Ajker Patrika

মিটফোর্ডের শিশু বিভাগে শয্যার তিন গুণ রোগী

আয়নাল হোসেন, ঢাকা
মিটফোর্ডের শিশু বিভাগে শয্যার তিন গুণ রোগী

কেরানীগঞ্জের আগানগরের বাসিন্দা ইয়াকুব আলী। তাঁর ছেলে চার বছর বয়সী আরমান কয়েক দিন ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। উন্নত চিকিৎসার জন্য গতকাল তাকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে নিয়ে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু হাসপাতালটির ওয়ার্ডে শয্যা খালি না থাকায় বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই হয় আরমানের। শিশুসহ নানা বয়সী রোগীরা মেঝেতে থেকেই চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, শিশু রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বিভাগে শয্যার প্রায় তিন গুণ রোগী ভর্তি রয়েছে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ঢাকার বাইরে থেকে প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক রোগী আসছে হাসপাতালটিতে। কিন্তু সেই তুলনায় গত ৩৭ বছরেও শিশু বিভাগে শয্যার সংখ্যা বাড়ানো হয়নি। উল্টো কমানো হয়েছে। হাসপাতালে বিশেষায়িত রোগীর চিকিৎসার জন্য ১৪টি শয্যা কমানো হয়েছে।

ইয়াকুব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হাসপাতালে পর্যাপ্ত সিট নাই। আশা কইরা ছেলেরে নিয়া আইছি। এখনে মেঝেতেই থাকতে হচ্ছে।’ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে ১৯৮৫ সালে ১১ তলা ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। ভবনের সপ্তম তলায় রয়েছে শিশু বিভাগ। বিভাগটিতে মোট শয্যা ছিল ৬২টি। পরে ছয়টি শিশু নেফ্রোলজি (কিডনি) ও আটটি শিশু অনকোলজি (ক্যানসার) শয্যা রাখা হয়। যে কারণে সাধারণ রোগীদের জন্য শয্যা কমে ৪৮টি হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালটির শিশু বিভাগে মোট রোগী ভর্তি ১০৪ জন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রোগীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায় বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। শিশু ওয়ার্ডের ইউনিট-২-এ গতকাল  রোগী ভর্তি ছিল ৩৫ জন। জটিল আটজনসহ ডেঙ্গু রোগীই ভর্তি ছিল ১৫ জন। ইউনিট-১-এ ৫ জন, ইউনিট-৩-এ ১০ জন এবং ভাড়া বিছানায় একজনসহ মোট ৩১টি শিশু ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। জটিল ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (পিআইসিইউ) দরকার হয়। বর্তমানে হাসপাতালটিতে এ ধরনের ছয়টি শয্যা স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানা গেছে। ইউনিট-২-এর চিকিৎসক ও নার্সরা জানান, তাঁদের ওয়ার্ডে ১২টি বিছানা থাকলেও দিনে ৩৫-৪০ জন রোগী নিয়মিত ভর্তি থাকছে। হাসপাতালে শয্যা না থাকলেও কোনো রোগীকেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।

মিটফোর্ড হাসপাতালের শিশু বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. আবদুল মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ৩৭ বছরে হাসপাতালে শয্যা বাড়েনি। কিন্তু রোগী বেড়েছে অনেক। শিশুদের শয্যায় রাখতে না পারায় অক্সিজেন ও নেবুলাইজার দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

হাসপাতালের প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে হাসপাতালটি ৬০০ শয্যায় রূপান্তর করা হয়। পরে বিভিন্ন ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা আরও ৩০০ বাড়িয়ে মোট ৯০০ শয্যা করা হয়। কিন্তু হাসপাতালটিতে রোগী ভর্তি থাকছে গড়ে ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০। আর দিনে বহির্বিভাগে রোগী আসছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ৫০০ জন। অপরদিকে জরুরি বিভাগে রোগী আসছে দিনে ৫০০-৭০০ জন। বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির লোকের সংখ্যা। বাড়েনি রোগ নির্ণয়ের কাজে নিয়োজিত টেকনোলজিস্টের সংখ্যা। এতে রোগ নির্ণয় কাজে নিয়োজিতদের কাজের চাপ বহুগুণ বেড়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. কাজী রশিদ-উন-নবী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘৬০০ শয্যার হাসপাতালটিকে ৯০০ শয্যা করা হয়েছে। রোগী ভর্তি থাকছে দিনে গড়ে ১ হাজার ২০০ জন। তবে ২০ তলা একটি ভবন নির্মাণের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি সমস্যা কমে আসবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত