Ajker Patrika

বন্য হাতির আতঙ্কে মানুষ

মো. ইমরান হোসাইন, কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭: ২৭
বন্য হাতির আতঙ্কে মানুষ

বন্য হাতির আতঙ্কে দিন কাটছে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী-আনোয়ারা উপজেলার কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) ও আশপাশের এলাকার লক্ষাধিক মানুষের। হাতি তাড়ানো কঠিন বলে মনে করছেন বন বিভাগের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় হাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতি রাতে স্থানীয় বাসিন্দারা পাহারা দিচ্ছেন।

জানা গেছে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে এই অবস্থা। সন্ধ্যা নামলেই হাতির পাল নেমে আসে লোকালয়ে। এতে ঘুম হারাম হয়ে যায় মানুষের। সবচেয়ে বেশি আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন কেইপিজেডের ২৫টি কারখানার ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক।

হাতি তাড়ানোর জন্য সবাই বন বিভাগের দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো সাড়া মেলেনি বলে জানিয়েছেন কোরিয়ান শিল্প জোনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, বন্য হাতির কারণে কেইপিজেডের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। প্রতিরাতেই হাতির পাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল, বাগানের গাছপালা উপড়ে ফেলাসহ নানাভাবে ক্ষতি করছে। রাতে হাতির উপদ্রব বেড়ে যায়। কারখানার নৈশপ্রহরীরা আতঙ্কের মধ্যে কাজ করেন। এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে বন বিভাগ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। তবে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, হাতি তাড়ানোর বিশেষ কোনো পন্থা তাঁদের জানা নেই। পাহাড় থেকে হাতি লোকালয়ে নামলে সেগুলো নানা পরিকল্পনায় পাহাড়ে তুলে দেওয়া যায়। গত পাঁচ বছর হাতির পাল কেইপিজেডের পাহাড়ে রীতিমতো স্থায়ী আবাস বানিয়ে নিয়েছে, যে কারণে হাতিগুলো স্বেচ্ছায় এই পাহাড় না ছাড়লে তাদের তাড়ানো সম্ভব না। জোরজবরদস্তি করে হাতির সঙ্গে কিছু করাও সম্ভব নয়।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, রাতভর মশাল জ্বালিয়ে হইহুল্লোড় করে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করেন। হাতি তাড়ানোর জন্য বন বিভাগ ও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

বড়উঠান ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সাজ্জাদ খান সুমন বলেন, হাতির আক্রমণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বড়উঠান। হাতির পাল গম ও ধানের বীজতলা নষ্ট করছে। আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে এলাকার মানুষ। প্রতিদিনই কারও না কারও ক্ষতি হচ্ছে। সবাই একত্র হয়ে মশাল জ্বালিয়ে ও ঢাকঢোল পিটিয়ে হাতি তাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও হাতির পাল সারা রাত তাণ্ডব চালায়। ভোরবেলায় পাহাড়ে চলে যায়। বন বিভাগের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এখনো।

বড়উঠান ইউপির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে বড়উঠান ইউনিয়নের হাজারো মানুষ নির্ঘুম ও আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছে। সন্ধ্যা হলেই গ্রামে ঢুকে ফসলের খেতসহ বাড়িঘরে আক্রমণ করে বন্য হাতির পাল। বৃহস্পতিবারও গ্রামের বন্য হাতির আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।’

কর্ণফুলীর ইউএনও শাহিনা সুলতানা বলেন, ‘দলছুট বন্য হাতি কেইপিজেডের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থান নিয়ে এলাকায় তাণ্ডব চালাচ্ছে। আক্রমণ করছে মানুষের বসতঘরে। স্থানীয়দের জানমালের নিরাপত্তা ও ক্ষতিগ্রস্ত সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। তবে বন বিভাগের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বিষয়টি চট্টগ্রাম জেলা সমন্বয় সভায়ও আমি উপস্থাপন করেছি।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়, হাতি তাড়ানোর মতো জনবল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বন বিভাগের নেই। তাই তারা গড়িমসি করছে। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে হাতিগুলোকে সরানোর জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হবে শিগগিরই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত