Ajker Patrika

ছাত্রকে ধর্ষণ, হত্যার হুমকি মাদ্রাসাশিক্ষক পলাতক

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১২: ২২
Thumbnail image

বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় এক মাদ্রাসাশিক্ষকের বিরুদ্ধে শিশুছাত্রকে একাধিকবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনা কাউকে জানালে ছেলেটিকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেন ওই শিক্ষক। তবে অন্য এক প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্র বিষয়টি ফাঁস করে দেয়। এরপর ওই শিক্ষক গা ঢাকা দেন। আর মাদ্রাসাটির ২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জনকেই বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেছেন অভিভাবকেরা।

উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মদনপুর দারুল উলুম কওমি মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটেছে। ওই শিক্ষকের নাম এরশাদ। বাড়ি ধুনটের চালাপাড়া এলাকায়। মাদ্রাসাটিতে তিনিসহ মোট দুজন শিক্ষক রয়েছেন। তবে তিনিই সার্বিক দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক।

১১ বছরের ওই ছাত্রের মা-বাবা আজকের পত্রিকাকে বলেন, তাঁদের ছেলেসহ অন্য ছাত্ররা মাদ্রাসাতেই থাকত। গত কয়েক মাসে তাঁদের ছেলে কয়েকবার ধর্ষণের শিকার হয়। কিন্তু প্রথমে সে কাউকে বিষয়টি জানায়নি। সে কাউকে কিছু বলতে না পেরে মাদ্রাসা থেকে মাঝেমধ্যেই বাড়ি চলে আসত। এর কারণ জানতে চাইলে বলত, হুজুর তাকে মারধর করেছেন। পরে তাকে বুঝিয়ে আবার মাদ্রাসায় পাঠানো হতো। গত ২২ নভেম্বর আবার সে বাড়ি চলে আসে। এবার কারণ জানতে চাপ দিলে সে কান্নাকাটি শুরু করে। একপর্যায়ে হুজুর তাকে ধর্ষণ করার বিষয়টি খুলে বলে। এ ছাড়া ছেলেটি তাঁদের বলে, ‘আমাক ম্যারা ফেলা দেওয়ার ভয় দেখাছিল। আর কেউ ভয় দেখায়নি, খালি এরশাদ হুজুরই ভয় দেখাছিল।’

ছাত্রটির বাবা এত দিন বিষয়টি প্রকাশ না করার বিষয়ে বলেন, ‘মাদ্রাসার সভাপতি, সেক্রেটারিসহ এলাকার কিছু লোক বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। তাঁরা সালিসের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আমাদের চাপ দেন। ভয়ে আমরা আইনের আশ্রয় নিতে সাহস পাচ্ছি না।’

জানতে চাইলে মাদ্রাসার সেক্রেটারি আব্দুল লতিফ বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে এরশাদ হুজুর এ ধরনের কাজ করতে পারেন বলে তাঁর বিশ্বাস হয় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।

মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মো. হাফিজুর ইসলাম বলেন, ‘আমি এখানে দুই মাস হলো এসেছি। এরশাদ হুজুর এখানে ছয় থেকে সাত বছর হলো দায়িত্বে আছেন। ওই ছাত্রের সঙ্গে অনৈতিক কার্যক্রম দেখে ফেলেছিল মাদ্রাসার আরেক ছাত্র। পরদিন সে ঘটনা কথা অন্য ছাত্রদের জানিয়ে বাড়িতে পালিয়ে যায়। এরপরই ঘটনা আশপাশের লোকজন ও অভিভাবকদের মধ্যে জানাজানি হয়। এই পরিস্থিতিতে মাদ্রাসার ২০ ছাত্রের মধ্যে ১৫ জনকে তাদের অভিভাবকেরা বাড়িতে নিয়ে চলে যান।’

এদিকে মাদ্রাসাশিক্ষক এরশাদ পলাতক থাকায় ও তাঁর মোবাইল ফোন নম্বর জোগাড় করতে না পারায়, এ বিষয় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এ সম্পর্কে জানি না। ভিকটিমের পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ করা হয়নি। এরপরও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

এ বিষয়ে ওই মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি শুনেছি। আমিই প্রথম এই প্রতিষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে আমার সঙ্গে বনাবনি না হওয়ায় আমি সরে এসেছি।’

এ ঘটনায় স্থানীয় ইউপি সদস্য বলেন, ‘এ ঘটায় মাদ্রাসাটি একদম ধ্বংস হয়ে গেল। মাদ্রাসায় তালা মেরে হুজুর চলে গেছে। আমরা তাকে আনার চেষ্টা করছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে অবগত নই। ঘটনা সঠিক হলে তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত