Ajker Patrika

লোডশেডিংয়ে বিবর্ণ ফসল

রোবেল মাহমুদ, গফরগাঁও
আপডেট : ২৮ এপ্রিল ২০২২, ১৪: ০১
লোডশেডিংয়ে বিবর্ণ ফসল

গফরগাঁওয়ে তীব্র দাবদাহ আর লোডশেডিংয়ে জনজীবনে চরম ভোগান্তি নেমে এসেছে। লোডশেডিং চরমে পৌঁছায় বেশি প্রভাব পড়েছে বোরো ফসল উৎপাদনে। এ ধরনের আবহাওয়া অব্যাহত থাকলে ধানের ফলন অর্ধেকে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা। এ ছাড়া ইফতার, তারাবিহর নামাজ ও সাহ্‌রির সময় বিদ্যুৎ না থাকায় মানুষের অসন্তোষ বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে অনেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহের ছয় জেলায় বর্তমানে বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ২৫০ মেগাওয়াট। এই অঞ্চলের সাতটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে উৎপাদনক্ষমতা ৭০০ মেগাওয়াট। ময়মনসিংহ বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে গ্যাস-সংকটের কারণে ১১০ মেগাওয়াটের স্থলে ১০০ মেগাওয়াট উৎপাদিত হচ্ছে।

এ ছাড়া আশুগঞ্জ ও কৈলাকৈর জাতীয় গ্রিড থেকে সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে যে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেত, তা-ও এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং বাড়ছে। যা সরবরাহ আছে, তাতে সেচের মোটর চলছে না।

কৃষক আব্দুল করিম বলেন, ‘সেচের অভাবে ধানের শিষ সাদা হয়ে গেছে। সময়মতো বৃষ্টিও হচ্ছে না। এবার বোরো ধানের ফলন কমে যাবে।’

স্থানীয় কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, লোডশেডিংয়ের কারণে কৃষকেরা বোরোখেতে প্রয়োজনীয় সেচ দিতে পারেননি। এতে ধান চিটা হয়ে যেতে পারে। ফলে বোরোর ফলন কমে যাবে। এ ছাড়া লোডশেডিংয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত ঘটছে। ফেব্রুয়ারি থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়ে থাকে ৩১ মে পর্যন্ত। এ সময় বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। শুধু সেচের জন্য গত বছর বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়েছে ২ হাজার ৩১৫ মেগাওয়াট।

পৌর এলাকার বাসিন্দা সুরাইয়া ইসলাম বলেন, তীব্র গরমে রোজা রাখা কষ্টকর। তাপমাত্রাও অনেক বেশি। এ সময় ঘন ঘন লোডশেডিং দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনারও ক্ষতি হচ্ছে।

দত্তেরবাজার এলাকার ব্যবসায়ী মোস্তফা বলেন, লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। পল্লী বিদ্যুতের সেবার মান খুবই খারাপ। দিনরাতে পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না।

গফরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্র জানায়, গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং কারিগরি ত্রুটির কারণে বিদ্যুতের কয়েকটি প্ল্যান্ট বন্ধ থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। এখানে গ্রাহকের চাহিদা রয়েছে ১০ থেকে ১২ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে এর অর্ধেক।

গফরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহীনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গ্যাসের উৎপাদন কম থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। বৃষ্টি হলে সেচে ব্যবহৃত বিদ্যুতের সাশ্রয় হবে। তখন আর ঘাটতি হবে না।

গফরগাঁও বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোশারফ হোসেন বলেন, ‘গ্রীষ্মকালে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের ব্যবহার বেশি হয়। সেচেও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। গফরগাঁওয়ে পিডিবির গ্রাহক ৬১ হাজার, প্রতিদিন ২১ থেকে ২২ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে। তবে বর্তমানে সরবরাহ রয়েছে ১৬ থেকে ১৭ মেগাওয়াট।

এদিকে স্থানীয় কৃষি বিভাগ অনাবৃষ্টি আর তাপে বোরো ধানসহ রবিশস্যের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে। আম ও লিচুর গুটি ঝরে পড়ছে। তাপমাত্রা বাড়ায় মৌসুমি ফল ও ফসলের বেশ ক্ষতি হচ্ছে বলে জানান কৃষকেরা। এতে এবার গ্রামীণ বাজারে মৌসুমি ফলের সরবরাহ কম থাকবে বলে মনে করছেন কৃষকেরা।

স্থানীয় কৃষি বিভাগের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, বৃষ্টির অভাবে ধানের জমিগুলোতে পানিস্বল্পতা দেখা দিয়েছে। এখন দাবদাহের প্রভাবে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি।

স্থানীয় কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ২০ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ২০ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে।

চরাঞ্চলের কৃষকেরা জানিয়েছেন, করলা, শসা, বেগুন, আলু, কুমড়া, মরিচ ইত্যাদি রবি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হবে। কৃষক কফিল উদ্দিন বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে ঢ্যাঁড়সের চাষ করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির অভাবে ঢ্যাঁড়সগাছ নেতিয়ে যাচ্ছে, পোকায় ধরছে।’

এ বিষয়ে গফরগাঁও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ সময়ে বৃষ্টি না হলে এবং তাপমাত্রা না কমলে ধানের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ধানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্যা হবে না। তবে বৃষ্টির অভাবে রবিশস্য এবং আম, লিচুর গুটি ঝরে যাওয়াসহ ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত