Ajker Patrika

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি: শেষ সময়ের কৌশল

রবিউল আলম লুইপা
আপডেট : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১৩: ০০
Thumbnail image

আগামী ১৯ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা। প্রস্তুতি গুছিয়ে নেওয়ার কৌশল ও পরীক্ষাকেন্দ্রের সতর্কতা সম্পর্কে জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা।

প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শেষ অথবা শেষ পর্যায়ে। এখন প্রস্তুতি গুছিয়ে নেওয়ার পালা। শক্তিশালী প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও একজন প্রার্থীর প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সফলতা নির্ভর করবে, শেষের ৩০ দিন ও পরীক্ষার দিনের সদ্ব্যবহারের ওপর।

শেষের ৩০ দিনের কৌশল

  • আগামী ৩০ দিনে পুরো সিলেবাস একবার রিভিশন করার জন্য একটা রুটিন প্রস্তুত করুন। আপনার রুটিনটি হতে পারে: বাংলা সাহিত্য ৩ দিন, বাংলা ব্যাকরণ ২ দিন, ইংরেজি ব্যাকরণ ৩ দিন, ইংরেজি সাহিত্য ৪ দিন, মানসিক দক্ষতা ১ দিন, সাধারণ বিজ্ঞান ৩ দিন, কম্পিউটার ও তথ্যপ্রযুক্তি ২ দিন, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ৫ দিন, আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি ৫ দিন, ভূগোল ১ দিন, নৈতিকতা, মূল্যবোধ ও সুশাসন ১ দিন, গাণিতিক যুক্তি প্রতিদিন (২/১ ঘণ্টা)। আপনি আপনার পছন্দমতো রুটিনও তৈরি করে নিতে পারেন।

  • প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় দুই ধরনের প্রশ্ন হয়। একটি পুনরাবৃত্তিমূলক, অন্যটি একদম নতুন। প্রথমবার আসা কোন প্রশ্নটি কমন পাবেন, সেটি অনিশ্চিত। তাই শেষ সময়ে অগুরুত্বপূর্ণ টপিক একবার পড়ার চেয়ে, গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো বারবার পড়ুন। এতে আপনার সফলতার সম্ভাবনা বাড়তে থাকবে।

  • মনে রাখবেন, শেষের এক মাস শুধু রিভিশনের জন্য। সাম্প্রতিক তথ্য ছাড়া এখন নতুন কিছু না পড়াই ভালো। এখন নতুন কিছু পড়া মানেই সাজানো সবকিছু গোলমেলে হয়ে যাওয়া। শেষ সময়ের নতুন পড়া যেমন মনে থাকে না, তেমনি সেই টপিক থেকে প্রশ্ন আসবেই এমন নিশ্চয়তাও নেই। প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাস ছকে বাঁধা থাকলেও এর বিস্তৃতি অসীম। আপনি যত সময়ই পান না কেন, আপনার নতুন পড়া কোনো দিন শেষ হবে না। তাই দ্রুত আপনিই এর সমাপ্তি টানুন।

  • প্রিলি পরীক্ষার আগের ৩০ দিনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো—সময় ধরে বাসায়/কোচিংয়ে বিষয়ভিত্তিক/চূড়ান্ত মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করা। আপনি অনেক পড়েছেন, কিন্তু পরীক্ষার হলে সময় পেলেন না অথবা সব দাগিয়ে নেগেটিভ নম্বর এল—দুটোই আপনার সফলতার অন্তরায়। তাই মডেল টেস্ট দিয়ে কোন অংশে কম নম্বর আসছে, খুঁজে বের করুন। নেগেটিভ নম্বর সর্বনিম্ন করার চেষ্টা করুন।

  • পরীক্ষার আগে সুস্থতা ও আত্মবিশ্বাস খুব বেশি জরুরি। এটিই শেষ সময়ের আসল প্রস্তুতি। সিরিয়াস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার আগের কয়েক দিন মানসিক চাপ অনুভব করা, সবকিছু ভুলে গেছি মনে হওয়া খুব স্বাভাবিক। তাই এখন একটু বেশি সময় নিয়ে পড়ুন, পরীক্ষার আগের ২/৩ দিন রিল্যাক্সের জন্য রাখুন। আড্ডা, গান শোনা, পর্যাপ্ত ঘুম ইত্যাদি চাপ কমাতে দারুণ কাজ করে।

পরীক্ষার দিনের কৌশল

  • আগের দিনই পরীক্ষার কেন্দ্রের নাম ও অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হোন, প্রয়োজনে সশরীরে গিয়ে দেখে আসুন। প্রবেশপত্র ও মোটা নিবের একাধিক কলম (যেটি দিয়ে বৃত্ত ভরাট করতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন) সঙ্গে রাখুন। প্রবেশপত্রে কোনো দাগ নেওয়া যাবে না, প্রশ্নপত্রেই আপনাকে প্রয়োজনীয় রাফ করতে হবে।

  • আপনার উত্তরপত্রে (ওএমআর শিট) রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও প্রবেশপত্রের অনুরূপ স্বাক্ষর লিখতে হবে। সাধারণত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্রে আগে থেকেই কোড নাম (যেমন রজনীগন্ধা) লেখা থাকে। আপনি একই কোড নাম প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র পেয়েছেন কি না, নিশ্চিত হয়ে নেবেন। উত্তরপত্রে অপশনগুলোর সিরিয়াল (ক-খ-গ-ঘ অথবা ক-গ-খ-ঘ) ভালোভাবে দেখে সচেতনভাবে উত্তর দিন।

  • প্রশ্নের উত্তর করার সময় আপনি আপনার স্বাচ্ছন্দ্যমতো শুরুর প্রশ্ন (১ নম্বর প্রশ্ন) থেকে অথবা নির্দিষ্ট বিষয় (যেমন বাংলাদেশ বিষয়াবলি) ধরে ধরে উত্তর করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো—মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য সাধারণ জ্ঞান বা বাংলা বিষয় দিয়ে উত্তর শুরু ও ইংরেজি বা গণিত বিষয় দিয়ে পরীক্ষা শেষ করা সর্বোত্তম। আপনার উত্তরদানের সাবজেক্ট সিকোয়েন্স হতে পারে সাধারণ জ্ঞান→ বাংলা→ বিজ্ঞান→ ইংরেজি→ গণিত। এভাবে বিষয়ভিত্তিক সময়বণ্টনও আগে থেকে ঠিক করে রাখুন। এ ক্ষেত্রে আমার পরামর্শ হলো—প্রথম এক ঘণ্টা বাংলা, সাধারণ জ্ঞান ও বিজ্ঞান অংশের জন্য এবং শেষ এক ঘণ্টা ইংরেজি ও গণিত অংশের জন্য বরাদ্দ রাখতে পারেন।

  • আপনার সিক্সথ সেন্স ভালো হলে ধারণা থেকে উত্তর করবেন নয়তো করবেন না (মডেল টেস্ট দেওয়ার সময় নিজের সিক্সথ সেন্স সম্পর্কে নিজেই জানতে পারবেন)। ১০টি প্রশ্নের আন্দাজ করা উত্তরে ৫টি সঠিক হলে আপনার প্রাপ্ত নম্বর ২.৫ (এটি পজিটিভ) এবং ৩টি সঠিক হলে আপনার প্রাপ্ত নম্বর-০.৫ (এটি নেগেটিভ)। এই কৌশলটি সব সময় এক রকম কাজ না করলেও অনেকটাই মিলে যায়। তাই মডেল টেস্ট এবং পরীক্ষার দিন সচেতনভাবে এর প্রয়োগ করুন।

  • পরীক্ষার প্রশ্ন যেমনই হোক, ঠান্ডা মাথায় পরীক্ষার দুই ঘণ্টা শেষ করুন। মনে রাখবেন, প্রশ্নের মান কঠিন হলে, সেটি সবার জন্যই কঠিন। সবচেয়ে বড় কথা, প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় কতজন টেকানো হবে, সেটি নির্দিষ্ট করে কাট নম্বর নির্ধারণ করা হয়। তাই সহজ প্রশ্নে যতজন টিকবে, কঠিন প্রশ্নেও ততজনই টিকবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত