Ajker Patrika

ঈদে সরব ‘গোশত সমিতি’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক
ঈদে সরব ‘গোশত সমিতি’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ বাজারে গরু-মহিষের মাংস অনেক আগেই সীমিত আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। কোরবানির ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে অনেকেরই তা কিনে খাওয়ার সামর্থ্য থাকে না। তাই বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষে মাংস খাওয়ার জন্য নানা এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ‘গোশত সমিতি’। ঈদুল ফিতর সামনে রেখে সমিতিগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সদস্যরা তাঁদের জমা করা টাকা দিয়ে পশু কিনে জবাই করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিচ্ছেন। 

মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার তরা গ্রামের দিনমজুর হারেজ মিয়া গত ঈদুল ফিতরের সময় সন্তানদের বায়না অনুযায়ী মাংস কিনে খাওয়াতে পারেননি। পরে এলাকার একটি গোশত সমিতির সদস্য হয়ে প্রতি মাসে ৩০০ টাকা চাঁদা দিয়েছেন। এবার ঈদের আগে সমিতির সদস্যরা মিলে বেশ বড় একটি ষাঁড় কেনেন। গতকাল রোববার তা জবাই করে মাংস ভাগাভাগি করে নিয়েছেন তাঁরা। প্রতি সদস্য পেয়েছেন ৫ কেজি মাংস। 

স্থানীয় মাংস বিক্রেতা ও কসাই আলামিন জানান, ২০ রোজা থেকে গতকাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন গোশত সমিতির ৪৬টি গরু জবাই করছেন। বেশির ভাগ সমিতির সদস্যরা নিজেরা গরু-মহিষ কেনেন। আবার অনেক সমিতির সদস্যরা কসাইদের টাকা দেন। তাঁরা গরু কিনে মাংস ভাগ করে দেন। এতে কেজিপ্রতি ৭০০-৭৫০ টাকা পড়ে। 

এদিকে গতকাল হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা সিকদারপাড়ায় এমনই এক সমিতির সদস্যরা একটি মহিষ ভাগ করে নেন। এই সমিতির ৬০ সদস্যের একজন ইউনুস আলী জানান, তিনি রিকশা চালিয়ে সংসার পরিচালনা করেন। তাঁর মতো মানুষের তো আর একবারে হাজারখানেক টাকা খরচ করে মাংস কেনার উপায় নেই। তাই সমিতির সদস্য হয়ে সপ্তাহে চাঁদা দেন। এখন ঈদে খাওয়ার জন্য তাঁরা মহিষ কিনে জবাই দিয়েছেন। 

বাল্লা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমার ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় গোশত সমিতি ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দিন দিন এ সমিতির সংখ্যা বাড়ছে। এর সদস্যরা সারা বছর একটু একটু সঞ্চয় করে ঈদের আগে পশু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেওয়ার মধ্যে বাড়তি আনন্দ পেয়ে থাকেন।’ 

রাজশাহীর বাঘায়ও ঈদ ঘিরে কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গ্রামে গড়ে উঠেছে গোশত সমিতি। ঈদের দিন ঘনিয়ে আসায় অনেকে গরু কিনেছেন, আবার কেউ কেউ কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিটি সমিতির সদস্য সংখ্যা হয় ৩০ থেকে ৭০ জন। সদস্যরা সপ্তাহে ১০০ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দেন। বছরব্যাপী জমানো টাকা দিয়ে ঈদের কয়েক দিন আগে গরু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নেন তাঁরা। এতে গরিব পরিবারগুলো বাড়তি আনন্দ পায় এবং আর্থিক চাপও কমে। 

পীরগাছা গ্রামের ঝর্ণা বেগম ও লতা বেগম কর্মজীবনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাঁরা কয়েক বছর আগে মানুষজনকে একত্র করে নিজ এলাকায় দুটি গোশত সমিতি গঠন করেন। তাঁদের সমিতির সদস্যসংখ্যা ৩১-৩৩ জন। তাঁরা শিক্ষক ও নারী হওয়ার স্থানীয় লোকজন আস্থার সঙ্গে সমিতিতে চাঁদা দিয়েছেন। তাঁরা সফলতার সঙ্গে সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। 

এ নিয়ে কথা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘উদ্যোগটি নিঃসন্দেহে ভালো। বছরব্যাপী সঞ্চয় করা টাকা দিয়ে ঈদের আগে গরু কেনেন বলে তাঁরা খরচ নিয়ে খুব বেশি বেগ পাচ্ছেন না। তার ওপর ঈদে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবাই ভালো খাবার খেতে পারছেন। সমিতির মাধ্যমে মানুষের মধ্যে মেলবন্ধন তৈরি হচ্ছে।’ 

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন মানিকগঞ্জের হরিরামপুর প্রতিনিধি মাহিদুল ইসলাম মাহি, ঘিওর প্রতিনিধি আব্দুর রাজ্জাক ও রাজশাহীর বাঘা প্রতিনিধি গোলাম তোফাজ্জল কবীর মিলন।]

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত