২, ১৪: ২৫
রঙের উৎসব ‘ফাগুয়া’

মৌলভীবাজারের চা-বাগানে মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু হয়েছে ফাগুয়া উৎসব। সবুজ চা-বাগানে বিভিন্ন রং ছিটিয়ে উৎসব উদ্‌যাপন করেন চা-জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। কোথাও এক সপ্তাহ, কোথাও দুই সপ্তাহ হয়ে থাকে এই অনুষ্ঠান।

চা-বাগানের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বসন্ত ঋতুর ফাল্গুন মাসের দোলপূর্ণিমা তিথিতে ফাগুয়ার হোলি খেলা নামের উৎসব করেন। ফাল্গুন মাসে এই উৎসবের শুরু হয় বলে একে ফাগুয়া উৎসব নামে অভিহিত করা হয়েছে।

গত রোববার বিকেল চারটা থেকে রাত পর্যন্ত অর্ধশত চা-বাগানের সদস্যদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় এই উৎসব। শ্রীমঙ্গল উপজেলার ফুলছড়া মাঠে নানা বয়সী নারী ও পুরুষ আবির নিয়ে রঙের খেলায় মেতে ওঠে।

উৎসবে কেবল হোলিই নয়, ছিল ভিন্ন সংস্কৃতির অন্তত ২০টি পরিবেশনা। পত্রসওরা, নৃত্যযোগি, চড়াইয়া নৃত্য, ঝুমর নৃত্য, লাঠিনৃত্য, হাঁড়িনৃত্য, পালা নৃত্য, ডং ও নাগরে, ভজনা, মঙ্গলা নৃত্য, হোলিগীত, নিরহা ও করমগীত একসঙ্গে উপভোগ করতে পেরে যেমন আনন্দে ভেসেছেন চা-শ্রমিকেরা, তেমনি অভিভূত হয়েছেন উৎসবে আগতরা।

বাংলাদেশের চা-বাগানগুলোতে নানান জাতিগোষ্ঠীর বাস। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ওডিশা, বিহার, মাদ্রাজ, তেলেঙ্গানাসহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এসে আবাস গড়া চা-শ্রমিকদের যেমন নিজেদের পৃথক ভাষা, তেমন পৃথক সংস্কৃতিও। তবে ফাল্গুনের ‘ফাগুয়া’ উৎসবে এসে সবাই এক হয়ে যায়। শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবের আয়োজন করে ফাগুয়া উৎসব উদ্‌যাপন পরিষদ। চা-জনগোষ্ঠী থেকে জনপ্রতিনিধিসহ সমাজের অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতৃত্বে উঠে আসা ব্যক্তিদের সম্মিলনে শ্রীমঙ্গল শহরের অদূরে ফুলছড়া চা-বাগানের মাঠে আয়োজন করা হয় ফাগুয়া উৎসবের।

ফাগুয়া উৎসব উদ্বোধন করেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক মল্লিকা দে। এ সময় তিনি বলেন, ফাগুয়া উৎসবটি ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠান, অংশ নিতে পেরে ভালো লাগছে। এভাবে সব ভাষাভাষী এবং সব সংস্কৃতির মানুষের আন্তরিকতা ও মেলবন্ধন প্রয়োজন।

সিলেট থেকে উৎসবে যোগ দিতে আসা চা-জনগোষ্ঠীর তরুণী কাজল গোয়ালা বলেন, ‘চা-বাগানেই যে এত নৃত্যগীতের সমাহার, এখানে না এলে আমার জানা হতো না। নিরহা, করমগীত আমি প্রথমবার দেখলাম।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, চা-বাগানে পৌঁছাতেই কানে বাজল পাহাড়িয়া মাদলের সুর। শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী—সবাই নাচছে, গাইছে, আনন্দ করছে।

চা-জনগোষ্ঠীর সদস্য মিন্টো দেশোয়ারা বলেন, অভাব-অনটনের মধ্যেও উৎসবের কয়েকটি দিন চা-জনগোষ্ঠী পরিবার আনন্দে কাটানোর চেষ্টা করে। শ্রমিকেরা এই আনন্দ ভাগাভাগি করেন প্রতিবেশীদের সঙ্গে।

আয়োজক কমিটির সদস্যসচিব কালিগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রাণেশ গোয়ালা বলেন, আয়োজনটি জাতির পিতাকে উৎসর্গ করা হয়েছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে চা-শ্রমিকদের এটি একটি বিশেষ আয়োজন। আশা করি পরবর্তী বছর আরও বড় আয়োজনে ফাগুয়া উৎসব করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত