Ajker Patrika

১২ বছর বয়স থেকে সংসার টানছেন তিনি

বিপ্লব রায়, শাল্লা (সুনামগঞ্জ)
Thumbnail image

অজপাড়াগাঁয়ে দারিদ্র্যপীড়িত এক পরিবারে জন্ম বাপ্পী রানী রায়ের। বাবা অনিল রায় দিনমজুর। সংসারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। মাথা গোঁজার ঠাঁই বলতে ছিল ভাঙা বেড়ার ঘর। যে বয়সে বাপ্পীর লেখাপড়া করার কথা ছিল, সেই বয়সে কাঁধে তুলে নেন সংসারের হাল। মা-বাবা দুজনই যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন বাপ্পী রানীর বয়স মাত্র ১২ বছর!

এ সময় থেকে বাপ্পী আনন্দপুর বাজারে শ্রমিকের কাজ করতেন। মেয়ে হয়ে এ কাজ করাকে অনেকেই ভালো চোখে দেখত না। এরপরও হাল ছাড়েননি। তাঁর কাজে সন্তুষ্ট হয়ে সবাই তাঁকে ‘বাপ্পী দিদি’ বলে ডাকতেন। সেই কিশোরীর হাত ধরে বদলে গেছে পরিবারটির ভাগ্য। সংসারে ফিরেছে সচ্ছলতা। এখন শ্রমিকের কাজ না করে নিজের একটি হোটেল পরিচালনা করছেন বাপ্পী রানী। হোটেলের বেচাবিক্রিও ভালো।

বাপ্পীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১২ সালে তাঁর মা-বাবা দুজনই প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলে অন্ধকার নেমে আসে পুরো পরিবারে। তিন বোনের মধ্যে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায় আগেই। মেজ বোন অসুস্থ হয়ে মারা যান। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন বাপ্পী। তাই কোনো উপায় না পেয়ে আনন্দপুর বাজারের বিভিন্ন দোকানে মালপত্র টানার শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘ ছয় বছর এ কাজ শেষে তিনি আনন্দপুর বাজারে একটি টং দোকান দিয়ে বিস্কুট, সিগারেট ইত্যাদি বিক্রি শুরু করেন। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এই টং দোকান থেকে ধীরে ধীরে টাকা জমা করে তিনি ২০১৮ সালে আনন্দপুর বাজারে সততা হোটেল নামের একটি খাবারের দোকান দেন।

শূন্য থেকে সফল উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা ২৫ বছর বয়সী বাপ্পীর শৈশবের গল্পটা কষ্ট আর সংগ্রামের। অভাবের কারণে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি তিনি। ২৫ বছর পেরিয়ে গেলেও বিয়ের কোনো চিন্তা করেননি। বাপ্পী বলেন, ‘জীবনের একমাত্র সুখ আমার পরিবার। এর বাইরে আর কিছু চিন্তা করি না।’
আনন্দপুর গ্রামের মানিক দাস বলেন, ‘খুব কষ্ট করে বড় হয়েছে বাপ্পী। একসময় বাজারে শ্রমিকের কাজ করত। কিন্তু মানুষ এগুলো ভালো চোখে দেখত না। লোকলজ্জার ভয়েও নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিল বাপ্পী। আজ সে বাজারের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী।’

বাপ্পীর বাবা অনিল রায় জানান, তাঁর দুটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেছে। টাকাপয়সার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। বাপ্পীর জীবনসংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন তিনি। বলেন, ‘বাপ্পী আর কী করবে? একজন মেয়ে হয়ে লেবার থেকে শুরু করে সব কাজই করেছে। এই মেয়েটার কারণেই দুটো ভাত পেটে দিতে পারছি, নাহলে না খেয়েই মরতে হতো।’ তিনি আরও বলেন, বাপ্পীর কষ্টের কারণে আজ এই প্রতিষ্ঠান দাঁড়িয়েছে। এ থেকেই সংসার চলছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত