Ajker Patrika

ভালো কাজে মিলছে খাবার

রজত কান্তি রায়, ঢাকা
আপডেট : ২৪ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭: ০২
ভালো কাজে মিলছে খাবার

প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও ও সুন্দরবন হোটেলের মাঝখানে যে শ্রীহীন পার্ক, সেটির নাম পান্থকুঞ্জ। তখন দুপুর। শামিয়ানা টাঙানো শেডের নিচে বসে বিভিন্ন বয়সী বেশ কিছু মানুষ খাবার খাচ্ছেন। কেউ খাবার নেওয়ার জন্য নাম লিখে দিচ্ছেন। দেখেই বুঝবেন, এই মানুষগুলো রাজধানী ঢাকায় ভীষণভাবে প্রান্তিক! এ হোটেলে খেতে টাকা লাগে না, কিন্তু করতে হয় যেকোনো একটি ভালো কাজ! এ হোটেল ‘ভালো কাজের হোটেল’ হিসেবে বিখ্যাত।

ব্যাপক কৌতূহলে শীতের এক দুপুরে হোটেলটিতে ঢুকে গেলাম। কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী সেখানে খাবারদাবার তদারক করছিলেন। রুবেল নামের এক স্বেচ্ছাসেবী খাবার খেতে আসা মানুষদের নামধাম লিখে নিচ্ছিলেন। রুবেলের পাশে দাঁড়িয়ে খাবারপ্রত্যাশী মানুষদের ভালো কাজের কথা শুনতে লাগলাম। বিচিত্র সেই সব কাজ। কেউ বললেন, তিনি এক অন্ধকে রাস্তা পার করে দিয়েছেন। কেউ বললেন, তিনি এক সপ্তাহ থেকে আর নেশা করছেন না। রুবেলকে বললাম, সব সত্যি? তিনি হাসলেন। এখানে দিনে দেড়-দুই শ মানুষ খেতে আসেন।

মেয়ের লেমিনেটিং ছবি হাতে এক নারী দাঁড়ালেন লাইনে। চোখ ছলছল। ধীর পায়ে এগিয়ে এলেন রুবেলের দিকে। রুবেল কিছু বলার আগেই তিনি বললেন, তাঁর মেয়ে শিশু হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের জন্য ভিক্ষা করছেন। কিন্তু সকালবেলা এক বৃদ্ধাকে ১০ টাকা দিয়েছেন নাশতা খেতে। তাই দুপুরে তিনি এখানে খেতে চান। তাতে যে টাকা বেঁচে যাবে, সেটা মেয়ের চিকিৎসায় খুব দরকার।

রুবেল বাক্যহারা। হাতের ইশারায় খেতে যেতে বললেন। নাম লিখতেও ভুলে গেলেন সেই নারীর। বেশ কিছুক্ষণ এমন সব ঘটনার মুখোমুখি হয়ে এক অদ্ভুত শীতের দুপুর দেখতে দেখতে রাজধানীর জন-অরণ্যে মিশে গেলাম। কিন্তু ভেতরে রয়ে গেল এই অসমাপ্ত গল্প সমাপ্ত করার ইচ্ছা।

দুই দিনের মধ্যে জানতে পারলাম, ঢাকার সবুজবাগ এলাকার কালীবাড়ি পানির পাম্পের পাশে প্রশান্তিবাগে ভালো কাজের হোটেলের রান্নাঘর।গতকাল সেই রান্নাঘরের দরজার সামনে বাইক থেকে যখন নামলাম, সকাল নয়টা। সবুজ ফ্লুরোসেন্ট রঙের টি-শার্ট পরিহিত এক তরুণ দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দিলেন। হাত ঝাঁকিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, দুটি বড় ডেকচিতে রান্না করা ভাত ঢেকে রাখা হয়েছে। বিশাল এক কড়াইয়ে তখন রান্না হচ্ছে সবজি। পাশেই বেশ বড় আকারের একটি গামলায় রাখা আছে ভাজা সেদ্ধ ডিম। জানা গেল, কোনো কোনো দিন এখানেই রান্না হয় খিচুড়ি অথবা পোলাও কিংবা চিকেন বিরিয়ানি! না। এটি কোনো ক্যাটারিং সার্ভিসের রান্নাঘর নয়। এখান থেকেই পান্থকুঞ্জ, সাতরাস্তা, বনানী ১১ নম্বর, কমলাপুর ও খিলগাঁওয়ের যে পাঁচটি ভালো কাজের হোটেল আছে, সেগুলোয় খাবার পাঠানো হয়। এ রান্নাঘরে প্রতিদিন ১১ শ থেকে ১২ শ মানুষের খাবার রান্না করা হয়!

‘ইয়ুথ ফর বাংলাদেশ’ নামের একটি সংগঠন এ প্রকল্প পরিচালনা করছে। এর উদ্যোক্তা আরিফুর রহমান। মূলত সদস্য ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের চাঁদার টাকায় চলে প্রকল্পটি। সংগঠনটিতে প্রায় ১৮ শ সদস্য আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতি মাসে আনুমানিক দেড় হাজার সদস্য ৩০০ টাকা করে চাঁদা দেন। সেটার সঙ্গে কিছু শুভাকাঙ্ক্ষীর দেওয়া টাকায় চলে পুরো প্রকল্প।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন ক্যালিফোর্নিয়ার পরিবহন বিশেষজ্ঞ

‘তল্লাশির’ জন্য উসকানি দিয়েছে গুলশানের ওই বাসার সাবেক কেয়ারটেকার: প্রেস উইং

প্রধান উপদেষ্টার আরও দুই বিশেষ সহকারী নিয়োগ

তানভীর ইমামের বাড়ি ভেবে গুলশানের একটি বাসায় মধ্যরাতে শতাধিক ব্যক্তির অনুপ্রবেশ, তছনছ

৬ জ্যান্ত হাতি নিয়ে রাশিয়ায় মিয়ানমারের জান্তাপ্রধান, উচ্ছ্বসিত পুতিন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত