Ajker Patrika

অবৈধ পাম্পে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর

মঞ্জুর রহমান, মানিকগঞ্জ
অবৈধ পাম্পে নেমে যাচ্ছে পানির স্তর

মানিকগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ম ভেঙে স্থাপন করা হচ্ছে শক্তিশালী সাবমারসিবল পাম্প। নির্বিঘ্নে পানি পেতে ভূগর্ভের ৬০০ ফুট গভীর পর্যন্ত এসব পাম্প স্থাপন করা হয়। এভাবে প্রতিনিয়ত পানি তোলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

অন্যদিকে কেউ কেউ সাবমারসিবল পাম্প দিয়ে পানি তোলায় হস্তচালিত চাপকলে পানি পাচ্ছেন না অনেকে। ইতিমধ্যে পৌরসভার অনেক এলাকার বাসিন্দা চাপকলে পানি না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মানিকগঞ্জ পৌরসভার শহীদ রফিক সড়কে প্রেসক্লাব এলাকায় মেয়র মো. রমজান আলীর বাসার সামনে জিন্নত প্লাজা নামের বহুতল ভবনে শক্তিশালী সাবমারসিবল পাম্প বসানো হচ্ছে।

ভবনমালিক মো. জিন্নত আলীর দাবি, পানির চাহিদা পূরণে পৌরসভা ব্যর্থ হওয়ায় বাধ্য হয়ে তাঁকে সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করতে হচ্ছে। এই কাজে পৌরসভার পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। এ জন্য পৌরসভায় কোনো অর্থ জমা দেননি বলেও জানান জিন্নত আলী।

এ ছাড়া পৌরসভা থেকে সদ্য অবসরে যাওয়া স্বর্ণকারপট্টি এলাকার বাসিন্দা প্রকৌশলী মো. বিল্লাল হোসেনের বহুতল ভবনেও সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। 

গত তিন মাসে এ রকম বেশ কয়েকজন ভবনমালিককে সাবমারসিবল পাম্প বসাতে দেখা গেছে। বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে নির্বিঘ্নে পানি পেতে অবৈধভাবে এ ধরনের পাম্প বসানো হয়। এই সংখ্যা শতাধিক হবে বলে ধারণা শহরবাসীর। তবে পৌরসভার কাছে এ-সংক্রান্ত কোনো তথ্য নেই।

সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনের কাজ করেন মো. হযরত আলী। কথা হলে তিনি জানান, মানিকগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ১২ জন করে তাঁদের চারটি টিম সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে কাজ করছে। ইতিমধ্যে ৩০ থেকে ৩৫টি সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করেছেন তাঁরা। প্রতিটি পাম্প বসানোর জন্য তাঁরা ৪০-৫০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক নেন। ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করছেন, তাঁদের ১ লাখ থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হচ্ছে। 

পরিবেশ অধিদপ্তরের মানিকগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী বলেন, সাবমারসিবল পাম্পের বিষয়টি পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত না। এগুলো স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, পাশাপাশি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়। 

পরে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের জেলার সহকারী প্রকৌশলী মো. কাবুল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে সাত-আট বছর আগে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় নলকূপের ওয়াটার টেবিল ছিল ২০ থেকে ২৫ ফুট। সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করায় এখন বর্তমানে ওয়াটার টেবিল ৩০ ফুট নিচে চলে গেছে। তা ছাড়া পৌরসভার বেশির ভাগ এলাকায় চাপকলে পানি না ওঠার বিষয়ে নিয়মিত ফোন পাই।’ তিনি বলেন, বিষয়টিতে এখনই গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে পৌরসভায় পানির সমস্যা আরও বাড়বে।

তবে মানিকগঞ্জের পৌর মেয়র মো. রমজান আলীর দাবি, যাঁরা সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করছেন, তাঁরা কথা শোনেন না। পরিবেশ রক্ষায় সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন করা বন্ধে প্রয়োজনে জরিমানাসহ এগুলো দেখভালের জন্য কমিটি করা হবে বলেও জানান তিনি। 

মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার শাখার উপপরিচালক (উপসচিব) সানজিদা জেসমীন বলেন, ‘আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। তবুও বলছি, পরিবেশের ক্ষতি করে কোনো কিছু করা ঠিক হবে না। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত