Ajker Patrika

যশোরে নিজেদের আগুনে মৃত্যু আন্দোলনকারীদের

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ আগস্ট ২০২৪, ১১: ২৯
যশোরে নিজেদের আগুনে মৃত্যু আন্দোলনকারীদের

যশোর শহরের চিত্রা মোড়ে দুর্বৃত্তদের আগুনে পুড়ে গেছে ১৪ তলাবিশিষ্ট পাঁচ তারকা হোটেল। এর আগে লুটপাট চালানো হয়। এমনকি গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত অবশিষ্ট জিনিসপত্র লুটপাট করতে দেখা গেছে।

যশোরের পাঁচ তারকা হোটেল জাবির ইন্টারন্যাশনালের মালিক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। তিনি সাবেক সংসদ সদস্য।

সরকারের পতনের পর গত সোমবার বিকেলে হোটেলটিতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়। গতকাল ভোর ৫টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। এর আগে ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৪ জনে দাঁড়িয়েছে। তাঁদের মধ্যে ইন্দোনেশিয়ার এক নাগরিকও আছেন।
সিটি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মারুফ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আন্দোলনে কিছু উগ্র ছেলে ছিল।

বিজয় মিছিলে সাধারণ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তারাও জাবির হোটেলে ঢুকে পড়ে। আমরা মূলত হোটেলটি দেখতে সেখানে গিয়েছিলাম। তবে ওই ছেলেরা সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে বিভিন্ন তলায় চলে যায়। কেউ কেউ আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে আমার কয়েকজন বন্ধু আটকা পড়ে আগুনে পুড়ে মারা গেছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আন্দোলনকারী বলেন, ‘দুই শতাধিক আন্দোলনকারী হোটেলটির বেজমেন্টে ঢুকেই সিঁড়ি বেয়ে ১৪ তলা পর্যন্ত উঠে যায়। একপর্যায়ে নিচে থাকা যুবক পেট্রল দিয়ে আগুন দিতে শুরু করে। পর্যায়ক্রমে তারা কয়েকটি তলায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে পুরো হোটেল জ্বলতে থাকে। এতে ওপরে থাকা বেশির ভাগ আন্দোলনকারী বের হতে পারেনি। ফলে আগুনের ধোঁয়ায় নিশ্বাস বন্ধ হয়ে তারা মারা গেছে।’

তবে কতজন আন্দোলনকারী বা হোটেলটির অতিথি, কর্মকর্তা, কর্মচারী মারা গেছেন, কেউ সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারেনি। 
যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা বলেন, প্রথম তাঁদের আগুন নেভাতে যেতে দেওয়া হয়নি। পরে তারাই অন্যদের আটকে পড়ার কথা জানান। পরে জেলার আরও পাঁচটি স্টেশন ও খুলনার একটি স্টেশন গিয়ে সাত ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। 

এ ছাড়া চাঁচড়া মোড়ে যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিনের বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। জেলার ৮ উপজেলার আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বাড়িতেও ভাঙচুর চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ লোকজন। এসব ঘটনায় গত সোমবার বিকেল থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত হাসপাতালে ৪৪ জন চিকিৎসা নিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেউ তা ধরেননি।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘জাবির হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশির ভাগ নিহতকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ২৩ জন। তাঁদের বেশির ভাগের শরীরের ৩০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় খুলনা ও ঢাকায় রেফার করা হয়েছে। নিহত বিদেশি নাগরিকের বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার অ্যাম্বাসি থেকে খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত