Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

চরিত্রের ব্যাপ্তি নিয়ে দর্শকের মতো আমিও হতাশ

চরিত্রের ব্যাপ্তি নিয়ে দর্শকের মতো আমিও হতাশ

ঈদুল আজহায় মুক্তি পেয়েছে ইয়ামিন হক ববি অভিনীত সিনেমা ‘ময়ূরাক্ষী’। বানিয়েছেন রাশীদ পলাশ। এতে নয়নতারা নামের একজন চিত্রনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ববি। সম্প্রতি দর্শকের সঙ্গে হলে বসে সিনেমাটি উপভোগ করেছেন নায়িকা। নতুন এই সিনেমা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ববির সঙ্গে কথা বলেছেন শিহাব আহমেদ

সিনেমা হলে বসে ময়ূরাক্ষী দেখলেন।  দর্শকের প্রতিক্রিয়া কেমন?
দর্শক হল থেকে বেরিয়ে সিনেমাটির অনেক প্রশংসা করেছেন। তবে আমার স্ক্রিন প্রেজেন্স নিয়ে অনেকে হতাশার কথা বলেছেন। তাঁদের মতে, আমার চরিত্রটির আরও ব্যাপ্তির প্রয়োজন ছিল। দর্শকের সঙ্গে আমিও হতাশ। এটা তো একজন নায়িকার গল্প নিয়ে সিনেমা।

চরিত্রটি আরও ফুটিয়ে তোলা প্রয়োজন ছিল। ডাবিংয়ে যতটা দেখেছিলাম, ততটাও নেই। অনেক ভালো ভালো সিকোয়েন্স বাদ দেওয়া হয়েছে। সিনেমা ভালো হয়েছে; তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি আপসেট। গল্পটা যাকে নিয়ে, তাকে যদি পর্দায় এস্টাবলিশ না করেন, তাহলে এর সার্থকতা কোথায়!

তাহলে কি ময়ূরাক্ষী নিয়ে আপনার প্রত্যাশা পূরণ হয়নি?
নয়নতারা চরিত্রটি নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী ছিলাম। সেই আশা পূরণ হয়নি। যাঁরা সিনেমাটি দেখেছেন, তাঁরাও হল থেকে বেরিয়ে বারবার আমার চরিত্রের ব্যাপ্তির স্বল্পতা নিয়ে কথা বলেছেন। যে দৃশ্যগুলো বাদ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সিনেমার গল্প ও দর্শকের ইমোশনের জন্য রাখা প্রয়োজন ছিল। যেহেতু এটা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির গল্প, তাই অনেক কিছু মিসিং থাকলে দর্শকের বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা। গল্পটা খাপছাড়া হয়ে যায়। সিনেমার গানগুলোও পুরো রাখা হয়নি। কেটে কেটে অর্ধেক দেখানো হয়েছে, যেটার কোনো মানে হয় না। এডিটিং আরও ভালো হতে পারত।

আপনার এই হতাশা নিয়ে কি পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলেছেন? 
এখন কথা বলে কী লাভ। মুক্তির আগে তো সিনেমাটি দেখানো হয়নি আমাকে। হলে গিয়েই প্রথম দেখেছি। তবে এ বিষয়ে কথা হয়েছে নির্মাতার সঙ্গে। তিনি বলেছেন, গল্পের প্রয়োজনেই চরিত্রের ব্যাপ্তি কমানো হয়েছে। সিনেমাটি এখন হলে চলছে, তাই এ নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না। তবে এখন দর্শকের যতটা ভালো লাগছে, তার চেয়ে অনেক গুণ ভালো লাগার কথা ছিল।

সিনেমাটি মাত্র দুটি হলে মুক্তি পেয়েছে। প্রচারও কম লক্ষ করা গেছে। সব মিলিয়ে ময়ূরাক্ষী দর্শকের কাছে কতটুকু পৌঁছাবে বলে মনে করেন?
এটা তো পরিচালক ভালো বলতে পারবেন। সিনেমা মুক্তির আগে আমাকে জানানো হয়েছে, ১৫-১৬টি হলে মুক্তি পাবে ময়ূরাক্ষী। কিন্তু ঈদের আগের দিন জানতে পারি দুটি হলে মুক্তি পাবে। ডিস্ট্রিবিউশন পলিসিটাই নির্মাতা বুঝতে পারেননি। সিনেমায় এত সুন্দর গান রয়েছে, অথচ মাত্র একটি গান রিলিজ করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত ট্রেলারটাও রিলিজ করেননি। একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে, যার কোনো ট্রেলার নেই, গান নেই; সেই সিনেমা দেখতে দর্শক হলে যাচ্ছে, সেটাই আমাদের সৌভাগ্য। জীবনে প্রথমবার এমন এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে জানিয়েছে, সামনের সপ্তাহে হলের সংখ্যা বাড়বে। সেখানে বাদ দেওয়া দৃশ্যগুলো থেকে কিছু যোগ করার কথা বলেছি আমি।

এই সিনেমায় আপনি একজন চিত্রনায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছেন। একজন নায়িকা হয়ে পর্দায় নায়িকার চরিত্র ফুটিয়ে তোলা কি আপনার জন্য সহজ ছিল? 
মোটেই না। অনেক কঠিন মনে হয়েছে। যেহেতু এটি সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে তৈরি, তাই পর্দায় সেই মানুষ হয়ে ওঠা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। এ ছাড়া যে ঘটনা সবাই জানে, সেটা পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা ভীষণ কঠিন। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, মানুষ যেন আমাকে নয়নতারা হিসেবে বিশ্বাস করে। তাই, এই সিনেমার শুটিংয়ের সময় অন্য কোনো সিনেমার শুটিং করিনি। নয়নতারা চরিত্রটিতেই মগ্ন থাকার চেষ্টা করেছি।

আপনার নিজের লেখা গল্পে একটি সিনেমা নির্মাণের কথা জানিয়েছিলেন। সেটির কী খবর?
গত বছর ‘মাস্টারমাইন্ড’ নামের সিনেমাটির কথা বলেছিলাম। সিনেমাটি হবে। এখন প্রি-প্রোডাকশনের কাজ চলছে। পুরো প্রস্তুত হয়েই কাজ শুরু করতে চাই। শিগগির সিনেমাটি নিয়ে নতুন ঘোষণা আসবে। 

সাম্প্রতিক সময়ে আপনাকে সিনেমায় কম দেখা যাচ্ছে। কারণ কী? 
কোনো গল্প বা চরিত্র যদি আমাকে না টানে, তাহলে সেই কাজ করে কী লাভ? এক যুগের বেশি সময় ধরে সিনেমায় কাজ করছি। নিজের একটা দায়িত্ববোধের জায়গা তৈরি হয়েছে। ক্যারিয়ারের এই সময়ে সব ধরনের সিনেমায় কাজ করতে চাই না। শুধু টাকার জন্য যা-তা কাজ করতে পারি না। দর্শক ভালোবেসে আমাকে যে জায়গা দিয়েছে, সেটা ধরে রাখতে চাই। ইন্ডাস্ট্রিতেই এখন সিনেমার সংখ্যা কমে গেছে। আগে যে অভিনয়শিল্পীদের বছরে চার-পাঁচটা সিনেমা আসত, এখন তাঁরাও চার বছরে একটা-দুইটা সিনেমায় অভিনয় করছেন। আমার কাছে মনে হয়, ভালো চিত্রনাট্য, পরিচালক ও টেকনিশিয়ানের অভাব আছে। অনেকেই বলে, আমাদের শিল্পীর অভাব; কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, ক্যামেরার পেছনে গুণী মানুষের অভাব আছে। 

দেশের সিনেমায় কলকাতার নায়িকাদের অন্তর্ভুক্তি বেড়েছে। বিষয়টি কীভাবে দেখেন?
একজন শিল্পী সব জায়গায় কাজ করতে পারেন। শিল্পীদের কোনো গণ্ডি থাকে না। কিন্তু নিজের দেশের শিল্পীদের মূল্যায়ন করা উচিত, অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কাউকে ছোট করছি না, আমাদের দেশের নায়িকারাও দেখতে সুন্দর, ভালো অভিনয় করেন। কিন্তু তাঁদের মেধার যথাযথ ব্যবহার কি আমরা করতে পারছি? তাই আমার মনে হয়, দেশের শিল্পীদের প্রায়োরিটি দেওয়া দরকার। 

পরিবারের সাপোর্ট ছাড়াই শোবিজে যাত্রা শুরু করেছিলেন। এক যুগ পার করে দিলেন। এখন কি মনে হয় আপনার পথচলাটা সার্থক?
আমার কাছে এটা একটা জার্নি। সার্থক কি না, এটা দর্শক বলবে। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যে যুদ্ধটা করে যাচ্ছি, সেটা এখনো চলছে। একেক পর্যায়ে যুদ্ধটা একেক রকম। এখন যেমন ভালো কাজ করার যুদ্ধ করছি। কিন্তু দর্শক জানতে চান, কেন নিয়মিত সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে না। এটাও কিন্তু একধরনের যুদ্ধ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত