রহমান মৃধা
বাজার করতে গিয়ে দেখি সুইডিশ দেশি মুরগি দোকানে বিক্রি হচ্ছে। তা-ও আবার অরগানিক, বিশাল ব্যাপার। ঘটনাটি জানতে হয়। তাহলে এত বছর কী মুরগি খেলাম? মুরগির গায়ে তার জন্ম থেকে শুরু করে কবে, কোথায়, কখন কী খেয়েছে, কী করেছে, বলতে গেলে সবই তো লেখা!
সাধারণ যেসব মুরগি দোকানে সচরাচর বিক্রি হয়, তার দাম কেজিপ্রতি ৫০ ক্রোনার, যে মুরগিকে ভুট্টা খাওয়ানো হয়, তার দাম কেজিপ্রতি ৭০ ক্রোনার। প্রতি কেজি অরগানিক দেশি মুরগির দাম ১৪০ ক্রোনার।
বাংলাদেশে থাকতে দেশি মুরগিই খেয়েছি। ভাবলাম, এখানে দাম বেশি হলেও খেতে মজা হবে। তাই কিনতে কোনো রকম দ্বিধা করলাম না। ইদানীং শাকসবজি থেকে শুরু করে ফলও অরগানিক কিনতে পাওয়া যাচ্ছে; তবে দাম অনেক বেশি। সবকিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা, কোনো রকম রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া।
সেদিন বাজার করতে গিয়ে ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। জেলে মাছ ধরেছেন পুকুর, নদী-নালা বা খাল থেকে। গাভি সারা দিন ঘাস আর খড় খেয়ে দুধ দিয়েছে। সব ধরনের শাকসবজি অত্যন্ত সাধারণভাবে উৎপাদন করে হাট-বাজারে বিক্রি হয়েছে। এসব খাবার যারা উৎপাদন করেছে, তারা স্কুলে যায়নি। লেখাপড়া না জানা খেটে খাওয়া কৃষক কাজ করে রোজগার করেছেন এবং অন্যান্য মানুষের খাবার জোগাড় করেছেন। কাউকে বিষ খাওয়াননি।
অথচ এখন সবাই শিক্ষিত হয়ে ভেজাল এবং নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের সমন্বয়ে উৎপাদন করছেন নানা ধরনের খাবার! মানলাম, উৎপাদন বাড়াতে এবং খাবার বেশি দিন তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আমরা কি এখন আগের মতো পাচ্ছি সেই খাঁটি খাবারগুলো?
সুইডেনে কিন্তু কৃষকেরা চেষ্টা করে চলছেন অরগানিক খাবার বাজারে দিতে। সরকার সব সময় তাঁদের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার উৎপাদন করলেও কৃষক যাতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখছে। সর্বোপরি কৃষকের জীবনযাত্রার মান ক্ষণ্ন হচ্ছে না।
মানুষের জীবনে যে জিনিসগুলো সবচেয়ে দরকারি, তা কিন্তু কৃষকদের (কৃষক বলতে ফসল উৎপাদন, শাকসবজি, ফুল ও ফলের চাষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ খামার, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে) থেকে আমরা পেয়ে থাকি। অথচ তাঁদেরই আমাদের সমাজে ছোট করে দেখা হয়, ভাবতেই মন বিষণ্নতায় ভরে গেল।
সমাজে একজন কৃষকের মূল্য আর একজন চাকরিজীবীর জীবনের মান-মর্যাদার মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল পার্থক্য। পার্থক্য এতই বেশি যে সমাজ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর যাহোক, সুইডেনে কৃষকের জীবনকে কেউ ছোট করে দেখে না।
মানুষ জাতির জন্মের শুরুতে পরিশ্রমী ও মেহনতি মানুষই প্রথম সারির মর্যাদাসম্পন্ন অথচ তাঁদের অবজ্ঞা করে যে শিক্ষিত সমাজ আমরা গড়েছি, এটা শুধুই কুশিক্ষায় ভরপুর। একে অতিসত্বর ধ্বংস করে সুশিক্ষার বীজ বপন করতে হবে। কারণ, বর্তমানে একধরনের শিক্ষিত সমাজ দায়ী পৃথিবীর নানা রকম সমস্যার জন্য। শুধু শিক্ষিত হলেই হবে না, শিক্ষার প্রকৃত রূপ, অর্থাৎ সুশিক্ষা অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর গাছপালা থেকে শুরু করে জীবজন্তুর অস্তিত্বের ক্রমাগত সর্বাঙ্গীণ উন্নতির লক্ষ্য হওয়ার কথা বিজ্ঞানচর্চার মূল উদ্দেশ্য। সেটা না হয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে ভয়ংকর এবং ধ্বংসাত্মকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মূল কারণ মানুষ কুশিক্ষার কলুষতায় আচ্ছন্ন হয়ে বিবেকের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই তো খাবারে মেশাচ্ছে ভেজাল, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ।
আমি সুইডিশদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাজ থেকে শুরু করে নৈতিকতার ওপর সূক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছি। এদের সমাজের, প্রকৃতির এবং জলবায়ুর ওপর উদারতা দেখে আমি মুগ্ধ। মুগ্ধ এই কারণে যে এসবের পাশাপাশি সমানতালে বিজ্ঞানের ওপরও তাদের দক্ষতা রয়েছে। চাইলেই তারা এর অপব্যবহার করে খাদ্যে ভেজাল বা নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মানুষের বারোটা বাজাতে পারে। কিন্তু অরগানিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। বাড়িতে গাড়ি থাকতেও হেঁটে, সাইকেলে, বাসে বা ট্রেনে কাজে যেতে চেষ্টা করছে। কৃষক বা সমাজের ‘নীচু’ কাজের কর্মীকে আলাদা করে তাদের প্রতি অবিচার, অত্যাচার বা জুলুম করছে না।
আমাদের কাজের ফল দেখতে ওপারে যাওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না, তার আগেই আমরা অনেক কিছু দেখতে শুরু করেছি। আমরা নিজেদের প্রতি যেমন আস্থা হারিয়েছি, তেমনি অন্যের প্রতি অবিচার করছি, জীবে দয়া করা ছেড়ে দিয়েছি, সম্পূর্ণরূপে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছি। কারণ লোভ, লালসা, ঘৃণা, অহংকার আমাদের বিবেকে ঢুকে জ্ঞানহীন করে ফেলেছে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
বাজার করতে গিয়ে দেখি সুইডিশ দেশি মুরগি দোকানে বিক্রি হচ্ছে। তা-ও আবার অরগানিক, বিশাল ব্যাপার। ঘটনাটি জানতে হয়। তাহলে এত বছর কী মুরগি খেলাম? মুরগির গায়ে তার জন্ম থেকে শুরু করে কবে, কোথায়, কখন কী খেয়েছে, কী করেছে, বলতে গেলে সবই তো লেখা!
সাধারণ যেসব মুরগি দোকানে সচরাচর বিক্রি হয়, তার দাম কেজিপ্রতি ৫০ ক্রোনার, যে মুরগিকে ভুট্টা খাওয়ানো হয়, তার দাম কেজিপ্রতি ৭০ ক্রোনার। প্রতি কেজি অরগানিক দেশি মুরগির দাম ১৪০ ক্রোনার।
বাংলাদেশে থাকতে দেশি মুরগিই খেয়েছি। ভাবলাম, এখানে দাম বেশি হলেও খেতে মজা হবে। তাই কিনতে কোনো রকম দ্বিধা করলাম না। ইদানীং শাকসবজি থেকে শুরু করে ফলও অরগানিক কিনতে পাওয়া যাচ্ছে; তবে দাম অনেক বেশি। সবকিছু প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদন করা, কোনো রকম রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া।
সেদিন বাজার করতে গিয়ে ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গেল। জেলে মাছ ধরেছেন পুকুর, নদী-নালা বা খাল থেকে। গাভি সারা দিন ঘাস আর খড় খেয়ে দুধ দিয়েছে। সব ধরনের শাকসবজি অত্যন্ত সাধারণভাবে উৎপাদন করে হাট-বাজারে বিক্রি হয়েছে। এসব খাবার যারা উৎপাদন করেছে, তারা স্কুলে যায়নি। লেখাপড়া না জানা খেটে খাওয়া কৃষক কাজ করে রোজগার করেছেন এবং অন্যান্য মানুষের খাবার জোগাড় করেছেন। কাউকে বিষ খাওয়াননি।
অথচ এখন সবাই শিক্ষিত হয়ে ভেজাল এবং নানা ধরনের রাসায়নিক দ্রব্যের সমন্বয়ে উৎপাদন করছেন নানা ধরনের খাবার! মানলাম, উৎপাদন বাড়াতে এবং খাবার বেশি দিন তাজা রাখতে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু আমরা কি এখন আগের মতো পাচ্ছি সেই খাঁটি খাবারগুলো?
সুইডেনে কিন্তু কৃষকেরা চেষ্টা করে চলছেন অরগানিক খাবার বাজারে দিতে। সরকার সব সময় তাঁদের প্রতি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে আসছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার উৎপাদন করলেও কৃষক যাতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিকে খেয়াল রাখছে। সর্বোপরি কৃষকের জীবনযাত্রার মান ক্ষণ্ন হচ্ছে না।
মানুষের জীবনে যে জিনিসগুলো সবচেয়ে দরকারি, তা কিন্তু কৃষকদের (কৃষক বলতে ফসল উৎপাদন, শাকসবজি, ফুল ও ফলের চাষ, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন, দুগ্ধ খামার, মাছ চাষসহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বোঝানো হয়েছে) থেকে আমরা পেয়ে থাকি। অথচ তাঁদেরই আমাদের সমাজে ছোট করে দেখা হয়, ভাবতেই মন বিষণ্নতায় ভরে গেল।
সমাজে একজন কৃষকের মূল্য আর একজন চাকরিজীবীর জীবনের মান-মর্যাদার মধ্যে গড়ে উঠেছে বিশাল পার্থক্য। পার্থক্য এতই বেশি যে সমাজ বিভিন্ন শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে গেছে। আর যাহোক, সুইডেনে কৃষকের জীবনকে কেউ ছোট করে দেখে না।
মানুষ জাতির জন্মের শুরুতে পরিশ্রমী ও মেহনতি মানুষই প্রথম সারির মর্যাদাসম্পন্ন অথচ তাঁদের অবজ্ঞা করে যে শিক্ষিত সমাজ আমরা গড়েছি, এটা শুধুই কুশিক্ষায় ভরপুর। একে অতিসত্বর ধ্বংস করে সুশিক্ষার বীজ বপন করতে হবে। কারণ, বর্তমানে একধরনের শিক্ষিত সমাজ দায়ী পৃথিবীর নানা রকম সমস্যার জন্য। শুধু শিক্ষিত হলেই হবে না, শিক্ষার প্রকৃত রূপ, অর্থাৎ সুশিক্ষা অর্জন করতে হবে। পৃথিবীর গাছপালা থেকে শুরু করে জীবজন্তুর অস্তিত্বের ক্রমাগত সর্বাঙ্গীণ উন্নতির লক্ষ্য হওয়ার কথা বিজ্ঞানচর্চার মূল উদ্দেশ্য। সেটা না হয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিজ্ঞানকে ভয়ংকর এবং ধ্বংসাত্মকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মূল কারণ মানুষ কুশিক্ষার কলুষতায় আচ্ছন্ন হয়ে বিবেকের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে। তাই তো খাবারে মেশাচ্ছে ভেজাল, ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ।
আমি সুইডিশদের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে জড়িত। তাদের কাজ থেকে শুরু করে নৈতিকতার ওপর সূক্ষ্ম দৃষ্টি রেখেছি। এদের সমাজের, প্রকৃতির এবং জলবায়ুর ওপর উদারতা দেখে আমি মুগ্ধ। মুগ্ধ এই কারণে যে এসবের পাশাপাশি সমানতালে বিজ্ঞানের ওপরও তাদের দক্ষতা রয়েছে। চাইলেই তারা এর অপব্যবহার করে খাদ্যে ভেজাল বা নানা ধরনের রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে মানুষের বারোটা বাজাতে পারে। কিন্তু অরগানিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। বাড়িতে গাড়ি থাকতেও হেঁটে, সাইকেলে, বাসে বা ট্রেনে কাজে যেতে চেষ্টা করছে। কৃষক বা সমাজের ‘নীচু’ কাজের কর্মীকে আলাদা করে তাদের প্রতি অবিচার, অত্যাচার বা জুলুম করছে না।
আমাদের কাজের ফল দেখতে ওপারে যাওয়ার দরকার আছে বলে মনে হয় না, তার আগেই আমরা অনেক কিছু দেখতে শুরু করেছি। আমরা নিজেদের প্রতি যেমন আস্থা হারিয়েছি, তেমনি অন্যের প্রতি অবিচার করছি, জীবে দয়া করা ছেড়ে দিয়েছি, সম্পূর্ণরূপে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়েছি। কারণ লোভ, লালসা, ঘৃণা, অহংকার আমাদের বিবেকে ঢুকে জ্ঞানহীন করে ফেলেছে।
লেখক: রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন
আধুনিক যুগের সবচেয়ে বিস্ময়কর প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারগুলোর একটি হচ্ছে গৌতম বুদ্ধের দেহাবশেষের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক রত্নসম্ভার। গতকাল বুধবার হংকংয়ে বিখ্যাত আর্ট নিলাম কোম্পানি সাদাবি’স-এর এক নিলামে এগুলো তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
৮ দিন আগেপাকিস্তানে ভারতের হামলার সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও এই হামলাকে ‘দুঃখজনক’ বলে অভিহিত করেছে। উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘও। উত্তেজনা যেন আরও না বাড়ে, সে জন্য দুই পক্ষকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, ফ্রান্সসহ বিভিন্ন দেশ। এদিকে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে...
৮ দিন আগেভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে দুই চিরবৈরী প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তেজনার পারদ ক্রমেই চড়ছিল। তা তুঙ্গে উঠল এবার পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিমান হামলা দিয়ে। পাশাপাশি সীমান্তেও দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়েছে...
৮ দিন আগেঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা এলাকায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি বেড়েই চলছে। এ কারণে চালক ও যাত্রীদের কাছে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠছে এই সড়ক। ডাকাতির শিকার বেশি হচ্ছেন প্রবাসফেরত লোকজন। ডাকাতেরা অস্ত্র ঠেকিয়ে লুট করে নিচ্ছে সর্বস্ব। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়েও ঘটছে ডাকাতির ঘটনা।
০২ মার্চ ২০২৫