Ajker Patrika

তেঁতুলিয়ায় ইলিশের আকাল

বাউফল (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৪ মে ২০২২, ১৪: ৫০
Thumbnail image

চলতি বছর ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ ছিল। অভয়াশ্রমের অংশ তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার এলাকায় মাছ ধরা বন্ধ থাকার পর জেলেরা উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ১ মে থেকে নদীতে নামেন মাছ ধরতে। কিন্তু নদীতে ইলিশ তো মিলছেই না, অন্য মাছও খুব কম পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন জেলেরা। রুপালি ইলিশের ভরা মৌসুমেও বাউফলের তেঁতুলিয়া ও লোহালিয়া নদীতে ইলিশের দেখা না পাওয়ায় হতাশ তাঁরা।

দিন-রাত নদীতে জাল ফেলেও জালে ইলিশ না পড়ায় ওই পেশার সঙ্গে জড়িত প্রায় ২০ হাজার পরিবারের সদস্যরা আছেন দুশ্চিন্তায়। কীভাবে মহাজন কিংবা দাদনদারদের দেনা পরিশোধ করে পরিবার-পরিজন নিয়ে বাঁচবেন—এ চিন্তা এখন জেলেদের মাথায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাউফলের প্রায় ২০ হাজার জেলে পরিবার ইলিশ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ বছর অনেক ইলিশ ধরা পড়বে বলে অধিকাংশ জেলে পরিবার দাদনদার, মহাজন, এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এমনকি জমিজমা বন্ধক রেখে জাল-নৌকা প্রস্তুত করেছেন। ওই সব জেলে আশায় বুক বেঁধে রয়েছেন, চলতি মৌসুমে গত বছরের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পাড়বেন। হাসি ফুটাবে পরিবার-পরিজনের মুখে। কিন্তু ইলিশের ভরা মৌসুম চললেও এখন পর্যন্ত তেমন ইলিশের দেখা মিলছে না জেলেদের জালে।

তেঁতুলিয়া নদীপাড়ের জেলে সত্তার মাঝি জানান, চলতি ইলিশ মৌসুমের শুরুতেই নদীতে মাছ ধরার জন্য জাল ফেলার প্রস্তুতি নেন তাঁরা। কেউ জমিজমা বন্ধক রেখে মহাজন ও আড়তদারদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে, কেউ ব্যাংক ও এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে জাল ও নৌকা নিয়ে ইলিশের শিকারে নামছেন। কিন্তু তেঁতুলিয়ার মোহনা ধুলিয়া, লোহালিয়া ও আগুনমুখা নদীতে জাল-নৌকা নিয়ে দিন-রাত পরিশ্রম করেও ইলিশ পাচ্ছেন না।

তেঁতুলিয়া নদীর ওপর নির্ভরশীল জেলে মাহবুব রহমান বলেন, ‘রোদের প্রচণ্ড তাপের মধ্যে নদীতে সারা দিন জাল ফেলে একটা-দুইটা ইলিশ পাই। মাছের যে দাম হয়, তা দিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে একবেলা খাবার জোটে না। তাই বিভিন্নজনের থেকে ধারকর্জ করে চলি।’

চন্দ্রদ্বীপ ইউনিয়নের প্রবীণ জেলে বাদশা মাঝি বলেন, ‘একসময়ের উত্তাল তেঁতুলিয়া ইলিশে সয়লাব ছিল। কিন্তু কিছু অসাধু জেলে অবৈধ বেহুন্দি জাল, কারেন্ট ও মশারি জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছের রেণু শিকার করছে। অপর দিকে নদীর বুকে স্থানীয় প্রভাবশালীরা ঝাড়া পেতে মাছ শিকার করে। নানা কারণে নদীর গভীরতা কমে গিয়ে ইলিশের বিচরণ নাই বললেই চলে।’ তিনি নদী থেকে অবৈধ জাল ও ঝাড়া পাতা বন্ধ করে নদী খননের দাবি জানান।

এদিকে ক্রেতারা স্থানীয় বাজারেও ইলিশ পাচ্ছেন না। আড়তদারদের কাছে যা কিছু আসে, তা-ও সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এক কেজি ওজনের সাইজের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৫০০ টাকার ওপরে।

উপজেলার মৎস্য বন্দর কালাইয়া মৎস্য আড়তের অমর দাস, নাহিদ মিরাজসহ একাধিক আড়তদার জানান, এবার ইলিশের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এ সময় জেলেরা দিনে দু-তিনবার ট্রলারে ইলিশ মাছ নিয়ে আড়তে আসতেন। কিন্তু এবার সপ্তাহেও একবার ইলিশের ট্রলার আসছে না। দু-চারটা যা মিলছে, দামও প্রচুর।

বাউফল উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মাহবুব আলম তালুকদার বলেন, নদীতে অনেক ডুবোচর রয়েছে। ডুবোচরের কারণে ইলিশ বিচরণ করতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। যেহেতু ইলিশ গভীর জলের মাছ, তাই নদীতে বেশি পানি হলে ইলিশ সহজেই বিচরণ করতে পারবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত