Ajker Patrika

কালীগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো দর্শক

আব্দুর রাজ্জাক, ঘিওর (মানিকগঞ্জ)
আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ৪২
কালীগঙ্গা নদীতে নৌকাবাইচে মাতলেন হাজারো দর্শক

মানিকগঞ্জের ঘোস্তা এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ হয়েছে। এতে মানিকগঞ্জ ও আশপাশের জেলা থেকে অর্ধশত বাহারি নৌকা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

শত বছরের ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার বাইচের আয়োজন করে ঘোস্তা-দিঘুলিয়া যুবসংঘ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের হাতে ১৫টি টেলিভিশন, মোবাইল ফোনসহ মোট ৩০টি পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় নবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী হাসান মেহেদী সুহাস, পুটাইল ইউপি চেয়ারম্যান মহিদুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এম এম জনি, যুবলীগ নেতা টুটুল মিয়া, মিজানুর রহমানসহ অন্যরা।

ঘোস্তা এলাকায় দেখা যায়, নৌকার মধ্যে ঢোল, টিকারা নিয়ে গায়েনরা মাঝিদের উৎসাহ দিচ্ছেন। বাজনার সঙ্গে তাল রেখে জোর টানে বইঠা বাইছেন নৌকার মাঝি-মাল্লারা। নৌকার গতি বাড়তে কাঁসির শব্দে বইঠা ফেলা দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। নৌকার গতির সঙ্গে গায়েনদের গানের গতিও বেড়ে যায়।

এদিকে নৌকাবাইচ উপলক্ষে আনন্দে মেতে ছিলেন এলাকাবাসী। রং-বেরঙের বাহারি বাইচের নৌকার মাঝি-মাল্লারা নেচেগেয়ে মাতিয়ে তোলেন নদীর দুই পাড়। বাইচ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে হাজারো মানুষের আগমন ঘটে ওই এলাকায়। রাস্তা ও নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে, কেউ নৌকা ও ট্রলারে বাইচ উপভোগ করেছেন।

প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বড় নৌকার মধ্যে আছে গায়না তরী, সোনার চান, মায়ের দোয়া, হারানো মানিক, দুই ভাই, সোনার বাংলা, রিয়াদ এন্টারপ্রাইজ, হাজারী তরী, আল্লাহর দান, শোকচাঁন তরী, অগ্রদূত, ঝড়ের পাখি, পঙ্খীরাজ, ময়ূরপঙ্খী, সাইমুন, তুফানমেইল, জয়নগর, চিলেকোটা, সোনার তরী, দীপরাজ ইত্যাদি।

সোনার তরী নৌকার মাঝি মো. জব্বার মাতবর বলেন, ‘বাইচের নৌকা সরু ও লম্বাটে হয়। এই নৌকা পানি কেটে দ্রুতগতিতে চলতে সক্ষম।’

ঘোস্তা নৌকাবাইচ আয়োজকদের একজন মো. ছিলমত মিয়া বলেন, ‘ছিপ, বজরা, ময়ূরপঙ্খী, গয়না, পানসি, কোষা, ডিঙি, পাতাম, বাচারি, রপ্তানি, ঘাসি, সাম্পান ইত্যাদি নৌকা বাইচে অংশ নেয়। এর একেকটি ১০০ থেকে ২০০ ফুট লম্বা হয়। দর্শকদের নজর কাড়তে নৌকায় উজ্জ্বল রঙের কারুকাজ করা হয়।

পাশাপাশি সামনে ময়ূর, রাজহাঁস বা কোনো পাখির অবয়ব তৈরি করা হয়।’

ঘিওরের একটি নৌকার মল্ল মুন্নাফ মোল্লা বলেন, ‘নৌকায় ওঠার ক্ষেত্রে নানা আনুষ্ঠানিকতা রয়েছে। সবাই পাক-পবিত্র হয়ে গেঞ্জি পরে মাথায় একই রঙের রুমাল বেঁধে নেন। সবার মধ্যে থাকেন নৌকার নির্দেশক। আমাদের নৌকায় ৮০ জন মাঝি আছে।’

মানিকগঞ্জের সাংস্কৃতিক ব্যক্তি লক্ষ্মী চ্যাটার্জি বলেন, ‘বাংলার আবহমান লোকজ সংস্কৃতির অংশ নৌকাবাইচ নানা প্রতিকূলতায় আজ ক্লান্ত। হারিয়ে যেতে বসেছে মেহনতি মানুষের শ্রম, ঘাম, উৎসাহ-উদ্দীপনা, আনন্দ আর উত্তেজনার এই খেলা। এখনো মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বাইচ হয়; কিন্তু আগের মতো সেই আনন্দ-উদ্দীপনা আর আবেদন নেই।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত