Ajker Patrika

মার্কিন ভিসা নীতিকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে, তবে কেউ সন্তুষ্ট নয়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ মে ২০২৩, ১০: ২০
মার্কিন ভিসা নীতিকে সবাই স্বাগত জানাচ্ছে, তবে কেউ সন্তুষ্ট নয়

নির্বাচনে অনিয়ম-জালিয়াতি ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতিকে যার যার অবস্থান থেকে স্বাগত জানিয়ে বড় তিন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি। বাইরে-বাইরে তারা এটা করলেও অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, মার্কিন এই পদক্ষেপে সন্তুষ্ট হতে পারেনি কোনো পক্ষই।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর গত বুধবার ঘোষণা দিয়েছে, বাংলাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের তারা ভিসা দেবে না।

যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের ভিসা দেওয়া হবে না। ভোটের অনিয়ম বলতে, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত হওয়ার স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া। এ ছাড়া বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে তাদের মতামত প্রকাশে বাধা দিলে তা-ও এর আওতায় পড়বে।

এই নীতির আওতায় কারা পড়বেন, তা-ও জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা এর অন্তর্ভুক্ত হবেন।

এরপর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের আমন্ত্রণে রাজধানীর গুলশানে তাঁর বাসায় গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতারা। বৈঠকে ছিলেন আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ ও কেন্দ্রীয় নেতা মো. আলী আরাফাত; বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য রানা মোহাম্মদ সোহেল। 

বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, যে বা যারা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, মানবাধিকার, আইনের শাসন, গণতন্ত্রহীনতা, জীবনের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে দেশে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে, তাতে এই সিদ্ধান্ত ভালো হলেও তা যথেষ্ট নয়। তবে আগামী দিনে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টিতে এই সিদ্ধান্ত সহায়ক হবে বলে মত দিয়েছে তারা।

তবে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠক শেষে ফিরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, তারই প্রতিফলন ভিসা নীতি। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে এটি একটা বড় পদক্ষেপ। দল এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানায়।

আর বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগ নেতা আরাফাত বলেন, ‘আমরা এটাকে মেনে নিচ্ছি না, প্রত্যাখ্যানও করি না। তাই এটাকে পাত্তা দিচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, বৈঠকে দলের পক্ষ থেকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমেরিকা কাউকে ভিসা দেবে কি দেবে না, এটা তাদের ব্যাপার।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একটা সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন চায়। জাতীয় পার্টি এ ব্যাপারে একমত।

তিন দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভিসা নীতি নিয়ে আলোচনা করেন। ওই বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত বলেন, নতুন ভিসা নীতি বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের অংশ। এটি বাংলাদেশের জনগণ, সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) সবার জন্য, যাতে করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়।

আর রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে সরকার কোনো চাপে নেই। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এসব নিয়ে কোনো চাপে নেই। আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। বরং আমরা যা যা চাচ্ছি, সেই অনুযায়ী কাজ হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত